Rabindranath Tagore with Srila Bhaktisiddhanta Saraswati Goswami Prabhupada

Rabindranath Tagore with Srila Bhaktisiddhanta Saraswati Goswami Prabhupada

গত পূর্ণিমা তিথিতে (২২শে শ্রাবণ, ১৩৪৮; ৭ই আগষ্ট, ১৯৪১ ) বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার পর জোড়াসাঁকোস্থিত পৈতৃক ভবনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ স্বধামে গমন করিয়াছেন। তিনি বিশ্বরূপের কবি-প্রতিভায় বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করিয়া “বিশ্বকবি” নাম সার্থক করিয়াছেন । ঘটনাচক্রে বর্তমান-যুগের শ্রীচৈতন্যলীলার ব্যাস অপ্রাকৃত-কবিশ্রেষ্ঠ ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীশ্রল সচ্চিদানন্দ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর ও তাঁহার অধস্তন গৌড়ীয় বৈষ্ণবাচার্য্য-শিরোমণি জগদগুরু ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীশ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত-সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুরের সহিত ডক্টর রবীন্দ্রের পূজনীয় আত্মীয়বর্গ ও স্বয়ং কবির একাধিকবার সাক্ষাৎকার ও নানা প্রকার সংলাপাদি হইয়াছিল। শ্রীল ঠাকুর ভক্তিবিনোদ তাঁহার আত্মচরিতে তাঁহার ছাত্রজীবনের ঘটনা বর্ণন-প্রসঙ্গে লিখিয়াছেন,- 

 

“সন্ধ্যার পর অনেক দিবসই আমি জোড়াসাঁকো শ্ৰীযুত দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাটীতে বসিতাম। আমার সতীর্থ শ্রীযুক্ত সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের (দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় পুত্র) বড় দাদা শ্রদ্ধাস্পদ শ্রীযুক্ত দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর আমারও বড় দাদা। যদি কখন মানবের মধ্যে আমার হৃদয়- বন্ধু থাকেন, তবে বড় দাদাই আমার হৃদয়-বন্ধু । তাঁহার উদার চরিত্র, স্বচ্ছ প্রেম ও সরলতা আমার হৃদয়ে সর্ব্বদা জাগ্রত আছে। আমি তাহাকে দেখিলে সমস্ত বিষয় :দুঃখ ভুলিয়া যাই । তাহার নিকট বসিয়া  আমি অনেক সংস্কৃত-গ্রন্থ আলোচনা করিতাম। সত্যেন্দ্রের সহিত আমার যথেষ্ট প্রীতি থাকিলেও দ্বিজেন্দ্র বাবুর মহদ গুণে আমি সৰ্ব্বদা আকৃষ্ট ছিলাম। তিনিও নির্ব্বিষয়ী, আমিও বিষয়-চিন্তা ছাড়িলে সুখে থাকি; সুতরাং তাঁহার সহবাস আমার যত ভাল লাগিত, তত আর কাহারও সহবাস ভাল লাগিত না। আমি ঐ সময়ে হৃদয়ের চিন্তা দূর করিবার জন্য বিজ্ঞান, বিশেষতঃ পরমার্থ-বিজ্ঞানের অনেক গ্রন্থ পাঠ করিতাম। বড় দাদাও আমার সঙ্গে সঙ্গে ঐ আলোচনার সহায় থাকিতেন। কান্ট, গেটে, হেগেল, সুইডেনবার্গ, শোপেন- হাউয়ার, হিউম, ভলটেয়ার প্রভৃতি অনেক লেখকদিগের পুস্তক আলোচনা করিয়া পদার্থতত্ত্ব-বিষয়ে আমার যে সিদ্ধান্ত হইল, তাহা বড় দাদা শুনিয়৷ বিশেষ চিন্তা করিয়া বলিলেন,— ‘ভাই কেদার, তুমি গম্ভীররূপে চিন্তা করিয়াছ। আমি তোমাকে হটাইতে পারিতেছি না।’ বড় দাদ। বড় বুদ্ধিশালী লোক ছিলেন। পদার্থতত্ত্ব-জ্ঞানে তিনি একজন অদ্বিতীয় লোক।”

 

স্বনামধন্য দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠ ভ্রাতাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্তসরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর যখন তাঁহার আত্ম- চরিতের শ্রুতলিপি কৃপাপূর্ব্বক লেখাইতেছিলেন, তখন তিনি বলিয়াছিলেন যে, ইংরেজী ১৮৮১ সালে একদিন দ্বিজেন্দ্র- বাবু যুবক রবীন্দ্রনাথকে সঙ্গে লইয়া “ভক্তিভবনে” (শ্রীল ঠাকুর ভক্তিবিনোদের কলিকাতা, ১৮১, মাণিকতলা ষ্ট্রীটস্থ ভবনের নাম ) আসিয়াছিলেন। তখন রবীন্দ্রনাথের পরিধানে পাঞ্জাব প্রদেশের ব্যক্তিগণের ন্যায় পোষাক ছিল। দ্বিজেন্দ্রবাবু রবীন্দ্রনাথের পরিচয়ে রহস্যক্রমে শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরকে বলিলেন,—“ইনি পাঞ্জাব হইতে আসিয়াছেন, ইহার নাম—‘ভানুসিংহ”।” এই বলিয়া দ্বিজেন্দ্ৰ বাবু শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের হস্তে “ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী” নামক একখানি পুস্তক উপহার দিলেন। তখন শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর তথায় উপস্থিত থাকিয়া এই রহস্য প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেন। সেই ‘ভানুসিংহ’-নামধারী যুবক রবীন্দ্রনাথ শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের সম্মুখে একটী গান ধরিলেন । উহার প্রথম চরণটি এই,—

 

“বাঁশরী বাজাতে চাই, 

বাঁশরী বাজিল কৈ ?”

 

শ্রীল প্রভুপাদ এতৎপ্রসঙ্গে আমাদিগকে বলিয়াছিলেন যে, তাঁহার সঙ্গীত-শ্রবণের প্রতি বীতস্পৃহা রবীন্দ্রবাবুর সুমিষ্ট স্বর শ্রবণ করিয়া পরে অনেকটা ক্ষীণ হইয়াছিল। ইহার বিশেষ কারণ এই যে, রবিবাবুর উচ্চারিত গানের শব্দগুলি অতি সুস্পষ্ট ছিল; কিন্তু ‘মনোহরসাহী’ প্রভৃতি পদাবলী-গায়কগণ যে কৃষ্ণলীলা-বিষয়ক পদ গান করিতেন, তাহার শব্দগুলি শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর বাল্যকালে অতিশয় অস্পষ্ট বোধ করিতেন। এজন্য কেবল সুর, মান ও তালের কসরতের উপর শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের অনুরাগ হয় নাই । শব্দকেই তিনি আদর করিতেন ।

 

ইহার অনেক দিন পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন সঙ্গীত- চর্চ্চা ও সঙ্গীত-বিজ্ঞানে বিশেষ পারদর্শিতা লাভ করিয়াছিলেন, তখন শ্রীল ঠাকুর ভক্তিবিনোদ ‘সজ্জনতোষণী’তে রবিবাবুকে অনুরোধ করিয়া লিথিয়াছিলেন,—

 

“আমরা রবীন্দ্রবাবু ও শ্রীশ বাবুকে অনুনয়পূর্ব্বক অনুরোধ করি যে, তাঁহারা যত্নপূর্ব্বক বৈষ্ণব কীর্তনের একখানি বৈজ্ঞানিক ইতিহাস বা ঐতিহাসিক বিজ্ঞানগ্রন্থ লিখিয়া বৈষ্ণবদিগকে যেন বিশেষ সুখী করেন। ঐ গ্রন্থে সমস্ত রাগ-রাগিণী, তাল-মান ও কীর্তনের সুর সমস্ত বিচারিত হইবে এবং রেণেটী, গরানহাটী ও মনোহরসাহী কীর্ত্তনের আচার্য্যদিগের জীবনী এবং তৎপরবর্ত্তী মহাজন-গণের সময় ও বিবরণ যতদূর পারেন, সংগ্রহ করিবেন।”

(সঃ তোঃ ২/৯ ) 

শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের সহিত রবীন্দ্রনাথের কার্সিয়ং প্রভৃতি স্থানেও কএকবার সাক্ষাৎ ও আলাপাদি হইয়াছিল। একবার স্বাধীন ত্রিপুরাধিপতি বীরচন্দ্র মাণিক্য বাহাদুরের নিমন্ত্রণে হাইকোর্টের বিচারপতি আশুতোষ চৌধুরী, ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় কার্সিয়ং গমন করেন। শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর ও তৎসঙ্গে শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর মহারাজ বীরচন্দ্রের বিশেষ অনুরোধে কিছুদিন পূৰ্ব্ব হইতেই তথায় অবস্থান করিয়৷ শিক্ষিত-সমাজে শ্রীমন্মহাপ্রভুর বাণী প্রচার করিতেছিলেন। এলাহাবাদ প্রবাসী নীলকমল মিত্র মহাশয়ের পুত্র চারুচন্দ্র মিত্র সেই সময়ে কার্সিয়ংএ ছিলেন। চারুবাবুর সহিত শ্রীমদ্ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের অনেক সময়ই ধৰ্ম্ম-প্রসঙ্গ হইত। চারুবাবুর জামাতা মিঃ কে, সি, দে ও তাঁহার ভ্রাতৃবর্গ সেই সময়ে কার্সিয়ংএ চারুবাবুর বাসায় যাতায়াত করিতেন । এই সময়, অর্থাৎ ইংরেজী ১৮৯৬ সালের জুলাই-আগষ্ট মাসে নুতন বাজারের ‘ক্যালকাটা প্রেসে’ দেবনাগর-অক্ষরে (মহামহোপাধ্যায়) শিতিকণ্ঠ বাচস্পতির ‘বিকাশিনী’-টীকা-সহিত ‘শ্রীগৌরাঙ্গ- ‘লীলা-স্মরণ মঙ্গল-স্তোত্র’ ছাপ৷ হইতে থাকে। শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের সহিত কার্সিয়ংএ বসিয়াই ‘শ্রীস্মরণমঙ্গলে’র প্রুফ সংশোধন করেন। শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর কলিকাতায় চলিয়া আসিলে শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর কার্সিয়ংএ ক্যাম্প-সাইডে থাকিয়া শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের আদেশে হরিকথা প্রচার করিতে থাকেন। এই সময়েই রবিবাবু কার্সিয়ংএ গিয়াছিলেন। শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর রবিবাবুর জন্য নিজের থাকিবার গৃহটী প্রদান করিয়া অতিথি-সৎকার করিয়াছিলেন। কর্ণেল মহিম ঠাকুর রবিবাবুর বিশেষ পরিচিত ছিলেন। শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর ও কর্ণেল মহিমবাবু অনেক সময় একত্রে বসিয়া রবিবাবুর সহিত নানা প্রসঙ্গে আলাপ করিতেন। রবিবাবু সেই সময় ফরাসী ভাষায় রচিত  গল্পাবলী পাঠ করিতেছিলেন। শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের শ্রীমুখে শ্রীচৈতন্যদেবের বাস্তব চরিত-কথা শ্রবণ করিয়া রবিবাবু গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম্মের অনেক ঐতিহাসিক তথ্য সংগ্রহ করিতে পারিয়াছিলেন।

 

যখন প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর পাশ্চাত্ত্য- দেশে শ্রীচৈতন্যদেবের বাণী প্রচারের অভিলাষ করেন, তৎপূর্ব্বে ইংরেজী ১৯২৮ সালের ১৮ই এপ্রিল শ্রীল প্রভুপাদের সহিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জোড়াসাঁকোস্থিত ভবনে আলাপ হয়। শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের সহিত ডক্টর রবিবাবুর জ্যেষ্ঠভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অকৃত্রিম বন্ধুত্ব ছিল এবং সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের সহপাঠী ছিলেন, তথা কার্সিয়ংএ শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের নিকট রবিবাবু শ্রীচৈতন্যদেবের যে সকল কথা শ্রবণ করিয়াছিলেন, তাহা স্মরণ করিয়া কবিবর অত্যন্ত উৎফুল্ল হইয়াছিলেন এবং শ্রীশ্রীল প্রভুপাদকে আচার্য্যোচিত সম্মান ও অভ্যর্থনা করিয়া পাশ্চাত্ত্যদেশে প্রচার করিতে হইলে যে-সকল বাধাবিঘ্ন আছে, তৎসম্বন্ধে কিছু কিছু আলোচনা করিয়াছিলেন।

  • February 20-21, 2022 Puri, Odisha
  • 3rd of July in 2022 Balasore, Odisha
  • August 24-26, 2022 Kurukshetra, Haryana
  • October 7, 2022 Prayagraj, Uttar Pradesh
  • November 30 -1, 2022 Agartala, Tripura
  • December 3-4, 2022 Lalabazar, Assam
  • December 7, 2022 Guwahati, Assam
  • February 17-18, 2023 Baruipur, West Bengal
  • May 27-28, 2023 Patna, Bihar
  • June 26, 2023 Bhubaneswar, Odisha
  • November 26, 2023 Gaya, Bihar
  • February 8, 2024 Delhi
  • February 13-15, 2024 Balighai, Medinipur
  • March 19, 2024 Nabadwip, West Bengal
  • May 27 2024 Florida, USA
  • June 23-24, 2024 Baripada, Odisha
  • June 26-27, 2024 Paradeep, Odisha
  • June 29-30, 2024 Cuttack, Odisha
  • July 14, 2024 Chennai, Tamilnadu
  • August 31 2024 London
  • September 07 2024 London
  • September 08 2024 Berlin (Germany)
  • September 13 2024 Canada
  • September 14-15 2024 Rochester (USA)
  • September 21 2024 New Jersey (USA)
  • Upcoming Events