Srila Purushottam Das Thakur Disappearance Day
শ্রীপুরুষোত্তম ঠাকুর শিশুকাল থেকে শ্রীনিত্যানন্দের শ্রীচরণ ধ্যান পরায়ণ ছিলেন।
শ্রী সদাশিব কবিরাজ — বড় মহাশয়
শ্রীপুরুষোত্তমদাস—তাঁহার তনয়।।
আজন্ম নিমগ্ন নিত্যানন্দের চরণে।
নিরন্তর বাল্যলীলা করে কৃষ্ণ সনে।।
(শ্ৰীচৈঃ চঃ আদিঃ ১১।৩৮-৩৯)
সদাশিব কবিরাজ—মহাভাগ্যবান্।
যাঁর পুত্র শ্রীপুরুষোত্তমদাস নাম।।
বাহ্য নাহি পুরুষোত্তমদাসের শরীরে।
নিত্যানন্দচন্দ্র যাঁর হৃদয়ে বিহরে।।
(চৈঃ ভাঃ অন্ত্যঃ ৫/৭৪১-৭৪২)
শ্রীপুরুষোত্তম ঠাকুরের প্রধান চারজন শিষ্য ছিলেন। শ্রীমাধবাচার্য্য, শ্রীযাদবাচার্য্য, দেবকীনন্দন দাস প্রভৃতি। এঁরা কুলীন ব্রাহ্মণ বংশীয় ছিলেন। শ্রীমাধবাচার্য্য নিত্যানন্দ প্রভুর কন্যা গঙ্গাদেবীর স্বামী, শ্রীদেবকীনন্দন দাস ‘শ্রীবৈষ্ণব-বন্দনা’ গ্রন্থের লেখক। শ্রীপুরুষোত্তম ঠাকুরের শ্রীবিগ্রহগণ পূর্ব্বে তাঁর শ্রীপাট চাকদহ ও শিমুরালি ষ্টেশন হতে কিছু দূরে সুখ-সাগরে ছিলেন। সুখসাগর গ্রাম ধ্বংসের পর শ্রীবিগ্রহগণ চান্দুড়িয়ায় আনীত হন। বর্তমানে জিরাটের গঙ্গা-বংশগণের তত্ত্বাবধানে অন্যান্য বিগ্রহগণসহ শ্রীপুরুষোত্তম ঠাকুরের শ্রীবিগ্রহগণ সেবিত হচ্ছেন। পুরুষোত্তম ঠাকুরের শ্রীপাট “বসু জাহবার” পাট নামে অভিহিত। তথাকার বর্ত্তমান বৃদ্ধ সেবায়েতের নাম শ্রীসীতানাথ দাস, (চৈঃ চঃ আদি ১১।৩৮-৩৯ অনুভাষ্য দ্রষ্টব্য)
শ্রীপুরুষোত্তম ঠাকুরের পুত্র শ্রীকানু ঠাকুর।
তাঁর পুত্র—মহাশয় শ্রীকানু ঠাকুর।
যাঁর দেহে রহে কৃষ্ণ প্রেমামৃতপুর।।
(চৈঃ চঃ আদি ১১৪0)
শ্রীসদাশিব কবিরাজের পুত্র শ্রীপুরুষোত্তম দাস ঠাকুর। তাঁর পুত্র শ্রীকানু ঠাকুর। শ্রীকানু ঠাকুরের সম্বন্ধে প্রবাদ আছে—শ্রীপুরুষোত্তম ঠাকুরের পত্নীর নাম জাহ্নবা ছিল। ঠাকুর কানাইর আবির্ভাবের পরেই জাহ্নবা অপ্রকট হন। শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু এ কথা জানতে পেরে তাঁর গৃহে শুভাগমন করেন এবং শিশু কানুকে নিয়ে খড়দহ গ্রামে আসেন। শ্রীকানু ঠাকুরের জন্ম শকাব্দ ১৪৫৭, বাংলা ৯৪২ সাল আষাঢ়ী শুক্লা দ্বিতীয়া রথযাত্রা বাসরে। শ্রীকানু বা কানাই ঠাকুরের কৃষ্ণভক্তি পরায়ণতা দেখে শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু তাঁর এক নাম দিয়েছিলেন—শিশু কৃষ্ণদাস।
শ্রীকানাই ঠাকুর পাঁচ বছর বয়সে শ্রীঈশ্বরী জাহ্নবা দেবীর সঙ্গে শ্রীবৃন্দাবন ধামে গমন করেন। শ্রীজীব গোস্বামী প্রমুখ আচার্য্যগণ তার নাম রাখেন ‘ঠাকুর কানাই’। জনশ্রুতি আছে যে, বৃন্দাবনে ঠাকুর কানাই কীর্তনানন্দে বিহ্বল হয়ে, যখন নৃত্য করছিলেন তখন তাঁর দক্ষিণ পদের একটী নূপুর পদ হতে অন্তর্হিত হয়ে যায়। ঠাকুর কানাই তখন বলেন— যে স্থানে এ নূপুর পড়েছে, আমি সে স্থানে বাস করব। যশোহর জেলায় খানা নামক গ্রামে ঐ নূপুর পতিত হয়। তদবধি ঠাকুর শ্রীকানাই বোধখানা এসে বাস করতে থাকেন। প্রেমবিলাস গ্রন্থে দৃষ্ট হয় যে শ্রীকানাই ঠাকুর খেতরির উৎসবে শ্রীজাহবা মাতার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। শ্রীপুরুষোত্তম ঠাকুরের যেমন বহু শৌত্রু ব্রাহ্মণ শিষ্য ছিলেন, তেমনি শ্রীকানাই ঠাকুরেরও বহু শৌত্রু ব্রাহ্মণ শিষ্য ছিলেন।
বর্গীর হাঙ্গামার সময় শ্রীকানাই ঠাকুরের বংশধরগণ শ্রীবিগ্রহসহ বোধখানা ত্যাগ পূর্ব্বক নদীয়া জেলার অন্তর্গত ‘ভাজন ঘাট’ নামক গ্রামে এসে বসবাস করেন। অতঃপর বর্গীর হাঙ্গামা মিটবার পর কানাই ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্রের বংশধর হরিকৃষ্ণ গোস্বামী পুনঃ বোধখানাতে এসে বাস করেন এবং প্রাণবল্লভ নামক শ্রীবিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমান বরাহনগরে বোধখানা গোস্বামীর বংশধর শ্রীহরিপদ গোস্বামী এম. এ. কাব্য সাংখ্য ব্যাকরণতীর্থ মহাশয় বাস করছেন। সামবেদীয় কৌমুদী শাখায় রাঢ়ীশ্রেণীর শ্রীরাম নামক একজন ব্রাহ্মণ শ্রীকানাই ঠাকুরের প্রসিদ্ধ শিষ্য ছিলেন। মেদিনীপুর জেলায় শিলাবতী নদীর তীরে গড়বেতা নামক গ্রামে শ্রীকানাই ঠাকুরের শিষ্যগণ বাস করতেন।