Appearance Day of Srila Birchandra Prabhu

শ্রীমদ্ বীর চন্দ্র বা শ্রীবীর ভদ্র প্রভু কার্ত্তিক কৃষ্ণ নবমী তিথিতে আবির্ভূত হন।
 
শ্রীকৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী লিখেছেন।
শ্রীবীরভদ্র গোসাঞি – স্তব্ধ মহাশাখা !
তাঁর উপশাখা যত, অসংখ্য তাঁর লেখা।।
ঈশ্বর হইয়া কহায় মহা-ভাগবত।
বেদ ধর্মাতীত হঞা বেদধর্মে রত।।
অন্তরে ঈশ্বর চেষ্টা বাহিরে নিৰ্দ্ধম্ভ ।
চৈতন্যভক্তিমণ্ডপে তেঁহো মূলস্তম্ভ।।
অদ্যাপি যাঁহার কৃপা-মহিমা হইতে।।
চৈতন্য নিত্যানন্দ গায় সকল জগতে।।
সেই বীরভদ্র-গোসাঞির লইনু শরণ।
যাঁহার প্রসাদে হয় অভীষ্ট পূরণ।।
 
—(চৈঃ চঃ আদি ১১৮-১২)
 
শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতের অনুভাষ্যে শ্রীশ্রীমদ্ ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদ লিখেছেন—শ্রীবীরভদ্র গোসাঞি—ইনি শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর পুত্র ও শ্রীজাহ্নবা মাতার শিষ্য। ইনি শ্রীবসুধার গর্ভজাত। শ্রীগৌরগণোদ্দেশ দীপিকায়—
 
“সঙ্কর্ষণস্য যো ববৃহঃ পয়োক্কিশায়িনামকঃ।
স এব বীরচন্দ্রোভূচ্চৈতন্যাভিন্ন বিগ্রহঃ।।”
 
 
শ্রীসঙ্কর্ষণ দেবের ব্যূহ পয়োব্ধিশায়ী বিষ্ণুর অবতার শ্রীবীর চন্দ্র প্রভু। তিনি শ্রীচৈতন্যদেবের অভিন্ন বিগ্রহ স্বরূপ।
 
শ্রীবীবচন্দ্র প্রভুর বিবাহ সম্বন্ধে শ্রীনরহরি চক্রবর্ত্তী লিখেছেন—
 
রাজবলহাটের নিকট ঝামটপুরে।
গেলেন ঈশ্বরী এক ভৃত্যের মন্দিরে।।
তথা বিপ্র যদুনন্দনাচাৰ্য বৈসয়।
ঈশ্বরী কৃপায় তেঁহো হৈলা ভক্তিময়।।
যদু নন্দনের ভাৰ্য্যা লক্ষ্মী নাম তাঁর।
কহিতে কি অতি—পতিব্রতাধর্ম যার।।
তাঁর দুই দুহিতা—শ্রীসতী, নারায়ণী।
সৌন্দর্যের সীমাদ্ভুত অঙ্গের বলনী।।
শ্রীঈশ্বরী ইচ্ছায় সে বিপ্র ভাগ্যবান।
প্রভু বীরচন্দ্রে দুই কন্যা কৈল দান।।
 
—(ভক্তিরত্নাকর ত্রয়োদশ তরঙ্গ-২৪৯-২৫৩)
 
শ্রীযদুনন্দন আচার্য্য শ্রীবীরচন্দ্র প্রভুর শিষ্য হয়েছিলেন। শ্রীসতীকে ও শ্রীনারায়ণীকে শ্রীজাহবা মাতা মন্ত্র দীক্ষা দান করেন। শ্রীবসুধা দেবীর গর্ভজাত কন্যা শ্রীমতী গঙ্গাদেবী, তিনি সাক্ষাৎ গঙ্গার অবতার ছিলেন। শ্রীমাধব আচার্য্যের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। শ্রীমাধব আচার্য্য শান্তনু রাজার অবতার ছিলেন। বৈষ্ণব বন্দনায় আচার্য্যের নাম আছে—
 
প্রেমানন্দময় বন্দো আচার্য্য মাধব।
ভক্তি বলে হৈলা গঙ্গাদেবীর বল্লভ।।
 
শ্রীবীরচন্দ্র প্রভুর তীর্থ ভ্রমণ–
 
জননীর অনুমতি নিয়ে শ্রীবীরচন্দ্র প্রভু শ্রীবৃন্দাবন ধাম যাত্রা করেন। তিনি প্রথমে সপ্তগ্রামে শ্রীউদ্ধারণ দত্ত ঠাকুরের গৃহে আগমন করেন। শ্রীউদ্ধারণ দত্ত ঠাকুরের পুত্র শ্রীনিবাস দত্ত ঠাকুর শ্রীবীরচন্দ্র প্রভুকে বিশেষ সম্মানসহ দুই দিবস সৎকার করেন। শ্রীবীরচন্দ্র প্রভু তথা হ’তে শান্তিপুরে শ্রীঅদ্বৈত ভবনে আগমন করেন। অদ্বৈতাচার্য্যের পুত্র শ্রীকৃষ্ণ মিশ্র শ্রীবীরচন্দ্র প্রভুকে বহু সম্মান পুরঃসর সৎকার করেন ও সংকীর্ত্তনে মগ্ন হন। সেখান থেকে শ্রীবীরচন্দ্র প্রভু অম্বিকা কালনা শ্রীগৌরীদাস পণ্ডিতের গৃহে আগমন করেন। শ্রীহৃদয় চৈতন্য প্রভু তাঁকে বহু আদর করে সৎকার করেন। তথা থেকে নবদ্বীপে শ্রীজগন্নাথ মিশ্র গৃহে আগমন করলে প্রভুর পরিকরগণ তাকে নিত্যানন্দাত্মজ জেনে আনন্দে বহু সৎকার করেন। দুই দিবস তথায় অবস্থান করে তিনি শ্রীখণ্ডে শুভাগমন করেন। দুই দিবস তথায় অবস্থান করে তিনি শ্রীখণ্ডে শুভাগমন করেন। খণ্ডবাসী শ্রীরঘুনন্দন ও শ্রীকানাই ঠাকুর তাঁকে বহু সম্মান প্রদান করেন। ও আলিঙ্গন করেন। কয়েক দিবস তথায় অবস্থান করবার পর শ্রীবীরচন্দ্র প্রভু যাজীগ্রামে শ্রীনিবাস আচার্য্যের গৃহে শুভাগমন করেন। আচার্য্য প্রভু মহাভক্তিভরে তাঁকে পূজা করেন। সেখানে কয়েকদিন সংকীৰ্ত্তন মহোৎসব করবার পর শ্রীবীরচন্দ্র প্রভু কণ্টক নগরে আগমন করলেন। একদিন তথায় অবস্থান করে বুধরী গ্রামে শ্রীগোবিন্দ রাজের গৃহে শুভাগমন করেন। বহু ভক্ত পুরঃসর শ্রীগোবিন্দ কবিরাজ তাঁকে পূজা করে সৎকার করেন। তাঁদের ভক্তিতে শ্রীবীরচন্দ্র প্রভু অতিশয় সন্তুষ্ট হয়ে দুই দিবস তথায় অবস্থান করেন। অতঃপর শ্রীখেতরি গ্রামে শুভ পদার্পণ করেন।
 
শ্রীঠাকুর নরোত্তম কত না আনন্দে।
আগুসরি লৈয়া গেল প্রভু বীরচন্দ্রে।।
সংকীৰ্ত্তন নৃত্য কৈলা গৌরাঙ্গ প্রাঙ্গণে।
আইলা অসংখ্য লোক প্রভুর দর্শনে।।
—–(ভক্তিরত্নাকর ত্রয়োদশ তরঙ্গে)
 
খেতরি গ্রামে কয়েকদিন সংকীর্ত্তন মহোৎসব করবার পর শ্রীবীরচন্দ্র প্রভু শ্রীবৃন্দাবনে যাত্রা করলেন। তাঁর প্রভাবে পথে অনেক পাষণ্ডী উদ্ধার হয়। তিনি শ্রীবৃন্দাবন ধামে পৌঁছলে তাঁকে স্বাগত জানাবার জন্য রঙের মহান্ত গোস্বামীগণ আগমন করেন—শ্রীজীব গোস্বামী, শ্রীমদ্ কৃষ্ণদাস কবিরাজ শ্রীঅনন্তiচার্য, শ্রীহরিদাস পণ্ডিত, শ্রীমদন গোপালদেবের সেবাধিকারী, শ্রীগদাধর পণ্ডিত গোস্বামীর শিষ্য শ্রীকৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী, শ্রীগোপীনাথ – অধিকারী, শ্রীমধু পণ্ডিত, তাঁর সতীর্থ ভ্রাতা- শ্রীগোপীনাথের পূজারী শ্রীভবানন্দ, শ্রীকাশীশ্বর, তাঁর শিষ্য শ্রীগোবিন্দ গোস্বামী ও শ্রীমাধবাচার্য্য প্রভৃতি।
 
প্রভু বীরচন্দ্রে লৈয়া আইলা সৰ্ব্বজনে।
ব্রজবাসিগণ হর্ষ প্রভুর দর্শনে।।
প্রভু প্রেম ভক্তিরীতে কেবা না বিহ্বল।
গায় গুণ ব্রজবাসী বৈষ্ণব সকল।।
শ্রীগোবিন্দ, গোপীনাথ, মদনমোহন।
সবা-সহ বীরচন্দ্র করিলা দর্শন।।
(ভক্তিরত্নাকর ত্রয়োদশ তরঙ্গ—৩২৫-৩২৭)
 
অতঃপর শ্রীবীরচন্দ্র প্রভু শ্রীভূগর্ভ গোস্বামীর ও শ্রীজীব গোস্বামীর অনুমতি নিয়ে বন ভ্রমণে যাত্রা করেন। তিনি দ্বাদশ বন, শ্রীরাধাকুণ্ড, শ্যামকুণ্ড ও গোবন্ধন গিরিরাজ প্রভৃতি দর্শন করে অত্যদ্ভুত প্রেম প্রকট করেন, তা দেখে ব্রজবাসিগণ অত্যন্ত মুগ্ধ হন। এরূপে কিছুদিন ব্রজ ধাম দর্শন করে পুনঃ গৌড়দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এরূপ অত্যদ্ভুত প্রেম দর্শনে সর্ব্বত্রই তাঁর যশ প্রচারিত হয়। তাঁর ঐশ্বর্য্য ছিল অভিন্ন শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর ন্যায়।
 
শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতের আদি লীলার একাদশ পরিচ্ছেদের অষ্টম শ্লোকের অনুভাষ্যে লিখেছেন—গোপীজন বল্লভ, রামকৃষ্ণ ও রামচন্দ্র—এ তিন জন শিষ্যই ইহার পুত্র বলে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। কনিষ্ঠ রামচন্দ্র খড়দহে বাস করতেন,তিনি শাণ্ডিল্য গোত্রীয় শুদ্ধ শ্রোত্রীয় বটব্যাল। জ্যেষ্ঠ গোপীজন বল্লভ বর্ধমান জেলার মানকরের নিকট লতাগ্রামে এবং মধ্যম রামকৃষ্ণ মালদহের নিকট গণেশ পুরে বাস করতেন।
 
 
 
 

Date

Oct 19 2022
Expired!

Time

All Day
Category