
Disappearance Day of Srila jaydeb Goswami
বঙ্গদেশাধিপতি শ্রীলক্ষ্মণ সেনের সভাপণ্ডিত ছিলেন শ্রীজয়দেব। পিতার নাম ভোজদেব ও মাতার নাম বামাদেবী। বীরভূম জেলায় কেন্দুবিল্ব নামক গ্রামে একাদশ শতাব্দীতে শ্রীজয়দেব জন্মগ্রহণ করেন।
শ্রীজয়দেবের পত্নীর নাম শ্রীপদ্মাবতী। শ্রীলক্ষ্মণ সেন রাজার যখন সভাপণ্ডিত ছিলেন তখন তিনি নবদ্বীপে গঙ্গাতটে বাস করতেন। শ্রীলক্ষ্মণ সেনের সভাপণ্ডিত শ্রীজয়দেব ছাড়া আরও তিন জন ছিলেন। শ্রীজয়দেব শ্রীগীত-গোবিন্দ গ্রন্থে তাঁদের নাম উল্লেখ করেছেন—শ্রীউমাপতিধর, আচাৰ্য্য শ্রীগোবর্দ্ধন ও কবি-ক্ষ্মাপতি। এঁরা সকলেই মহাকবি শ্রীজয়দেবের মিত্র।
মহাপ্রভুর প্রায় তিন শত বছর পূর্ব্বে শ্রীজয়দেব বঙ্গদেশ সমলঙ্কৃত করেন। তিনি শ্রীগীত-গোবিন্দ গ্রন্থ রচনা করেন—
চন্ডীদাস, বিদ্যাপতি
রায়ের নাটক গীতি
কর্ণামৃত, শ্রীগীতগোবিন্দ।
স্বরূপ-রামানন্দ-সনে
মহাপ্রভু রাত্রি-দিনে
গায় শোনে—পরম আনন্দ।।
(চৈঃ চঃ মধ্যঃ ২|৭৭)
শ্রীজয়দেবেকৃতহরিসেবে ভণতি পরমরমণীয়ম্।
প্রমুদিতহৃদয়ং হরিমতিসদয়ং নমত সুকৃত কমনীয়ম্।।
এই গীত-গোবিন্দ গ্রন্থ শ্রীরাধা গোবিন্দের শৃঙ্গার রসময়ী গ্রন্থ ; ইহা একমাত্র সুকৃতিশালী জনের সেব্য।
যদি হরি স্মরণে সরসং মনো যদি বিলাস কলামু কুতূহলম্।
মধুর কোমল কান্ত পদাবলীং শৃনু তদা জয়দেব সরস্বতীম্।।
যাঁদের মন শ্রীহরির লীলা-স্মরণে সরস, শ্রীহরির দিব্য লীলাবলী শ্রবণের জন্য ব্যাকুল তাঁরা শ্রীজয়দেব সরস্বতী লিখিত এ মধুর পদাবলী শ্রবণ করুন।
কবি শ্রীজয়দেবের চরিত সম্বন্ধে বহু কিংবদন্তী আছে। তা কতটা সত্য সুধীগণ বলতে পারেন। এস্থলে একটী কিংবদন্তী উল্লেখ করছি— তিনি শ্রীগীত গোবিন্দে কলহান্তরিতা নায়িকার কথা লিখতে গিয়ে অনেক কথা চিন্তা করতে থাকেন। পরে ভেবে ঠিক করে দ্বিপ্রহরে গঙ্গায় স্নান করতে যান। ঠিক এ সময় শ্রীহরি কবি শ্রীজয়দেবের বেশ নিয়ে সে পদ যথাস্থানে লিখে অন্তর্হিত হলেন। শ্রীজয়দেব এ-সময় গঙ্গা স্নান করে ফিরে এলেন। শ্রীপদ্মাবতী দেবী একটু আশ্চর্য হলেন। শ্রীজয়দেব তাঁর পুঁথি খুলে দেখলেন, যে-কথা তিনি ভাবতে ভাবতে স্নানে গিয়েছিলেন, ঠিক সে কথা স্বর্ণাক্ষরে কে তথায় লিখে রেখেছে। পদ্মাবতীকে জিজ্ঞাসা করলেন, —তিনি বললেন একটু আগেই ত’ আপনি নিজে এসে লিখে গেলেন। শ্রীজয়দেব শুনে অবাক। তাঁর নয়ন দিয়ে প্রেমাশ্রু ঝরতে লাগল, তিনি রহস্য বুঝতে পারলেন। প্রেমে গদ্গদ কণ্ঠে বললেন— পদ্মাবতী! তুমি ধন্যা। শ্রীহরির লিখিত পদ— “দেহি পদপল্লবমুদারম্।”
শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয় লিখেছেন—যদিও শ্রীমদ্ গৌরাঙ্গ দেবের বাহ্য-প্রকাশ তখনও হয় নাই, তথাপি কবি শ্রীজয়দেব, শ্রীবিল্বমঙ্গল, শ্রীচণ্ডীদাস ও শ্রীবিদ্যাপতি প্রভৃতি শুদ্ধ ভক্তগণের হৃদয়ে মহাপ্রভুর ভাব উদিত হয়েছিল।
কবি শ্রীজয়দেবের গীত-গোবিন্দ গ্রন্থ ছাড়াও ‘চন্দ্রলোক’ নামে আর একখানি গ্রন্থ দৃষ্ট হয়ে থাকে।
শ্রীগীতগোবিন্দ -দশাবতার গীত
[ মালব গৌড় রাগ, রূপক তাল ]
প্রলয়-পয়োধিজলে ধৃতবানসি বেদং
বিহিত-বহিত্র-চরিত্রমখেদম্।
কেশব ধৃত মীন-শরীর জয় জগদীশ হরে।।১।।
ক্ষিতিরিহ বিপুলতরে তিষ্ঠতি তব পৃষ্ঠে
ধরণীধরণণি-চক্রগরিষ্ঠে।
কেশব ধৃত কূর্মশরীর জয় জগদীশ হরে।।২।।
বসতি দশন-শিখরে ধরণী তব লগ্না
শশিনি-কলঙ্ককলের নিমগ্না।
কেশব ধৃত-শূকররূপ জয় জগদীশ হরে।।৩।।
তব করকমলবরে নখমদ্ভুত শৃঙ্গং
দলিত-হিরণ্যকশিপুতনু ভৃঙ্গম্।
কেশব ধৃত নরহরিরূপ জয় জগদীশ হরে।।৪।।
ছলয়সি বিক্রমণে বলিমদ্ভুত-বামন
পদনখনীর-জনিত-জন-পাবন।
কেশব ধৃত-বামনরূপ জয় জগদীশ হরে।।৫।।
ক্ষত্রিয়-রুধির ময়ে-জগদপগতপাপং
স্নপয়সি পয়সি শমিতভবতাপম্।
কেশব ধৃত-ভৃণ্ডপতিরূপ জয় জগদীশ হরে।।৬।।
বিতরসি দিক্ষু রণে দিপতি-কমনীয়ং
দশমুখমৌলিবলিং রমণীয়ম্।
কেশব ধৃত-রামশরীর জয় জগদীশ হরে।।৭।।
বহুসি বপুষি বিশদে বসনং জলদাভং
হলহতি-ভীতি-মিলিত যমুনাভম্।
কেশব ধৃত হলধররূপ জয় জগদীশ হরে।।৮।।
নিন্দসি যজ্ঞবিধেরহহ শ্রুতিজাতং
সদয়হৃদয়-দর্শিত পশুঘাতম্।
কেশব ধৃত-বুদ্ধশরীর জয় জগদীশ হরে।।৯।৷
ম্লেচ্ছনিবহ-নিধনে কলয়সি করবালং
ধুমকেতুমিব কিমপি করালম্
কেশব ধৃত-কল্কিশরীর জয় জগদীশ হরে।।১০।।
শ্রীজয়দেব-কবেরিদমুদিতমুদারং
শৃণু সুখদং শুভদং ভবসারম্।
কেশব ধৃত দশবিধরূপ জয় জগদীশ হরে।।১১।
বেদানুদ্ধরতে জগন্তি বহুতে ভূগোলমুদবিভ্রতে
দৈত্যং দারয়তে বলিং ছলয়তে ক্ষত্ৰক্ষয়ং কুৰ্ব্বতে।
পৌলস্তং জয়তে হলং কলয়তে কারুণ্যমাতন্বতে
ম্লেচ্ছান্ মূৰ্চ্ছয়তে দশাকৃতিকৃতে কৃষ্ণায় তুভ্যং নমঃ।।
পৌষ সংক্রান্তিতে তিনি অপ্রকট হন। অদ্যাপি কেন্দুবিল্ব গ্রামে এ সংক্রান্তিতে মহোৎসব এবং ‘জয়দেব মেলা’ নামে মেলা হয়।