
Disappearance Day of Srila Basudev Ghosh Thakur
শ্রীবাসুদেব ঘোষ, শ্রীমাধব ঘোষ ও শ্রীগোবিন্দ ঘোষ ঠাকুর এঁরা তিন ভাই সুকন্ঠ গায়ক ছিলেন। তিন ভাইয়ের গানের তালে তালে স্বয়ং নিত্যানন্দ প্রভু নৃত্য করতেন।
“মাধব, গোবিন্দ, বাসুদেব তিন ভাই।
গাইতে লাগিলা নাচে ঈশ্বর নিতাই।।
-(চৈঃ ভাঃ অন্তঃ৫।১৫৯)
কেহ কেহ বলেন তাঁদের মাতুলালয় শ্রীহট্ট জেলার অন্তর্গত বুড়ন বা বুরঙ্গী গ্রামে ছিল। কোন কারণে শ্রীবাসু ঘোষ ঠাকুরের পিতা কুমারহট্টে এসে বাস করেন। পরবর্তী কালে বাসু ঘোষ, মাধব ঘোষ ও গোবিন্দ ঘোষ ঠাকুর নবদ্বীপে এসে বাস করেন। তাঁরা উত্তর রাঢ়ীয় কায়স্থ-কুলে আবির্ভূত হন। শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর ও শ্রীগৌরসুন্দরের তাঁরা অন্তরঙ্গ পার্ষদ। শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদ বলেছেন এঁরা তিন ভাই ব্রজের মধুর রসের আশ্রয় বিগ্রহের (শ্রীরাধিকার) কায়ব্যূহ ছিলেন।
শ্রীবাসু ঘোষ ঠাকুর মহাপ্রভুর শৈশব লীলার পদ অধিকভাবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর রচিত একটি অপূর্ব্ব শৈশব লীলা বর্ণন— যথা :
গীত
শচীর আঙ্গিনায় নাচে বিশ্বস্তর রায়।
হাসি হাসি ফিরি ফিরি মায়েরে লুকায়।।
বয়ানে বসন দিয়া বলে লুকাইনু।
শচী বলে—বিশ্বস্তর আমি না দেখিনু৷৷
মায়ের অঞ্চল ধরি চঞ্চল চরণে।
নাচিয়া নাচিয়া যায় খঞ্জন গমনে।।
বাসুদেব ঘোষ কহে অপরূপ শোভা।
শিশুরূপ দেখি হয় জগমনো লোভা।।
শ্রীগৌরাঙ্গই শ্রীরাম ও শ্রীকৃষ্ণ এ সম্বন্ধে বাসু ঘোষ ঠাকুর সুন্দর গীত লিখেছেন – যথা গীত
জয় জয় জগন্নাথ শচীর নন্দন।
ত্রিভুবন করে যাঁর চরণ বন্দন।।
নীলাচলে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম ধর।।
নদীয়া নগরে দন্ড কমণ্ডলু কর।।
কেহ বলে পুরবেতে রাবণ বধিলা।
গোলোকের বৈভব লীলা প্রকাশ করিলা।।
শ্রীরাধার ভাবে এবে গোরা অবতার।
“হরে কৃষ্ণ” নাম গৌর করিলা প্রচার।।
বাসুদেব ঘোষ বলে করি যোড় হাত।
যেই গৌর সেই কৃষ্ণ সেই জগন্নাথ।।
শ্রীগৌরগণোদ্দেশ-দীপিকায়—শ্রীগোবিন্দ, শ্রীমাধব ও শ্রীবাসুদেব ঘোষ ঠাকুরকে যথাক্রমে ব্রজের কলাবতী, রসোল্লাসা, ও গুণতুঙ্গা সখী বলে উল্লেখ করেছেন। মহাপ্রভুর পুরীতে অবস্থান কালে তিন ভাই প্রতি বছর পুরীতে যেতেন এবং রথযাত্রায় কীর্ত্তনাদি করতেন। পরবর্তী কালে তিন ভাই তিন জায়গায় বসবাস করতে থাকেন। শ্রীগোবিন্দ ঘোষ ঠাকুর অগ্রদ্বীপে, শ্রীমাধব ঘোষ ঠাকুর দাঞীহাটায় ও শ্রীবাসুদেব ঘোষ ঠাকুর তমলুকে গিয়ে বাস করেন।
শ্রীবাসুদেব ঘোষ ঠাকুর কার্ত্তিক শুক্ল দ্বিতীয়াতে অপ্রকট হন।