
উৎপন্না একাদশীর ব্রতোপবাস
অদ্য শ্রীকৃষ্ণের ষোড়শোপচারে পূজা। নৈবেদ্য—শালি তঙুলের অন্ন,ব্যাঞ্জন , পায়স, পিঠাপানা, চাট্নী, খিচুড়ী, লুচি, লাড্ডু, দধি, দুগ্ধ ও ছানা প্রভৃতি।বিবিধ ফলমূলাদি, বিবিধ সুগন্ধি পুষ্পমাল্যাদি অৰ্পণ। মধ্যাহ্নকালে ভোগপ্রদান; আরতি সংকীৰ্ত্তন অন্তে দণ্ডবৎ প্রণাম ও স্তব
অতঃপর ভক্ত সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণলীলাদি শ্রবণ।
অথ কথারম্ভ স্তব-
নমো বিজ্ঞানরূপায় পরমানন্দরূপিণে।
কৃষ্ণায় গোপীনাথায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।।
আনন্দ বৃন্দাবন চম্পু-
একদা পৌর্ণমাসীর সন্ধ্যাকালে বৃহৎ আঙ্গিনা মধ্যে মা যশোদা বালক কৃষ্ণকে কোলে নিয়ে মাতৃ (জা) বর্গ ও অন্যান্য পূজ্য গোপীদিগের সঙ্গে উপবেশন করলেন। পরস্পর কৃষ্ণ বিষয়ক কথা বলতে লাগলেন ও বালককে লালন করতে লাগলেন। এমন সময় পূর্বদিকে মা যশোদা নবোদিত শুভ্রবর্ণ চন্দ্রমণ্ডলকে দেখিয়ে গোপালের প্রতি বলতে লাগলেন—বাপধন নীলমণি ভাল মাখনের গোল্লা খাবে?
গোপাল—মা ! কৈ মাখনের গোল্লা? যশোদা মা উদিত চন্দ্ৰকে দেখিয়ে |ফলেন—বৎস কৃষ্ণ ঐ দর্শন কর।
কৃষ্ণ—মা ! আমি ঐ মাখন গোল্লা খাব। আমায় দাও।
যশোদা—একটু অপেক্ষা কর দেব। কিছুক্ষণ পরে কৃষ্ণ বললেন কি মা আমাকে মাখন দাও। যশোদা মা গৃহ হ তে ধনিষ্ঠানাম্নী গোপীর দ্বারা আনীত মাখনের স্বর্ণবাটিটী গোপালের সামনে দিলেন।
গোপাল—এ মাখন নয়। ঐ মাখন খাব। এ বলে কাঁদতে আরম্ভ করলেন।
বলতে লাগলেন ঐ মাখন খাব। গোপীগণ—ওটাত মাখন নয় চাঁদ।
গোপাল—আমি চাঁদ খাব ।
গোপীগণ—বাপধন কৃষ্ণ ! চাঁদ খেতে নেই।
গোপাল–কেন?
গোপীগণ—ওর মধ্যে বিষ আছে।
কৃষ্ণ—ওর মধ্যে বিষ কি করে এল?
গোপীগণ—যখন সমুদ্রমন্থন হয়েছিল সেই সময় বিষ, অমৃত ও চন্দ্রদেব একসঙ্গে উৎপন্ন হয়েছিল। সেইজন্য দেবতাগণ ও অসুরগণ কেহই চন্দ্রকে নিল না।
গোপাল—আমি চন্দ্রকে নেব ও খাব। এই বলে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন।
গোপীগণ একখানি স্বর্ণ থালি আনলেন এবং এক ঘটি জল দ্বারা উহা পূর্ণ করলেন, গোপালের সামনে দিয়ে বল্লেন—বাপধন কৃষ্ণ ! তুমি নিজ হাতে চাঁদ ধরে খাও।
গোপাল থালিখানির মধ্যে চন্দ্র নিরীক্ষণ করতে লাগলেন। অনন্তর দুই হস্ত দ্বারা জলের মধ্যে উহাকে ধরবার জন্য চেষ্টা করতে লাগলেন। না পেয়ে আবার কাঁদতে শুরু করলেন।
সর্ব্বজ্ঞ, বিভু ভগবানের এরূপ নিতান্ত শিশুবৎ অসর্ব্বজ্ঞের লীলা দেখে দেবতাগণ বিস্ময়ান্বিত হলেন। গোপীগণ একখানি দর্পণ-আরশি আনলেন এবং গোপালের সামনে ধরে বলতে লাগলেন—গোপাল ! আর একটি চাঁদ তোমাকে দিচ্ছি। ও চাঁদ সে চাঁদকে দেখে ভয়ে আকাশে চলে গেছে। গোপীগণ দর্পণ মধ্যে গোপালের শ্রীমুখচন্দ্রের ছবি দেখালেন, গোপাল বিস্ময়ভাবে তা দেখতে লাগলেন।
গোপীগণ গাহিলেন—“কোটি চাঁদ বল কোথায় লাগে। গোপালের ঐ বরুন চাঁদের আগে, কোটি চাঁদ বল কোথায় লাগে।” গোপাল যশোদার স্তন পান করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লেন। শিশু লীলাচ্ছলে গোকুলে অপূর্ব শৈশবলীলা করতঃ বিহার করতে লাগলেন।
কীৰ্ত্তন—
ব’ল হরি হরি, |
মুকুন্দ মুরারি, |
রাম কৃষ্ণ হয়গ্রীব।। |
|
নৃসিংহ বামন, |
শ্রীমধুসূদন, |
ব্রজেন্দ্রনন্দন শ্যাম। |
|
পূতনা-ঘাতন, |
কৈটভ-শাতন, |
জয় দাশরথি রাম।। |
|
যশোদা-দুলাল, |
গোবিন্দ গোপাল, |
বৃন্দাবন-পুরন্দর। |
|
গোপীপ্রিয়-জন, |
রাধিকা-রমণ, |
ভুবন-সুন্দর-বর।। |
|
রাবনান্তকর , |
মাখন-তস্কর, |
গোপীজন-বস্ত্রধারী। |
|
ব্রজের রাখাল, |
গোপবৃন্দপাল, |
চিত্তহারী বংশীধারী।। |
|
যোগীন্দ্ৰ-বন্দন, |
শ্রীনন্দ নন্দন, |
ব্রজজন-ভয়হারী। |
নবীন নীরদ, |
রূপ মনোহর, |
মোহনবংশীবিহারী |
|
যশোদা-নন্দন, |
কংস-নিসূদন, |
নিকুঞ্জরাস-বিলাসী। |
|
কদম্ব কানন, |
রাসপরায়ণ, |
বৃন্দাবিপিন-নিবাসী।। |
|
আনন্দ-বৰ্দ্ধন, |
প্রেম-নিকেতন, |
ফুলশরযোজক কাম। |
গোপাঙ্গনাগণ, |
চিত্ত-বিনোদন, |
সমস্ত-গুণগণ-ধাম।। |
|
যামুন-জীবন, |
কেলিপরায়ণ, |
মানসচন্দ্র-চকোর। |
|
নাম-সুধারস, |
গাও কৃষ্ণ-যশ, |
রাখ বচন মন মোর।। |
—(শ্রীল ঠাকুর ভক্তিবিনোদ)
শ্রীহরিবাসরে যারা ভক্তিভরে ভগবানের অপূর্ব শৈশব লীলার কথা শ্রবণ করবেন, তাদের যাবতীয় কামনা সিদ্ধি হবে এবং তারা ভগবানের শ্রীচরণে স্থান পাবেন।
ইতি উৎপন্না একাদশী বাসরে শ্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলামাধুরী সমাপ্ত।