সফলা একাদশীর ব্রতোপবাস ২০২৪

safala ekadashi 2024 Gaudiya Mission Ekadashi

💫 পরের দিন দি ৭।৯ মিঃ গতে ৯।৫০ মিঃ মধ্যে একাদশী ব্রতের পারণ।

একাদশীতে কী কী করা এবং খাওয়া উচিত নয়

(১। ধান জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন চাল, মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েস, খিচুড়ি, চালের পিঠা, খই ইত্যাদি

২। গম জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন আটা, ময়দা, সুজি, বেকারির রুটি, সব রকম বিস্কুট, হরলিকস ইত্যাদি।

৩। যব বা ভূট্টা জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন ছাতু, খই, রুটি ইত্যাদি।

৪। ডাল জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন মুগ, মাসকলাই, খেসারি, মুসুরী, ছোলা, অড়হর, মটরশুঁটি, বরবটি ও সিম ইত্যাদি।

৫। সরষের তেল, সয়াবিন তেল, তিল তেল ইত্যাদি। উপরোক্ত পঞ্চ রবিশস্য যে কোনও একটি একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হয়।)

অদ্য ভগবান্ শ্রীপুরুষোত্তম অচ্যুতের দশ বা ষোড়শ উপচারে পূজা। “ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়” এ মন্ত্রে আসন, পাদ্য, আচমন, অর্ঘ্য, মধুপর্ক, স্নানোদক বস্ত্র, আভরণ তিলক, যজ্ঞোপবীত, গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, তাম্বুল ও মাল্য প্রদান করবে।

নৈবেদ্য—পায়স, শালি তণ্ডুলের অন্ন, ব্যঞ্জন, তরিতরকারী, শাক, বড়া, রুটি, মিষ্টি, দধি, দুগ্ধ ও ঘৃত প্রদান করবে। সুগন্ধ পুষ্প মাল্যাদি এ মাসে কেতকী, কদম্ব, যুথি, যাতী, মালতী ও মল্লিকা প্রভৃতি পুষ্প অর্পণ বিশেষ মাহাত্ম্য যুক্ত।

দ্বিপ্রহরে ভোগারতি অন্তে নামসঙ্কীৰ্ত্তন, নৃত্য, গীত, পরিক্রমা স্তব ও স্তুতিপাঠ করবে।

একাদশী মাহাত্ম্য পাঠ—একাদশী ব্রতাচরণে মানব একাদশ ইন্দ্রিয় দ্বারে যে সমস্ত পাপ আচরণ করে থাকে তা নষ্ট হয়ে যায়।

একাদশোন্দ্রিয়ে পাপং যৎকৃতং ভবতি প্রভো।

একাদশ্যেপবাসেন তৎ সৰ্ব্বং বিলয়ং ব্রজেৎ৷৷

—(হঃভঃ বিঃ ১১ বিলাস)

নারদীয় পুরাণে বশিষ্ঠ বচন –

একাদশীসমং কিঞ্চি ৎপাপত্রাণং ন বিদ্যতে।

স্বর্গ-মোক্ষ-প্রদাহোষা শরীরারোগ্য দায়িণী।।

বশিষ্ঠ দেব রাজা দিলীপের কাছে বলছেন—হে রাজন ! একাদশীর মতন পাপ নাশক ব্রত আর দ্বিতীয় নাই। স্বৰ্গ, মোক্ষ ও ভক্তিপ্রদা এবং এ ব্রত মানবের সৰ্ব্ববিধ রোগের আরোগ্যকারী।

মাধব তিথি, ভক্তি জননী,

যতনে পালন করি।

কৃষ্ণ বসতি, বসতি বলি,

পরম আদরে বরি।।

—(ভক্তিবিনোদ গীতি)

মাধব তিথি হরিবাসর ভক্তি জননী। ভক্তি জননী ভক্তিপ্রাপক। ভগবানকে পেতে হলে ভক্তি চাই, সেই ভক্তি পাওয়া যায় একাদশী তিথি স্থানে। যারা একাদশী তিথি পালন করেন, তারা ভক্তিকে পেয়ে থাকেন। ভক্তির বশ ভগবান্। তখন অনায়াসে ভগবদ্ দর্শন লাভ হয়।

অথ পুরুষোত্তম অচ্যুতের ব্রত কথারম্ভ-স্তব –

পরিকরীকৃত পীতপটংহরিং

শিখিকিরীটনতীকৃতকন্ধরম্।

লকুটবেণুকরং চলকুণ্ডলং

পটুতরং নটবেষধরং ভজে।।

—(গর্গ সংহিতা, মাধুৰ্য্য খণ্ড)

অনুবাদ—যাঁর পরিধানে পীতবসন, যাঁর মস্তকোপরি ময়ুরের পুচ্ছ শোভমান,ত্রিভঙ্গিম বেশে যিনি দণ্ডায়মান, যাঁর করপদ্মে যষ্টি ও বেণু, কর্ণে কুণ্ডল দোদুল্যমান সেই নটবেশধারী শ্রীকৃষ্ণকে আমি ভজনা করি।

মিথিলেশ শ্রীবহুলাশ্ব রাজা বিনীত ভাবে শ্রীনারদ মুনিকে জিজ্ঞাসা করলেন হে মুনিবর ! শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তি দ্বারে প্রকাশিত ব্রজাঙ্গনা সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ যে বিলাসাদি করেছেন, তাহা কিছু শুনতে ইচ্ছা করি।

নারদ ঋষি বলতে লাগলেন—হে মিথিলেশ্বর ! তুমি সাবধান চিত্তে শ্রবণ কর। একদিন বৃন্দাবনে নিশাকালে ব্রজাঙ্গনাগণ শ্রীকৃষ্ণ চরণে বলতে লাগলেন—হে প্রাণেশ্বর। যাবতীয় বাধাশূন্য হয়ে ঐকান্তিক ভাবে তোমার পাদপদ্ম সেবা আমাদের কি করে সিদ্ধ হতে পারে, তজ্জন্য কোন বিশেষ ব্রতবিধি জানবার অভিপ্রায়ে যমুনার পরপারে মহামুনি দুব্বাসার নিকট যেতে ইচ্ছা করি, কি করে নিশাকালে যমুনা পরপারে যাব?

কৃষ্ণ বললেন—হে ব্রজদেবীগণ। এ বিষয়ে তোমরা কোন চিন্তা কর না। তোমরা যমুনার কাছে বলল – হে মাতঃ। অখণ্ড ব্রহ্মচরী শ্রীকৃষ্ণ তোমাকে মার্গ প্রদান করতে বলেছেন, এ কথা শুনলে যমুনা মার্গ প্রদান করবেন। তখন অনায়াসে তোমরা মুনিচরণে যেতে পারবে।

গোপাঙ্গনাগণ যমুনার তীরে এলেন এবং নমস্কার করে কৃষ্ণের আদেশ জ্ঞাপন পূৰ্ব্বক মার্গ চাইলেন। যমুনা দেবী মার্গ প্রদান করলেন। গোপীগণ অনায়াসে হেঁটে যমুনা পার হয়ে দুব্বাসা মুনির স্থানে এলেন।

অনন্তর উহারা পরমভক্তি ভরে মুনির পাদপদ্ম পুজাদি করলেন এবং তারা মুনিবরের জন্য বিবিধ প্রকার মিষ্টান্ন, পায়স, ক্ষীর, লাড্ডু, শঙ্কুলী, পিঠা প্রভৃতি তৈয়ারী করে নিয়ে এসেছিলেন তা তাঁরা স্বহস্তে মুনিবরকে ভোজনাদি করালেন। মুনিবর সব জিনিস ভোজন করলেন এবং অভীষ্ট বরাদি প্রদান করলেন।

অতঃপর ব্রজদেবীগণ ভাবতে লাগলেন, তখন ত’ যমুনাদেবী কৃষ্ণের আজ্ঞায় মার্গ দিয়েছিলেন, এখন কার আজ্ঞায় যমুনা পরপারে যাব? সকলে ঋষির চরণে নিবেদন করলেন। ঋষিবর বললেন—তোমরা চিন্তা করছ কেন? তোমরা যমুনার কাছে বল দূর্ব্বার রস মাত্র পানকারি মুনি দুব্বাসা মার্গ দিতে বলেছেন। যমুনাদেবী মার্গ দেবেন।

তারপর গোপীগণ যমুনার তটে এসে হাত জোড় করে দুর্ব্বাসার কথা বল্লেন। যমুনাদেবী মার্গ করলেন। গোপীগণ আনন্দে হেঁটে পার হয়ে এলেন। অনন্তর তাঁরা মনে মনে ভাবতে লাগলেন—এ নন্দনন্দন শ্রীকৃষ্ণ বালব্রহ্মচারী কি করে হল? আমাদের সঙ্গে নিরন্তর অবস্থান, কত প্রকার হাস্য পরিহাস কেলি করে থাকে আর দুব্বাসা মুনি আমাদের তৈয়ারী ভূরি ভূরি দ্রব্যাদি খেয়ে কি করে দুব্বার রস পানকারী মুনি হলেন?

একদিন সর্বান্তয্যামী শ্রীকৃষ্ণ গোপীগণ প্রতি বলতে লাগলেন আমি স্বয়ং এক অদ্বিতীয়, আমি সর্বস্রষ্টা, সর্বদ্রষ্টা সর্বান্তয্যামী, সর্বভূতরক্ষাকারী “আমি বিশ্বের নিদান অনাদি অনন্ত। আমি প্রকৃতির গুণাতীত। সত্ত্ব, রজঃ ও তমোগুণ আমাকে স্পর্শ করতে পারে না। আমি সর্বদা অহঙ্কারাদিশূন্য, আমার অতিশয় প্রিয় বা অপ্রিয় কেহই নাই। আমি সকলের প্রতি সমভাবাপন্ন, সর্বব্যাপক, বিষমতা ভাবশূন্য;তথাপি যারা আমার প্রতি ঐকান্তিক ভক্তি পরায়ণ, আমি তাদের বশীভূত। যে যেরূপ ভক্তিতে আমাকে ভজন করে সেইরূপে আমি তাকে কৃপা করি। দাস্য ভক্তিতে প্রভুরূপে দর্শন দেই, সখ্য ভক্তের সখারূপে, বাৎসল্য ভক্তের পুত্ররূপে, কান্ত প্রীতিতে কান্তরূপে। তোমরা পূর্বে আমার এ নন্দনন্দন স্বরূপ প্রাপ্তির জন্য বহু তপস্যা করেছিলে অধুনা গোপীগৃহে জন্মগ্রহণ গোপীরূপে আমার সেবা প্রাপ্তি কামনায়। আমি বাঞ্ছাকল্পতরু; কারও বাঞ্ছা আমি অপূর্ণ রাখি না।

আমি ব্রজধামে নিত্যগোপরাজ নন্দনন্দনরূপে বিলাস পরায়ণ। যারা আমার সর্বাত্মকভাবে সেবা করতে চায় তারা গোপীরূপে ব্রজে জন্মগ্রহণ করে থাকে। আমি গোপী ছাড়া অন্যকে অঙ্গীকার করি না। আমি সর্বদা নন্দনন্দন বলে নিজেকে অভিমান করে থাকি। আমি ভক্তির বশ, তোমাদের পূর্ব ভক্তির কারণে তোমাদের সঙ্গে বিহার করছি।

হে গোপীগণ আর শুন ! দুর্ব্বাসা আমার জ্ঞানী-ভক্ত। জ্ঞানী ভক্তের সমবিষম স্বভাব শূন্য, সুখ দুঃখসম বোধকারী সতত আমার ব্রহ্ম স্বরূপে সমাধিস্থ আমাতে আবিষ্ট চিত্ত। যারা যাবতীয় সমারম্ভ ও কামনাশূন্য তাদের কদাপী কর্মবন্ধন হয় না। অতএব তাদের কর্মাদিজনিত সুখ দুঃখাদি ভোগ হয় না। যারা সমস্ত কর্ম ব্রহ্মার্পণ করেছে, পদ্মপত্রে যেমন জল অস্পৃষ্ট থাকে, তাদের চিত্তও সেইরূপ বিষয় স্পর্শ করে না। দুর্বাসা মুনি তদ্রূপ জ্ঞানীশ্রেষ্ঠ পুরুষ। অতএব তাঁর ভোজনাদি অভোজনবৎ জানতে হবে।

গোপীগণের ভ্রম দূর হল। নন্দনন্দনের সেবায় তাঁদের উত্তরোত্তর প্রেম বাড়তে লাগলো। শ্রীহরিবাসরে অহোরাত্র ভগবদ্‌নাম-গুণ-লীলাদি কীৰ্ত্তনে যাপন-পূৰ্ব্বক দ্বাদশীতে প্রাতঃস্নান, ধৌতবস্ত্র, দ্বাদশ অঙ্গে তিলক, সন্ধ্যাবন্দনান্তর শ্রীভগবদ্ অর্চ্চন নৈবেদ্যার্পণ করবে।

অতঃপর দ্বাদশীর পারণ—বৈষ্ণবগণকে প্রসাদ অর্পণপূর্বক স্বয়ং গ্রহণ করবে। দ্বিপ্রহরে ভোগ-আরতি সমাপ্ত করে বৈষ্ণব, ব্রাহ্মণ, অতিথি অভ্যাগতজনকে মহাপ্রসাদ দান দক্ষিণায় বিদায়, অনন্তর সপরিবারে মহাপ্রসাদ গ্রহণ করবে।

যাঁরা শ্রদ্ধান্বিতভাবে একাদশী তিথি পালন করেন শ্রীহরি তাঁদের প্রতি সদয় হয়ে যাবতীয় কামনা বাসনা পূর্ণ করে থাকেন। ইতি সফলা একাদশী বাসরে ভগবান্ পুরুষোত্তম অচ্যুতের কথা সমাপ্ত।

Related Article

GaudiyaMission prabhupad #gudiya prabhupad150 ekadashi sathtila_ekadashi harekrishna ekadashi_special
BLOG

ষট্তিলা একাদশীর ব্রতোপবাস

(তীর্থরাজ প্রয়াগধামে শ্রীমন্মহাপ্রভুর শুভ আগমন মহোৎসব) ২৫ জানুয়ারী ২০২৫ (শনিবার) পারণ: পরের দিন দি ৯।৫৯মিঃ মধ্যে একাদশী ব্রতের পারণ (এখন দেখে নেওয়া যাক একাদশীতে কোন

Read More »
Gaudiya Mission Gopal bhatta sad goswami goswamis
BLOG

শ্রীল গোপাল ভট্ট গোস্বামীপাদের আবির্ভাব তিথি

করুণাময় শ্রীগৌরহরি প্রেম বিতরণ করতে করতে ক্রমে ক্রমে দক্ষিণ দেশের প্রতি নগরে নগরে শ্রীনাম-প্রেম বিতরণ করছেন। তাঁর শ্রীমুখনিঃসৃত হরিনামামৃত পান করে সহস্র সহস্র নরনারীর প্রাণ

Read More »
Udhran dutta thakur Gaudiya Mission Gaudiya hare krishna
Goswamis

শ্রীল উদ্ধারণ দত্ত ঠাকুর ও শ্রীল মহেশ পন্ডিত ঠাকুরের তিরোভাব তিথি

[ শ্রীউদ্ধারণ দত্ত ঠাকুর:::::: শ্রীমদ্ কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী লিখেছেন— মহাভাগবত-শ্রেষ্ঠ দত্ত উদ্ধারণ। সৰ্ব্বভাবে সেবে নিত্যানন্দের চরণ।। —(চৈঃ চঃ আদিঃ ১১/৪১) শ্রীগৌরগণোদ্দেশ দীপিকায় “ সুবাহুর্যো-ব্রজে গোপো

Read More »
#GaudiyaMission #gaudiya #srilaprabhupad150 #srilaprabhupada #prabhupad #prabhupadglories #goswami #saraswati #bhakti #bhaktisiddhanta #prabhupad #disaperance #harekrishna
BLOG

শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদের ৮৮তম বার্ষিক তিরোভাব তিথি

১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার নমঃ ওঁ বিষ্ণুপাদায় কৃষ্ণপ্রেষ্ঠায় ভূতলে। শ্রীমতে ভক্তিসিদ্ধান্তসরস্বতীতি-নামিনে।। শ্রীবার্যভানবীদেবীদয়িতায় কৃপাজয়ে। কৃষ্ণসম্বদ্ধবিজ্ঞানদায়িনে প্ৰভবে নমঃ।। মাধুর্য্যোজ্জ্বলপ্রেমাঢ্য শ্রীরূপানুগভক্তিদ। শ্রীগৌর করুণাশক্তিবিগ্রহায় নমোস্তুতে।। নমস্তে গৌরবাণী-শ্রীমূর্তয়ে দীনতারিণে। রূপানুগবিরুদ্ধাপসিদ্ধান্তদ্ধান্ত

Read More »