
Disappearance Day of Sri Srila Jagannath Das Babaji Maharaj
গৌরাবির্ভাবভূমেস্তং নিদেষ্টা সজ্জন প্রিয়ঃ ।
বৈষ্ণবসাৰ্ব্বভৌম শ্রীজগন্নাথায় তে নমঃ।।
শ্রীজগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজ ময়মনসিংহ জেলায় টাঙ্গাইল মহকুমায় কোন গণ্ড গ্রামে ন্যূনাধিক দেড়শত বছর আগে এক সম্ভ্রান্ত কুলে জন্মগ্রহন করেন। গৌড়ীয় বেদান্তাচার্য্য শ্রীপাদ বলদেব বিদ্যাভূষণ, তাঁর শিষ্য শ্রীউদ্ধব দাস বা উদ্ধর দাস বাবাজী, তাঁর শিষ্য সূর্য্যকুণ্ড বাসী শ্রীমধুসূদন দাস বাবাজী। এই শ্রীমধুসূদন দাসের শিষ্য শ্রীজগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজ। শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজ বহু দিন শ্রীব্রজমণ্ডলে ভজন করেন। সিদ্ধ বাবা বলে তাঁর সর্ব্বত্র খ্যাতি ছিল। ১৮৮০ খৃষ্টাব্দে শ্রীমদ্ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর বৃন্দাবন ধামে প্রথম তাঁর শ্রীচরণ দর্শন করেন এবং তাঁর থেকে বহু উপদেশ প্রাপ্ত হন।
শ্রীল বাবাজী মহারাজ বঙ্গাব্দ ১৯২৮ সালে ফাল্গুন মাসে বর্দ্ধ মানের আমলাজোড়া নামক গ্রামে শুভ বিজয় করেন। সেই সময় শ্রীমদ্ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর কোন কার্য্য উপলক্ষে তথায় গমন করেন এবং দ্বিতীয় বার শ্রীল বাবাজী মহারাজের শ্রীচরণ দর্শন লাভ করেন।
শ্রীমদ্ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয়ের নাম প্রচারাদি কার্য্যে বিশেষ উৎসাহ দেখে শ্রীল বাবাজী মহারাজ অতিশয় সুখী হন। তিনি আমলা জোড়া গ্রামে একাদশী দিবসে অবস্থান করে অহোরাত্র শ্রীহরিকথা কীর্তন করেন। শ্রীমদ্ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর আমলাজোড়া গ্রামে পর দিবস শ্রীপ্রপন্নাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।
১৮৯৩ খৃষ্টাব্দে শ্রীল বাবাজী মহারাজ কুলিয়া নবদ্বীপ থেকে শ্রীগোদ্রুমে সুরভি কুঞ্জে শুভাগমন করেন এবং আসন গ্রহণ করেন। শ্রীল বাবাজী মহারাজের শুভ বিজয়ে সুরভিকুঞ্জ এক অপূর্ব্ব শোভা ধারণ করেছিলেন (সাপ্তাহিক গৌড়ীয় ৪র্থ বর্ষ ১ম সংখ্যা বঙ্গাব্দ ১৩৩২)
শ্রীজগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজ সপরিকরে শ্রীমায়াপুর দর্শনার্থে আগমন করে শ্রীযোগপীঠ, শ্রীবাস অঙ্গন ও মায়াপুরের বিভিন্ন স্থানগুলি নির্দ্দেশ করেন। তিনি গৌরজন্মস্থলীতে আনন্দে নৃত্য করেন।
শ্রীল বাবাজী মহারাজ বেশীর ভাগ সময় কুলিয়াতে গঙ্গাতটে ভজন করতেন। তথায় তাঁর ভজন কুটির ও সমাধি মন্দির অদ্যাপি বর্ত্তমান। শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরকে শ্রীল বাবাজী মহারাজ তাঁর কুটিরের সামনে ভক্তগণের বসবার জন্য একখানি চালা নির্মাণ করে দিতে আদেশ করেন। শ্রীভক্তিবিনোদ ঠাকুর তা’ করে দিয়েছিলেন।
শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর বার বছর বয়সে জ্যোতিষ শাস্ত্রে বিশেষ পারঙ্গত হন, তা শুনে শ্রীল বাবাজী মহারাজ একদিন তাঁকে ডেকে বলেন যে তুমি বৈষ্ণব সিদ্ধান্ত মতে চৈতন্যাব্দ, ভগবদ সম্বন্ধী মাস, বার তিথি পর্ব্ব প্রভৃতি সংবলিত পঞ্জিকা রচনা কর। তাতে শ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া ঠাকুরাণীর আবির্ভাব, পঞ্চমী তিথি ও অন্যান্য গৌর-পার্ষদগণের আবির্ভাব তিরোভাব তিথি সমূহ যথাযথ সন্নিবেশিত কর। শ্রীল বাবাজী মহারাজের নির্দেশ অনুযায়ী শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর শ্রীনবদ্বীপ পঞ্জিকা গণনা আরম্ভ করেন।
কীৰ্ত্তনে ও বৈষ্ণব সেবায় শ্রীল বাবাজী মহারাজের বিশেষ উৎসাহ ছিল। ইনি প্রায় একশ পঁয়ত্রিশ বছর কাল ধরাধামে প্রকট থেকে শ্রীগৌরসুন্দরের বাণী প্রচার করেন। বার্দ্ধক্য বশতঃ যদিও তিনি খৰ্ব্বাকৃতি হয়েছিলেন, কিন্তু কীৰ্ত্তন কালে তাঁকে শ্রীমন্মহাপ্রভুর ন্যায় আজানুলম্বিতভূজ ন্যগ্রোধপরিমণ্ডল তনু, চারি হস্ত পরিমিত দীর্ঘ পুরুষ বলে মনে হত।
শ্রীজগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজের বেশ শিষ্য শ্রীভাগবত দাস। এই শ্রীভাগবত দাসের বেশ শিষ্য ছিলেন শ্রীল গৌরকিশোর দাস বাবাজী মহারাজ। শ্রীল বাবাজী মহারাজের সেবকের নাম ছিল শ্রীবিহারী দাস। তাঁর শরীর খুব বলিষ্ঠ ছিল। বাৰ্দ্ধক্য বশতঃ শ্রীল বাবাজী মহারাজ চলতে পারতেন না। বিহারী দাস তাঁকে কাঁধে করে এক স্থান হতে অন্য স্থানে নিয়ে যেতেন।
কলিকাতায় আসলে শ্রীল বাবাজী মহারাজ শ্রীভক্তিবিনোদ ঠাকুরের মানিকতলা স্ট্রীটের বাড়ীতে থাকতেন। অনেকে আগ্রহ করে তাঁকে তাদের গৃহে নিতে চাইলে বা ভোজন করাবার ইচ্ছা করলেও তিনি স্বীকার করতেন না।
বাৰ্দ্ধক্য বশতঃ শ্রীল বাবাজী মহারাজের দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পেয়েছিল। লোকে তাঁকে দর্শনের জন্য আসতেন এবং প্রণামী দিতেন। সেবক বিহারী দাস, সে সমস্ত প্রণামী একটী কলসীর মধ্যে রাখতেন। কোন সময় হঠাৎ শ্রীল বাবাজী বলতেন—বিহারী ! কত টাকা প্রণামী হয়েছে সমস্তই আমাকে দে। বিহারী দাস যদি অন্য সেবার জন্য দশ বার টাকা সরিয়ে রাখতেন, বাবা টাকাগুলি হাতে নিয়ে বলতেন—বিহারী তুই বার টাকা রেখেছিস্ কেন? আমার টাকা নিয়ে আয়। বিহারী তখন হাসতে হাসতে টাকাগুলি এনে দিতেন। সে সমস্ত টাকা বাবাজী নিজের ইচ্ছা মত খরচ করতেন। একবার দুইশত টাকার রসগোল্লা কিনে ধামের গো সেবা করেছিলেন।
শ্রীল বাবাজী মহারাজের গঙ্গাতটের তাঁবুতে একবার একটা কুকুরের পাঁচটা বাচ্ছা হয়েছিল। বাবাজী মহারাজ যখন প্রসাদ পেতেন, বাচ্ছাগুলি থালার চারি দিকে ঘিরে বসত। বিহারী দুই একটি বাচ্ছা লুকিয়ে রাখলে, বাবাজী মহারাজ বলতেন—বিহারী, তোর থালা নিয়ে যা, আমি খাব না। বিহারী তখন বাচ্ছাগুলি এনে দিয়ে বলতেন—এই নিন বাচ্চাগুলি। বাবাজী মহারাজ বলতেন—এঁরা ধামের কুকুর।
অনেক লোক শ্রীল বাবাজী মহারাজের কাছে ভেক্ নেবার জন্য আসতেন। শ্রীবাবাজী মহারাজ সকলকে ভেক্ দিতে চাইতেন না। তাদের সেবা করতে বলতেন। খুব সেবার চাপ পড়লে অনেকে পালাত। একবার শ্রীগৌর হরিদাস নামে একজন ব্যক্তি ভেক্ নিতে এসেছিলেন। বাবাজী মহারাজ তাকে ভেক্ দিতে চাইলেন না। তিনি তিন দিন অনাহারে তাঁবুর সামনে পড়ে রইলেন। অগত্যা শ্রীবাবাজী মহারাজ বিহারী দাসকে কৌপীন দিতে আদেশ করলেন।
একবার শ্রীবাবাজী মহারাজ এক প্রসিদ্ধ ভাগবত পাঠককে বলেছিলেন—ভাগবত কীৰ্ত্তন ব্যবসা বেশ্যা বৃত্তি মাত্র। যারা ভাগবত ব্যবসা করে তারা নামাপরাধী, তাদের মুখে ভাগবত পাঠ বা কীৰ্ত্তন শুনতে নাই। উহা শ্রবণে নামাপরাধ ও অধোগতি হয়। সেই ভাগবত পাঠক সেই দিন থেকে ভাগবত পাঠ ব্যবসা ত্যাগ করেন। পরবর্তী কালে তিনি বৃন্দাবনবাসী হন এবং অতি দীনহীনভাবে ভজন করেন।
শ্রীমদ্ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর শ্রীল বাবাজী মহারাজকে ভক্তগণের সেনাপতি বলতেন।