Disappearance Day of Srila Goswamipad

ভগবানের ভক্ত রূপটিই প্রচ্ছন্ন রূপ বলছেন,— সেব্য ভগবান এবং সেবক ভগবান। সেবক মানে ভক্ত, দুই ঈশ্বর হলেও সেব্য যখন সেবা শিক্ষা দেওয়ার ইচ্ছা করেন তখন ভক্তরূপ ধরেন। ভক্তরূপটি ভগবানের প্রিয় স্বরূপ, ভগবান সেবারূপে সকলের সেবা পূজা গ্রহণ করেন। আর যখন সেবক রূপ ধরেন তখন নিজে সেবা করে পুনঃ অন্যকে সেবা শিক্ষা দেন।
 
ভগবান যেমন মর্ত্যলোকে মর্ত্য মানবের ন্যায় লীলা বিলাস করেন। সেইরূপ ভক্তগণও মর্ত্য মানবরূপে সেবা শিক্ষা দিয়ে থাকেন। ভগবানের এই ছদ্মাবতার বা ভক্তাবতার যেকোন কুলেই হতে পারে, – যেমন পশুকুলে হনুমান, পক্ষীকুলে গরুড় ও যবনকুলে হরিদাস ঠাকুর। অতএব তাঁদের যদি পশু, পক্ষী, যবন বলা হয় তাহলে ভয়ানক অপরাধ হয়। ভক্ত যেকোন কুলেই আসুন না কেন, তিনি নিত্য, শুদ্ধ, চিন্ময় ও অপ্রাকৃত স্বরূপ, তাঁকে মর্ত্য বুদ্ধিতে অসূয়া—মাৎসর্য্য হিংসা ও দ্বেষ করলেই নরক গতি হবে। অতএর ভক্তের মহিমা অনন্ত অপার। এমনকি ভক্তের মহিমা কীর্তনের দ্বারা আত্মা নির্মল হয়ে ভক্তি লাভ হয়ে থাকে।
 
পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলায় “খাগদা” গ্রাম। এই গ্রামটিতে বহু মধ্যবিত্ত পরিবার এবং বিশেষ ধনাঢ্য শিক্ষিত লোকের নিবাস আছে এবং এই নগরটিতে শ্যামানন্দ বৈষ্ণব পরিবারের বহু বৈষ্ণব বসতি করেন। নবদ্বীপে বাবাজী গোস্বামীদের তথ্য গৌড়ীয় মঠের প্রভুপাদ শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী মহারাজের বহু শিষ্য গ্রামটিতে বসবাস করেন। এই গ্রামে বহু সাধু বৈষ্ণব সেবাপ্রাণ লোকের নিবাস আছে। অধিকন্তু এই গ্রামে অষ্টপ্রহর নামকীৰ্ত্তন, ভাগবত পাঠ, কৃষ্ণ লীলা যাত্রা প্রভৃতি প্রায় সময়ই হয়ে থাকে। এক কথায় গ্রামটি একটি ধর্মনগরী বললেও অত্যুক্তি হয় না।
 
ঐ নগরী হতে প্রায় দেড় মাইল দূরে চিরুলিয়ায় শ্রীভাগবত জনানন্দ মঠ অবস্থিত। বাংলা গত ১৩৩২ সালে ১৯শে চৈত্র ইংরাজী ১৯২৬ সন ২রা এপ্রিল ভাগবত জনানন্দ প্রভুর (ভবানী চরণ পাহাড়ী মহাশয়ের) দ্বিতীয় বার্ষিক বিরহ উৎসবে জগদগুরু প্রভুপাদ শ্রীশ্রীমভুক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী মহারাজ শ্রীভাগবত জনানন্দ মঠে শুভ বিজয় করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে অনুগামী ছিলেন ত্রিদণ্ডিস্বামী ভক্তিহৃদয় “বন” মহারাজ, শ্রীপাদ অনন্ত বাসুদের পরবিদ্যাভূষণ প্রভু, (শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিপ্রসাদ পুরীগোস্বামী), গৌড়ীয় সম্পাদক শ্রীমদ্ সুন্দরানন্দ বিদ্যাবিনোদ বি, এ, মহোদয়, শ্রীপাদ প্রণবানন্দ দাস ব্রহ্মচারী, শ্রীপাদ কুঞ্জবিহারী বিদ্যাভূষণ (ভক্তিবিলাস তীর্থ মহারাজ), শ্রীপাদ মহাজন দাসাধিকারী এম, এ, শ্রীপাদকৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী ও শ্রীপাদ প্রাণ দাসাধিকারী প্রভৃতি এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ, তথাকার জমিদার শ্রীযুত যতীন্দ্রমোহন পাহাড়ী তথা শ্রীযুত রমণীকান্ত মাইতি তত্তদ্ স্থানীয় অন্যান্য গ্রামের সজ্জনগণসহ প্রায় তিন হাজার ব্যক্তি প্রভুপাদকে অভ্যর্থনা জানান।
 
“খাগদা” গ্রামে পরম ভাগবত শ্রীপাদ আশ্রয়বিগ্রহ দাসাধিকারী (পঞ্চরাত্র ব্রাহ্মণ) নিবাস করতেন। তিনি একটি বিদ্যাপীঠের শিক্ষক ছিলেন, তিনি পরম ধার্মিক নীতি-পরায়ণ প্রভাবশালী ও পরোপকারী ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর পত্নীর নাম হৈমবতী দেবী। তিনিও পরম ভক্তিমতী—অতিথি-বৈষ্ণব সেবা পরায়ণা ছিলেন।
 
প্রতি বৎসর এই খাগদা গ্রামটিতে প্রভুপাদের প্রিয়জন— শ্রীপাদ ভক্তিবিবেক ভারতী মহারাজ, শ্রীপাদ ভক্তিবিলাস গভস্তীনেমী মহারাজ, শ্রীপাদ ভক্তিবৈভব সাগর মহারাজ, শ্রীপাদ ভক্তি বিচার যাযাবর মহারাজ এবং শ্রীমদ্ভক্তিকেবল ঔড়ুলোমী মহারাজ প্রভৃতি মহাভাগবতগণের সমাগম হোত। সেইকালে শ্রীপাদ আশ্রয়বিগ্রহ দাসাধিকারী মহোদয় অতি যত্ন সহকারে তাঁদের ভোজনাদি সেবায় তৃপ্ত করতেন। দাসাধিকারী মহোদয়ের সঙ্গে শ্রীমদ্ভক্তিপ্রসাদ পুরী গোস্বামী মহারাজের বিশেষ ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ছিল। শ্রীমক্তিশ্রীরূপ ভাগবত মহারাজ স্বয়ং তাঁর গৃহে শুভ পদার্পণ করেছিলেন।
 
দাসাধিকারী মহোদয় এই সকল মহাভাগবতগণের সেবা তৃপ্তি দানে প্রচুর কৃপাশীৰ্ব্বাদ প্রাপ্ত হ’ন। যেন সেই কৃপা আশীর্ব্বাদের ফলস্বরূপ তাঁর গৃহে “শ্রীল গোস্বামিপাদ” আবির্ভূত হন।
 
শ্রীপাদ আশ্রয়বিগ্রহ দাসাধিকারী এবং তাঁর সহধর্মিণী শ্রীহৈমবতী দেবী শ্রীমদ্ভক্তিকেবল ঔড়ুলোমী মহারাজের শ্রীহরি নামাশ্রিত এবং দীক্ষিত শিষ্য ছিলেন।
 
অতঃপরে ইংরাজী ১৯৪৭ সনে, ফাল্গুন মাসে কৃষ্ণত্রয়োদশী তিথি মঙ্গলবারে শ্রবণী নক্ষত্রে বৃশ্চিক লগ্নে মকর রাশিতে দেবগণে শুভক্ষণে বৈকালে হরিপ্রেষ্ঠ শ্রীল গোস্বামীপাদ জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালে গৃহস্থিত বধূগণ আনন্দ ভরে শুভ উলুধ্বনিতে গৃহখানি মুখরিত করেছিলেন। শ্রীহৈমবতী দেবী ও দাসাধিকারী মহোদয় প্রথম পুত্রের মুখ দর্শনে অতিশয় হর্ষান্বিত হয়ে উঠলেন। পুত্র জন্মেরাশৌচান্তে দাসাধিকারী মহোদয় প্রথমে তাঁদের গ্রামের বৈষ্ণবী দেবী শ্রীবাসুলী দেবীর কাছে পূজা দেন এবং ভাগবত জনানন্দ মঠের শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও শ্রীরাধা গোবিন্দের শ্রীবিগ্রহগণের সেবার জন্য ও বৈষ্ণব সেবার উদ্দেশ্যে সিধা প্রদান করেন।
 
ছয় মাস পরে অন্নপ্রাশন হবে, দাসাধিকারী মহোদয় সামাজিক অনুষ্ঠান পরিহার করে ভাগবত জনানন্দ মঠেই এই উৎসবের আয়োজন করেন। শ্রীবিগ্রহগণের ভোগ, রাগ অন্তে শ্রীরাধাগোবিন্দের ও শ্রীজগন্নাথ দেবের মহাপ্রসাদ শ্রীপাদ পরমার্থী মহারাজ শিশুর মুখে প্রদান করেন। তখন জয় জয় ধ্বনি, শঙ্খ ধ্বনি ও নারীগণের উলুধ্বনিতে চতুর্দিক নিনাদিত হয়ে উঠল তারপর রুচি পরীক্ষায় শিশুটি যখন শ্রীমল্লগবত গ্রন্থের উপর কোমল করাঙ্গুলী স্থাপন করেন তখন সকলে করতালি ও জয় জয় ধ্বনি করে বলেছিলেন—এই শিশু কালে ভাগবত পণ্ডিত হবে। সেই সময়ই নামকরণ অনুষ্ঠানে নামরাখা হলো শ্রীকৃষ্ণপদ দাস।
 
তারপর চার বৎসর বয়সে ভাগবত জনানন্দ মঠে তাঁর হাতে খড়ি হয়। শ্রীপাদ জনাদন মহারাজ বালকের হাতে খড়ি দিলেন। তৎকালে বালকের বিদ্যাভ্যাসের একাগ্রতা দর্শনে সকলে বুঝতে পেরেছিলেন, – বালক ভবিষ্যতে বিধান হবে। বাল্যাবস্থায় ভাগবত জনানন্দ মঠে বার বার আসতে চাইতেন এবং প্রসাদ পাবার জন্য বড় লালায়িত ছিলেন। পিতা-মাতার সঙ্গ ছাড়াও গ্রামবাসী বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে প্রসাদ পাবার জন্য মঠে চলে আসতেন। খেলা ধূলায় বিশেষ মন ছিল না কিন্তু পড়াশুনায় খুব মন লাগাতেন। পিতা-মাতাকে ভজন করতে দেখলে তিনি নিজেও বসে যেতেন স্থিরভাবে ভজন করতে।
 
শ্রীল গোস্বামি পাদ খাগদা গ্রামের প্রাইমারী স্কুল হতে পাশ করার পর কালিন্দী হাইস্কুলের ৮ম শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষায় তিনটী বিষয়ে লেটার পেয়েছিলেন। তজ্জন্য এবং তাঁর মেধার ফলস্বরূপ সম্মান পুরঃসর হোষ্টেল খরচ মাপ ছিল এবং পরবর্তী উচ্চ অধ্যয়ন সুযোগ লাভের জন্য প্রতি মাসে ৪৫ টাকা করে স্কলারশিপ পেতে থাকেন। তারপর কালান্তে কলিকাতা সূৰ্য্যসেন স্ট্রীটে অবস্থিত সি, টি, কলেজ হতে বি, কম, পাশ করেন। তিনি সেই সময় প্রাইভেট টিউশনি করে নিজের ব্যয় ভার গ্রহণ করতেন।
 
শ্রীল গোস্বামিপাদ দীন দুঃখীদের প্রতি বিশেষ যত্নবান ও অপ্রিয় সত্যবাদী ছিলেন। ছাত্রাবস্থায় গোস্বামিপাদ গ্রামের বিভিন্ন উন্নতিমূলক কাৰ্য্যে যোগদান করতেন। একসময় বন্যায় পীড়িত গ্রামবাসীদিগের শ্রীল গোস্বামিপাদ দীন দুঃখীদের প্রতি বিশেষ যত্নবান ও অপ্রিয় সত্যবাদী ছিলেন। ছাত্রাবস্থায় গোস্বামিপাদ গ্রামের বিভিন্ন উন্নতিমূলক কার্য্যে যোগদান করতেন। একসময় বন্যায় পীড়িত গ্রামবাসীদিগের জন্য কলিকাতা হতে চাঁদা তুলে এনে সহায়তা করেছিলেন। তিনি খাগদা গ্রামে “খাগদা পল্লীশ্রী হাইস্কুল” (পল্লীশ্রী) নাম নিয়ে একটি বিদ্যাপীঠ স্থাপনে সহায়তা করেন। অদ্যাপিও সেই স্কুল সম্মানের সহিত চলিতেছে।
 
ইংরেজী ১৯৬৯ সালে তিনি নবদ্বীপে গোতম ধামে আগমন করেন এবং শ্রী গুরু মহারাজের শ্রীমুখ হতে কয়েকদিন যাবৎ “শ্রীহরিকথা” শ্রবণ করে বড়ই উল্লসিত হন। অতঃপর শ্রীশ্রীজগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজের অপ্রকট উৎসব বাসরে শ্রীহরিনাম গ্রহণ করেন। ঠিক কয়েকমাস পরেই শ্রীগৌরজয়ন্তী বাসবে শ্রীগৌড়ীয় মঠে দীক্ষা প্রাপ্ত হন। তখন তাঁর নাম হ’ল “কমলাক্ষ দাস ব্রহ্মচারী”। দীক্ষা লাভের পরেই তিনি বৈষ্ণর পিতা-মাতার অনুমতি ও আশীর্ব্বাদ নিয়ে শ্রীগুরুগৌরাঙ্গের সেবায় সুদৃঢ় ব্রতী হইয়া মঠবাস করেন ।
 
তিনি অনলস ভাবে মঠের বিভিন্ন সেবা কার্যাদি করতেন। এরপর হইতেই শ্রীল গুরু মহারাজের নির্দেশ মত তিনি পুরী, কটক, এলাহাবাদ, বোম্বে ও লক্ষ্ণৌ প্রভৃতি স্থানে প্রাণ দিয়ে বিবিধ সেবা কার্য করেন। অতঃপর আলালনাথ ব্রহ্মগিরি গৌড়ীয় মঠের মঠরক্ষক রূপে নিযুক্ত হন। সেখানে পরম উৎসাহ সহকারে কিছুদিন সেবা কার্য করেছিলেন। তথা হতে তাঁকে কিছুদিনের জন্য কলিকাতা বাগবাজার গৌড়ীয় মঠের সেবায় নিযুক্ত করা হয়। বহুদিন পর্যন্ত বাগবাজার গৌড়ীয় মঠের শ্রীমন্দির সংস্কার হয়নি। তজ্জন্য শ্রীল আচার্য্যপাদ ভক্তিশ্রীরূপ ভাগবত মহারাজ খুব চিন্তিত ছিলেন। শ্রীপাদ কমলাক্ষ দাস প্রভু তৎকালে কলিকাতার কয়েকজন ধনাঢ্যজনের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ভিক্ষা করে এনে ভাগবত মহারাজের হাতে দিলেন। আচাৰ্যাপাদ সেই টাকা দিয়ে গৌড়ীয় মঠের সংস্কার করেছিলেন। তিনি গুরুরবৈষ্ণাবগণের সেবার জন্য অনেক বড় বড় ধর্মী মানী লোকদের শ্রীহরিসেবায় অনুপ্রাণিত করেছিলেন। শ্রীগুরু মাহারাজ চার বৎসর কাল কাছে রেখে ভজনের অনেক লীলা রহস্য তাঁকে শ্রবণের সুযোগ প্রদান করেন।
 
১৯৮০ সনে পাশ্চাত্য দেশে লণ্ডন মঠের অধ্যক্ষ শ্রীযুক্তা বিনোদবাণী দাসী অপ্রকট হইলে উক্ত মঠ বাড়ীটি ঐ দেশের সরকারের হাতে চলে যায়, তখন শ্রীকমলাক্ষ দাস ব্রহ্মচারীকে মিশনের সকল কাগজ-পত্র দিয়া লণ্ডন মঠে পাঠান হয়েছিল। তিনি সেই মঠের মঠরক্ষক হয়ে লণ্ডন বাসুদেব গৌড়ীয় মঠকে মিশনের অন্তবর্তী অন্যতম শাখারূপে লণ্ডন হাইকোর্ট থেকে নির্ণয় করিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি প্রায় দশ বৎসর কাল তথাকার দায়িত্বে থেকে বহু সেবা সম্পাদন করেন। কিছুদিন পরে তিনি ভারতে ফিরে এলেন।
 
অতঃপর ১৯৮২ সালের ৬ই জানুয়ারী বুধবার রাত্রে শ্রীহরিবাসর তিথিতে পরমারাধ্যতম শ্রীল গুরু মহারাজ গোদ্রুম ধামে নিজ ভজন কুটীরে নিকুঞ্জ লীলায় প্রবেশ করবার পর ১৯৮২ সালের ৯ই জানুয়ারী গোদ্রুম ধামে শ্রীল গুরু মহারাজের বিরহ সভায় গৌড়ীয় মঠের উপস্থিত শিষ্যবর্গ শ্রীল আচার্য্য্যপাদকে উপযুক্ত কর্ণধাররূপে মনোনীত করেন। তারপর ১৯৮২ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী কলিকাতা গৌড়ীয় মঠে সৰ্ব্বসম্মতিক্রমে শ্রীল ভক্তিশ্রীরূপ ভাগবত মহারাজকে আচার্য্যরূপে বরণ করা হয়।
 
অতঃপর শ্রীল আচার্য্যপাদ ১৯৮৩ সালে শ্রীগৌরজয়ন্তী দিবসে কতিপয় বিশিষ্ট বৈষ্ণবগণকে ত্রিদণ্ডী সন্ন্যাস প্রদান করেন। তার মধ্যে শ্রীপাদ কমলাক্ষ দাস ব্রহ্মচারী ত্রিদণ্ডী ভিক্ষু শ্রীমদ্ ভক্তিসুহৃদ পরিব্রাজক মহারাজ নাম প্রদান করেন। অনন্তর তাঁকে লণ্ডনে পাঠানো হয়। বোম্বে নূতন মন্দির নির্মাণ কালে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়েছিল। তৎকালে শ্রীল আচার্য্যপাদ কিছু অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে লণ্ডনে ভক্তিসুহৃদ্ পরিব্রাজক মহারাজের কাছে একখানি পত্র সহিত একজন সেবককে প্রেরণ করেন। ভগবৎ কৃপায় পরিব্রাজক মহারাজ অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই লণ্ডন হইতে কয়েক লক্ষ টাকা ভিক্ষা করিয়া ঐ লোক মারফতে আচার্য্যপাদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। শ্রীল আচাৰ্য্যপাদ সেই অর্থ দিয়া বোম্বে মঠের জন্য জমি ক্রয় করেছিলেন।তদপশ্চাৎ বোম্বে মঠ তৈরী ও মন্দির নির্মাণ কালেও শ্রীল গোস্বামিপাদ বহু অর্থ ভিক্ষা করে পাঠিয়েছিলেন। বোম্বেতে শ্রীমন্দির নির্মাণ সেবায় ইঁহার অবদান অত্যধিক ছিল।
 
শ্রীল গোস্বামিপাদ গুরুবর্গের মনোভিষ্ট কার্যো সর্বক্ষণ তৎপর ছিলেন। একসময় তিনি শ্রীল ভক্তিশ্রীরূপ ভাগবত মহারাজকে কতিপয় তদ্‌ শিষ্যসহ আহ্বান করে নিয়ে গেলেন লণ্ডন মঠে। শ্রীল আচার্যপাদ সেখানে কয়েকদিবস ব্যাপি শ্রীহরিকথা কীর্তন করে তথাকার বহু সজ্জনকে মনাকৃষ্ট করেন।
 
শ্রীল আচার্য্যপাদ তাকে কাছে রেখে গৌড়ীয় সিদ্ধান্তসমূহ বিশেষভাবে শিক্ষা দিয়েছিলেন। শ্রীল আচার্য্যাপাদ অপ্রকট হওয়ার পূর্ব্বেই ভবিষ্যৎ গৌড়ীয় মিশনের আচার্য্যপন কে গ্রহণ করবেন? হয়ত তদ্বিষয়ে বাদানুবাদ হবে। সেইজন্য তিনি স্বয়ং নিজ হস্তে এক পত্র লিখে গেলেন। যথাঃ- “আমার অপ্রকটের পর গৌড়ীয় মিশনের আচার্য্য পদে অভিষিক্ত হবে—শ্রীভক্তিসুহৃদ্ পরিব্রাজক মহারাজ (I do hereby nominate this day Bhakti Suhrid Paribrajak Maharaj) dt. 23-07-1989,
 
শ্রীল আচার্য্যপাদ ভক্তিশ্রীরূপ ভাগবত মহারাজ বোম্বে নব-নির্মিত গৌড়ীয় মঠের দ্বারোদঘাটন এবং মন্দিরে শ্রীবিগ্রহগণের প্রবেশ উৎসব উপলক্ষ্যে শুভাগমন করেন। ইং ১৯৯৩ সনের ১০ই নভেম্বর তারিখে মহাসমারোহে শ্রীবিগ্রহগণের প্রবেশোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবে ভারতবর্ষের প্রায় সকল গৌড়ীয় মঠের মঠাধ্যক্ষগণ আগমন করেন। উৎসব দিবসে বিপুল জনসমাগমে আচার্য্যপাদের নির্দেশানুসারে সবপ্রথমে শ্রীপাদ পর্বত মহারাজ ভাষণ দেন। তৎপশ্চাৎ শ্রীল গোস্বামিপাদ ইংরেজী ভাষায় এক মনোমুগ্ধকর ভাষণ প্রদান করেন। অতঃপর শ্রীল আচার্য্যপাদ হিন্দী ভাষায় বক্তৃতা প্রদান করেন। এই উৎসবের পর শীঘ্রই শ্রীল গোস্বামিপাদ লণ্ডনে প্রত্যাবর্তন করেন।
 
গত ইং ১২।২।৯৩ তারিখ শনিবারে শ্রীল আচার্য্যাপাদ অপ্রকট লীলায় প্রবেশ করেন। তৎ শ্রবণে শ্রীল গোস্বামিপাদ শীঘ্রই অতিশয় বিরহ ব্যাকুল হৃদয়ে ভারতে আগমন করেন এবং গোদ্রুম ধামে শ্রীল আচার্য্যাপাদের সমাধি পীঠে দণ্ডবত প্রণাম করে আর্ত ক্রন্দন করেন এবং তাঁর মহিমা কীর্ত্তন করতে থাকেন। সমাধি পীঠে কয়েকদিন ধরে তাঁর গুণাবলী কীৰ্ত্তিত হয়।
 
শ্রীল আচার্য্যপাদের হস্তলিপি অনুসারে ইং ১৯৯৩ সনের ১৬ই ফেব্রুয়ারী কলিকাতা গৌড়ীয় মঠে পূজ্যপাদ শ্রীপাদ ভক্তিসুহৃদ্ পরিব্রাজক মহারাজ গৌড়ীয় মিশনের গভর্ণিং বড়ির আইন অনুসারে এবং যাবতীয় সন্ন্যাসী, ব্রহ্মচারী ও গৃহস্থ ভক্তগণের অনুমোদনে আচার্য্য আসন স্বীকার করেন। সেইদিন থেকে তিনি “শ্রীল গোস্বামিপাদ” এই নামে সম্বোধিত হন।
 
শ্রীভক্তিসুহৃদ পরিব্রাজক মহারাজ সর্বাগ্রে সমস্ত গুরুবর্গের আলেখ্যকে প্রণাম ও দণ্ডবৎ করেন। অনন্তর সমবেত সকল বৈষ্ণব বৈষ্ণবীগণকে দণ্ডবৎ প্রণাম করে “গুরু আসন” স্বীকার করেন। তদানীন্তন সেক্রেটারী শ্রীপাদ গোস্বামী মহারাজ তাঁকে অভ্যর্থনা জানাইয়া কণ্ঠে পুষ্পমালা প্রদান করেন; মাল্য প্রদানের পর তিনি জয়ধ্বনি প্রদান করেন। “জয় বৰ্ত্তমান গৌড়ীয় মিশনের সভাপতি ও আচার্য্য ও বিষ্ণুপাদ শ্রীশ্রীমদ্ ভক্তিসুহৃদ পরিব্রাজক মহারাজ কি জয়” – তৎকালে জয়ধ্বনিতে চতুৰ্দ্দিকে সকলেই আনন্দ, উল্লাস ও জয়ধ্বনিতে মুখরিত করে তোলেন।
 
“কলিযুগে যুগধর্ম নাম সঙ্কীৰ্ত্তন।
কৃষ্ণশক্তি কিনা তাহা নহে প্ৰবৰ্ত্তন।।”
 
শ্রীল গোস্বামিপাদ আচাৰ্য্য পদে অভিষিক্ত হবার পর ৫/৬ জন ব্রহ্মচারী সন্ন্যাসী সঙ্গে লয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গ্রামে গৌর নাম প্রচার করতে বের হ’ন। তথা হইতে আসাম অভিমুখে যাত্রা করেন। সেখান থেকে উড়িষ্যার দিকে প্রচার করতে যান। উড়িষ্যার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচার করবার পর তিনি বিহার ও উত্তরপ্রদেশের মঠগুলিতে পরিভ্রমণ করে বোম্বের দিকে যাত্রা করেন। কয়েকদিন যাবৎ বিপুলভাবে বোম্বে প্রদেশে প্রচার কার্য্য পরিচালনা করে পুনঃ লণ্ডন অভিমুখে যাত্রা করেন।
 
শ্রীল গোস্বামিপাদ “স্বরূপ রূপানুগ” ধারায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে সুদৃঢ় অচল অটল ভাবে শ্রীগুরু পাদপদ্ম ও শ্রীগোবিন্দ চরণ স্মরণ করে সরল প্রাণে গৌরবাণী প্রচারে রত আছেন। তাঁর গৌরবাণী প্রচার ফলে ভারত তথা পাশ্চাত্য দেশে বহু শ্রদ্ধালু সজ্জন আকৃষ্ট হয়ে হরিভজনে প্রবৃত্ত হয়েছেন। জয় শ্রীশ্রীগুরুগৌরাঙ্গ গান্ধবিকা গিরিধারী কি জয় ! জয় শ্রীশ্রীল গোস্বামিপাদ কি জয়। জয় শ্রীশ্রীগৌর-পার্ষদবৃন্দ কি জয়।।
 
 
 
 
 
 
  • February 20-21, 2022 Puri, Odisha
  • 3rd of July in 2022 Balasore, Odisha
  • August 24-26, 2022 Kurukshetra, Haryana
  • October 7, 2022 Prayagraj, Uttar Pradesh
  • November 30 -1, 2022 Agartala, Tripura
  • December 3-4, 2022 Lalabazar, Assam
  • December 7, 2022 Guwahati, Assam
  • February 17-18, 2023 Baruipur, West Bengal
  • May 27-28, 2023 Patna, Bihar
  • June 26, 2023 Bhubaneswar, Odisha
  • November 26, 2023 Gaya, Bihar
  • February 8, 2024 Delhi
  • February 13-15, 2024 Balighai, Medinipur
  • March 19, 2024 Nabadwip, West Bengal
  • May 27 2024 Florida, USA
  • June 23-24, 2024 Baripada, Odisha
  • June 26-27, 2024 Paradeep, Odisha
  • June 29-30, 2024 Cuttack, Odisha
  • July 14, 2024 Chennai, Tamilnadu
  • August 31 2024 London
  • September 07 2024 London
  • September 08 2024 Berlin (Germany)
  • September 13 2024 Canada
  • September 14-15 2024 Rochester (USA)
  • September 21 2024 New Jersey (USA)
  • Upcoming Events