Disappearance Day of Srila Rai Ramananda

রাজা শ্রী প্রতাপরুদ্রের অধীন পূর্ব ও পশ্চিম গোদাবরীর বিশ্বস্ত শাসন কর্ত্রার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন শ্রীরামানন্দ রায়। মহাপ্রভু যখন দক্ষিণ দেশে যাত্রা করেন, শ্রীসার্ব্বভৌম পণ্ডিত তাকে বিশেষ অনুরোধ করেন তিনি যেন শ্রীরামানন্দ রায়ের সঙ্গে মিলিত হন। “তোমার সঙ্গে যোগ্য  তেঁহো একজন। পৃথিবীতে রসিক ভক্ত নাহি তার সম।।”(চৈঃ মধ্যঃ ৭ /৬৪) হে প্রভো পৃথিবী তলে আপনার সঙ্গ যোগ্য এক শ্রীরামানন্দ রায় ছাড়া আর কাকেও দেখছি না। আমার বিশেষ অনুরোধ আপনি তাঁর সঙ্গে মিলিত হবেন। তাঁকে বিষয়ী শূদ্র বলে যেন উপেক্ষা না করেন। পান্ডিত্য ও ভক্তিরস দু’টারই তিনি প্রকৃত অধিকারী, তাকে সম্ভাষণ করলেই ইহা উপলব্ধি করতে পারবেন।

 

শ্রীমহাপ্রভু দক্ষিণ দেশ অভিমুখে যাত্রা করে নাম প্রেম বিতরণ করতে করতে এলেন পশ্চিম গোদাবরীর তীরে। পণ্ডিত সাৰ্ব্বভৌমের অনুরোধ অনুযায়ী শ্রীরামানন্দ রায়ের সঙ্গে মিলিত হবার ইচ্ছা মহাপ্রভুর মনে সদা জাগছিল।

 

শ্রীমহাপ্রভু গোদাবরীর মনোহর তটে এক বৃক্ষমূলে বসে আছেন। তাঁর অম্ল কান্তিতে চতুর্দিক যেন আলোকিত হচ্ছিল। এমন সময় অনতিদূরে রাজপথ দিয়ে স্নান করতে যাচ্ছেন শ্রীরামানন্দ রায়। সঙ্গে বৈদিক ব্রাহ্মণগণ ও বিবিধবা বাজনা। শ্রীরামানন্দ রায় দুর থেকে বৃক্ষমূলে উপবিষ্ট দিব্য কান্তিযুক্ত সন্ন্যাসীবরকে একদৃষ্টে দর্শন করতে লাগলেন। বৈদিক বিধানে গোদাবরীতে স্নানাদি সেরে, শ্রীরামানন্দ রায় এলেন সন্ন্যাসীর শ্রীচরণ-দর্শনে। দিব্য সন্ন্যাসী দর্শনে শ্রীরামানন্দের মনে যে কত ভাবোদয় হচ্ছিল তা বলে শেষ করা যায়। না। মহাপ্রভুও তাঁকে অপলক নেত্রে দেখতে লাগলেন। নয়নে নয়নে হল মিলন। তারপর শ্রীরামানন্দ পালকি থেকে নেমে শ্রীমহাপ্রভুর চরণে দন্ডবৎ করলেন। মহাপ্রভু তাঁকে আলিঙ্গন করার জন্য উদ্গ্রীব হলেন; কিন্তু বহিরঙ্গ লোক দেখে ধৈর্য ধারণ করলেন। মহাপ্রভু রামানন্দ রায়কে ভূমি থেকে তুলে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি রাম রায়? হাঁ প্রভো! সেই শূদ্রাধম। মহাপ্রভু গাঢ় আলিঙ্গন করলেন। বললেন—আমার এতদূরে আসবার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হল।

 

হাঁ প্রভো ! এ অধম শূদ্রের প্রতি এত দয়া কেন?

 

পুরীতে পন্ডিত সাৰ্ব্বভৌমের নিকট তোমার মহিমা শুনেছি। তোমার মত রসিক ভক্ত দ্বিতীয় নাই, সাৰ্ব্বভৌম বলেছেন।

 

সাৰ্ব্বভৌম পন্ডিত আমায় এত কৃপা করলেন কেন? বোধহয় আপনি তাকে কৃতৰ্ক গর্ত্ত  থেকে উদ্ধার করে প্রেমরস সুধা পান করিয়েছেন। বাহ্যতঃ তিনি আমাকে ঘৃণা করেন, কিন্তু অন্তরে স্নেহশীল। এ আপনার কৃপার নিদর্শন। রামানন্দ রায় আবার প্রভুর চরণ ধারণ করলেন, প্রভু আলিঙ্গন করলেন। দুজনার ভাবের অবধি নাই, উভয়ের অঙ্গে অষ্ট সাত্ত্বিক বিকার সমূহ প্রকাশ পেতে লাগল। বৈদিক ব্রাহ্মণগণ অবাক হয়ে চেয়ে রইলেন! শূদ্র রাজাকে স্পর্শ করে এ সন্ন্যাসী এত প্রেম যুক্ত হয়ে পড়লেন কেন? বাহ্যতঃ শ্রীরামানন্দ রায়কে কেহ চিনতে পারত না। ব্রাহ্মণগণের মন জেনে মহাপ্রভু ধৈর্য্য ধারণ করলেন। রামানন্দ রায় বললেন – হে করুণাময় প্রভো! যদি অধমকে কৃপা করবার জন্য আগমন করে থাকেন, আট দশ দিন এখানে অবস্থান করে এ দীনকে উদ্ধার করুন। মহাপ্রভু বললেন—সাৰ্ব্বভৌম বিশেষ সঙ্গ করবার জন্য বলেছিলেন। তোমাকে দেখে আমার যাবতীয় আকাঙ্খা পূণ হল। এমন সময় একজন ব্রাহ্মণ মহাপ্রভুকে মধ্যাহ্ন ভোজনের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। মহাপ্রভু রামানন্দ রায়কে পুনর্ব্বার মিলবার জন্য বলে ব্রাহ্মণের গৃহে এলেন।

শ্রীরামানন্দ রায় হলেন শ্রীভবানন্দ রায়ের পুত্র। ভবানন্দ পূর্ব্বে পাণ্ডুরাজ ছিলেন। তাঁর পাঁচ পুত্র পঞ্চ পান্ডব। রামানন্দ, গোপীনাথ, কলানিধি, সুধানিধি ও বাণীনাথ। ভবানন্দ রায় এ পাঁচ পুত্রকে মহাপ্রভুর শ্রীচরণে সমর্পণ করেছিলেন। ভবানন্দ রায়ের পত্নী কুন্তী দেবী ছিলেন।

 

শ্রীমহাপ্রভু অপরাহ্ন স্নানাদি সেরে গোদাবরী তটে সে বৃক্ষ মুলে যখন উপবেশন করলেন, শ্রীরামানন্দ রায় এক ভৃত্য সঙ্গে মহাপ্রভুর শ্রীচরণ সন্নিধানে এলেন। রামানন্দ রায় দন্ডবৎ করতেই মহাপ্রভু উঠে তাঁকে গাঢ় আলিঙ্গন করলেন ও ধরে বসালেন। অনন্তর দুজনে প্রেমানন্দে মত্ত হয়ে কৃষ্ণকথা আলাপ করতে লাগলেন। মহাপ্রভু প্রশ্ন করতে লাগলেন, শ্রীরামানন্দ রায় উত্তর দিতে লাগলেন।

 

শ্রীরামানন্দ রায় সাধ্য তত্ত্বের উত্তরে—প্রথমতঃ বর্ণাশ্রম ধর্ম উল্লেখ করে, পরপর কর্মার্পণ, নিষ্কাম কর্ম, জ্ঞানমিশ্রা, জ্ঞানশূন্যা ও শুদ্ধাভক্তির কথা বললেন। মহাপ্রভু পূর্ব্বোক্ত কোনটিকেই সাধ্যসার বলে স্বীকার করলেন না। অতঃপর শ্রীরামানন্দ রায় শুদ্ধ কৃষ্ণরতি দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য ও মধুর রতির কথা বললেন। মহাপ্রভু বললেন—আরও বল। শ্রীরামানন্দ রায় মধুর রতিতে ব্রজগোপীদের কথা বলে তাঁদের মধ্যে শ্রীরাধা ঠাকুরাণীর অসাধারণ ভাবের কথা বললেন। তখন মহাপ্রভু বললেন—ইহা সাধ্যসার। আর কিছু বল,—শ্রীরামানন্দ রায় বলতে লাগলেন—শ্রীরাধাই কৃষ্ণপ্রেমকল্পলতিকা স্বরূপিণী এবং সখিগণ সে লতার পল্লব পুষ্প পত্রাদি স্বরূপ। শ্রীকৃষ্ণ রসরাজ,  শ্রীরাধা মহাভাব-স্বরূপিণী। রসরাজ ও মহাভাব মিলিত অবতার যিনি ছলপূর্ব্বক আমাকে নাচাচ্ছেন। মহাপ্রভু উঠে রামানন্দের মুখে হস্ত চাপা দিয়ে আর বলতে নিষেধ করলেন। বললেন যথেষ্ট, আর বলতে হবে না। এ রাত্রির মত কথোপকথন শেষ করে দু’জন শয়ন করতে গেলেন।

 

পরদিবস সন্ধ্যাকালে পুনঃ শ্রীরামানন্দ রায় শ্রীমহাপ্রভুর চরণ-প্রান্তে এলেন ও দন্ডবৎ করলেন। মহাপ্রভু উঠে গাঢ় প্রণয়সহ আলিঙ্গন করলেন। তারপর কথা আরম্ভ করলেন।

 

মহাপ্রভু প্রশ্ন করতে লাগলেন এবং রামানন্দ রায় তার উত্তর দিতে লাগলেন।

 

প্রঃ। বিদ্যামধ্যে কোন্ বিদ্যা শ্রেষ্ঠ?

উঃ। কৃষ্ণ-ভক্তি বিদ্যাই সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ।

            প্রঃ।    জীবের কীৰ্ত্তি কি?

উঃ। শ্রীকৃষ্ণদাস পদবীই সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠকীৰ্ত্তি।

            প্রঃ।জীবের পরম ধর্ম কি?

উঃ।শ্রীরাধাগোবিন্দের প্রেমই পরম ধর্ম।

            প্রঃ।জীবের সর্ব্বাপেক্ষা দুঃখ কি?

উঃ।কৃষ্ণ ভক্তের বিরহ দুঃখ। 

            প্রঃ।জীবের মধ্যে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ মুক্ত কে?

উঃ।কৃষ্ণ-প্রেমিকই মুক্ত শিরোমণি।

            প্রঃ।গানের মধ্যে কোন্ গান শ্রেষ্ঠ?

উঃ।রাধাগোবিন্দের লীলা গান।

            প্রঃ।জীবের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ মঙ্গল কি?

উঃ।কৃষ্ণ ভক্তের সঙ্গ।

            প্রঃ।একমাত্র স্মরণীয় কি? 

উঃ।কৃষ্ণের নাম, রূপ, গুণাদি।

              প্রঃ।জীবের একমাত্র ধ্যেয় কি?

  উঃ।শ্রীরাধাগোবিন্দের পাদপদ্ম।

              প্রঃ।জীবের শ্রেষ্ঠ বাসস্থান কি?

  উঃ।শ্রীকৃষ্ণ লীলাক্ষেত্র।

  প্রঃ।জীবের শ্রেষ্ঠ শ্রবণের বিষয় কি?

  উঃ। শ্রীরাধা গোবিন্দের প্রেম লীলা।

  প্রঃ।জীবের একমাত্র কীৰ্ত্তনীয় কি?

  উঃ। শ্রীরাধা গোবিন্দ নাম।

  প্রঃ।বুভুক্ষু ও মুমুক্ষুর গতি কি?

  উঃ। স্থাবর দেহ ও দেব দেহ। 

  প্রঃ।জ্ঞানী ও ভক্তের বৈশিষ্ট্য কি?

  উঃ। অরসজ্ঞ কাক জ্ঞান-নিম্ব ফল খায়, রসজ্ঞ কোকিল (ভক্ত) প্রেমাম্র -মুকুল রস পান                     করে।

 

অতঃপর মহাপ্রভু রামানন্দ রায়কে রসরাজ ও মহাভাব মিলিত স্বরূপ দেখালেন। তদ্দর্শনে রামানন্দ রায় মূর্চ্ছিত  হয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে জ্ঞান পেয়ে বিবিধ স্তব স্তুতি করতে লাগলেন। মহাপ্রভু রামানন্দ রায়কে এ সব রূপের কথা গোপন রাখতে বললেন। মহাপ্রভু বিদায় চাইলেন—–রামানন্দ রায় কেঁদে চরণ তলে লুটিয়ে পড়ে বলতে লাগলেন— তুমি স্বতন্ত্র ঈশ্বর, তোমার লীলা কে বুঝতে পারে? একমাত্র প্রার্থনা দাসের দাস করে শ্রীচরণ সেবার সুযোগ প্রদান কর। মহাপ্রভু বললেন—তুমি বিষয় ত্যাগ করে। নীলাচলে এস, তথায় দুজনে নিরন্তর কৃষ্ণ-কথা রসে দিন কাটাব। এ বলে মহাপ্রভু দক্ষিণ দেশের তীর্থ ভ্রমণে বের হলেন।

মহাপ্রভু তীর্থ ভ্রমণ করে পুরীতে ফিরে এলেন। এদিকে শ্রীরামানন্দ রায় ও রাজা প্রতাপরুদ্রের অনুমতি নিয়ে পুরী চলে এলেন।

 

শ্রীরামানন্দ রায়ের প্রধান মিত্র শ্রীস্বরূপ দামোদর প্রভু। শ্রীরামানন্দ রায় কৃষ্ণলীলা নাটক লিখে, দেবদাসীদের দ্বারা তা শ্রীজগন্নাথদেবের সম্মুখে অভিনয় করাতেন। মহাপ্রভু রামানন্দ সম্বন্ধে বলেছেন যোগীদিগের মন প্রকৃতির মূর্ত্তি দর্শনে বিচলিত হতে পারে; কিন্তু সাক্ষাৎ দেবদাসী স্পর্শে রামরায়ের মন টলে না। শ্রীরামানন্দ রায় ও শ্রীস্বরূপ দামোদর প্রভুর অন্ত্যলীলার সাথী।

 

রামানন্দের কৃষ্ণকথা স্বরূপের গান। বিরহ-বেদনায় প্রভুর রাখয়ে পরাণ।।

 

(চৈঃ চঃ অন্ত্যঃ ৬।৬)

 

মহাপ্রভুর অন্তর্ধানের পর শ্রীরামানন্দ রায় অপ্রকট হন।

 

হেনকালে প্রভুর অদর্শনের কথা শুনি।

 

অঙ্গ আছাড়িয়া রাজা লুটায় ধরণী।। শিরে করাঘাত করি হৈল অচেতন।

 

রায় রামানন্দ মাত্র রাখিল জীবন।।

 

— ডঃ রঃ ৩।২১৮)

  • February 20-21, 2022 Puri, Odisha
  • 3rd of July in 2022 Balasore, Odisha
  • August 24-26, 2022 Kurukshetra, Haryana
  • October 7, 2022 Prayagraj, Uttar Pradesh
  • November 30 -1, 2022 Agartala, Tripura
  • December 3-4, 2022 Lalabazar, Assam
  • December 7, 2022 Guwahati, Assam
  • February 17-18, 2023 Baruipur, West Bengal
  • May 27-28, 2023 Patna, Bihar
  • June 26, 2023 Bhubaneswar, Odisha
  • November 26, 2023 Gaya, Bihar
  • February 8, 2024 Delhi
  • February 13-15, 2024 Balighai, Medinipur
  • March 19, 2024 Nabadwip, West Bengal
  • May 27 2024 Florida, USA
  • June 23-24, 2024 Baripada, Odisha
  • June 26-27, 2024 Paradeep, Odisha
  • June 29-30, 2024 Cuttack, Odisha
  • July 14, 2024 Chennai, Tamilnadu
  • August 31 2024 London
  • September 07 2024 London
  • September 08 2024 Berlin (Germany)
  • September 13 2024 Canada
  • September 14-15 2024 Rochester (USA)
  • September 21 2024 New Jersey (USA)
  • Upcoming Events