কামিকা একাদশীর ব্রতোপবাস

#GaudiyaMission #Gaudiya #prabhupada #ekadashi #ekadashispecial #ekadashispecial #Kamika_Ekadashi #fasting #prabhupad150 #harekrishna

৩১ জুলাই ২০২৪, বুধবার

পরের দিন দি ৯।৩১ মিঃ মধ্যে একাদশী ব্রতের পারণ।

(একাদশীতে কী কী করা এবং খাওয়া উচিত নয়

১। ধান জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন চাল, মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েস, খিচুড়ি, চালের পিঠা, খই ইত্যাদি

২। গম জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন আটা, ময়দা, সুজি, বেকারির রুটি, সব রকম বিস্কুট, হরলিকস ইত্যাদি।

৩। যব বা ভূট্টা জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন ছাতু, খই, রুটি ইত্যাদি।

৪। ডাল জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন মুগ, মাসকলাই, খেসারি, মুসুরী, ছোলা, অড়হর, মটরশুঁটি, বরবটি ও সিম ইত্যাদি।

৫। সরষের তেল, সয়াবিন তেল, তিল তেল ইত্যাদি। উপরোক্ত পঞ্চ রবিশস্য যে কোনও একটি একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হয়।)

অদ্য শ্রীধরের ষোড়শ উপচারে পূজা। পঞ্চমৃতে শ্রীহরির স্নান। পায়স দধি, দুগ্ধ বিবিধ মিষ্টান্ন, বিবিধ ফলমূলাদি বিবিধ সৌগন্ধ পুষ্পদ্বারা ভগবানের শৃঙ্গার।

মধ্যাহ্নকালে ভোগারতি নাম সংকীর্ত্তন, নৃত্য, গীত, দণ্ডবৎ ও স্তবপাঠ। অতঃপর শ্রীধর হরির পবিত্র আখ্যান শ্রবণ।

স্তব–

শ্রীনাথ নারায়ণ বাসুদেব

শ্ৰীকৃষ্ণ ভক্তিপ্রিয়ঃ চক্ৰপাণে।

শ্রীপদ্মনাভাচ্যুত কৈটভারে

শ্রীরাম পদ্মাক্ষ হরে মুরারে।।

– (মুকুন্দমালা স্তোত্র)

কথারম্ভ—গোপালচম্পু, স্নিগ্ধকণ্ঠ ও মধুকণ্ঠ সংবাদ।

অন্যান্য দিবসের ন্যায় আজও প্রাতে নন্দরাজ দরবারে নারদমুনির প্রিয় শিষ্যদ্বয় স্নিগ্ধকণ্ঠ ও মধুকণ্ঠ কথারম্ভ করছেন। কিছুক্ষণ দুই ভাই পরস্পর কি মন্ত্রণা করলেন।

অতঃপর মধুকণ্ঠ বললেন—পরমগোপ্য একটি মধুর আখ্যান ভাই তোমাকে বলতে হবে।

স্নিগ্ধকণ্ঠ—সেই আখ্যানটি কি?

মধুকণ্ঠ–নন্দগৃহে কৃষ্ণোৎপত্তি।

স্নিগ্ধকণ্ঠ—ভাই! এ আখ্যানটি পরমগোপ্যবটে কারণ শ্রীশুকদেব ভাগবতে স্পষ্ট করে বলেন নাই। আকার ইঙ্গিতে বলেছেন—“অদৃশ্যতানুজা বিষ্ণোঃ”৷৷(ভাঃ ১০ ।৪।৯) বিষ্ণু অনুজা মহামায়াদেবী অদৃশ্য হল। “নন্দ স্বপুত্রমাদায় (ভাঃ ১০/৬\৪৩) নন্দ নিজ পুত্র কোলে লইলেন। “পশুপাঙ্গজায়” (ভাঃ ১০।১৪।১) পশুপ শ্রীনন্দ তাঁর অঙ্গজ ঔরষী পুত্রকে নমস্কার। বিষ্ণু যামলে— যদুবংশ জাত কৃষ্ণ অন্য। যিনি নন্দনন্দন তিনি ব্রজ ছেড়ে কদাপি কোথাও যান না।কৃষ্ণ উপনিষৎ—“যশোদা গর্ভসম্ভব কৃষ্ণঃ” কৃষ্ণ যশোদার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছেন, এরূপ শত সহস্র বচন আছে যে, শ্রীকৃষ্ণ নন্দনন্দন। বাসুদেবের গৃহে তাঁর স্বরূপ-আবির্ভাব দেববৎ। নন্দগৃহে মাধুর্য্য মণ্ডিত নরবৎ শিশুলীলা।

স্নিগ্ধকণ্ঠ বললেন—ভাই মধুকণ্ঠ। নন্দগৃহে কৃষ্ণ-উৎপত্তির কথা আনুপূর্ব্বিক বলছি ধ্যান দিয়ে শুন।

মধুকণ্ঠ—বড় ভাল ভাই তোমার কথা শ্রবণে আমার সর্ব্বদাই ধ্যান আছে।

স্নিগ্ধকণ্ঠ তখন বলতে আরম্ভ করলেন। সত্যযুগে ধরা ও দ্রোণ নামক প্রজাপতি দম্পতি পরম সুন্দর পুত্র কামনা করে ব্রহ্মার আরাধনা করতে লাগলেন। ব্রহ্মা তাতে সন্তুষ্ট হয়ে দেখা দিলেন এবং বর দিলেন, দ্বাপর যুগে তোমাদের গোপকুলে গোপরাজরূপে জন্ম হবে, সেই সময় সর্ব্বানন্দকন্দ ভগবান্ তোমাদের পুত্ররূপে এসে পরমানন্দ দান করবেন। সেই ধরা-দ্রোণ হল নন্দ-যশোদা। নন্দ মহারাজের বাবা ছিলেন পর্জ্জন্য গোপ। তিনি ছিলেন গোপরাজ-কুলতিলক। নন্দ মহারাজের কোন পুত্র সন্তান না দেখে, তিনি শ্রীহরির অনেক আরাধনা করেন। নন্দ মহারাজের অন্যান্য চার ভাইও নন্দ মহারাজের পুত্র কামনায় অনেক ব্রত যজ্ঞাদি করেছিলেন। তাতেও নন্দের পুত্র হল না দেখে, শেষে নন্দ-যশোদা দ্বাদশী ব্রত অনুষ্ঠান করলেন। এ বৈষ্ণব ব্রত করবার পর মাঘ মাসের কৃষ্ণপ্রতিপদে প্রথমে নন্দ হৃদয়ে যোগমায়া সমাশ্লিষ্ট কৃষ্ণ প্রবেশ করেন, অনন্তর নন্দ হৃদয় হ’তে যোগমায়া সমাশ্লিষ্ট কৃষ্ণ যশোদার গর্ভসিন্ধু আশ্রয় করেন। সেদিন হ’তে যশোদার গর্ভদশা দর্শন দিল। এবার গোপ-গোপীগণের আনন্দের সীমা রইল না। নন্দ মহারাজ যেমন প্রতিদিন দেব, দ্বিজ, বৈষ্ণবসেবা, যাগ-যজ্ঞাদি অনুষ্ঠান, অতিথি ও দীন দুঃখীদের দান দিতে লাগলেন তেমনি সারা ব্রজজন ঐরূপ আনন্দ উৎসব করতে লাগলো।

যশোদার অপূর্ব্ব লাবণ্যছটায় ত্রিভুবন আনন্দময় হয়ে উঠল। গর্ভ ক্রমে অষ্টম মাসে পদার্পণ করল। ধাত্রীবিদ্যা বিশারদা গোপীগণ বললেন-এ মাসেই যশোদার পুত্র সন্তান অবশ্যই হবে। অষ্টম মাস, ভাদ্র কৃষ্ণাষ্টমী তিথি, রোহিণী নক্ষত্র, অভিজিৎ‍ মুহূর্ত্ত ও সর্বগ্রহগণ শুভ স্থানে অবস্থিত মধ্যরাত্র। দেবতাগণ আনন্দে মন্দ মন্দ জলধারা বর্ষণ করছেন, নদ-নদী সাগর আনন্দ ভরে নর্ত্তন করে উঠল। দেব দ্বিজগণের নির্বাপিত যজ্ঞ পুনর্বার প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠল। যোগমায়া দেবী সকলকে আনন্দ সমুদ্রে নিমজ্জিত করেছেন। তাই সকলে যেন আনন্দ সমাধিতে সমাধিস্থ । ঠিক সেই সময় আনন্দকন্দ গোবিন্দ যশোদার গর্ভসিন্ধু থেকে ভূতলে প্রকট হলেন। তৎপরক্ষণেই যোগমায়া দেবী মহামায়ার সহিত অবতীর্ণ হলেন।

যশোদা আনন্দে সমাধিস্থ হলেন। কেবলমাত্র অনুভব করলেন একটি পুত্র ও কন্যা হয়েছে। কিন্তু যোগমায়া তা ভালভাবে যশোদাকে জানতে দিলেন না। সারা নিশা ভরে যে কি হল তা কেউই জানতে পারলেন না।

মধুকণ্ঠ বললেন—ভাই বড় সুন্দর কথা, তারপর কি হল বল।

স্নিগ্ধকণ্ঠ বললেন—নিশা অবসান হল। তখন ভগবান শিশুলীলাচ্ছলে শিশুদের ন্যায় ওঁম ওঁম ধ্বনিতে কেঁদে উঠলেন। সেই ধ্বনি সারা গোকুলের স্ত্রীগণের কর্ণে প্রবেশ করল। সকলে বললেন – হে সখি! যশোদার বাসনা পূর্ণ হয়েছে। দেখ, নবজাত শিশুর ক্রন্দন ধ্বনি ইহা পুত্রের কণ্ঠধ্বনি। তখনই তাঁরা আনন্দে আত্মহারা হলেন।

এদিকে যশোদার নিদ্রা ভেঙ্গে যাওয়ায় ক্রোড়দেশে অপরূপ লাবণ্যশালী এক পুত্র বিহার দেখে তিনি পুত্রস্নেহে স্তন্য ধারা ও আনন্দে নেত্রাশ্রু ধারায় রুদ্ধকণ্ঠ হয়ে পড়লেন।

যশোদার পুত্র হৈল পড়ি গেল সাড়া।

আনন্দে ধাইয়া আইল যত গোয়াল পাড়া ।।

-(পদাবলী)

গোপ-গোপীগণ সেই অপরূপ পুত্র দর্শনে নন্দ-যশোদাকে শত শত ধন্যবাদ দিতে লাগলেন। নন্দ মহারাজ পুত্রের জাতকর্মাদি অনুষ্ঠান করলেন এবং দেব দ্বিজগণকে বহু গোধন, স্বর্ণমুদ্রা, বস্ত্র ও অন্নাদি দান দিলেন।

শ্রীনন্দ মহোৎসব—গোপ-গোপীগণ দধি-দুগ্ধ ভারে ভারে এনে নন্দ মহারাজের অঙ্গনে বৃষ্টি করতে লাগলেন। তার মধ্যে গোপ-গোপীগণ আনন্দভরে নৃত্যগীত করতে লাগলেন।

বোল শ্রীনন্দ মহারাজ কী জয়।

বোল শ্রীযশোদা মাই কী জয়।

বোল গোকুল ধাম কী জয়।

বোল কানাইয়া লাল কী জয়।

যাঁরা শ্রীহরিবাসরে শ্রীধর শ্রীকৃষ্ণের এ জন্মাখ্যান শ্রবণ করবেন, তাঁদের ভগবান সর্ব্বাভীষ্ট পূর্ণ করবেন। ইতি কামিকা একাদশীবাসরে শ্রীধর শ্রীকৃষ্ণের কথা সমাপ্ত।

Related Article

Dol yatra gaudiyamission Gour jayanti Sri Chaitanya harekrishna
BLOG

শ্রীগৌরপূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমা

কলিযুগ পাবনাবতারী শ্রীমদ্ গৌরসুন্দরের শুভ আবির্ভাব তিথি ও শ্রীশ্রীগৌরজয়ন্তীর ব্রতোপবাস ১৪ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার ……..শ্রীমদ্ গৌরসুন্দরের শুভ জন্মোৎসব……..শ্রীগৌরপূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমা……..শ্রীশ্রীকৃষ্ণের বসন্তোৎসব……..পূর্ণিমান্তে ৫৩৯ গৌরাব্দ আরম্ভ……..পরের দিন

Read More »
Amlaki_ Ekadashi ekadashi ekadashi special gaudiyamission Gaudiya Harekrishna
BLOG

আমলকী একাদশীর ব্রতোপবাস

১০ মার্চ ২০২৫, সোমবার পরের দিন দি ৮।১৩ মিঃ মধ্যে একাদশী ব্রতের পারণ [একাদশীতে কী কী করা এবং খাওয়া উচিত নয় ১। ধান জাতীয় সকল

Read More »
GaudiyaMission Gaudiya prabhupad prabhupad150 bhagwat_goswami disappearance bhagwat bhagwat_maharaj harekrishna
BLOG

শ্রীশ্রীমদ্ভক্তি শ্রীরূপ ভাগবত গোস্বামী মহারাজের (শ্রীল আচার্যপাদ) ৩২ তম তিরোভাব তিথি

শ্রীগুরুদেব শ্রীকৃষ্ণের কৃপামূর্তি, করুণাশক্তি। নামরূপে শ্রীহরি যেমন কৃপা করছেন, তেমনি সাধু শাস্ত্র গুরুরূপে কৃপা করছেন। ভগবান নিত্যকাল সাধু গুরু ও শাস্ত্ররূপে কৃপা করছেন। শ্রীহরি বলেছেন—–

Read More »