শ্রীশ্রী রামনবমীর ব্রতোপবাস (Ram Navami 2024)

Gaudiyamission Ramnavami

অগস্তাসংহিতায়াম্ –
চৈত্রে মাসি নবম্যান্তু শুক্লায়াং হি রঘুদ্বহঃ।
প্রাদুরাসীৎ পুরা ব্রহ্মন্ পরং ব্রহ্মেব কেবলম্।
তস্মিন্ দিনে তু কর্তব্যমুপবাসব্রতাদিকম্ ৷৷ ২৪১ ॥


অগস্তাসংহিতায়, যথা- হে ব্রহ্মণ! চৈত্রমাসে শুক্লপক্ষে নবমীতে একমাত্র পরব্রহ্ম রঘুকুলধুরন্ধর রাম প্রাদুর্ভূত হইয়াছিলেন, সুতরাং তদ্দিনে উপবাস ব্রত অনুষ্ঠান করা উচিত।
যে বিমূঢ়মতি শ্রীরামনবমীদিন প্রাপ্ত হইয়া উপবাসী থাকে না, সে কুম্ভীপাক নরকে পচ্যমান হয় । মোহবশে রামনবমীতে ভোজন করিলে সেই মূঢ়মতি দারুণ কুম্ভীপাকে পচ্যমান হয়, ইহাতে সংশয় নাই ॥


শ্রীরামনবমী কোটি সূর্যগ্রহণ অপেক্ষাও অধিক। ঐ মহাপুণ্য দিবসে ভক্তিপূর্বক রামের উদ্দেশে যে কর্ম করা যায়, তাহাই ভববন্ধনমোচনের কারণ হয়।
যিনি অতন্দ্রিত হইয়া রামনবমীতে উপবাস করেন, তাঁহাকে আর জননীজঠরে প্রবেশ করিতে হয় না এবং তিনি নিশ্চয় রঘুনাথের প্রিয়পাত্র হন। অতএব সর্বথা এই রামনবমীব্রতানুষ্ঠান করিয়া নিখিল পাতক হইতে বিমুক্ত হইয়া সনাতন ব্রহ্ম রঘুবরকে লাভ করা যায়। মানব ভক্তিসহকারে এক মাত্র শ্রীরামনবমীব্রতে উপবাস করিয়া কৃতকৃত্য হইয়া সর্বপাতক হইতে পরিত্রাণ পাইতে পারে ।
মধ্যাহ্নকালে পুনর্বসুর যোগ হইলে ঐ তিথি মহাপুণ্যতম বলিয়া কথিতা হন। দিবাকর মেষ রাশিগত হইলে কর্কটলগ্নে পরমপুরুষ রামচন্দ্র স্বীয় কলাসহ কৌশল্যাতে আবির্ভূত হন। হরিপরায়ণ ব্যক্তিগণ অষ্টমীবিদ্ধা নবমী বর্জন করিয়া শুদ্ধা নবমীতে উপবাস করিয়া দশমীতে পারণ করিবেন ।
দশমীদিনে পারণের নিশ্চয়-নিবন্ধন নবমী ক্ষীণা হইলে নিঃসন্দেহমনে অষ্টমীবিদ্ধা নবমী গ্রহণ করাই উপবাস বিষয়ে বৈষ্ণবগণের কর্তব্য। অগস্তাসংহিতা প্রভৃতি গ্রন্থে। – এই ব্রতের সবিস্তর বর্ণিত ও প্রসিদ্ধ আছে, এখানে সংক্ষেপে তাহা উল্লেখ করা হইল।


শ্রীরামনবমীব্রতবিধিঃ
অষ্টম্যাং চৈত্রমাসস্য শুক্লপক্ষে জিতেন্দ্রিয়ঃ।
দন্তধাবনপূর্বন্ত প্রাতঃ স্নানাদ্যযথা বিধি ॥ ২৫৫ ৷৷
দান্তং কুটুম্বিনং বিপ্রং বেদশাস্ত্ররতং সদ।।
শ্রীরামপূজানিরতং সুশীলং দম্ভবর্জিতম্ ৷৷ ২৫৬ ৷৷
বিধিজ্ঞং রামমন্ত্রাণাং রামমন্ত্রৈক সাধকম্।
আহৄয় ভক্ত্যা সম্পুজ্য শৃণুয়াৎ প্ৰাৰ্থয়ন্নিতি ॥ ২৫৭॥
শ্রীরামপ্রতিমাদানং করিষ্যেহং দ্বিজোত্তম।
তত্রাচার্য্য ভব প্রীতঃ শ্রীরামবিত্তমেব মে॥২৫৮৷৷
আচার্যং ভোজয়েৎ পশ্চাৎ সাত্ত্বিকান্নৈ: সবিস্তরৈঃ।
ভুঞ্জিত স্বয়মপ্যেবং হৃদি রামমনুস্মরন্ ॥ ২৫৯ ৷৷


অনুবাদ-
চৈত্রমাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমীতে ইন্দ্রিয়সংযমপূর্বক দন্তধাবন করিয়া যথাবিধানে প্রাতঃস্নান করিবে। তৎপরে দান্ত, কুটুম্বী, সর্বদা বেদশাস্ত্রপরায়ণ, শ্রীরামপুজা-নিরন্ত, সুশীল, দম্ভশূন্য, রামচন্দ্রের বিধিবেত্তা, কেবলমাত্র রামচন্দ্রের সাধকবিপ্ৰকে আহ্বান ও প্রার্থনাপূর্বক বলিবে, হে দ্বিজোত্তম ! আমি রামমূর্তির পূজা করিব, এ বিষয়ে আপনিই রামতত্ত্ববিদ, সুতরাং প্রীত হইয়া আচার্যপদ গ্রহণ করুন। অনন্তর আচার্যকে ভূরি পরিমিত সাত্ত্বিকান্ন ভোজন করাইয়া স্বহৃদয়ে রামকে ধ্যান করিতে করিতে স্বয়ং ভোজন করিবে ॥ ২৫৫-২৫৯ ॥


গন্ধ, ও অক্ষত দ্বারা শঙ্খের পূজা করিবে এবং সযত্নে মন্ত্রপাঠ করিয়া বামভাগস্থ কুম্ভ, পুজোপকরণসমূহ, পাত্র ও আত্মাকে ভক্তিযুক্ত হইয়া প্রোক্ষণ করিবে। ষড়ক্ষর মন্ত্রই রামমন্ত্রসমূতমধ্যে মন্ত্ররাজ ও তার বদ্ধ বলিয়া অভিহিত। এই মন্ত্রদ্বারাই রঘুপতির পুজা করা উচিত ।


প্রথমত: বেদীর উপরে মনোহর সর্বতোভদ্রমণ্ডল অঙ্কন করিতে হইবে; এই মণ্ডল যাবতীয় ব্রতেই প্রয়োজন । উক্ত মণ্ডলের মধ্যস্থলে তীর্থজলপূর্ণ, রত্নগর্ভ, আম্রপল্লব ও পুষ্প-শোভিত সুশোভন কুম্ভ স্থাপন করিতে হইবে। তৎপরে সুবর্ণপাত্রে, রৌপ্যপাত্রে কিংবা তাম্র পাত্রে ষট কোণ অঙ্কন করিবে। ঐ পাত্রের অভাব হইলে বিশ্বকাষ্ঠনির্মিত পীঠে ষট কোণ অঙ্কনপূর্বক কুম্ভোপরি স্থাপন করিয়া তদু°রি অথণ্ডদশ।যুক্ত শুভকর বসনদ্বয় অর্পণ করিবে। তদুপরি সিংহাসন রাখিয় পূজা করাই সুবুদ্ধ ব্যক্তির কর্তব্য। বিধানে পীঠপুজা করিয়া অর্থ্যাদি সমর্পণ ও দুগ্ধাদি দ্বারা স্নপন এই সমস্ত কার্য শেষ করিয়া আবাহনাদি করিতে হইবে। তৎপরে বিবিধরত্নে খচিত বিচিত্র আভরণ এবং শীতলসলিলে ঘর্ষিত সুন্দর ঘনসারযুক্ত, অগুরু ও কুঙ্কুম মিশ্রিত গন্ধ যত্ন সহকারে অর্পণ করিবে। পরে বহলার, কেতকী, জাতী, পুন্নাগ, চম্পক, পদ্ম, আম্রমুকুল, অশোক ইত্যাদি চিত্তহর গন্ধপুর্ণ মনোহর পুষ্প এবং দূর্বা, তুলসীদল, কোমল বিল্বপত্র দ্বারা পুজা করিবে ।


উপবাসনিবেদনমন্ত্রঃ
উপোষ্য৷ নবমী ত্বদা যামেঘষ্টাস্থ রাঘব।
তেন প্রীতে৷ ভব ত্বম্ভোঃ সংসারাৎ ত্রাহি
মাং হরে ৷ ইতি ৷৷ ২৬২ ॥
বিধিবন্নির্মিতে যাগমণ্ডপে পরমোৎসবৈঃ।
পুণ্যাহং বাচয়িত্বা তু সদ্ভি: সঙ্কল্পমাচরেৎ ৷৷ ২৬৩ ৷৷
অথ সংকল্পমন্ত্রঃ
অসাং রামনবম্যান্তু সমারাধনতৎপরঃ।
উপোষ্যাষ্টসু যামেষু পূজয়িত্ব৷ যথাবিধি ॥ ২৬৪ ৷৷
পারণমন্ত্রঃ
তব প্রসাদস্বীকারাৎ কৃতং যৎ পারণং ময়া।
ব্ৰতেনানেন সন্তুষ্টঃ স্বস্তি ভক্তিং প্রযচ্ছ মে ৷৷
ইতি ৷৷ ২৯৮ ৷৷
কত্বৈবং ব্রহ্মহত্যাদিপাপেভ্য মুচ্যতে ধ্রুবম্।
তুলাপুরুষদানাদিফলং প্ৰাপ্নোতি মানবঃ ॥ ২৯৯ ॥


অনন্তর পারণম:
“হে প্রভো! ভবদায় প্রসাদ-স্বীকারের জন্য আমি পারণ করিতেছি। আপনি এই ব্রহ্মারা সন্তুষ্ট হইয়া আমাকে মঙ্গল ও ভক্তি প্রদান করুন।” এইরূপে শ্রীরাম নবমীব্রত করিলে ব্রহ্মহত্যাদি সকল পাতক হইতে নিশ্চয় পরিত্রাণ লাভ হয়, ভক্তি তাঁহার করস্থিত হন। নিষ্কামীও নিয়ত উপবাসী থাকিয়া এই নবমীব্রতে জাগরণপূর্বক ভক্তি সহকারে বিধানানুসারে পূজা করিবে 

Related Article

Dol yatra gaudiyamission Gour jayanti Sri Chaitanya harekrishna
BLOG

শ্রীগৌরপূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমা

কলিযুগ পাবনাবতারী শ্রীমদ্ গৌরসুন্দরের শুভ আবির্ভাব তিথি ও শ্রীশ্রীগৌরজয়ন্তীর ব্রতোপবাস ১৪ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার ……..শ্রীমদ্ গৌরসুন্দরের শুভ জন্মোৎসব……..শ্রীগৌরপূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমা……..শ্রীশ্রীকৃষ্ণের বসন্তোৎসব……..পূর্ণিমান্তে ৫৩৯ গৌরাব্দ আরম্ভ……..পরের দিন

Read More »
Amlaki_ Ekadashi ekadashi ekadashi special gaudiyamission Gaudiya Harekrishna
BLOG

আমলকী একাদশীর ব্রতোপবাস

১০ মার্চ ২০২৫, সোমবার পরের দিন দি ৮।১৩ মিঃ মধ্যে একাদশী ব্রতের পারণ [একাদশীতে কী কী করা এবং খাওয়া উচিত নয় ১। ধান জাতীয় সকল

Read More »
GaudiyaMission Gaudiya prabhupad prabhupad150 bhagwat_goswami disappearance bhagwat bhagwat_maharaj harekrishna
BLOG

শ্রীশ্রীমদ্ভক্তি শ্রীরূপ ভাগবত গোস্বামী মহারাজের (শ্রীল আচার্যপাদ) ৩২ তম তিরোভাব তিথি

শ্রীগুরুদেব শ্রীকৃষ্ণের কৃপামূর্তি, করুণাশক্তি। নামরূপে শ্রীহরি যেমন কৃপা করছেন, তেমনি সাধু শাস্ত্র গুরুরূপে কৃপা করছেন। ভগবান নিত্যকাল সাধু গুরু ও শাস্ত্ররূপে কৃপা করছেন। শ্রীহরি বলেছেন—–

Read More »
GaudiyaMission Gaudiya prabhupad prabhupada srilaprabhupad srilaprabhupada prabhupada150 prabhupad150 srilaprabhupad150 ekadashi ekadashi2025 ekadashivrat ekadashispecial harekrishna
BLOG

জয়া বা ভৌমী একাদশী

[এখন দেখে নেওয়া যাক একাদশীতে কোন পাঁচ প্রকার রবিশস্য গ্রহণ নিষিদ্ধ: ১। ধান জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন চাল, মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েস, খিচুড়ি, চালের

Read More »