Disappearance Day of Srila Raghunandan Thakur
শ্রীমুকুন্দ দাস, শ্রীমাধব দাস ও শ্রীনরহরি সরকার ঠাকুর তিন ভাই এঁরা শ্রীখণ্ডে বাস করতেন। শ্রীমুকুন্দ দাস ঠাকুরের পুত্র শ্রীরঘুনন্দন ঠাকুর। শ্রীমুকুন্দ দাস ঠাকুর রাজবৈদ্য ছিলেন। তিনি নিরন্তর কৃষ্ণাবেশে কাজ করতেন।
বাহ্যে রাজবৈদ্য ইহো করে রাজ-সেবা। অ
ন্তরে কৃষ্ণ-প্রেম ইঁহার জানিবেক কেবা।।
–(চৈঃ চঃ মধ্যঃ ১৫।১২০)
একদিন শ্রীমুকুন্দ দাস বাদশাকে চিকিৎসা করবার জন্য রাজভবনে গমন করলেন। বাদশা উচ্চ আসনে বসে আছেন। শ্রীমুকুন্দ দাস পাশে বসে চিকিৎসার কথা জিজ্ঞাসা করছেন। সে সময় এক ভৃত্য ময়ুরের পুচ্ছের বৃহৎ পাখা নিয়ে বাদশাকে হাওয়া করতে লাগল। ময়ুরের পুচ্ছ দেখে শ্রীমুকুন্দ দাসের কৃষ্ণ-স্মৃতির উদ্দীপনা হল। অমনি বিবশ হয়ে ভূমিতে পড়লেন। বাদশা শ্রীমুকুন্দ দাসকে অচৈতন্য দেখে মনে করলেন—তিনি প্রাণত্যাগ করলেন না কি? তাড়াতাড়ি নীচে নেমে তাঁকে ধরে উঠালেন। জিজ্ঞাসা করলেন— কোন ব্যথা পেয়েছেন কি না? শ্রীমুকুন্দ দাস বললেন—কোন ব্যথা পাই নি। বাদশা পড়বার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। মৃগী ব্যাধি আছে বলে বাদশার কাছে গোপন করলেন। মহাসিদ্ধ পুরুষ বলে বাদশা অনুমানে বুঝতে পারলেন। বহু সম্মান সহ তাঁকে গৃহে পাঠিয়ে দিলেন।
শ্রীমুকুন্দ দাস, শ্রীমাধব দাস ও শ্রীনরহরি সরকার—এঁরা প্রতি বছর নীলাচলে এসে মহাপ্রভুর দর্শন ও রথযাত্রায় নৃত্যকীর্ত্তনাদি করতেন। শ্রীমুকুন্দ দাসকে প্রভু এক দিবস স্নেহভরে জিজ্ঞাসা করলেন, মুকুন্দ ! তুমি ও রঘুনন্দ দুজনের মধ্যে কে পিতা? কে পুত্র বল? শ্রীমুকুন্দ বললেন—রঘুনন্দনই আমার পিতা। যাঁর থেকে কৃষ্ণ-ভক্তি পাওয়া যায় তিনিই প্রকৃত পক্ষে পিতা। প্রভু বললেন— তোমার বিচারই ঠিক।
“যাঁহা হৈতে কৃষ্ণ ভক্তি সেই শুরু হয়।।”
–(চৈঃ চঃ মধ্যঃ ১৫।১১৭)
প্রভু শ্রীরঘুনন্দনকে বিগ্রহ সেবা করতে আদেশ দিলেন।
“রঘুনন্দনের কার্য—কৃষ্ণের সেবন।
কৃষ্ণ-সেবা বিনা ইঁহার অন্যে নাহি মন।।”
– (চৈঃ চঃ মধ্য ১৫।১৩১ )
শিশুকালে শ্রীরঘুনন্দন শ্রীমূৰ্ত্তিকে লাড়ু খাইয়ে ছিলেন। পদকৰ্ত্তা শ্রীউদ্ধব দাস অতি সুন্দরভাবে এ বিষয় বর্ণন করেছেন।
(তথাহি গীত)
প্রকট শ্রীখণ্ডবাস,
নাম শ্রীমুকুন্দ দাস,
ঘরে সেবা গোপীনাথ জানি।
গেলা কোন কার্য্যান্তরে,
সেবা করিবার তরে,
শ্রীরঘুনন্দনে ডাকি আনি।।
ঘরে আছে কৃষ্ণ-সেবা,
যত্ন করে খাওয়াইবা,
এত বলি মুকুন্দ চলিলা।
পিতার আদেশ পাঞা,
সেবার সামগ্রী লৈয়া,
গোপীনাথের সম্মুখে আইলা।।
শ্রীরঘুনন্দন অতি,
বয়ঃক্রম শিশুমতি,
খাও বলে কান্দিতে কান্দিতে।
কৃষ্ণ সে প্রেমের বশে,
না রাখিয়া অবশেষে,
সকল খাইলা অলক্ষিতে।।
আসিয়া মুকুন্দ দাস,
কহে বালকের পাশ,
প্রসাদ নৈবেদ্য আন দেখি।
শিশু কহে বাপ শুন,
সকলি খাইল পুনঃ,
অবশেষ কিছুই না রাখি।।
শুনি অপরূপ হেন,
বিস্মিত হৃদয়ে পুনঃ
আর দিনে বালকে কহিয়া।
সেবা অনুমতি দিয়া,
বাড়ীর বাহির হৈয়া,
পুনঃ আসি রহে লুকাইয়া।।
শ্রীরঘুনন্দন অতি,
হইয়া হরিষ মতি,
গোপীনাথে লাড়ু দিয়া করে।
খাও খাও বলে ঘন,
অৰ্দ্ধেক খাইতে হেন,
সময়ে মুকুন্দ দেখি দ্বারে।।
যে খাইল রহে হেন,
আর না খাইলা পুনঃ,
দেখিয়া মুকুন্দ প্রেমে ভোর।
নন্দন করিয়া কোলে,
গদ্গদ্ স্বরে বলে
নয়নে বরিষে ঘন লোর।
অদ্যাপি শ্রীখণ্ডপুরে,
অর্দ্ধ লাড়ু আছে করে,
দেখে যত ভাগ্যবন্ত জনে।
অভিন্ন মদন যেই,
শ্রীরঘুনন্দন সেই,
এ উদ্ধব দাস রস ভনে।।
শ্রীনরোত্তম ও শ্রীনিবাস খেতরি গ্রামে যে মহোৎসব করেছিলেন সে উৎসবে শ্রীরঘুনন্দন ঠাকুর এসেছিলেন এবং কীৰ্ত্তন করেছিলেন।
শ্রীঅভিরাম গোপাল ঠাকুর ও শ্রীরঘুনন্দন ঠাকুর বড় ডাঙ্গিতে কোন ভক্তগৃহে নৃত্য করেছিলেন। শ্রীরঘুনন্দন ঠাকুরের পায়ের নুপুর নৃত্যকালে খুলে আকাই হাটে এক পুষ্করিণীতে গিয়ে পড়ে। ইহার থেকে পুষ্করিণীর নাম নূপুর কুণ্ড হয়। বর্তমানে আকাই হাটের দক্ষিণে বড়ুই গ্রামের মহান্তবাড়ীতে সে নূপুর আছে।
শ্রীরঘুনন্দন ঠাকুর ব্রজলীলায় কন্দর্প মঞ্জরী ছিলেন। দ্বারকা লীলাতে ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের পুত্র কন্দর্প।
শ্রীরঘুনন্দন ঠাকুরের পুত্র কানাই ঠাকুর। শ্রীখণ্ডে অদ্যাপি তাঁর বংশধরগণ আছেন। শ্রীখণ্ডবাসী পঞ্চানন কবিরাজ এঁর বংশে জন্মেছিলেন।
শ্রীরঘুনন্দনের জন্ম শকাব্দ ১৪৩২।