Disappearance Day of Sri Srimad Bhaktikeval Audulomi maharaj
শ্রীশ্রীমন্মহাপ্রভুর মনোভীষ্ঠ সংস্থাপক স্বরূপ-রূপানুগবর-নিত্যলীলা প্রবিষ্ট ওঁ বিষ্ণুপাদ ১০৮শ্রী শ্রীমদ্ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদের কৃপাপ্রাপ্ত প্রিয় অধস্তন ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীশ্রীযুক্তি কেবল ঔড়ুলোমি মহারাজ।
শ্রীমদ্ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদ যে সমস্ত সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারীগণকে নিয়ে জগৎব্যাপী মহাপ্রভুর বাণী প্রচার অভিযান আরম্ভ করেন, তাঁদের মধ্যে শ্রীমদ্ভক্তি কেবল ঔড়ুলোমি মহারাজ অন্যতম প্রচারক সন্ন্যাসী ছিলেন।
শ্রীল গুরু মহারাজ শৈশব কাল থেকে ধীর, স্থির, মৌনী ছিলেন। কবিত্ব ও সবলতা প্রভৃতি সদগুণে তিনি বিভূষিত ছিলেন। আঠার বৎসর বয়সে তিনি শ্রীল প্রভুপাদের থেকে শ্রীহরিনাম প্রাপ্ত হন। এ সময় শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের শ্রীচরণ দর্শনের সৌভাগ্যও গুরু মহারাজের ঘটেছিল। শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয় অনেক কৃপাশীর্ব্বাদ করেন ও শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্র অনুশীলন করতে অতি স্নেহভরে বলেন।।
১৯১৯ খৃষ্টাব্দে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি. এ. ডিগ্রী পরীক্ষা স্বসম্মানে উত্তীর্ণ হন এবং কাশীতে কিছুদিন দর্শন শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তাঁর পিতৃদেব শ্রীযুক্ত শরৎ চন্দ্র গুহঠাকুরতা। মাতৃদেবী শ্রীযুক্তা ভুবনমোহিনী। উভয়েই স্বধর্মনিষ্ঠ, নিত্য তুলসী ও ভগবদ্ সেবা পরায়ন ছিলেন। তাঁরা বরিশাল বানরী পাড়াতে বাস করতেন। শ্রীগুরু-মহারাজের আবির্ভাব ১৮৯৫ খৃষ্টাব্দ, ১৩০২ বাংলা সাল ২৪শে অগ্রহায়ণ কৃষ্ণাষ্টমীতে হয়। শিশু কালের নাম শ্রীপ্রমোদ বিহারী। কলেজের পড়া শেষ করবার পর কিছু দিন তিনি শিক্ষকতা করেন। এ সময় তিনি কিছুদিন মহাত্মা গান্ধীর স্বদেশী আন্দোলনেও যোগদান করেছিলেন।
অনন্তর সমস্ত কিছুরই ক্ষণ ভঙ্গুরতা উপলব্ধি করে তিনি শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের শ্রীপাদ-পদ্মে একান্তভাবে আত্মসমর্পণ করেন। শ্রীল প্রভুপাদ মন্ত্র দীক্ষাদি সংস্কারের সময় তাঁকে শ্রীপতিত পাবন দাস ব্রহ্মচারী এ নাম প্রদান করেন। ব্রহ্মচারী অবস্থায় তিনি মঠের যাবতীয় সেবা, শ্রীবিগ্রহ অর্চ্চনাদি করতেন। অনন্তর ১৯৩৩ খৃষ্টাব্দে শ্রীল প্রভুপাদ তাঁকে শ্রীমথুরা ধামে ত্রিদন্ড সন্ন্যাস প্রদান করেন। সন্ন্যাসের নাম হল শ্রীমক্তি কেবল ঔড়ুলোমি মহারাজ। তারপর তিনি পরিব্রাজকরূপে ভারতের সর্ব্বত্র গৌরবাণী প্রচার করতে লাগলেন।
১৯৩৭ খৃষ্টাব্দে ১লা জানুয়ারী গৌড়ীয় মঠ মিশনাদির প্রতিষ্ঠাতা শ্রীশ্রীমদ্ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদ অপ্রকট লীলা করলেন। তাঁর অপ্রকটের পর গৌড়ীয় মঠ মিশনের আচার্য হলেন শ্রীশ্রীমদ্ভক্তি প্রসাদ পুরী গোস্বামী মহারাজ।
১৯৪০ খৃষ্টাব্দের মার্চ মাসে শ্রীল ভক্তিপ্রসাদ পুরী গোস্বামী ঠাকুর শ্রীনবদ্বীপ ধাম পরিক্রমার গুরুতর দায়িত্বপূর্ণ ভার অর্পণ করেন শ্রীমদ্ভক্তি কেবল ঔড়ুলোমি মহারাজের উপর। সাত বর্ষ পর্যন্ত একাদিক্রমে শ্রীল ভক্তিকেবল উড্রলোমি মহারাজ নবদ্বীপ ধাম পরিক্রমা পরিচালনার নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি কেবল ধাম পরিক্রমার নেতৃত্ব করেছেন তা নয়, তিনি সমগ্র নবদ্বীপ মণ্ডলের ও শ্রীচৈতন্য মঠের অধ্যক্ষ রূপে সেবা করেন। ১৯৪৩ খৃষ্টাব্দে তিনি গৌড়ীয় মিশনের পরিচর্য্যা পরিষদের সভ্যরূপে নির্ব্বাচিত হলেন।
শুধু শ্রীধামের সেবায় আত্মনিয়োগ করে তিনি ক্ষান্ত হননি—ভক্তি গ্রন্থ প্রচারে, প্রণয়নে ও প্রকাশে তাঁর গভীর অনুরাগ পরিদৃষ্ট হয়। তিনি শ্রীচৈতন্য শিক্ষামৃত গ্রন্থের ইংরাজী অনুবাদ করেন। এ সময় শ্রীমদ্ভক্তি প্রসাদ পুরী গোস্বামী শ্রীধাম মায়াপুরে শ্রীভক্তিসন্দর্ভ গ্রন্থের ব্যাখ্যা শুরু করেন। তিনি বিশেষ ভাবে তা শ্রবণে মনোনিয়োগ করেন। কয়েক বছর ব্যাপী উজ্জ্বব্রত কালে তিনি পূর্ব্ববঙ্গের ঢাকা, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জে বিপুলভাবে হরিকথা কীর্তন করেন। তাঁর অমৃতময় বাণী শুনবার জন্য বহু দূর থেকে শ্রদ্ধালু জনগণ সমবেত হতেন। ১৯৫৩ খৃষ্টাব্দে অক্টোবর মাসে উজ্জ্বব্রতকালে শারদীয়া পূর্ণিমা তিথিতে প্রেম যমুনার সুশীতল জলে শ্রীল গুরুমহারাজ (ভক্তিকেবল ঔডুলোমি মহারাজ) স্নান সমাপন করে। শ্রীগুরুবর্গের অনুপ্রেরণায় পরমহংস বেশে ভূষিত হন।
১৯৫৪ খৃষ্টাব্দে জানুয়ারী মাসে প্রয়াগে কুম্ভমেলা অবকাশে শ্রীরূপ গৌড়ীয় মঠে শ্রীগুরু মহারাজের নেতৃত্বে এক বিরাট নগর সংকীর্ত্তন শোভা যাত্রা বাহির হয়েছিল। কয়েকদিন ব্যাপী মঠের নাট্য মন্দিরে শ্রীভক্তিসন্দৰ্ভ ব্যাখ্যা দ্বারা তিনি সকলের চিত্তে বিমল আনন্দ প্রদান করেন।
১৯৫৩ খৃষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে গৌড়ীয় মিশনের সভাপতি শ্রীমদ্ভক্তিপ্রদীপ তীর্থ গোস্বামী মহারাজ শ্রীপুরুষোত্তম ধামে অপ্রকট হন। অনন্তর ১৯৫৪ খৃষ্টাব্দের ১৬ই ফেব্রুয়ারী শ্রীমদ্ভক্তিকেবল ঔডুলোমি মহারাজ গৌড়ীয় মঠ ও মিশনের সভাপতি আচার্য্যরূপে নিৰ্ব্বাচিত হন।
এ সময় তদানীন্তন সেবাসচিব শ্রীল সুন্দরানন্দ বিদ্যাবিনোদ পদত্যাগ করেন এবং পরমপূজ্য শ্রীমদ্ভক্তি শ্রীরূপ ভাগবত মহারাজ সেবাসচিব পদ গ্রহণ করেন এবং শ্রীপাদ ভববন্ধচ্ছিদ্ দাস ভক্তিসৌরভ অপর সেবাসচিব পদে অধিষ্ঠিত হন। শ্রীল গুরু-মহারাজ সভাপতি আচার্য্য পদে প্রতিষ্ঠিত হবার পর ভারতের বিভিন্ন স্থানের মঠগুলি পরিদর্শন করেন এবং সেবকদের বিবিধ উপদেশ নির্দেশ, নাম মন্ত্র-দীক্ষাদি প্রদান করেন।
তাঁর প্রেরণায় মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত চিরুলিয়া গ্রামে শ্রীভাগবত জনানন্দ মঠে নূতন মন্দির, নাট্যমন্দির, সেবক খণ্ড ও ভজন কুটীর নির্মিত হয়। শ্রীধাম বৃন্দাবনে কিশোরপুরায় অবস্থিত শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মঠের শ্রীমন্দির,নাট্যমন্দির ও সেবক খণ্ডাদি নির্মিত হয়। তাঁর আনুগত্যে বর্তমানে প্রতি বছর শ্রীব্রজমণ্ডল পরিক্রমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৫৭ খৃষ্টাব্দে শ্রীনবদ্বীপ ধামের অন্তর্গত কীৰ্ত্তনাখ্য শ্রীগোদ্রুম দ্বীপে নব মঠ স্থাপন করা হয়েছে এবং নাট্যমন্দির, সেবক খণ্ড, যাত্রী নিবাস প্রভৃতি নির্মিত হয়েছে। প্রতি বছর সহস্র সহস্র যাত্রী সঙ্গে নবদ্বীপ ধাম পরিক্রমা হচ্ছে।
শ্রীগুরু মহারাজের অনুপ্রেরণায় পাটনায় মন্দির, নাট্য মন্দির, সেবক খণ্ড প্রভৃতি প্রকটিত হয়। পুরী জেলার অন্তর্গত আলালনাথে শ্রীব্রহ্মগৌড়ীয় মঠের নব মন্দির, নাট্য মন্দিরও নির্মাণ করা হয়।
লক্ষ্ণৌ শহরে নূতন মন্দির, নাট্য মন্দির, সেবক খণ্ড প্রভৃতি নির্মিত হয়। তিনি বিভিন্ন মঠসমূহে পরিভ্রমণ করে শ্রদ্ধালু ব্যক্তিদের ভবনে, বড় বড় মণ্ডপাদিতে অনুষ্ঠিত ভাগবত সভায় শ্রীগৌরসুন্দরের শিক্ষা সম্বন্ধে বক্তৃতা করেন। যাঁরা তাঁর প্রেমময় বাণী শুনেছেন তাঁরা মর্মে মর্মে তাঁর উদারতা ও মধুরতা অনুভব করেছেন। আমি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র। কিরূপে তাঁর মহান্ গুণ সাগরের পার পাব? তথাপি আত্ম পবিত্রতার জন্য যৎসামান্য তাঁর গুণ গান করলাম।