
Appearance Day of Srila BanshiBadananda Prabhu
‘চৈত্রী পূর্ণিমায়‘ শ্রীবংশীবদনানন্দ ঠাকুর আবির্ভূত হন।
চৌদ্দশত ষোল শকে মধু পূর্ণিমায়।
বংশীর প্রকটোৎসব সৰ্ব্বলোকে গায়।।
—(বংশী শিক্ষা)
শ্রীবংশীবদনানন্দ ঠাকুরের বংশীবদন, বংশীদাস, বংশী ও শ্রীবদন প্রভৃতি পাঁচটী নাম শ্রুত হয়। কুলিয়ার মধ্যবর্ত্তী–তেঘরি, বেঁচিআড়া, বেদড়াপাড়া ও চিনেডাঙ্গা গ্রাম। প্রসিদ্ধ শ্রীকর চট্টোপাধ্যায়ের পুত্রগণ বিল্বগ্রাম বা পাটুলী হতে কুলিয়া বেঁচিআড়া গ্রামে এসে বসবাস করেন। শ্রীকর চট্টোপাধ্যায়ের বংশধর শ্রীযুধিষ্ঠির চট্টোপাধ্যায়। তাঁর শ্রীমাধব দাস চট্টোপাধ্যায় (ছকড়ি চট্টোপাধ্যায়) শ্রীহরিদাস চট্টোপাধ্যায় (তিনকড়ি চট্টোপাধ্যায়) ও শ্রীকৃষ্ণ সম্পত্তি চট্টোপাধ্যায় (দুইকড়ি চট্টোপাধ্যায়) নামে তিন পুত্র ছিলেন। শ্রীপুরী ধাম হতে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু যখন জননী ও গঙ্গা দর্শনের জন্য নবদ্বীপে কুলিয়াতে এসেছিলেন তখন শ্রীমাধব দাস চট্টোপাধ্যায়ের (ছকরি চট্টোপাধ্যায়ের) গৃহে সাতদিন অবস্থান করেছিলেন এবং দেবানন্দ পণ্ডিত প্রভৃতিকে উপদেশ দিয়ে উদ্ধার করেছিলেন।
শ্রীমাধব দাসের (ছকড়ি চট্টোপাধ্যায়) গৃহে বংশীবদন ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন। শ্রীবংশীবদনের মায়ের নাম শ্রীমতী চন্দ্রকলা দেবী। বংশীবদন ঠাকুর শ্রীকৃষ্ণের বংশী অবতার। বংশীবদন ঠাকুর যেদিন জন্মগ্রহণ করেন।সেদিন মহাপ্রভু তথায় উপস্থিত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্যও ছিলেন। ছকড়ি চট্টোপাধ্যায় প্রভুর পরম অনুরাগী ছিলেন। তাঁর পুত্র বংশীকেও প্রভু অতিশয় স্নেহ করতেন। শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে বংশীবদন ঠাকুর সম্বন্ধে কোন কথা নাই। শ্রীমদ্ কবিকর্ণপুর শ্রীচৈতন্য চন্দ্রোদয় নাটকে ৯ম অঙ্কে ৩৩শ সংখ্যায় “নবদ্বীপস্য পারে কুলিয়া গ্রামে মাধব দাস বাট্যামুত্তীর্ণবান্। নবদ্বীপলোকানুগ্রহ হেতোঃ সপ্ত দিনানি তত্র স্থিতবান্।।” শান্তিপুরে অদ্বৈত আচার্য্যের গৃহ হতে মহাপ্রভু গঙ্গা পার হয়ে কুলিয়া গ্রামে মাধব দাস চট্টোপাধ্যায়ের গৃহে নবদ্বীপ বাসিগণকে কৃপা করবার জন্য সাতদিন অবস্থান করেছিলেন। শ্রীনরহরি চক্রবর্ত্তী ভক্তিরত্নাকরে লিখেছেন যখন শ্রীনিবাস আচার্য্য নবদ্বীপ মায়াপুরে মহাপ্রভুর গৃহে এসেছিলেন, তখন বংশীবদন ঠাকুর শ্রীনিবাসকে অনুগ্রহ করেন ও শ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর শ্রীচরণ দর্শন করান। “শ্রীবংশীবদন ধরি করিলেন কোলে। শ্রীনিবাস সিক্ত কৈল নিজ নেত্রজলে।” (ভঃ রঃ ৪।২৩) মহাপ্রভুর অন্তর্ধানের পর শ্রীবংশীবদন ঠাকুর বিষ্ণুপ্রিয়া ঠাকুরাণীর সেবায় নিযুক্ত হন। শ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর একান্ত কৃপা পাত্র বলে বংশীবদন ঠাকুর বিখ্যাত হয়েছিলেন। তিনি শ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর অন্তর্ধানের পর শ্রীমূর্ত্তি সেবা মায়াপুর হতে কুলিয়া পাহাড়পুরে স্থানান্তরিত করেছিলেন। তাঁর বংশধরগণ যে সময় শ্রীজাহ্নবা মাতার কৃপাবলম্বন পূর্ব্বক শ্রীপাট বাঘনাপাড়া আশ্রয় করেন, তখন মালঞ্চবাসী সেবায়েতদিগের হাতে শ্রীমূৰ্ত্তি-সেবা কুলিয়া গ্রামেই ছিল।
কুলিয়া পাহাড়পুর গ্রামে শ্রীবংশীবদনের পূর্ব্ব পুরুষগণের সেবিত শ্রীগোপীনাথ বিগ্রহ ছিলেন। তথায় প্রাণবল্লভ নামে এক বিগ্রহ শ্রীবংশীবদন ঠাকুর নিজে স্থাপিত করেন। উত্তর কালে শ্রীবংশীবদন ঠাকুর বিল্বগ্রামে গিয়ে বাস করেন। ঐ বিল্বগ্রামের ভট্টাচার্য্য মহাশয়েরা তাঁর জ্ঞাতি ছিলেন। শ্রীবংশীবদন ঠাকুরের শ্রীচৈতন্য দাস ও শ্রীনিতাই দাস নামে দুই পুত্র ছিলেন। শ্রীচৈতন্য দাসের পুত্র শ্রীরামচন্দ্র ও শ্রীশচীনন্দন। “শ্রীনিত্যানন্দ শক্তি শ্রীজাহ্নবা মাতা এই রামচন্দ্রকে ভিক্ষা করে নিয়েছিলেন এবং দীক্ষাদান করে খড়দহ গ্রামে রেখে বৈষ্ণব-তত্ত্ব শিক্ষা দিয়েছিলেন।” (গৌড়ীয় ২২।৩০-৩৭ সংখ্যা) শ্রীরামচন্দ্র গোস্বামী ব্রহ্মচারী ছিলেন, বাঘনা পাড়ার শ্রীরামকৃষ্ণের সেবা ছোট ভাই শ্রীশচীনন্দনের হাতে সমর্পণ করেছিলেন। শ্রীশচীনন্দন গোস্বামীর পুত্রগণ হচ্ছেন বাঘনা পাড়ার গোস্বামিগণ।
শ্রীবংশীবদনানন্দ ঠাকুর একজন পদকর্তা ছিলেন। তাঁর গীতি সমূহ অতি সরস ও মধুর। মহাপ্রভু সন্ন্যাস গ্রহণ করলে তাঁর বিরহে শ্রীশচীমাতা যে বিলাপ করেছিলেন তা অবলম্বনে শ্রীবংশীবদনানন্দ ঠাকুর এ গানটী রচনা করেন—-
তথাহি গীত
আর না হেরিব, প্রসব কপালে, অলকা কাচ।
আর না হেরিব, সোনার কমলে, নয়ন খঞ্জন নাচ।।
আর না নাচিবে, শ্রীবাস মন্দিরে, ভকত চাতক লৈয়া।
আর না নাচিবে, আপনার ঘরে, আমরা দেখিব চাইয়া।।
আর কি দু’ভাই, নিমাই নিতাই, নাচিবে এক ঠাঞী।
নিমাই করিয়া, ফুকরি সদাই নিমাই কোথাও নাই।।
নিদয় কেশব ভারতী আসিয়া, মাথায় পাড়িল বাজ।
গৌরাঙ্গসুন্দর, না দেখি কেমনে, রহিব নদীয়া মাঝ।।
কেবা হেন জন, আনিবে এখন, আমার গৌরাঙ্গ রায়।
শাশুড়ী বধূর, রোদন শুনিয়া বংশী গড়াগড়ি যায়।।
শ্রীবংশীবদন ঠাকুর শ্রীকৃষ্ণের দান-লীলা, নৌকাবিলাস ও বনবিহার লীলাদি বহু বর্ণন করেছেন।