Raas Poornima

রাস পূর্ণিমা

শ্রীল সনাতন গোস্বামী কৃত শ্রীকৃষ্ণলীলা স্তবে রাস লীলার স্তব
গােপীবিরহ-সন্তাপহরালিঙ্গন-কোবিদ।
রাসক্রীড়ারসাকৃষ্ট জয় গােপীপ্রিয়ঙ্কর ॥
রাসােৎসব-সমারম্ভিন গােপীমণ্ডল-মণ্ডিত।
গােপীহেমমণিশ্রেণী-মধ্যমধ্য-হরিণে ॥
স্বস্বপার্শ্বস্থিতিজ্ঞানানন্দিত স্ত্রীগণাবৃত।
দেবতাগণ-গীতাদি সুসেবিত নমােহস্তু তে॥
গােপীগণের বিরহ-সন্তাপ-নাশন আলিঙ্গনে তুমি পটু। অতঃপর রাসক্রীড়ায় নৃত্যগীত-চুম্বন-আলিঙ্গনাদিময় রসে তুমি আকৃষ্ট ও গােপীপ্রেমবশ হইয়া তাহাদের প্রিয়াচরণ করিয়াছ। তােমার জয় হউক।
তখন রাসােৎসব সম্যক্ প্রকারে আরম্ভ করিয়া তুমি গােপীমণ্ডলে মণ্ডিত হইয়াছ। তুমি তাহাদিগকে কণ্ঠে গ্রহণ করিয়া বিরাজ করিতেছ বলিয়া মনে হয় যেন—গােপীরূপ হেমমণিরাজির মধ্যে মধ্যে ইন্দ্রনীলমণি বিরাজমান হইয়াছে!!
তাঁহারা তােমাকে নিজ নিজ পার্শ্বদেশেই অবস্থিত জ্ঞান করিয়া আনন্দিত মনে তােমাকে বেষ্টন করিয়াছিলেন। তখন দেবগণ গীতবাদ্যাদি ও পুষ্পব্যাদি করিয়া তােমার সুন্দর সেবা করিয়াছেন। হে রাসরসবিনােদি! তােমাকে নমস্কার।

গােপীকোগীত-সুপ্রীত নৃত্যগীত-বিচক্ষণ।
স্বাত্মাস্য-দত্ততাম্বুল শ্রান্তগােপীধৃতাংসক॥
স্বানুরূপ-ব্রজবধূ-নৃত্যগীতাদি-হর্ষিত।
বিমােহিত-শশাঙ্কাদি-স্থৈর্য্য-রাতিদৈর্ঘ্যকৃৎ॥
বিদগ্ধবল্লভীবৃন্দ-রতিচিহ্নঙ্কিতাঙ্গ হে।
রতিশ্রান্ত ব্রজবধূ-মুখার্জন-তৎপর ॥
জলক্রীড়াতিকুশল মালালিকুলাবৃত।
সহাস-গােপীকাব্রাত-সিচ্যমান নমােহস্তু তে ॥
গােপীকাগণের উচ্চ গীত শ্রবণ করিয়া তােমার পরম প্রীতি হইয়াছিল। নৃত্য-গীতে তােমারও বেশ বিচক্ষণতা আছে। নিজমুখ হইতে তুমি (শৈব্যাকে) তাম্বুল-চর্বিত দান করিয়াছ এবং রাসে ক্লান্তা (শ্রীরাধা) তােমার স্কন্ধদেশ গ্রহণ করিয়াছেন।
[রূপ, গুণ, নৃত্য ও গীতাদিতে] নিজের অনুরূপ ব্রজবালাদের নৃত্যগীতাদিতে তুমি আনন্দিত হইয়াছ। অদৃষ্টপূর্ব সেই রাসক্রীড়া দর্শনে বিমুগ্ধ করিয়া চন্দ্রনক্ষত্রাদিকেও তুমি স্থগিত করিয়াছ, বহুক্ষণ যাবৎ স্বচ্ছন্দ ক্রীড়াভিলাষে একটি মাত্র রাত্রিকেও তুমি সুদীর্ঘ করিয়াছ।
বিদগ্ধ গােপ-ললনাদের নখদন্ত-ক্ষতাদি বিবিধ সুরত-চিহ্নে তােমার অঙ্গ অঙ্কিত হইয়াছে। রতিশ্রান্ত ব্রজবধূদের মুখমার্জনে তৎপর হইয়া ব্যস্ততার সহিত ঘর্মবিন্দুসমূহ স্বীয় পরম সুখাত্মক করকমলে দূর করিয়াছ। [একসপ্ততিতম নমস্কার]
তুমি জলকেলিতে অতি কুশলী; তােমার মাল্যরাজিস্থিত ভ্রমর সকল তােমাকে বেষ্টন করিয়াছে। গােপীকাগণ হাস্যসহকারে তােমার অঙ্গে জলসেচন করিতেছেন।

যমুনাজল-লীনাঙ্গ কালিন্দী-কেলিলােলিত।
যমুনাতীরসঞ্চারিন্ কৃষ্ণাকুঞ্জরতিপ্রিয়॥
জয় শ্রীরাধিকাসক্ত জয় চন্দ্রাবলী-রত।
পদ্মাস্যপদ্মপানালে ললিতাপাঙ্গ-লালিত॥
বিশাখাৰ্থ-বিশেষার্থি শ্যামলা-রতিনির্মল।
ভদ্রাভদ্ররসাধীন ধন্যা-প্রাণধনেশ্বর॥
গােপজন্মগত-স্বস্ত্রী-নিরন্তরবিলাসকৃৎ।
গােপীলম্পট হে গােপীস্তন-কুঙ্কুম-মণ্ডিত ॥
তুমি জল মধ্যে স্বীয় অঙ্গ লীন করিয়াছ। কালিন্দীতে জল বিহার করিতে করিতে তুমি চঞ্চল হইয়াছ। তৎপরে বনবিহার করিবার ইচ্ছায় তুমি যমুনাতীরে সঞ্চরণ করিয়াছ। যেহেতু যমুনাতীরে কুঞ্জ-সমূহে সুরত ক্রীড়া তােমার প্রীতিপদ!
তুমি রাধায় আসক্ত অর্থাৎ তৎকর্তৃর্ক আলিঙ্গিত হইয়া বিপরীত বিহারাদি সম্পাদনে আনন্দে বিলাস কর। তুমি চন্দ্রাবলীতে রত (সুরতক্রীড়া) করিয়াছ, পদ্মার মুখপদ্মপানে মত্তভ্রমর তুমি ললিতার অপাঙ্গ বিক্ষেপে লালিত (পরমপ্রীত) হইয়াছ।
বিশাখায় প্রেমধনের জন্য তুমি বিশেষ লালায়িত, শ্যামলায় তােমার রতি নির্মল, ভদ্রার ভদ্র (শৃঙ্গার) রসে তুমি অধীন হইয়াছ এবং ধন্যার প্রাণ ও ধনের ঈশ্বর (স্বামী) তুমি।।
এইভাবে তুমি গােপ বংশজাত পতি নিত্য প্রিয়াদিগের সহিত নিরন্তর বিলাস করিয়াছ। হে গােপী-লম্পট! তুমি গােপীগণের স্তনলিপ্ত কুঙ্কুমে ভূষিত দেহ হইয়াছ। [দ্বিসপ্ততিতম নমস্কার]

পরীক্ষিৎপৃষ্টরাসার্থ শুকোক্তৈশ্বৰ্য্যসঞ্চয়।
মুমুক্ষু-মুক্ত-ভক্তার্থ-সচ্চিদানন্দ-চেষ্টিত॥
গােপীমহামহিমদ গােপাসূয়াদ্যনাম্পদ।
গােপার্পিত-গৃহাপত্য-পত্নীপ্রাণ প্রসীদ মে॥
ইতি দশমস্কন্ধে ত্রয়ত্রিংশােহধ্যায়ঃ
পরীক্ষিৎ মহারাজের সভাস্থ বিবিধ বাসনাবিশিষ্ট কর্মী, জ্ঞজ্ঞানী ও যযাগিদের সন্দেহ নিবারণ হেতু মহারাজ শ্রীশুকদেব গােস্বামীকে রাসের প্রয়ােজন-সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলেন। তদুত্তরে শ্রীশুকদেব তােমার ঐশ্বৰ্য্য সমূহেরই উল্লেখ করিয়াছেন। তােমার সচ্চিদানন্দময়ী লীলা—মুমুক্ষু, মুক্ত ও ভক্তদের মনােরঞ্জন উদ্দেশ্যেই সংঘটিত হয়।
পরদারত্ব প্রভৃতি খণ্ডন করিয়া গােপীদিগকে তুমি শ্রীশুকদেমুখে মহা-মহিমা দান করিয়াছ। গােপগণও নিজ নিজ পার্শ্বে স্ব-স্ব স্ত্রী বিদ্যমান আছে মনে করিয়া তােমার প্রতি অসূয়া প্রকাশ করেন নাই। পরন্তু তাহারা তােমাতেই গৃহ, পুত্র, স্ত্রী এবং প্রাণ প্রভৃতি সৰ্বৰ্ষ সমর্পন করিয়াছেন। হে রাসবিহারিন্! প্রসন্ন হইয়া আমাকে ঐ রাসলীলায় প্রবেশাধিকার দান কর অথবা সেইরূপ সেবাধিকার প্রদান কর। [ত্রিসপ্ততিতম নমস্কার]

Date

Nov 19 2021
Expired!

Time

All Day