ষট্তিলা একাদশীর ব্রতোপবাস

GaudiyaMission prabhupad #gudiya prabhupad150 ekadashi sathtila_ekadashi harekrishna ekadashi_special

(তীর্থরাজ প্রয়াগধামে শ্রীমন্মহাপ্রভুর শুভ আগমন মহোৎসব)

২৫ জানুয়ারী ২০২৫ (শনিবার)

পারণ: পরের দিন দি ৯।৫৯মিঃ মধ্যে একাদশী ব্রতের পারণ

(এখন দেখে নেওয়া যাক একাদশীতে কোন পাঁচ প্রকার রবিশস্য গ্রহণ নিষিদ্ধ:

১। ধান জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন চাল, মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েস, খিচুড়ি, চালের পিঠা, খই ইত্যাদি

২। গম জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন আটা, ময়দা, সুজি, বেকারির রুটি, সব রকম বিস্কুট, হরলিকস ইত্যাদি।

৩। যব বা ভূট্টা জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন ছাতু, খই, রুটি ইত্যাদি।

৪। ডাল জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন মুগ, মাসকলাই, খেসারি, মুসুরী, ছোলা, অড়হর, মটরশুঁটি, বরবটি ও সিম ইত্যাদি।

৫। সরষের তেল, সয়াবিন তেল, তিল তেল ইত্যাদি। উপরোক্ত পঞ্চ রবিশস্য যে কোনও একটি একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হয়।)

অদ্য শ্রীবৈকুণ্ঠনাথের ষোড়শোপচারে পূজা। পঞ্চামৃতে শালগ্রামকে স্নান, “ওঁ কৃষ্ণায় গোবিন্দায় গোপীজনবল্লভায় স্বাহা” মন্ত্রে আসন, পাদ্য আচমন ও মধুপর্কাদি অর্পণ।

নৈবেদ্য—পায়স, ক্ষীর, লাড্ডু, পুরী, অন্ন, ব্যঞ্জন, দধি, দুগ্ধ, মিষ্টি প্রদান কৰ্ত্তব্য। বিবিধ ফল—আখ, কলা, আম, জাম, কাঁঠাল, আপেল, আঙ্গুর ও বেদানা প্রভৃতি অর্পণ করবে। দ্বিপ্রহরে ভোগারতি, নাম সংকীৰ্ত্তন, নৃত্য গীত, দণ্ডবৎ ও স্তব-স্তুতি। ভক্ত সঙ্গে গীতা ভাগবৎ শ্রবণাদিরূপ সৎসঙ্গ করণীয়।)

শ্রীবৈকুণ্ঠনাথের মহিমা শ্রবণ।

স্তব বন্দনা—

নমোবিজ্ঞান রূপায় পরমানন্দরূপিণে।

কৃষ্ণায় গোপীনাথায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।।

শ্রীমদ্ ভাগবতে শুক পরীক্ষিৎ সংবাদ—

একদা মহামুনি দুর্বাসা বৈকুণ্ঠনগরে শ্রীবৈকুণ্ঠনাথের সভামধ্যে প্রবেশ করলেন এবং বৈকুণ্ঠনাথের শ্রীপাদপদ্মমূলে প্রণাম করলেন। বৈকুণ্ঠনাথ শ্রীবিষ্ণু তাঁকে বসতে বললেন, তিনি তথায় উপবেশন করলেন।

মুনিবর দুর্বাসা বৈকুণ্ঠনাথের কাছে আসবার কারণ জানালেন— অজানত শ্রীঅম্বরীষের কাছে অপরাধ হেতু তাঁর (বিষ্ণুর) সুদর্শন চক্রদ্বারা তাড়িত হয়ে, দুঃখগ্রস্ত হয়ে তার থেকে উদ্ধার পাবার আশায় এসেছেন।

শ্রীবিষ্ণু—হে ঋষিবর, অন্যান্য দেবগণ আপনাকে রক্ষা করলেন না কেন?

দুর্বাসা—তাঁরা সকলে আপনার অধীন, অতএব আপনার অস্ত্র থেকে নিস্তার দিতে পারেন না। সব দেবতাই একই কথা বললেন। পিতামহ ব্রহ্মার কাছে গিয়েছিলাম, তিনিও তাই বললেন—পরিশেষে গুরু মহাদেবের কাছে গিয়েছিলাম, তিনি বললেন—বিষ্ণুর অস্ত্র হতে বিষ্ণু ছাড়া কারও রক্ষা করবার অধিকার নেই ! হে সর্বদেববন্দ্য প্রভু, তাই আপনার শরণ গ্রহণ করেছি।

শ্রীবিষ্ণু হাস্য করতে করতে বললেন – হে দ্বিজবর, অন্যান্য দেবগণ যেমন আপনাকে রক্ষা করতে পারেনি, তেমনি আমিও রক্ষা করতে পারব না। তার কারণ “অহং ভক্তপরাধীন” আমি ভক্তের অধীন।

দুর্বাসা—হে প্রভো ! আপনি স্বেচ্ছায় ভক্তাধীন হয়েছেন, ভক্তগণ ত’ আপনাকে অধীন করেনি।

বিষ্ণু— তারা না করলেও আমি স্বেচ্ছায় তাদের অধীন হয়েছি। দয়ার উৎপত্তির স্থান হৃদয় ;সেই হৃদয়, ভক্তগ্রন্থ, ভক্তের অধীন।

দুর্বাসা—আপনি স্বতন্ত্র ভগবান, আপনার হৃদয় ভক্তের অধীন হল কী করে?

বিষ্ণু—হে দ্বিজবর, তবে শুনুন। ভক্তগণ সর্বপ্রকার সুখ, সর্বপ্রকার জীবসেবা, দেবসেবা, পিতৃসেবাদি ধর্ম ত্যাগ করে কেবল আমার সেবা ধর্মে নিযুক্ত হলে, আমি মুক্তিপদ তাদের দিতে চাইলাম, তা তারা গ্রহণ করল না, কেবল সেবাধর্মই কামনা করল।

আমি কৃতজ্ঞ পুরুষ, কিছু না দিয়ে কখনই থাকতে পারি না। পরিশেষে হৃদয়টি দিলাম, প্রেমানন্দে বিভোর ভক্তগণ আমার হৃদয়টি নিয়ে স্বহৃদয়ে রেখে দিল। তারপর আমার হৃদয় আর আমার রইল না, সেদিন থেকে ভক্তের অধীন। অতএব ভক্তের দয়া হলে আমার দয়া হবে।

আপনি পরমভক্ত অম্বরীষের কাছে অপরাধ করেছেন। এখন তাঁর চরণ ধরে অপরাধের ক্ষমা চাইলে আপনি সুদর্শনের হাত থেকে নিস্তার পাবেন। অন্যথা কেহই নিস্তার করতে পারবেন না। কালবিলম্ব করবেন না।

তপস্যা ও বিদ্যা, ব্রাহ্মণের পরম কল্যাণজনক। কিন্তু দুর্বিনীতের উহাই বিনাশের কারণ। তপস্যা ও বিদ্যা মদমত্ত জনগণ অস্থির সিদ্ধান্তে চঞ্চল নানাজনের আশ্রয় করে। ভক্তগণ ঐকান্তিক একয়া বুদ্ধিসম্পন্ন স্থিরমতি বিশিষ্ট। আপনি অস্থির বুদ্ধি বিশিষ্ট, তাই নানা দেবদেবীর শরণাপন্ন। অম্বরীষ আমার ঐকান্তিক ভক্ত, আপনার ব্রহ্মতেজে সে পদমাত্র বিচলিত হয়নি। আপনি সুদর্শনের ভয়ে ত্রিভুবন পরিক্রমা করছেন, আপনি আমার বাস্তব শরণাগত নহেন। তজ্জন্য বাস্তব শরণাগত অম্বরীষকে আমি কখনই ত্যাগ করব না। আমি ভক্তের হৃদয় মন্দিরে বাস করি। ভক্তের কৃপা হলেই আমার কৃপা।

ভগবান্ ভক্তের জীবন । ভগবান্ ভক্তরক্ষার জন্যই শঙ্খ-চক্রাদি ধারণ করেন। গাভীর পিছে পিছে যেমন বাছুর দুগ্ধপান করবার জন্য চলে, ভগবানও ভক্তের পিছে পিছে চলে থাকেন। ভগবান্ স্বতন্ত্রভাবে কিছুই করেন না, ভক্তেচ্ছানুরূপ তার গমন, ভোজন ও অবতারাদি গ্রহণ। মান, অপমান, যশ, অপযশ, ভক্তের জন্য কোনটি দেখেন না। শত মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় তাঁর ভক্তের জন্য পরিত্যাগ করেন। শরণাগত ইন্দ্রাদিদেবতা রক্ষার জন্য হল, কপটতা আচরণে বামন অবতার। দৈত্যগণকে অমৃত পানে বঞ্চনা ইচ্ছায় কপটমোহিনী অবতার। মান-অভিমান ত্যাগ ভক্তের জন্য, বলীর দ্বারে দ্বারী, নন্দের পাদুকা মাথায় বহন, ভক্তের আহার মাথায় করে বহন, গুরু ভক্তি শিক্ষার জন্য অবন্তীনগরে গুরু সান্দীপণি মুনিগৃহে জল আনয়ন, কাষ্ঠানয়নে ঝড়-বর্ষাদি কষ্ট সহন, গো-সেবা, গৃহাদিমার্জন করেছেন, বিপদাপন্ন ভক্ত রক্ষার জন্য সারারাত্র অস্ত্র ধারণপূর্ব্বক যাপন, নাবিকবেশে নদী পার,— ভক্তের জন্য ভগবান্ সবকিছুই করেন। তিনি ভক্তপ্রিয়, জ্ঞানী, কর্মী ও যোগী প্রিয় নহেন। অনাথ বন্ধু। ধনীর বন্ধু নহেন। সর্ব্বগুণাধার ভগবানের শ্রেষ্ঠ গুণ হল ভক্তবৎসলতা।

শ্রীবিষ্ণুর আদেশে দুর্ব্বাসামুনি পুনঃ মহারাজ অম্বরীষের স্থানে এলেন, এবং তাঁর চরণ ধরে দণ্ডবৎ করলেন। কৃষ্ণ নামাবিষ্ট মহারাজ অকস্মাৎ দুর্বাসা মুনির আগমন ও চরণ স্পর্শ করতে দেখে বড়ই লজ্জান্বিত হলেন। তৎক্ষণাৎ গাত্রোত্থান পূর্ব্বক ব্রাহ্মণকে স্বাগত প্রণাম করলেন এবং উত্তম আসনে বসিয়ে পাদধৌতাদি করিয়ে দিলেন। বৈষ্ণবরাজ দৈন্যভরে ব্রাহ্মণের চরণে বহু অনুনয় বিনয়াদি করতে লাগলেন।

দুর্বাসা চলে যাওয়া অবধি মহারাজ কিছুই ভোজন করেননি, ব্রাহ্মণের পথপানে চেয়ে ছিলেন। অনন্তর দুর্বাসা মুনিকে বহু স্বাদিষ্ট অন্ন মিষ্টাদি ভোজন করালেন।

অতঃপর মহারাজ সুদর্শনচক্রকে বহু স্তব-স্তুতি করে দুর্বাসা মুনিকে নিষ্কৃতি দিলেন। অন্তৰ্দ্ধান হলেন। মহামুনি পরম ভাগবত মহারাজ অম্বরীষের এরূপ বৈষ্ণবীয় মহা সদ্গুণ সকল দর্শন করে বিদায় হয়ে চলে যাবার সময় এরূপ বৈষ্ণবের গুণগান সকল করছিলেন।

অহো অনন্তদাসানাং মহত্ত্বং দৃষ্টমদ্য মে।

কৃতাগসোপি যদ্ রাজন্ মঙ্গলানি সমীহসে।।

—(ভাঃ ৯।৬।১৪)

অনুবাদ—অহো, অদ্য ভগবদ্ দাসগণের মহিমা অনুভব করতে পারলাম। তাঁরাই বাস্তব জীবের বন্ধু ও অপরাধীর প্রতি ক্ষমাশীল, অমানী, তৃণাপেক্ষা সহিষ্ণু ও মানদ ধর্মী।

শ্রীহরিবাসরে যাঁরা এ বিষ্ণু-দুর্বাসা-সংবাদ ও অম্বরীষ আখ্যান শ্রবণ করবেন ভগবান্ তাদের সর্ব্বাভীষ্ট পূর্ণ করবেন।

ইতি ষট্‌তিলা শ্রীহরিবাসরে বৈকুণ্ঠনাথ বিষ্ণুর কথা সমাপ্ত।

Related Article

GaudiyaMission Gaudiya prabhupad prabhupada srilaprabhupad srilaprabhupada prabhupada150 prabhupad150 srilaprabhupad150 ekadashi ekadashi2025 ekadashivrat ekadashispecial harekrishna
BLOG

জয়া বা ভৌমী একাদশী

[এখন দেখে নেওয়া যাক একাদশীতে কোন পাঁচ প্রকার রবিশস্য গ্রহণ নিষিদ্ধ: ১। ধান জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন চাল, মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েস, খিচুড়ি, চালের

Read More »
শ্রীঅদ্বৈত সপ্তমী
BLOG

শ্রীঅদ্বৈত সপ্তমী

শ্রীল অদ্বৈত আচার্য প্রভুর জন্মতিথির ব্রতোপবাস মহাবিষ্ণুজগৎকৰ্ত্তা মায়য়া যঃ সৃজত্যদঃ। তস্যাবতার এবায়মদ্বৈতাচার্য্য ঈশ্বরঃ ।। –(শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত আদি ১।১২) শ্রীশ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রিয় পার্ষদবর আদি কবি শ্রীবৃন্দাবনদাস ঠাকুর

Read More »
GaudiyaMission prabhupad150 gudiya saraswatipuja appearance vasantpanchami harekrishna Disappearance krishna
BLOG

শ্রীশ্রীকৃষ্ণের বাসন্তী পঞ্চমী উৎসব ও শ্রীসরস্বতী পূজা

শ্রীশ্রী বিষ্ণুপ্রিয়া ঠাকুরাণীর আবির্ভাব মহোৎসব শ্রীল রঘুনাথ দাস গোস্বামীর আবির্ভাব তিথি শ্রীল রঘুনন্দন ঠাকুরের আবির্ভাব তিথি শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুরের আবির্ভাব তিথি শ্রীল পুণ্ডরীক বিদ্যানিধির

Read More »
Gaudiya Mission Gopal bhatta sad goswami goswamis
BLOG

শ্রীল গোপাল ভট্ট গোস্বামীপাদের আবির্ভাব তিথি

করুণাময় শ্রীগৌরহরি প্রেম বিতরণ করতে করতে ক্রমে ক্রমে দক্ষিণ দেশের প্রতি নগরে নগরে শ্রীনাম-প্রেম বিতরণ করছেন। তাঁর শ্রীমুখনিঃসৃত হরিনামামৃত পান করে সহস্র সহস্র নরনারীর প্রাণ

Read More »