Srila Ramchandra Goswami Disappearance Day
শ্রীবংশীবদন ঠাকুরের পুত্র – (১) শ্রীচৈতন্যদাস ও (২) শ্রীনিত্যানন্দ দাস। শ্রীচৈতন্যদাসের পুত্র শ্রীরামচন্দ্র গোস্বামী। ইনি মহাপ্রভাবশালী আচাৰ্য্য ছিলেন। এঁকে দ্বিতীয় বংশীবদন ঠাকুর বলা হত।
শ্রীরামচন্দ্র গোস্বামী শ্রীজাহ্নবা মাতা গোস্বামিনীর প্রতিপাল্য শিষ্য ছিলেন। তিনি পুরী, কাশী, প্রয়াগ ভ্রমণ করে মথুরায় আসেন। শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থলী আদি কেশব প্রভৃতি দর্শন করেন। অনন্তর গোকুলের দ্বাদশ বনাদি দর্শন করেন। বৃন্দাবন ধামে তিনি কয়েক বছর অবস্থান করেছিলেন। অতঃপর তিনি রাম ও কৃষ্ণের যুগল মূর্তি নিয়ে গৌড়দেশে আগমন করেন। তাঁর ভক্তি সিদ্ধান্ত শাস্ত্রে প্রগাঢ় পাণ্ডিত্য ভক্তি সদাচারতা ও আচার-নিষ্ঠা প্রভৃতি দেখে সকলে মুগ্ধ হন। অল্পকাল মধ্যে তাঁর যশ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। বহু সম্ভ্রান্ত পণ্ডিত ও ধনাঢ্য ব্যক্তি তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
অম্বিকা নগরের দুই ক্রোশ পশ্চিমে বালুকা নাম্নী একটা ক্ষুদ্র নদী প্রবাহিতা, তার তীরে ছিল ঘোর জঙ্গল। জঙ্গলে ছিল হিংস্র ব্যাঘ্রের বাস। সেই স্থানে শ্রীরামচন্দ্র গোস্বামী বসবাস করতে লাগলেন। চারিদিকে শিষ্যগণের বসত বাটী করলেন। গোস্বামীর প্রভাবে সেই স্থান যেন মহাতীর্থে পরিণত হল। গোস্বামী মহোদয় একদিন একটী ব্যাঘ্রকে হরিনাম করতে বললেন। ব্যাঘ্রটি হরিনাম করতে লাগল। তিনি যাঁকে নাম উপদেশ করতেন, তিনি নামে মত্ত হতেন এবং উদ্ধার লাভ করতেন। সেইজন্য ঐ স্থানের নাম হল “বাঘনাপাড়া” ব্যাঘ্রকে উপদেশ দিয়ে উদ্ধার করলেন।
শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয় বাঘ্নাপাড়া গোস্বামিদিগের এক প্রশস্তি পত্রে বাঘ্নাপাড়া নামের কারণ উল্লেখ করেছেন।
“জয়তঃ শ্রীরামকৃষ্ণো বাপ্পা পল্লীবিভূষণৌ।
জাহ্নবীবল্লভৌ রামচন্দ্রকীর্ভিস্বরূপকৌ।।
ব্যাঘ্রপি বৈষ্ণবঃসাক্ষাৎ যন্ত্রভাবাদ্বভূব তৎ।
ব্যাঘ্রাপল্ল্যাত্মকং বন্দে শ্রীপাটং গৌড়পাবনং।।
(শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের স্বলিখিত জীবনী)
বাঘ্নাপাড়ায় শ্রীরামচন্দ্র গোস্বামী শ্রীরাম ও কৃষ্ণের শ্রীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। অদ্যাপি সেই মূর্তি তথায় বিরাজ করছেন। পশ্চিম অঞ্চলের কোন বণিক ভক্ত বিগ্রহের জন্য উত্তম মন্দির নির্মাণ করে দিয়েছিলেন।
শ্রীরামচন্দ্র গোস্বামী সম্বন্ধে বৈষ্ণব-বন্দনা গ্রন্থে আছে—
জাহ্নবীর প্রিয় বন্দ্য রামাই গোসাঞী।
যে আনিল গৌড় দেশে কানাই বলাই।।
যৈছে বীরভদ্র জানি তৈছে শ্রীরামাই।
জাহ্নবী মাতার আজ্ঞা ইথে আন নাই।
শ্রীরামচন্দ্র গোস্বামীর শ্রীরামকৃষ্ণ বিগ্রহ প্রাপ্তি সম্বন্ধে এইরূপ কিংবদন্তী আছে—
অরুণ উদয় কালে তীর্থ প্রস্কন্দনে।
স্নান করিবারে প্রভু করেন গমনে।।
স্নান কালে রাম কৃষ্ণ শ্রীমূৰ্ত্তি যুগল।
প্রভু রামচন্দ্র কোলে আসিয়া উঠিল।।
—(বংশীশিক্ষা)
প্রস্কন্দন তীর্থে স্নান করবার সময় শ্রীরামকৃষ্ণ গোস্বামী মহোদয়ের কোলে এসে উঠলেন। ভগবান্ ভক্তের থেকে কি ভাবে সেবা নেন এবং কিভাবে জগজ্জীবের উদ্ধারের জন্য প্রকটিত হন তা কে বুঝতে পারে?
একদিন রাত্রিকালে শ্রীবীরচন্দ্র গোস্বামী বহু শিষ্য নিয়ে শ্রীরামচন্দ্র গোস্বামীর গৃহে এলেন এবং বললেন অদ্য আম্র প্রসাদ গ্রহণ করতে চাই। কোন শিষ্যের দ্বারা বকুল বৃক্ষ থেকে আম্রফল পাড়িয়ে শ্রীরামচন্দ্র গোস্বামী শ্রীবীরচন্দ্র গোস্বামীকে ও শিষ্যগণকে ভোজনের সময় দিয়েছিলেন।
শ্রীরামচন্দ্র গোস্বামী একজন বিখ্যাত পদকর্তা ছিলেন। তিনি ১৪৫৯ শকে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫০৫ শকের মাঘ মাসের কৃষ্ণা তৃতীয়া তিথিতে অপ্রকট হন। তিনি কখন বুধরী গ্রামে কখন বাদ্মাপাড়ার নিকটে রাধানগরে অবস্থান করতেন। ইনি ব্রহ্মচারী ছিলেন। ছোট ভ্রাতা শ্রীশচীনন্দনকে মন্ত্র দীক্ষা প্রদান করে বাঘ্নাপাড়ায় শ্রীবিগ্রহ সেবায় নিযুক্ত করেন। শচীনন্দন গোস্বামী সপরিবারে বাঘ্না পাড়াতে অবস্থান করেন। পরবর্তী কালে শ্রীযুক্ত বিহারী গোস্বামী প্রভৃতি তাঁর বংশে জন্মগ্রহণ করেন।
শ্রীরামচন্দ্র গোস্বামী লিখিত গ্রন্থ—(১) করচা মঞ্চরী (২) সম্পুটিকা ও (৩) পাষণ্ড দলন।
তাঁর দুইটি পদকীর্ত্তন শ্রীপদকল্পতরু গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে।
পহুঁ মোর গৌরাঙ্গ রায়।
শিব শুক বিরিঞ্চি যার গুণ গায়।।
কমলা যাঁহার ভাবে সদাই আকুলি।
সেই পহুঁ বাহু তুলি কান্দে হরি বলি।।
যে অঙ্গ হেরি হেরি অনঙ্গ ভেল কাম।
সো অব কীৰ্ত্তন ধূলি ধূসর অভিরাম।।
খেনে রাধা রাধা বলি উঠে চমকিয়া।
গদাধর নরহরি রহে মুখ চাঞা।।
পূরব নিবিড় প্রেমে পুলকিত অঙ্গ।
রামচন্দ্র কহে কে না বুঝে ও রঙ্গ।।
দেখ শচীনন্দন
জগত জীবন ধন
অনুক্ষণ প্রেমধন জগজনে যাচে।
ভাবে বিভোর বর
গৌর তনু পুলকিত
সঘনে বোলাঞা হরি গোরা পহুঁ নাচে।।
সব অবতার সার গোরা অবতার।
হেম বরণ যিনি
নিরুপম তনু খানি
অরুণ নয়নে বহে প্রেমক ধার।।
বৃন্দাবন গুণ শুনি
লুঠত সে দ্বিজমণি
ভাব ভরে গরগর পহুঁ মোর হাসে।
কাশীশ্বর অভিরাম
পণ্ডিত পুরুষোত্তম
গুণ-গান করতহি নরহরি দাসে।।
খোল করতাল শুনি
কিবা শিশু কিবা ধনী
ধায়ত সবহু প্রেম প্রতি আশে।
এমন গৌর গুণ
যাক জাগয়ে মনে
তাকর সেবক রামচন্দ্র দাসে।।