শ্রীল নরহরি সরকার ঠাকুরের তিরোভাব
কাটোয়া থেকে প্রায় চার মাইল পশ্চিমে বদ্ধমান জেলার অন্তর্গত শ্রীখণ্ডে শ্রীনরহরি সরকার ঠাকুরের জন্মস্থান। শ্রীমুকুন্দ দাস, শ্রীমাধব দাস ও শ্রীনরহরি দাস তিন ভাই। শ্রীমুকুন্দ দাসের পুত্র শ্রীরঘুনন্দন ঠাকুর।
শ্রীকৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী শ্রীখণ্ডবাসী ভক্তগণকে প্রেমকল্পতরুর মহাশাখা বলে বর্ণনা করেছেন।
খণ্ডবাসী মুকুন্দদাস, শ্রীরঘুনন্দন।
নরহরিদাস, চিরঞ্জীব সুলোচন।।
এই সব মহাশাখা—চৈতন্য, কৃপাধাম।
প্রেম-ফল-ফুল করে যাহা তাঁহা দান।।
– (চৈঃ চঃ আদি ১০ (৭৮-৭৯)
মহাপ্রভুর যাবতীয় লীলায় শ্রীনরহরি সরকার ঠাকুর যোগদান করেছিলেন। শ্রীনরহরি চক্রবর্ত্তী শ্রীভক্তিরত্নাকরে লিখেছেন—
শ্রীসরকার ঠাকুর অদ্ভুত মহিমা।
ব্রজের মধুমতী যে গুণের নাহি সীমা।।
শ্রীলোচনদাস ঠাকুর শ্রীনরহরি সরকার ঠাকুরের প্রিয় শিষ্য ছিলেন। তিনি শ্রীচৈতন্যমঙ্গল নামক গ্রন্থে স্বীয় গুরুদেবের পরিচয় সম্বন্ধে লিখেছেন—
শ্রীনরহরি দাস ঠাকুর আমার।
বৈদ্যকুল মহাকুল-প্রভাব যাঁহার।।
অনর্গল কৃষ্ণপ্রেম কৃষ্ণময় তনু।
অনুগত জনে না বুঝান প্রেম বিনু৷৷
—-
বৃন্দাবনে মধুমতী নাম ছিল যাঁর।
রাধা প্রিয় সখী তিহোঁ মধুর ভাণ্ডার।।
এবে কলিকালে গৌরসঙ্গে নরহরি।
রাধা-কৃষ্ণ প্রেমের ভাণ্ডারে অধিকারী।।
— (শ্রীচৈতন্য মঙ্গল সূত্র খণ্ড)
শ্রীভক্তিবিনোদ ঠাকুর শ্রীগৌরসুন্দরের আরতি কীর্তনে গেয়েছেন—
নরহরি আদি করি চামর ঢুলায়
সঞ্জয় মুকুন্দ বাসুঘোষ আদি গায়।।
শ্রীনরহরি সরকার ঠাকুর যেমন গায়ক ছিলেন তেমনি কবি ছিলেন। তিনি শ্রীগৌর-নিত্যানন্দের লীলা সম্বন্ধে বহু গীত লিখেছেন। তিনি “শ্রীভজামৃত” নামে একখানি সংস্কৃত গ্রন্থও লিখেছেন দেখা যায়। শ্রীনরহরি সরকার ঠাকুরের নামে আরোপিত গৌর-বিরহ গীত পদকল্পতক প্রভৃতি গ্রন্থে পাওয়া যায়।
আওর গৌর, |
পুনহি নদীয়া পুর, |
হোয়ত মনহি উল্লাস ! |
|
ঐছে আনন্দ কন্দ, |
কিয়ে হেরব, |
করবহি কীৰ্ত্তন-বিলাস। |
|
হরি হরি কব হাম হেরব সো মুখ চাঁদ। |
|
বিরহ পয়োধি কবহু, |
দিন পঙ রব, |
টুটব হৃদয়ক বাঁধ। |
|
কুন্দন কনক পাঁতি, |
কব হেরব, |
যজ্ঞ কি সূত্র বিরাজ। |
|
বাহু যুগল তুলি, |
‘হরি’ ‘হরি’ বোলব, |
নটন ভকতগণ মাঝ ।। |
|
এত কহি নয়ন মুদি, |
রহু সব জন, |
গৌর প্রেম ভেল ভোর। |
|
নরহরি দাস আশ, |
কব পূরব, |
হেরব গৌরকিশোর।। |
শ্রীনরহরি সরকার ঠাকুরের গীতগুলি প্রায় ভক্তিরত্নাকর রচয়িতা শ্রীনরহরি চক্রবর্ত্তি পদের সহিত মিলে গেছে। তজ্জন্য ঠিক ঠিক সরকার ঠাকুরের কোন্টা গৌর-লীলা গীত তা বুঝা কঠিন।
শ্রীলোচন দাস ঠাকুর লিখেছেন—
‘’গৌরাঙ্গ জন্মের আগে, বিবিধ রাগিণী রাগে,
ব্রজরস করিলেন গান।”
সরকার ঠাকুর গৌর পদ গীতি লিখবার আগে কৃষ্ণ-লীলাপদ গীতি বহু রচনা করেছিলেন।
শ্রীল নরহরি সরকার ঠাকুর অগ্রহায়ণ কৃষ্ণ-একাদশীতে অপ্রকট হন।