Devananda pandit thakur gaudiya mission

Disappearance Day of Srila Devananda Pandit

 
শ্রীনবদ্বীপের কুলিয়ায় শ্রীদেবানন্দ পণ্ডিত বাস করতেন। শ্রীমহাপ্রভু তার দ্বারা শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্রের মহিমা জগতে প্রকাশ করেছেন। ভাগবত শাস্ত্রের বক্তা হিসাবে দেবানন্দ পন্ডিতের খুব খ্যাতি ছিল। অনেকে তাঁর কাছে ভাগবত পড়তেন।
একদিন শ্রীবাস পন্ডিত দেবানন্দের কাছে ভাগবত শুনতে এলেন। দেবনন্দ ভাগবত পাঠ আরম্ভ করলেন। চারিদিকে ছাত্রগণ পাঠ শুনছে, কেহ বা সঙ্গে সঙ্গে পুঁথি দেখছে। শ্রীবাস পরম রসিক ভক্ত। শ্রীমদ্ভাগবতের মধুর শ্লোকাবলী শুনতেই প্রেমার্দ্র হয়ে পড়লেন। প্রেমে ক্রন্দন করতে করতে ভূমিতে গড়াগড়ি দিতে লাগলেন। এ সব দেখে দেবানন্দের ছাত্রগণ মনে করল, – লোকটি পাগল। আমাদের পাঠ শুনতে দিচ্ছে না। চল, একে ধরে বাইরে রেখে দি। জ্ঞানহীন ছাত্রগণ শ্রীবাস পন্ডিতকে বাইরে রেখে এল। এ সব দেবানন্দ পন্ডিত দেখলেন, কিন্তু ছাত্রদের বাধা দিলেন না। গুরু যেমন অজ্ঞমতি, ছাত্রগণও তেমনি পাপমতি। শ্রীবাস পণ্ডিত কাকেও কিছু না বলে দুঃখ পেয়ে গৃহে এলেন। এ সব ঘটনা শ্রীগৌরসুন্দরের আবির্ভাবের পূর্ব্বে হয়েছিল।
অতঃপর মহাপ্রভুর আবির্ভাব। তিনি শৈশব লীলায় বিদ্যাধ্যয়ন, যৌবনে অধ্যাপকরূপে বিদ্যা-বিলাস এবং অনন্তর আত্মপ্রকাশ করলেন। এ সময় একদিন শ্রীবাস-মন্দিরে মহাভাব প্রকাশ করে ভক্তগণের অতীত কাহিনী বলতে বলতে শ্রীবাস পন্ডিতকে বললেন—শ্রীবাস ! তোমার কি মনে আছে তুমি একদিন দেবানন্দের গৃহে ভাগবত শুনতে গিয়েছিলে? মধুর ভাগবত শ্লোকাবলী শুনে প্রেমে মূর্চ্ছিত হয়ে পড়েছিলে, দেবানন্দের অজ্ঞ ছাত্রগণ তোমাকে গৃহের বাইরে রেখে ছিল; তুমি দুঃখ পেয়ে গৃহে এসেছিলে। এ সব কথা শুনে শ্রীবাস মহাপ্রভুর শ্রীচরণে লুটিয়ে পড়লেন।
একদিন মহাপ্রভু নগর ভ্রমণ করতে করতে সাৰ্ব্বভৌমের পিতা মহেশ্বর। বিশারদ পণ্ডিতের জাঙ্গালে এলেন। সেখানে দেবানন্দ পন্ডিত বাস করতেন। তখন দেবানন্দ গৃহে ভাগবত পাঠ করছিলেন। মহাপ্রভু দূর থেকে শুনতে পেলেন। তাঁর পাঠ শ্রবণে প্রভুর ক্রোধ হল
কোপে বলে প্রভু-বেটা কি অর্থ বাখানে।
ভাগবত অর্থ কোন জন্মেও না জানে।।
গ্রন্থরূপে ভাগবত কৃষ্ণ অবতার।
—–
সবে পুরুষার্থ ভক্তি ভাগবতে হয়।
প্রেমরূপ ভাগবত চারিবেদে কয়।।
চারি বেদ–দধি, ভাগবত নবনীত।
মথিলেন শুকে, খাইলেন পরীক্ষিত।।
মোর প্রিয় শুক জানেন ভাগবত।
ভাগবতে কহে মোর তত্ত্ব অভিমত।।
মুঞি মোর দাস আর গ্রন্থ ভাগবতে।
যার ভেদ আছে তার নাশ ভাল মতে।।
-(চৈঃ ভাঃ মধ্য ২১।১৩-১৮)
মহাপ্রভু বললেন-ভক্তি ছাড়া ভাগবতের যারা অন্য অর্থ করে সে অধার্মিক ভাগবতের কিছুই জানে না। মহাপ্রভু ক্রোধ ভরে এই সমস্ত বলতে বলতে তাঁর গৃহাভিমুখে ধাবিত হলেন। ভক্তগণ মহাপ্রভুকে ধরলেন ও অনুনয় করতে লাগলেন। প্রভু পুনরায় বলতে লাগলেন
মহাচিন্তা ভাগবত সৰ্ব্বশাস্ত্রে গায়।
ইহা না বুঝিয়ে বিদ্যা তপ প্রতিষ্ঠায়।।
‘ভাগবত বুঝি’ হেন যা’র আছে জ্ঞান।
সে না জানে কভু ভাগবতের প্রমাণ।।
ভাগবতে অচিন্তা-ঈশ্বর বুদ্ধি যার।
সে জানয়ে ভাগবত-অর্থ-ভক্তিসার।।
–(চৈঃ ভাঃ মঃ ২১।২৩-২৫)
যিনি ভাগবতকে সাক্ষাৎ ঈশ্বর বুদ্ধি করেন। তিনি ভাগবত জানতে পারেন। ভাগবতের অর্থ একমাত্র ভক্তি প্রেম দ্বারা বুঝা যায়। ভাগবতের অর্থ বুঝতে হলে ভক্ত-ভাগবতের সেবা করতে হয়। মহাপ্রভু এ রূপ অনেক তত্ত্ব কথা বলে নগর ভ্রমণ করে গৃহে ফিরে এলেন। দেবানন্দ দূর থেকে এসব কথা শুনতে পেলেন। কিন্তু কিছু মনে করলেন না।
কিছুদিন বাদে মহাপ্রভু সন্ন্যাস গ্রহণ করে পুরী ধামে চলে গেলেন। তখন দেবানন্দের মনে নির্ব্বেদ হতে লাগল। এমন পুরুষের কাছে আমি একদিন গেলাম না? এমন মহাপ্রেমিক পুরুষকে চিনতে পারলাম না?
একদিন কুলিয়াতে শ্রীবক্রেশ্বর পন্ডিত এক ভক্তের গৃহে এলেন; তিনি রাত্রিকালে তথায় কীর্ত্তন ও নৃত্য করবেন-এ সংবাদ চারিদিকে ঘোষণা করা হল। সন্ধ্যা হতেই ভক্তগণ আসতে লাগলেন। সেই কথা শুনে দেবানন্দ স্থির থাকতে পারলেন না। তিনিও কীর্তনের স্থানে উপস্থিত হলেন। শ্রীবক্রেশ্বরের তেজোময় মূর্তি দেখে এবং মধুর কীর্ত্তন শুনে দেবানন্দ স্তম্ভিত হলেন। তিনি এক পার্শ্বে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলেন। যত রাত্রি হতে লাগল তত লোকের ভিড় বাড়তে লাগল। দেবানন্দ পন্ডিত তখন একখানি বেত্র হাতে নিয়ে ভিড় সামলাতে লাগলেন।
“বক্রেশ্বর পন্ডিত নাচেন যতক্ষণ।
বেত্র হস্তে আপনে বুলেন ততক্ষণ।।
-(চৈঃ ভাঃ অন্তঃ ৩৪৭৭)
নৃত্য করতে করতে বক্রেশ্বর পণ্ডিত যখন প্রেমে মুচ্ছিত হয়ে পড়েন তখন দেবানন্দ সাবধানে তাকে কোলে তুলে নেন। অঙ্গের ধূলা স্বীয় উড়নী দ্বারা ঝেড়ে দেন ও সে ধূলি অঙ্গে লেপন করেন। এভাবে সেদিন দেবানন্দের ভক্ত সেবা হল।
“কুলিয়ায় আইলেন বৈকুণ্ঠ ঈশ্বর।”
–(চৈঃ ভাঃ অন্তঃ ৩/৩৪৫)
নীলাচল হতে কুলিয়া নগৱে মহাপ্রভুর শুভাগমনে ভক্তগণের আনন্দের সীমা রইল না। মহাপ্রভুর শ্রীচরণ দর্শনের জন্য সকলে আসতে লাগলেন। পূর্ব্বে যাঁরা প্রভুর চরণে অপরাধ করেছিলেন তাঁরাও প্রভুর কাছে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগলেন। মহাপ্রভু সকলকে ক্ষমা করে সদুপদেশ দিতে লাগলেন। এমন সময় দেবানন্দ পন্ডিত মহাপ্রভুর শ্রীচরণ দর্শনে এলেন।
“দন্ডবৎ দেবানন্দ পন্ডিত করিয়া।
রহিলেন এক ভিতে সঙ্কোচিত হৈয়া।।”
(চৈঃ ডাঃ অন্তঃ ৩৪৯০)
মহাপ্রভুকে দন্ডবৎ করে দেবানন্দ পন্ডিত সঙ্কোচিত হয়ে একপাশে দাঁড়ায়ে রহিলেন। প্রভু তখন তাঁকে বলতে লাগলেন–তুমি যে আমার প্রিয় বক্রেশ্বরের সেবা করেছ তাতেই আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। সেই সেবার ফলে তুমি আমার কাছে আসতে পেরেছ। বক্রেশ্বর কৃষ্ণের পূর্ণ শক্তি। যে তাঁকে সেবা করে সে কৃষ্ণ-কৃপা লাভ করে। মহাপ্রভুর এ কথা শুনে ভক্তি গদ্‌গদ্ চিত্তে দেবানন্দ বলতে লাগলেন–তুমি ঈশ্বর; জীব উদ্ধারের জন্য নবদ্বীপে অবতীর্ণ হয়েছ। আমি পাপী দৈব দোষে তোমার শ্রীচরণ সেবা করি নাই। তোমার অহৈতুকী কৃপা থেকে এতদিন বঞ্চিত ছিলাম। হে সর্বভূতাত্মা অন্তর্যামী প্রভো! তুমি পরম দয়ালু । তুমি দয়া করে আমায় দর্শন দিয়েছ তাই দর্শন পেয়েছি ! হে করুণময়, আমাকে কিছু সদুপদেশ প্রদান কর ও ভাগবতের কি ব্যাখ্যা করব-কৃপা করে আমায় বলে দাও। দেবানন্দ পন্ডিতের বাক্য শুনে মহাপ্রভু বলতে লাগলেন–
শুন বিপ্র ! ভাগবতে এই বাখানিবা।
ভক্তি’ বিনা আর কিছু মুখে না আনিবা।।
আদি মধ্য অন্ত্যে ভাগবত এই কয়।
বিষ্ণু-ভক্তি নিত্য-সিদ্ধ অক্ষয় অব্যয়।।
—-
যেন রূপ মৎস্য কর্ম আদি অবতার।
আবির্ভাব তিরোভাব যেন তা সবার।।
এই মত ভাগবত কারো কৃত নয়।
আবির্ভাব তিরোভাব আপনেই হয়।।
ভক্তি যোগে ভাগবত ব্যাসের জিহ্বায়।
স্ফূর্ত্তি যে হইল মাত্র কৃষ্ণের কৃপায়।।
ঈশ্বরের তত্ত্ব যেন বুঝনে না যায়।
এই মত ভাগবত সর্ব শাস্ত্রে গায়।।
‘ভাগবত বুঝি’ হেন যা’র আছে জ্ঞান।
সেই না জানয়ে ভাগবতের প্রমাণ।।
অজ্ঞ হই’ ভাগবতে যে লয় শরণ।
ভাগবত অর্থ তা’র হয় দরশন।।
প্রেমময় ভাগবত—শ্রীকৃষ্ণের অঙ্গ।
তাহাতে কহেন যত গোপ্য কৃষ্ণ-রঙ্গ।।
-~(চৈঃ ভাঃ অন্তঃ ৩।৫০৫-৫১৬)
হে বিপ্র ! পূর্বে তুমি যে শ্রীবাস পন্ডিতের চরণে অপরাধ করেছিলে, তাঁর চরণ ধরে ক্ষমা প্রার্থনা কর। গ্রন্থ-ভাগবত ও ভক্ত-ভাগবত দুই সমান। ভক্ত ভাগবতের কৃপা হলে গ্রন্থ-ভাগবত স্ফূর্ত্তি হবে। দেবানন্দ তৎক্ষণাৎ শ্রীবাস পন্ডিতের চরণে লুটিয়ে পড়ে ক্ষমা চাইলেন। শ্রীবাস দেবানন্দকে আলিঙ্গন করলেন। দেবানন্দের অপরাধ দুর হল। চতুৰ্দ্দিকে ভাগবতগণ ‘হরি হরি’ ধ্বনি করতে লাগলেন। সে দিন থেকে শ্রীদেবানন্দ শ্রীমহাপ্রভুর ভক্তগণের মধ্যে একজন শ্রেষ্ঠ ভক্ত হলেন।
পৌষ কৃষ্ণৈকাদশী তিথি শ্রীদেবানন্দ পন্ডিতের তিরোভাব দিবস।
 
 
  • February 20-21, 2022 Puri, Odisha
  • 3rd of July in 2022 Balasore, Odisha
  • August 24-26, 2022 Kurukshetra, Haryana
  • October 7, 2022 Prayagraj, Uttar Pradesh
  • November 30 -1, 2022 Agartala, Tripura
  • December 3-4, 2022 Lalabazar, Assam
  • December 7, 2022 Guwahati, Assam
  • February 17-18, 2023 Baruipur, West Bengal
  • May 27-28, 2023 Patna, Bihar
  • June 26, 2023 Bhubaneswar, Odisha
  • November 26, 2023 Gaya, Bihar
  • February 8, 2024 Delhi
  • February 13-15, 2024 Balighai, Medinipur
  • March 19, 2024 Nabadwip, West Bengal
  • May 27 2024 Florida, USA
  • June 23-24, 2024 Baripada, Odisha
  • June 26-27, 2024 Paradeep, Odisha
  • June 29-30, 2024 Cuttack, Odisha
  • July 14, 2024 Chennai, Tamilnadu
  • August 31 2024 London
  • September 07 2024 London
  • September 08 2024 Berlin (Germany)
  • September 13 2024 Canada
  • September 14-15 2024 Rochester (USA)
  • September 21 2024 New Jersey (USA)
  • Upcoming Events