Appearance Day of Srila Jagadish Pandit
শ্রীজগদীশ পণ্ডিত হয় জগৎ পাবন।
কৃষ্ণপ্রেমামৃত বর্ষে যেন বর্ষা ঘন।।
(চৈঃ চঃ আদি ১১:৩০ )
শ্রীজগদীশ ভট্ট পূর্ব্বদেশে গৌহাটী অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম—শ্রীকমলাক্ষ ভট্ট। ইনি গয়ঘর বন্দ্যঘাটার ভট্টনারায়ণের সন্তান। জগদীশের পিতা ও মাতা উভয়েই পরম বিষ্ণুভক্ত গৃহস্থ ছিলেন। মা বাপের অপ্রকটের পর জগদীশ স্বীয় ভার্যাসহ গঙ্গাতীরে আগমন করেন। তাঁর পত্নীর নাম দুঃখিনী দেবী। জগদীশের ছোট ভ্রাতা মহেশও ভাইয়ের অনুগমনে গঙ্গা তীরে আসলেন। ইহারা গঙ্গাতটে শ্রীজগন্নাথ মিশ্রের গৃহ সন্নিধানে বসবাস করতেন।
“শ্রীগৌরসুন্দর জগদীশকে হরিনাম প্রচারের জন্য নীলাচলে যেতে আদেশ করেন। জগদীশ পন্ডিত প্রভুর আদেশে নীলাচলে নাম প্রচার কালে শ্রীজগন্নাথদেবের নিকট প্রার্থনার ফলে জগন্নাথদেবের শ্রীমূর্ত্তি নিয়ে এসে আধুনিক চাকদহ থানার অধীন গঙ্গাতীরস্থ যশোড়া গ্রামে শ্রীবিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রবাদ আছে যে জগদীশ পন্ডিত পুরুষোত্তম থেকে এ জগন্নাথ মূর্তি যশোড়া গ্রামে একটী যষ্টিতে বহন করে নিয়ে আসেন। অদ্যাপি একটি যষ্টি (বাঁক) জগদীশ পন্ডিতের জগন্নাথ বিগ্রহ – আনা যষ্টি ব’লে যশোড়ার সেবায়েতগণ-কর্তৃক প্রদর্শিত হয়ে থাকে।”
(চৈঃ চঃ আদি ১১।৩০ শ্লোকের অনুভাষ্য)
শ্রীশ্রীগৌরসুন্দর ও শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু মাঝে মাঝে যশোড়া গ্রামে আগমন করতেন এবং সংকীৰ্ত্তন মহোৎসব করতেন। শ্রীজগদীশ পন্ডিতের পুত্রের নাম শ্রীরামভদ্র গোস্বামী। যশোড়া মন্দিরে শ্রীজগন্নাথ দেব, শ্রীশ্রীরাধাবল্লভ জীউ ও গৌর গোপাল মূর্তি আছেন। প্রবাদ আছে, গৌর গোপাল মূৰ্ত্তি—শ্রীদুঃখিনী দেবীর স্থাপিত। এ গৌর গোপাল মূর্তিটি পীতবর্ণ। মহাপ্রভু জগদীশ পন্ডিতের ঘরে কয়েক দিন মহোৎসব করবার পর নীলাচলে যেতে উদ্যত হলে জগদীশ পত্নী শ্রীদুঃখিনী দেবী গৌর বিরহে অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়েন। তখন মহাপ্রভু এ মূর্ত্তি দিয়ে বলেন—আমি নিত্য বিগ্রহরূপে তোমার ঘরে রইলাম। তদবধি এ গৌর গোপাল মূর্ত্তি সেবিত হচ্ছেন।
অপরে যজ্ঞপত্নৌ শ্রীজগদীশ হিরণ্যকৌ।
একাদশ্যাং যয়োরন্নং প্ৰাৰ্থয়িত্বাঘসৎ প্রভৃঃ।।
কেহ কেহ বলেন—পূর্ব্বে যাঁরা যজ্ঞপত্নী ছিলেন, এবার তাঁরা জগদীশ হিরণ্য নামে খ্যাত হয়েছেন। আবার কেহ কেহ বলেন—যিনি পূর্ব্বে চন্দ্রহাস নামে ব্রজের নর্ত্তক ছিলেন, অধুনা তিনি নৃত্য বিনোদী জগদীশ পন্ডিত নামে খ্যাত। মহাপ্রভু শিশুকালে এক একাদশী তিথিতে জগদীশ পণ্ডিত ও শ্রীহিরণ্য পন্ডিতের ঘরের অন্ন মেগে খেয়েছিলেন।
প্রভু বোলে,—যদি মোর প্রাণ রক্ষা চাহ।
তবে ঝাট দুই ব্রাহ্মণের ঘরে যাহ।।
জগদীশ পন্ডিত হিরণ্য ভাগবত।
এই দুই স্থানে আমার আছে অভিমত।।
একাদশী উপবাস আজি সে দোঁহার।
বিষ্ণু লাগি করিয়াছে যত উপহার।।
সে সব নৈবেদ্য যদি খাইবারে পাঙ।
তবে মুঞি সুস্থ হই হাঁটিয়া বেড়াঙ।।
(চৈঃ ভাঃ আদিঃ ৬(২০-২৩)
একদিন শিশু গৌরহরির ক্রন্দন আর থামে না। সকলে বলতে লাগলেন-বাপ ! তুমি কি চাও? যা চাইবে তা পাবে। বালক বললেন আজ একাদশীতে জগদীশ ও হিরণা পন্ডিতের ঘরে বিষ্ণুর জন্য অনেক নৈবেদ্য করেছে। সে সব যদি খেতে পারি তবে আমি সুস্থ হব। বালকের এরূপ অসম্ভব কথা শুনে শ্রীশচীমাতা শিরে হাত দিয়ে খেদ করতে লাগলেন। আজ একাদশী এটুকু শিশু তা কি করে জানল? নারীগণ বললেন-বাপ নিমাই ! তুমি কান্না বন্ধ কর, তোমাকে তাই দিব।
“শুনিয়া শিশুর বাক্য দুই বিপ্রবর।
সন্তোষে পূর্ণিত হৈল সৰ্ব্ব কলেবর।।”
–(চৈঃ ভাঃ আদিঃ ৬।২৭)
জগদীশ ও হিরণ্য দুই জন শ্রীজগন্নাথ মিশ্রের পরম মিত্র ছিলেন। এ ব্যাপার তাঁরা লোক মুখে শ্রবণ করলেন। তাঁরা পূর্ব্বে জানতে পেরেছিলেন। জগন্নাথমিশ্রের ঘরে শ্রীহরি জন্মগ্রহণ করেছেন। তাই তাঁরা শ্রীহরির জন্য যা কিছু করেছিলেন, সবকিছু নিয়ে শ্রীগৌরসুন্দরের সম্মুখে রেখে দিলেন ও বললেন –
“দুই বিপ্র বোলে, –বাপ, খাও উপহার।
সকল কৃষ্ণের স্বার্থ হইল আমার।।”
–(চৈঃ ভাঃ আদি ৬।৩৩ )
বাপ বিশ্বম্ভর ! সুখে এ সমস্ত জিনিয খাও। অদ্য আমাদের কৃষ্ণ পূজা সার্থক হল। ভগবান শ্রীগৌরসুন্দর শিশুগণের সঙ্গে সে অন্ন আনন্দে ভোজন করতে করতে জগদীশ ও হিরণ্য পন্ডিতকে দিব্য বালগোপাল স্বরূপ দর্শন করিয়েছিলেন।
অনেকশিশুমন্ডলী বিহিতমন্ডলান্তস্থিতং
স্ফুরন্নব-ঘন প্রভং শিখিশিখন্ডচূড়োজ্জ্বলম্।
মুদাম্মদতিসুন্দরং প্রকটিতং শচীসূনুনা
হিরণ্যজগদীশয়োর্নয়নবৰ্ত্ম ভেজে বপুঃ।।
—( গৌরাঙ্গ চম্পু-১:২০ )
নবমেঘসম কান্তিতে উদ্ভাসিত ময়ূর-পুচ্ছে চূড়ায় অতিশয় সমুজ্জ্বল অনেক শিশুমন্ডলীর মধ্যে অবস্থানপূর্ব্বক আনন্দের সহিত ভোজনরত, এরূপ সুন্দর বিগ্রহ শচীনন্দন কর্তৃক প্রকটিত হয়ে জগদীশের ও হিরণ্যের নয়ন পথে দৃষ্ট হলেন।
জগদীশ ও হিরণ্য সে দিব্য রূপ দেখে আনন্দে ‘হরি’ ‘হরি’ ধ্বনি করতে লাগলেন।
মহাপ্রভুর সন্ন্যাস গ্রহণের পর বোধ হয় শ্রীজগদীশ পন্ডিত যশোড়াতে এসে বাস করতেন। প্রতি বছর গৌড়ীয় ভক্তদের সঙ্গে মহাপ্রভুর দর্শনে পুরীতে যেতেন। শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু পাণিহাটিতে যে চিড়াদধি মহোৎসব করেছিলেন, তাতে শ্রীজগদীশ পন্ডিত উপস্থিত ছিলেন।
পৌষ শুক্লতৃতীয়া শ্রীজগদীশ পন্ডিতের তিরোভাব তিথি।
জয় শ্রীজগদীশ পন্ডিত কি জয় !