jiva goswami Gaudiyamission Gaudiya jivagoswami

Disappearance Day of Srila Jiva Goswami Prabhu

শ্রীসনাতন, শ্রীরূপ ও শ্রীঅনুপম এই তিন ভাইয়ের মহৈশ্বর্য্যময় সংসারে একমাত্র পুত্র–শ্রীজীব। শিশুটির পালনের পরিপাটির অন্ত ছিল না। শিশুর গৌরবর্ণ অঙ্গকান্তিতে গৃহ আলোকিত হত। দীঘল নয়নে কি সুন্দর চাহনি—প্রতিটী অঙ্গে লাবণ্যের ছটা। রামকেলিতে শ্রীগৌরসুন্দর শুভাগমন করলে শিশুটি স্বীয় ইষ্টদেবের দর্শন-সৌভাগ্য লাভ করেন। তখনই মহাপ্রভু তাকে শ্রীচরণ-রজঃ দিয়ে ভবিষ্যৎ গৌড়ীয় সম্প্রদায়ের আচার্য্য-সম্রাট পদে অভিষিক্ত করেন। যদ্যপি শ্রীজীব তখন অতি শিশু, মহাপ্রভুর ভুবনমোহন রূপটি যেন তিনি দৃঢ়ভাবে হৃদয়ে ধারণ করলেন। শিশুর ভোজনে, শয়নে, স্বপনে ও জাগরণে সর্ব্বদা সে দিব্য রূপের চিন্তা হত।
 
অতঃপর শ্রীজীবের পিতা অনুপম, শ্রীরূপ ও শ্রীসনাতন তিন জন একই সময়ে সেই মহৈশ্বৰ্য্যপূর্ণ আনন্দ কোলাহল মুখরিত সংসার থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলেন। একমাত্র শিশু জীব ফতেয়াবাদে বিশাল রাজপ্রাসাদে শোকাশ্রুসিক্তা জননীর ক্রোড়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে লাগলেন। জননীর ও শিশুর ক্রন্দনে বন্ধু-বান্ধবগণের হৃদয়ে বিষাদের ছায়া পড়েছিল, তারা খুব কষ্টে তাঁদের সান্ত্বনা দিতে লাগলেন।
 
শিশু শ্রীজীবের হৃদয়ে জেগে উঠে পিতৃব্যদ্বয়ের কথা ও পিতৃদেবের কথা। আবার তার সঙ্গে জাগে প্রেমময় গৌরহরির কথা; তখন আর ধৈর্য্য ধারণ করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে ভূমিতে পড়তেন। শ্রীকৃষ্ণ সম্বন্ধ বিনা অন্য ক্রীড়াদি জানতেন না। শ্রীরামকৃষ্ণের মূর্ত্তিকে সুন্দর সাজাতেন, পুজা করতেন, নৈবেদ্য দিতেন, অনিমেষ নয়নে শ্রীমূর্ত্তি দর্শন করতেন ও দন্ডবৎ প্রণতি হতেন ভূতলে পড়ে।
 
“শ্রীজীব বাল্যকালে বালকের সনে।
শ্ৰীকৃষ্ণ-সম্বন্ধ বিনা খেলা নাহি জানে।।”
 
–(ভঃরঃ ১।৭১৯ )
 
গৃহে পণ্ডিতগণ-স্থানে শ্রীজীব অল্পকাল মধ্যে ব্যাকরণ, কাব্য ও অলঙ্কারাদি শাস্ত্রে বিশেষ জ্ঞান লাভ করেন। তাঁর অসাধারণ মেধা দেখে অধ্যাপকগণ বলতেন—এরূপ মেধাবী নর-শিশু সচরাচর দেখা যায় না। এ শিশু কালে মহাপুরুষ হবে। শ্রীজীব বাল্যকালে অধ্যয়ন করতে করতে শ্রীগৌর নিত্যানন্দের কথা চিন্তা করতেন। একদিন শ্রীজীব স্বপ্নে দেখলেন শ্রীরাম ও কৃষ্ণ যেন নিতাই গৌররূপে নৃত্য করছেন।
 
“শ্রীজীবের মনে হৈল মহা চমৎকার।
অনিমিষনেত্রে শোভা দেখয়ে দোহাঁর।।”
 
– (ভঃরঃ ১।৭৩২)
 
করুণাময় শ্রীগৌরাঙ্গ-নিত্যানন্দ শ্রীজীবকে চরণের ধুলি দিয়ে আশীৰ্ব্বাদ পুর্ব্বক অন্তর্ধান হলেন। শ্রীজীবের স্বপ্ন ভঙ্গ হল, তিনি অন্তরে একটু আশ্বস্ত হলেন। মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন-সংসার ত্যাগ করে কবে একান্তভাবে মহাপ্রভুর সেবা করতে পারবেন। শ্রীজীব সংসারে একমাত্র পুত্র;জননী তাঁর বদন পানে চেয়ে সব দুঃখ ভুলে আছেন।
 
পিতৃব্যদ্বয় ও পিতা শ্রীবৃন্দাবন ধামে আছেন—শ্রীজীব এতাবৎকাল এরূপ ভাবনা করতেন। যখন শুনলেন পিতা অনুপমদেব গঙ্গাতটে দেহ রক্ষা করেছেন তখন তিনি দুঃখে অধীর হয়ে উঠলেন। দু’নয়ন জলে নিয়ত সিক্ত হতে লাগল। স্বজনগণ কত সান্ত্বনা দিতে লাগলেন কিন্তু কিছুতেই তার মন শান্ত হ’ল না। সংসার একেবারে দুঃখময় হয়ে উঠল। শ্রীজীবের এ প্রকার দশা দেখে স্বজনগণ বললেন— নবদ্বীপে গিয়ে শ্রীনিত্যানন্দের শ্রীচরণ দর্শন করে যদি একটু শান্তি লাভ করে, শ্রীজীব তথায় যাক্। শ্রীজীবের নবদ্বীপে যাওয়া ঠিক হ’ল। দেশের যাত্রীদের সঙ্গে এক ভৃত্যসহ নবদ্বীপে যাত্রা করলেন। “ফতেয়াবাদ হৈতে চলে এক ভৃত্য লৈয়া।।” ― (ভঃরঃ১।৭৪১)
অন্তর্যামী শ্রীনিত্যানন্দ, শ্রীজীব যে আগমন করছেন তা জানতে পারলেন। তিনি খড়দহ থেকে তাড়াতাড়ি নবদ্বীপে মায়াপুরে এলেন।
 
এদিকে শ্রীজীব ক্রমে নবদ্বীপ নগরে প্রবেশ করলেন ও নগরের মনোহর শোভা দেখে মুগ্ধ হলেন। সাষ্টাঙ্গে গঙ্গাদেবীকে বন্দনা করলেন। জিজ্ঞাসা করতে করতে শ্রীমায়াপুরে এসে লোকমুখে শুনলেন শ্রীবাস-গৃহে শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু আছেন। শ্রীজীব দ্বারদেশে প্রেমভরে ভূতলে দন্ডবৎ হয়ে পড়লেন। শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু শ্রীবাস পণ্ডিতসহ দ্বারে এসে শ্রীজীবকে ভূমি থেকে উঠিয়ে আলিঙ্গন করে বললেন—তুমি রূপ সনাতনের ভ্রাতুষ্পুত্র? শ্রীজীব পুনঃ শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর চরণে পড়লেন। শ্রীজীবকে গৃহে নিলেন এবং স্বজন-গৃহাদির কথা জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন। ক্রমে ক্রমে সমস্ত বৈষ্ণবগণের চরণ বন্দনাদি করলেন শ্রীজীব। বৈষ্ণবগণ পরম সুখী হলেন শ্রীজীবকে দেখে। শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর ভুক্তাবশেষ প্রসাদ পেয়ে পর-দিবস প্রাতঃকালে শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর সাথে শ্রীশচীমাতার গৃহে এলেন। প্রভুর জন্ম গৃহের কি অপূর্ব্ব শোভা ! শ্রীজীবের হৃদয় শীতল হল। শ্রীজীব ভূপতিত হয়ে দন্ডবৎ করলেন। শ্রীজীব দেখলেন—গৃহ-বারান্দায় অতি বৃদ্ধা শ্রীশচীমাতা বসে আছেন। শুভ্র-বস্ত্রে অঙ্গ ঢাকা, গাত্রে রেশমের চাদর, বস্ত্রের সঙ্গে কেশের শুভ্রতা সাযুজ্য পাচ্ছে। শ্রীশচীমাতার দেহটী বাৰ্দ্ধক্যবশতঃ কম্পমান। যদ্যপি অঙ্গ অতি ক্ষীণ ও জীর্ণ তথাপি শ্রীঅঙ্গের দিব্য-তেজে গৃহ আলোকিত হচ্ছে।
 
জননী শ্রীগৌরসুন্দরের চিন্তায় আত্মবিস্মৃত হয়ে মুদিত নেত্রে বসে আছেন। ভগবদ-জননী শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর আগমন বুঝতে পারলেন অমনি শিরে অবগুণ্ঠন টেনে ভৃত্য ঈশানকে বললেন ঈশান! শ্রীপাদ এসেছেন, তাঁর চরণ ধৌত করে দাও। শ্রীঈশান নিত্যানন্দপ্রভুর চরণ ধৌত করে দিলেন। ভগবদ জননীকে নমস্কার করে শ্রীনিত্যানন্দপ্রভু বসলেন। শ্রীনিত্যানন্দপ্রভু শচীমাতাকে শ্রীজীবের পরিচয় দিলে, শচীমাতা শ্রীজীবের মাথায় হাত দিয়ে আশীৰ্ব্বাদ শ্রীনবদ্বীপধাম মাহাত্ম্য শ্রীশচীমাতার আশীর্ব্বাদকরলেন। “কৃপা করি শচীদেবী কৈলা আশীর্ব্বাদ পেয়ে শ্রীজীব আনন্দ সাগরে ভাসতে লাগলেন। শ্রীশচীমাতার আমন্ত্রণে তাঁরা দ্বিপ্রহরে শচীগৃহে ভোজন করলেন।
 
খাও বাছা নিত্যানন্দ জননীর স্থানে।
 
এই আমি গৌরচন্দ্র ভুঞ্জানু গোপনে।।
 
—(শ্রীনবদ্বীপ ধাম মাহাত্ম্য)
 
কয়েকদিন শ্রীজীব নিত্যানন্দ প্রভু স্থানে নবদ্বীপে অবস্থান করে নবদ্বীপ ধামে প্রভুর বিবিধ লীলা-স্থান সকল দর্শনাদি করলেন। অনন্তর নিত্যানন্দ প্রভুর নির্দেশমত প্রথমে কাশী হয়ে শ্রীবৃন্দাবন ধাম অভিমুখে যাত্রা করলেন। শ্রীজীব কাশীধামে এসে শ্রীমধুসূদন বাচস্পতির নিকট কিছুদিন থেকে বেদান্ত শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। শ্রীমধুসূদন বাচস্পতি শ্রীসাব্বভৌম ভট্টাচার্য্যের শিষ্য ছিলেন। মহাপ্রভু সাৰ্ব্বভৌম ভট্টাচার্য্যকে যে ভাগবত সিদ্ধান্তপর বেদান্তের ব্যাখ্যা শুনিয়েছিলেন, সে সিদ্ধান্ত পুনঃ তিনি মধুসুদন বাচস্পতিকে শিক্ষা দেন। মধুসুদন বাচস্পতি কাশীতে সে শুদ্ধ ভাগবত-সিদ্ধান্ত ছাত্রগণকে শিক্ষা দিতেন।
 
কাশী থেকে শ্রীজীব বৃন্দাবনে আগমন করেন এবং শ্রীরূপ ও শ্রীসনাতন গোস্বামীর শ্রীচরণ দর্শন লাভ করেন। শ্রীজীবকে দেখে শ্রীরূপ সনাতন বড় সুখী হলেন;যাবতীয় খবর জিজ্ঞাসা করলে শ্রীজীব সমস্ত খবর বললেন। শ্রীরূপ গোস্বামী শ্রীজীবকে কাছে রেখে ভাগবত শাস্ত্র অধ্যায়ন করাতে লাগলেন ও মধু-দীক্ষা দিয়ে শ্রীশ্রীরাধা দামোদরের সেবায় নিযুক্ত করেন। শ্রীজীব অল্পকাল মধ্যে ভাগবত-সিদ্ধান্তে পরম পারদর্শী হয়ে উঠল শ্রীরূপ গোস্বামী তাকে শ্রীভক্তিরসামৃতসিন্ধু গ্রন্থ সংশোধন করতে দিলেন। শ্রীজীব গ্রন্থ সংশোধন করতে করতে “দুর্গম সঙ্গমনী” নামক এক টীকা লিখলেন। শ্রীসনাতন গোস্বামী ১৪৭৬ শকাব্দে শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্বদের টিপ্পনী শ্রীবৈষ্ণব-তোষণী লিখেন। এ গ্রন্থের সংশোধন করেন শ্রীজীব। শ্রীসনাতনের আজ্ঞায় ১৫০০ শকাব্দে শ্রীজীব ঐ গ্রন্থের একটী সংক্ষিপ্ত সংগ্রহ লিখেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন”লঘুবৈষ্ণব-তোষণী”।। এ ছাড়া শ্রীজীব গোস্বামী বহু গ্রন্থ ও গোস্বামী গ্রন্থের টীকাদি লিখেছিলেন। শ্রীরূপ, সনাতন, শ্রীগোপালভ শ্রীরঘুনাথ ভট্ট, শ্রীরঘুনাথ দাস, শ্রীকৃষ্ণ দাস, শ্রীকাশীশ্বর পণ্ডিত, শ্রীমধু পণ্ডিত ও শ্রীজীব গোস্বামী প্রভৃতির অপ্রাকৃত কাব্যমাধুর্য্য তৎকালীন বিদ্বজ্জনকে মুগ্ধ করতে থাকে। ব্রজধামে এক সুবর্ণ যুগ আরম্ভ হল।
 
আদর্শ শিষ্য
 
শ্রীজীব নিয়মিত ভাবে শ্রীরূপের ও শ্রীসনাতনের স্নানের জল আনয়ন, মস্তকে তৈল মৰ্দ্দন, আশ্রম সংস্কার, শ্রীবিগ্রহের অর্চ্চন, ভোগরন্ধন ও গ্রন্থাদির সংশোধন করতেন।
 
পুষ্টি-মার্গের প্রবর্তক শ্রীমদ্ বল্লভাচার্য্য শ্রীগৌরসুন্দরের সঙ্গী ছিলেন। শ্রীরূপ ও শ্রীসনাতন তাকে গুরুতুল্য সম্মান দিতেন। তিনি শ্রীরূপ সনাতনকে পরম স্নেহ করতেন ও বারবার তাঁদের দর্শনের জন্য আসতেন। একদিন শ্রীবল্লভাচার্য্য শ্রীরূপ গোস্বামীর স্থানে এলে শ্রীরূপ গোস্বামী দন্ডবৎ করে তাঁকে আসনে বসালেন ও স্বকৃত ভক্তিরসামৃতসিন্ধুর মঙ্গলাচরণ শ্লোকটি তাঁর হাতে দিলেন। তিনি পড়ে বললেন সুন্দর হয়েছে, একটু ভুল আছে, ইহা সংশোধন করে দিব। তারপর ভগবৎ-তত্ত্ব সম্বন্ধে অনেক আলাপ আলোচনাদি করে বিদায় হলেন। শ্রীরূপ দৈন্য করে পুনব্বার আসবার জন্য বললেন। তখন গ্রীষ্মকাল। শ্রীজীব শ্রীরূপের পিছনে দাড়িয়ে পাখা করতে করতে সব কথা শুনলেন। শ্রীবল্লভাচার্য্য শ্রীরূপের মঙ্গলাচরণ শ্লোকের কি সংশোধন করবেন শ্রীজীব তা বুঝতে পারলেন না। তখন তিনি কিছু না বলে পরে যমুনা-ঘাটে জল নিতে এসে শ্রীবল্লভাচার্য্যের কাছে জিজ্ঞাসা করে, আচার্য্য যে ভুল দেখাতে চেয়েছিলেন তা খন্ডন করলেন। শুনে বল্লভাচার্য্য খুব সুখী হলেন। “শুনি ভট্ট প্রশংসা করিল সমিতে।।” (শ্রীভক্তিরত্নাকর পঞ্চম তরঙ্গে)। অন্য দিবস শ্রীবল্লভাচার্য্য শ্রীরূপ গোস্বামীর নিকট বিবিধ ভগবদ্ প্রসঙ্গ আলোচনা করবার পর শ্রীজীবের পরিচয় জানতে চাইলেন এবং তাঁর শাস্ত্রে অগাধ বোধ আছে বলে খুব প্রশংসা করলেন। শ্রীজীব তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র বলে, শ্রীরূপ গোস্বামী পরিচয় দিলেন। শ্রীবল্লভাচার্য্য নিজ স্থানে বিদায় হলেন।
 
অতঃপর শ্রীরূপ গোস্বামী শ্রীজীবকে আহ্বান করে কিছু শাসন-বাকা বলে গৃহে ফিরে যাবার জন্য আদেশ করলেন। অস্থির-মনে পান্ডিত্য বুদ্ধি নিয়ে ব্রজবাস হয় না। এ বলে শ্রীরূপ গোস্বামী মৌনী হলেন। শ্রীজীব মনে বড় দুঃখ পেয়ে অপরাধ করেছেন বিবেচনা করে তাঁকে দন্ডবৎ করে গৃহে চলে যাবার সংকল্প পূর্ব্বক শ্রীরূপের নিকট থেকে যাত্রা করলেন। পুনঃ কি মনে করে শ্রীনন্দ-ঘাটে একটি জনশূন্য কুটীরে নিরাহারে রোদন করতে লাগলেন। গ্রামবাসী লোকগণ ছুটে এলেন এবং এ সংবাদ শীঘ্র শ্রীসনাতন গোস্বামীর কাছে পৌঁছাল। শ্রীসনাতন গোস্বামী শ্রীজীবের স্থানে এসে তাঁর ক্ষীণ-শরীর ও দুঃখের ভাব দেখে তাঁকে ভূতল থেকে তুলে অঙ্গের ধূলাদি ঝেড়ে প্রবোধ দিতে লাগলেন। নিজের স্থানে তাঁকে নিয়ে এসে স্নান ভোজনাদি করালেন। সনাতন গোস্বামী শ্রীরূপের কাছে এ সমস্ত কথা বললে, শ্রীরূপ গোস্বামী শুনে স্নেহার্দ্র হৃদয়ে কোন লোককে পাঠিয়ে তৎক্ষণাৎ শ্রীজীবকে নিজ স্থানে আনলেন। শ্রীজীব দন্ডবৎ করতেই শ্রীরূপ অতি স্নেহ ভরে তাঁকে ভূমি থেকে উঠিয়ে কোলে নিয়ে অঙ্গের ধূলা ঝাড়তে ঝাড়তে অনেক কথা বললেন।
 
শ্রীজীবের দশা দেখি, শ্রীরূপ গোঁসাই।
করিলেন শুশ্রূয়া-কৃপার সীমা নাই।।
 
—(ভক্তি রত্নাকর পঞ্চম তরঙ্গ-১৬৬৩)
 
শ্রীগুরুদেব শিষ্যকে যেমন শাসন করেন, তেমন স্নেহও করেন। শ্রীরূপ-সনাতনের অনুগ্রহে শ্রীজীব পৃথিবীতলে সৰ্ব্বশাস্ত্রে ও কৃষ্ণ ভক্তিতে সিদ্ধ হয়েছিলেন।
 
শ্রীরূপ সনাতন প্রভৃতি গোস্বামিগণের অপ্রকটের পর শ্রীজীব শ্রীরূপ সনাতনের মনোভীষ্ট পূরণ-কার্য্যে আত্মনিয়োগ করেন। একবার শ্রীজীব গোস্বামী রাজপুতদের সঙ্গে গঙ্গা যমুনা নিয়ে বাদশার যে বিবাদ হয়েছিল, তার সুমীমাংসা করবার জন্য আগ্রা যান। যমুনার স্থান গঙ্গার উপরে শ্রীজীব গোস্বামী প্রমাণ করেন—গঙ্গা শ্রীহরির শ্রীপাদপদ্ম থেকে উদ্ভুত, যমুনা শ্রীহরিপ্রেয়সী। এ কথা শ্রবণে বাদশা সন্তুষ্ট হয়ে শ্রীজীব গোস্বামীকে তুলট কাগজ ভেট দেন। বাদশা তাঁকে ভেট দিতে চাইলে তিনি এ ভেট নিয়েছিলেন।
 
শ্রীমদ্ লোকনাথ গোস্বামীর অনুগ্রহ-পাত্র শ্রীনরোত্তম ঠাকুর, শ্রীগোপাল ভট্ট গোস্বামীর অনুগ্রহ পাত্র শ্রীনিবাস আচার্য্য ও শ্রীহৃদয় চৈতন্য প্রভুর অনুগ্রহ-পাত্র শ্রীশ্যামানন্দ, এ তিনজন শ্রীজীবের পরম কৃপাভাজন হলেন। সমগ্র গোস্বামী-শাস্ত্র শ্রীজীব তাঁদের পড়িয়েছিলেন এবং প্রচার করবার ভার তাঁদের উপর দিয়েছিলেন।
 
শ্রীজীব গোস্বামীর রচিত গ্রন্থাবলীঃ—শ্রীহরিনামামৃত ব্যাকরণ, ধাতুসূত্রমালা, শ্রীভক্তিরসামৃত সিন্ধু, শ্রীগোপালবিরুদাবলী, শ্রীমাধব মহোৎসব কাব্য, শ্রীসংকল্প কল্পদ্রুম, শ্রীব্রহ্মসংহিতার টীকা, শ্রীভক্তিরসামৃত সিন্ধুর টাকা দুর্গমসঙ্গমনী, শ্রীউজ্জ্বলনীলমণির টীকা – লোচন রোচনী, শ্রীগোপালচন্দ্ ষটসন্দর্ভ (তত্ত্বসন্দর্ভ, ভগবদ্‌সন্দর্ভ, পরমাত্মসন্দৰ্ভ, কৃষ্ণসন্দর্ভ, ভক্তিসন্দর্ভ ও প্রীতি সদ) শ্রীমদ্ভাগবতের টীকা–ক্রমসন্দর্ভ শ্রীমদ্ভাগবতে দশমস্কন্ধের টীকা—লঘু বৈষ্ণব তোষণী, সৰ্ব্বসম্বাদিনী (ষসন্দর্ভের অনুব্যাখ্যা) শ্রীগোপাল তাপনী টীকা— সুখবোধিনী, পদ্মপুরাণস্থ যোগসারস্তোত্র টীকা,অগ্নিপুরাণস্থ গায়ত্রী ব্যাখ্যা-বিবৃতি। শ্রীরাধাকৃষ্ণার্চ্চন দীপিকা, সূত্রমালিকা ও ভাবার্থচম্পু।
 
শ্রীজীব গোস্বামীর জন্ম–১৩২৩ খৃষ্টাব্দ, মতান্তরে ১৫৩৩ খৃঃ (১৪৫৫ শকাব্দ) ভাদ্র শুক্লা দ্বাদশী। অপ্রকট ১৫৪০ শকাব্দ পৌষী শুক্লা তৃতায়া, প্রকট স্থিতি ৮৫ বৎসর।
 
 
 
  • February 20-21, 2022 Puri, Odisha
  • 3rd of July in 2022 Balasore, Odisha
  • August 24-26, 2022 Kurukshetra, Haryana
  • October 7, 2022 Prayagraj, Uttar Pradesh
  • November 30 -1, 2022 Agartala, Tripura
  • December 3-4, 2022 Lalabazar, Assam
  • December 7, 2022 Guwahati, Assam
  • February 17-18, 2023 Baruipur, West Bengal
  • May 27-28, 2023 Patna, Bihar
  • June 26, 2023 Bhubaneswar, Odisha
  • November 26, 2023 Gaya, Bihar
  • February 8, 2024 Delhi
  • February 13-15, 2024 Balighai, Medinipur
  • March 19, 2024 Nabadwip, West Bengal
  • May 27 2024 Florida, USA
  • June 23-24, 2024 Baripada, Odisha
  • June 26-27, 2024 Paradeep, Odisha
  • June 29-30, 2024 Cuttack, Odisha
  • July 14, 2024 Chennai, Tamilnadu
  • August 31 2024 London
  • September 07 2024 London
  • September 08 2024 Berlin (Germany)
  • September 13 2024 Canada
  • September 14-15 2024 Rochester (USA)
  • September 21 2024 New Jersey (USA)
  • Upcoming Events