Srila Advyata Acharya prabhu Appearance Day

 
 
মহাবিষ্ণুজগৎকৰ্ত্তা মায়য়া যঃ সৃজত্যদঃ।
তস্যাবতার এবায়মদ্বৈতাচার্য্য ঈশ্বরঃ ।।
 
–(শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত আদি ১।১২)
 
শ্রীশ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রিয় পার্ষদবর আদি কবি শ্রীবৃন্দাবনদাস ঠাকুর শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্যের মহিমা এইভাবে বর্ণন করেছেন—
 
“সেই নবদ্বীপে বৈসে বৈষ্ণবাগ্রগণ্য।
‘অদ্বৈত আচাৰ্য্য’ নাম সর্ব লোকে ধন্য।।
জ্ঞান-ভক্তি বৈরাগ্যের গুরু মুখ্যতর।
কৃষ্ণভক্তি বাখানিতে যে হেন শঙ্কর।।
ত্রিভুবনে আছে যত শাস্ত্রের প্রচার।
সৰ্ব্বত্র-বাখানে, কৃষ্ণপদভক্তি সার।।
তুলসী মঞ্জরী-সহিত গঙ্গাজলে।
নিরবধি সেবে কৃষ্ণে মহা-কুতূহলে৷৷
হুঙ্কার করয়ে কৃষ্ণ আবেশের তেজে।
যে ধ্বনি ব্রহ্মান্ড ভেদি, বৈকুণ্ঠেতে বাজে।।
যে প্রেমের হুঙ্কার শুনিঞা কৃষ্ণ নাথ।
ভক্তিরসে আপনে যে হইলা সাক্ষাৎ।।
 
― (শ্রীচৈঃ ভাঃ আঃ ২।৭৮-৮৩)
 
শ্ৰীঅদ্বৈত আচাৰ্য্য মহামহিমাযুক্ত অখিল ব্রহ্মান্ড-নাথ শ্রীকৃষ্ণকে ভক্তিযোগে প্রকট করেছেন। এর থেকে বড় মায়া আর কি হতে পারে? শ্রীঅদ্বেত আচার্য্য সর্ব গুরু ঈশ্বর থেকে অভিন্ন এবং স্বয়ং কৃষ্ণ ভজন শিক্ষার আচার্য্য। যে মহাবিষ্ণু মায়ার দ্বারা এই জগতকে প্রথমে সৃষ্টি করেন, সেই মহাবিষ্ণুর অবতার এই শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্য।
 
শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্য প্রভুর পিতা শ্রীকুবের মিশ্র, মাতা শ্রীমতী নাভাদেবী। এঁরা পর্ব্বে শ্রীহট্টে বাস করতেন। শ্রীকুবের পণ্ডিত বহুকাল অপুত্রক ছিলেন। প্রায় বৃদ্ধ বয়সে তিনি এই পুত্ররত্ন লাভ করেন। শ্রীহট্ট জেলার মধ্যে নবগ্রাম নামক স্থানে শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্যের জন্ম হয়। মাঘ শুক্ল সপ্তমী তার পবিত্র জন্ম দিন।
 
 
তথাহি গীত
মাঘ শুক্লাতিথি,
সপ্তমীতে অতি,
উথলয়ে মহা আনন্দ সিন্ধু।
নাভাগর্ভ ধন্য
করি অবতীর্ণ
হৈল শুভক্ষণে অদ্বৈত-ইন্দু ।।
কুবের পণ্ডিত
হৈয়া হরষিত
নানা দান দ্বিজ দরিদ্রে দিয়া।
সূতিকা মন্দিরে
গিয়া ধীরে ধীরে
দেখি পুত্ৰ মুখ জুড়ায় হিয়া।।
নবগ্রামবাসী,
লোক ধা’য়া আসি
পরস্পর কহে না দেখি হেন।
কিবা পুণ্যফলে,
মিশ্র বৃদ্ধ কালে
পাইলেন পুত্ররতন যেন।।
পুষ্প বরিষণ,
করে সুরগণ,
অলক্ষিত রীতি উপমা নহু।
জয় জয় ধ্বনি
ভরল অবনী
ভনে ঘনশ্যাম মঙ্গল বহু।।
 
 
–(শ্রীভক্তি রত্নাকর ১২।১৭৫৯)
 
অতঃপর শ্রীকুবের পণ্ডিত গঙ্গাতীরে বাস করবার উদ্দেশ্যে পুত্রকে নিয়ে শান্তিপুরে চলে আসেন এবং গঙ্গাতটে বসবাস করতে থাকেন। পুত্রের নামকরণ করলেন “মঙ্গল।” আর এক নাম রাখলেন “কমলাক্ষ”। কুবের পণ্ডিত অতি যত্নের সঙ্গে পুত্রকে লালন-পালন করতে লাগলেন। অল্পবয়সে যজ্ঞোপবীত দিলেন। কিছুদিন উপাধ্যায়ের নিকট পড়ালেন। পরে কুবের পণ্ডিত স্বয়ং পুত্রকে নানা শাস্ত্র অধ্যয়ন করান। কিছুদিন পরে কুবের পণ্ডিত পত্নীর সঙ্গে পরলোক গমন করেন। পিতা-মাতার অদর্শনে শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্য বড়ই দুঃখিত হন। তিনি পিতা মাতার কার্য্যের জন্য গয়াতীর্থে গমন করেন এবং কিছুদিন অন্যান্য তীর্থও পর্যটন করেন। শ্রীঅদ্বৈত আচাৰ্য্য প্রভু তীৰ্থ ভ্রমণ করে স্বদেশে ফিরে এলে বন্ধু বান্ধবগণের একান্ত ইচ্ছা হল যে তিনি বিবাহ করেন। তাদের ইচ্ছানুসারে তিনি বিবাহ করতে রাজি হলেন। শ্রীনৃসিংহ ভাদুড়ী নামে এক পরমধর্মনিষ্ঠ ধনবান ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাঁর ‘শ্রী’ও ‘সীতা’ নামে দুই পরমা সুন্দরী কন্যা ছিলেন। শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্য সেই দুই কন্যার পাণি গ্রহণ করলেন। ভাদুড়ী মহাশয় কন্যা জামাতাকে বহু যৌতুকাদি দান করলেন। ‘সীতা’ ঠাকুরাণী সাক্ষাৎ যোগমায়ার অবতার এবং ‘শ্রী’ দেবী যোগমায়ার প্রকাশ স্বরূপিণী। শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্য সাক্ষাৎ মহাবিষ্ণুর অবতার। তার মধ্যে গোলোকস্থ সদাশিবের প্রকাশ রয়েছে।
 
শ্ৰীঅদ্বৈত আচাৰ্য প্ৰভু ভক্তসঙ্গে কৃষ্ণ কথারসে দিন যাপন করবার জন্য শ্রীমায়াপুরে একটি বসত বাটী নির্মাণ করলেন। শ্রীআচার্য্য প্রতিদিন ভক্তসভায় গীতা ভাগবত অধ্যয়ন করতেন। কলির জীবের দুর্গতি দেখে তাদের নিস্তারের জন্য তিনি গঙ্গাজল তুলসী দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ আরাধনা করতেন।
 
ভক্তের আহ্বান ভগবান শুনেন। শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্যের আহ্বান ভগবান শুনলেন। তিনি শীঘ্রই কলির জীবের উদ্ধারের জন্য নদীয়াপুরে শ্রীমিশ্র-গৃহে অবতীর্ণ হলেন। শান্তিপুর থেকে শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্য ভক্তিবলে তা সমস্ত বুঝতে পারলেন। তিনি প্রথমে সীতা ঠাকুরাণীকে মায়াপুরে মিশ্রগৃহে প্রেরণ করলেন এবং পরে স্বয়ং এলেন।
 
“ দেখিয়া বালক-ঠাম,
সাক্ষাৎ গোকুল-কান,
বর্ণমাত্র দেখি বিপরীত।।”
 
 
(শ্রীচৈঃ চঃ আদি ১৩।১১৫)
 
সাক্ষাৎ সেই গোকুলের হরি। কেবল বর্ণটি বিপরীত— গৌরবর্ণ। আচার্য্যের আনন্দের সীমা রইল না। বুঝতে পারলেন তাঁর মনস্কামনা পূর্ণ হয়েছে। অনন্তর শ্রীগৌরসুন্দর ক্রমে আত্মপ্রকাশ করে শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্যকে আহ্বান করলেন এবং তাঁর মনোবাঞ্ছিত রূপ সকল দেখতে বললেন।
 
যে পূজার সময় যে দেব ধ্যান করে।
তাহা দেখে চারিদিগে চরণের তলে।।
– (শ্রীচৈঃ ভাঃ মধ্যঃ ৬৮৬)
 
শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্য পূজার সময় যে যে দেবতার ধ্যান করতেন সে সে দেবতা শ্রীগৌর-সুন্দরের চরণ তলে স্তুতি করছেন দেখতে পেলেন। শ্ৰীঅদ্বৈত আচাৰ্য্য এই সমস্ত দেখে প্রেমানন্দে দুই বাহু তুলে বলতে লাগলেনঃ–
 
আজি সে সফল মোর দিন পরকাশ।
আজি সে সফল হৈল যত অভিলাষ৷৷
আজি মোর জন্ম কর্ম সকল সফল।
সাক্ষাতে দেখিলু তোর চরণযুগল।।
ঘোষে মাত্র চারিবেদে যারে নাহি দেখে।
হেন তুমি মোর লাগি হৈলা পরতেকে।।
 
(শ্রীচৈঃ ভাঃ মধ্যঃ ৬।১০০)
 
অতঃপর মহাপ্রভু শ্রীআচার্য্যকে করুণা করে বললেন- আচার্য্য! আমার পূজা কর। তখন শ্রীআচার্য্য শ্রীগৌরসুন্দরের শ্রীচরণ যুগলে পূজা করতে লাগলেন।
 
প্রথমে চরণ ধুই ‘সুবাসিত জলে।
শেষে গন্ধে পরিপূর্ণ পাদপদ্ম ঢালে।।
চন্দনে ডুবাই’দিব্য তুলসীমঞ্জরী।
অর্ঘ্যের সহিত দিলা চরণ-উপরি।।
গন্ধ, পুষ্প ধূপ দীপ পঞ্চ-উপাচারে।
পূজা করে প্রেমজলে বহে অশ্রুধারে।।
পঞ্চশিখা জ্বালি পুনঃ করেন বন্দনা।
শেষে ‘জয় জয়’ ধ্বনি করেন ঘোষণা।।
(শ্রীচৈঃ ভাঃ মঃ ৬।১০৯)
 
শ্ৰীঅদ্বৈত আচাৰ্য প্ৰভু শাস্ত্রবিধানে এইরূপে শ্রীগৌরসুন্দরের শ্রীপাদপদ্মযুগল পূজাদি করে শেষে স্তুতি করতে লাগলেন :—
 
জয় জয় সৰ্ব্ব প্রাণনাথ বিশ্বম্ভর।
জয় জয় গৌরচন্দ্র করুণাসাগর।।
জয় জয় ভকতবচন সত্যকারী।
জয় জয় মহাপ্রভু মহা-অবতারী।।
জয় জয় সিন্ধুসুতা রূপ-মনোরম।
জয় জয় শ্রীবৎস কৌস্তুভ বিভূষণ।।
জয় জয় ‘হরে কৃষ্ণ’ মন্ত্রের প্রকাশ।
জয় জয় নিজ-ভক্তি গ্রহণ বিলাস।।
জয় জয় মহাপ্রভু অনস্তশয়ন।
জয় জয় জয় সৰ্ব্বজীবের শরণ।।
-(শ্রীচৈঃ ভাঃ মধ্যঃ ৬।১১৪-১১৮)
 
শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্য প্রভুর এইরূপ স্তুতি শুনে শ্রীগৌরসুন্দর সহাস্য বদনে বললেন, হে আচার্য্য ! তোমার স্তুতিতে আমি পরম সন্তুষ্ট হয়েছি। তুমি ইচ্ছানুরূপ বর গ্রহণ কর। তখন শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্য বললেনঃ—
 
অদ্বৈত বলয়ে,—যদি ভক্তি বিলাইবা ৷
স্ত্রী,-শূদ্র-আদি যত মূর্খেরে সে দিবা।।
 
― (শ্রীচৈঃ ভাঃ মধ্যঃ ৬।১৬৭)
 
হে ঠাকুর ! যদি ভক্তিধন বিতরণ কর, মূর্খ, স্ত্রী ও শূদ্রাদিকে ভক্তি ধন দিও। আমি এই বর তোমার কাছে চাই। শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্য প্রভুর এবম্বিধ বর প্রার্থনার কথা শুনে চতুর্দিকে ভক্তগণ হরি হরি ধ্বনি করতে লাগলেন।
 
করুণাময় শ্রীগৌরহরি ভক্তবাক্য সত্য করবার জন্য জগতে দীন, হীন, পাপী ও পাষন্ডী প্রভৃতিকেও ব্রহ্মার দুর্লভ প্রেম দান করলেন।
 
জয় করুণাময় শান্তিপুরপতি শ্ৰীশ্ৰীঅদ্বৈত আচার্য্য প্রভুকী জয় ৷
 
 
 
তথাহি গীত
জয় জয় অদ্বৈত আচার্য্য দয়াময় ।
যাঁর হুহুঙ্কারে গৌর অবতার হয়।।
প্রেমদাতা সীতানাথ করুণাসাগর।
যাঁর প্রেমরসে আইলা গৌরাঙ্গসুন্দর।।
যাহারে করুণা করি, কৃপাদিঠে চায়।
‘প্রেমরসে সে জন চৈতন্য গুণগায়।।
তাঁহার চরণে যেবা লইল শরণ।
সে-জন পাইলা গৌর-প্রেম মহাধন।।
এমন দয়ার নিধি কেনে না ভজিলুঁ।
লোচন বলে নিজ মাথে বজর পাড়িলুঁ।।
 
( পদকল্পতরু )
 
 
 
 
 
 
  • February 20-21, 2022 Puri, Odisha
  • 3rd of July in 2022 Balasore, Odisha
  • August 24-26, 2022 Kurukshetra, Haryana
  • October 7, 2022 Prayagraj, Uttar Pradesh
  • November 30 -1, 2022 Agartala, Tripura
  • December 3-4, 2022 Lalabazar, Assam
  • December 7, 2022 Guwahati, Assam
  • February 17-18, 2023 Baruipur, West Bengal
  • May 27-28, 2023 Patna, Bihar
  • June 26, 2023 Bhubaneswar, Odisha
  • November 26, 2023 Gaya, Bihar
  • February 8, 2024 Delhi
  • February 13-15, 2024 Balighai, Medinipur
  • March 19, 2024 Nabadwip, West Bengal
  • May 27 2024 Florida, USA
  • June 23-24, 2024 Baripada, Odisha
  • June 26-27, 2024 Paradeep, Odisha
  • June 29-30, 2024 Cuttack, Odisha
  • July 14, 2024 Chennai, Tamilnadu
  • August 31 2024 London
  • September 07 2024 London
  • September 08 2024 Berlin (Germany)
  • September 13 2024 Canada
  • September 14-15 2024 Rochester (USA)
  • September 21 2024 New Jersey (USA)
  • Upcoming Events