Disappearance Day of Srila Kashiswar Pandit Thakur
শ্রীকাশীশ্বর পণ্ডিত ছিলেন শ্রীঈশ্বরপুরীপাদের শিষ্য। পিতার নাম শ্রীবাসুদেব ভট্টাচার্য। তাঁরা কাঞ্জিলাল কানুবংশোদ্ভূত বাৎস্য গোত্রীয় ব্রাহ্মণ। তাঁদের রাজ-উপাধি চৌধুরী।
শ্রীরামপুর ষ্টেশন থেকে এক মাইল দূরে চাতরা গ্রামে শ্রীকাশীশ্বর পণ্ডিত শ্রীগৌরাঙ্গ ও শ্রীরাধাগোবিন্দ বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত আদি লীলা ৮ম পরিচ্ছেদ ৬৬ শ্লোক অনুভাষ্য।)
ঈশ্বরপুরীর শিষ্য—ব্রহ্মচারী কাশীশ্বর।
শ্রীগোবিন্দ নাম তাঁর প্রিয় অনুচর।।
তাঁর সিদ্ধি-কালে দোঁহে তাঁর আজ্ঞা পাঞা।
নীলাচলে প্রভুস্থানে মিলিল আসিয়া।।
গুরুর সম্বন্ধে মান্য কৈল দুঁহাকারে।
তাঁর আজ্ঞা মানি’ সেবা দিলেন দোহারে।।
অঙ্গসেবা গোবিন্দেরে দিলেন ঈশ্বর।
জগন্নাথ দেখিতে চলেন আগে কাশীশ্বর।।
অপরশ যায় গোসাঞি মনুষ্য-গহনে।
মনুষ্য ঠেলি পথ করে কাশী বলবানে।।
(চৈঃ চঃ আদি ১০।১৩৮-১৪২)
ব্রহ্মচারী শ্রীকাশীশ্বর পণ্ডিত ও শ্রীগোবিন্দ-দু’জন শ্রীঈশ্বর পুরীর প্রিয় শিষ্য ছিলেন। অন্তর্ধান কালে ঈশ্বরপুরী দু’জনকে শ্রী চৈতনা-গোসাঞি সেবা করবার আদেশ দিয়ে যান। শ্রীঈশ্বর পুরী অপ্রকট হ’লৈ দু’জন নীলাচলে মহাপ্রভুর সন্নিধানে আগমন করেন। শুরুর প্রিয় শিষ্য ছিলেন তাঁরা, তাই সম্মানার্হ। তথাপি শ্রীগুরুর আজ্ঞা জেনে মহাপ্রভু তাঁদের সেবা গ্রহণ করলেন। শ্রীগোবিন্দের উপর পড়ল মহাপ্রভুর অঙ্গ-সেবার ভার। শ্রীকাশীশ্বর পণ্ডিতের উপর পড়ল শ্রীজগন্নাথ দর্শন-কালে লোকের ভিড় ঠেলে সাবধানে মহাপ্রভুকে মন্দিরে নিয়ে যাওয়ার ভার।
শ্রীকাশীশ্বর পণ্ডিত খুব বলবান ছিলেন। শ্রীকবিকর্ণপুর গোস্বামী লিখেছেন—
পুরা বৃন্দাবনে চেটো স্থিতো ভৃঙ্গার ভঙ্গুরো।
শ্রীকাশীশ্বর গোবিন্দো তৌ জাতৌ প্রভু সেবকৌ।।
(শ্রীগৌর-গণোদ্দেশ দীপিকা)
পূর্ব্বে ব্রজে যাঁরা ভৃঙ্গার ও ভঙ্গুর নামে শ্রীকৃষ্ণের চেট সেবক (জল আনয়নকারী সেবক) ছিলেন, অধুনা তাঁরা কাশীশ্বর ও গোবিন্দ নামে মহাপ্রভুর সেবক হয়ে জন্মগ্রহণ করেন।
শ্রীকাশীশ্বর পণ্ডিত পুরী ধামে মহাপ্রভুর সঙ্গে বহুকাল অবস্থান করেছিলেন। কীর্তনান্তে ভক্তগণের মধ্যে তিনি প্রসাদ বিতরণ করতেন।
চাতরা গ্রামে তাঁর সেবিত যে বিগ্রহগণ আছেন তাঁদের পরবর্তী সেবক হন—শ্রীশিবচন্দ্র চৌধুরী। তিনি শ্রীকাশীশ্বর পণ্ডিত গোস্বামীর ভ্রাতৃবংশীয়। পূর্ব্বে নয় সের চালের ভোগ হ’ত। বর্তমানে ভোগের কোন ভাল ব্যবস্থা নাই।
কাশীশ্বর পণ্ডিত গোস্বামীর শিষ্য শ্রীগোবিন্দ গোসাঞি। তিনি শ্রীগোবিন্দদেবের শ্রেষ্ঠ সেবক ছিলেন।
শ্রীরূপগোস্বামী বৃন্দাবনে শ্রীগোবিন্দদেবের সেবা প্রবর্ত্তন করেছিলেন—শুনে সুখী হয়ে মহাপ্রভু পুরী থেকে শ্রীকাশীশ্বর পণ্ডিত কে শীঘ্র বৃন্দাবন যাবার আদেশ দিলেন। কিন্তু শ্রীকাশীশ্বর শ্রীগৌরসুন্দরকে ত্যাগ করে যেতে চাইলেন না। অন্তর্যামী শ্রীগৌরসুন্দর তখন একটা স্ব-স্বরূপ তাঁকে দিলেন ও সে বিগ্রহের সঙ্গে ভোজন করলেন, তখন কাশীশ্বরের বিশ্বাস হল। এ সম্বন্ধে শ্রীনরহরি চক্রবর্তী ঠাকুর বর্ণন করছেন—
কাশীশ্বর কহে, – প্রভু তোমারে ছাড়িতে।
বিদরে হৃদয়, যে উচিত কর ইথে।।
কাশীশ্বর অন্তর বুঝিয়া গৌরহরি।
দিলেন নিজ স্বরূপ-বিগ্রহ যত্ন করি।।
প্রভু সে বিগ্রহসহ অন্নাদি ভুঞ্জিল।
দেখি কাশীশ্বরের পরমানন্দ হৈল।।
গৌর-গোবিন্দ নাম প্রভু জানাইলা।
তারে লৈয়া কাশীশ্বর বৃন্দাবনে আইলা।।
শ্রীগোবিন্দ দক্ষিণে প্রভুৱে বসাইয়া।
করেন অদ্ভুত সেবা প্রেমাবিষ্ট হইয়া।।
—(ভঃ রঃ ২য় তরঙ্গ)
মহাপ্রভু বললেন এ বিগ্রহের নাম হবে গৌর-গোবিন্দ। কাশীশ্বর পণ্ডিত বিগ্রহ নিয়ে বৃন্দাবন গেলেন এবং শ্রীগোবিন্দ-দেবের দক্ষিণ পাশে সে বিগ্রহ স্থাপন করে প্রেমভরে সেবা করতে লাগলেন।
শ্রীকাশীশ্বর পণ্ডিত গোস্বামীর মহিমা অনন্ত ও অপার। তাঁর তিরোভাব তিথি উৎসব আশ্বিন পূর্ণিমার শ্রীরাধা গোবিন্দের মহারাস মহোৎসবের দিন।