#GaudiyaMission #Gaudiya #prabhupad #prabhupada #srilaprabhupad #srilaprabhupada #prabhupada150 #prabhupad150 #srilaprabhupad150 #srilaprabhupad #bijoya_ekadashi #vijoya #ekadashi #ekadashi2023 #vijoya_ekadashi

Vijaya Ekadashi

 
(একাদশীতে কী কী করা এবং খাওয়া উচিত নয়-
একাদশী একটি চান্দ্র তিথি। চাঁদের শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথি, হিন্দু ধর্মমতানুসারে পূণ্যতিথি হিসেবে বিবেচিত। হিন্দুধর্মমতে এ দিন বিধবাদের, বিশেষত উচ্চবর্ণীয় বিধবাদের নিরম্বু উপবাস বিহিত। অবশ্য বর্ণ ও লিঙ্গ নির্বিশেষে যে কেউ একাদশী পালন করতে পারেন। এই সময় সাধারণত ফলমূল ও বিভিন্ন সবজি এবং দুধ খাওয়া যায়। তবে একাদশীতে পঞ্চরবি শস্য বর্জন করা বাঞ্ছনীয়।
এখন দেখে নেওয়া যাক একাদশীতে কোন পাঁচ প্রকার রবিশস্য গ্রহণ নিষিদ্ধ:
 
১। ধান জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন চাল, মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েস, খিচুড়ি, চালের পিঠা, খই ইত্যাদি
 
২। গম জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন আটা, ময়দা, সুজি, বেকারির রুটি, সব রকম বিস্কুট, হরলিকস ইত্যাদি।
 
৩। যব বা ভূট্টা জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন ছাতু, খই, রুটি ইত্যাদি।
 
৪। ডাল জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন মুগ, মাসকলাই, খেসারি, মুসুরী, ছোলা, অড়হর, মটরশুঁটি, বরবটি ও সিম ইত্যাদি।
 
৫। সরষের তেল, সয়াবিন তেল, তিল তেল ইত্যাদি। উপরোক্ত পঞ্চ রবিশস্য যে কোনও একটি একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হয়।)
 
 
 
অদ্য পুণ্ডরীকাক্ষ শ্রীবিষ্ণুর দশ বা ষোড়শোপচারে পূজা। একাদশীবাসরে শ্রীবিষ্ণুর পঞ্চামৃতে স্নান। “ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়” মন্ত্রে—আসন,পাদ্য,অর্ঘ্য ও আচমনাদি প্রদান করবে।
 
নৈবেদ্য—পায়স, ক্ষীর, অন্ন, ব্যঞ্জন, মিষ্টি, দধি, দুগ্ধ, বিবিধ ফল, বিবিধ সৌগন্ধপুষ্প অপর্ণীয়। দ্বিপ্রহরে ভোগারতি নাম সঙ্কীর্ত্তন, নৃত্য, গীত, পরিক্রমা, স্তব পাঠ ও দণ্ডবৎ করবে। অতঃপর সৎসঙ্গে পুণ্ড্ররীক শ্রীবিষ্ণুর মহিমা শ্রবণ করবে।
 
স্তব—শ্রীজগন্নাথ নীলাদ্রিশিরোমুকুট রত্ন হে।
দারুব্রহ্মন্ ঘনশ্যাম প্রসীদ পুরুষোত্তম।।
প্রফুল্ল-পুণ্ডরীকাক্ষ লবণাব্ধিতটামৃত।
গুটিকোদর মাং পাহি নানাভোগ-পুরন্দর।।
 
শ্রীস্কন্দপুরাণান্তর্গত উৎকল খণ্ড-উদ্ধৃত। শ্রীকৃষ্ণলীলা স্তব।
 
মালবদেশে অবন্তীনগরীতে শ্রীইন্দ্রদ্যুম্ন নামে সূর্য্যবংশীয় এক পরম বিষ্ণুভক্ত রাজা ছিলেন। তিনি ভগবদ্ দর্শন-উৎকণ্ঠায় সতত বিভোর থাকতেন। এক সময় উৎকল পুরুষোত্তমক্ষেত্র হতে এক তৈথিক ব্রাহ্মণ তাঁর গৃহে অতিথি হন, কয়েকদিন ঐ ব্রাহ্মণ ভক্ত রাজার গৃহে পরম সুখে দিন যাপন করেন। ব্রাহ্মণ প্রসঙ্গক্রমে পুরুষোত্তম মাহাত্ম্য শ্রীনীলমাধবের কথা বর্ণনা করেন; মহারাজ তাঁর দর্শনোৎকণ্ঠায় কালবিলম্ব না করে সেই ব্রাহ্মণ এবং নিজ পুরোহিত ব্রাহ্মণকে তথা পরিবারবর্গসহ পুরুষোত্তম ক্ষেত্রাভিমুখে যাত্রা করলেন। পথে স্থানে স্থানে যাগযজ্ঞাদি করতে করতে ক্রমে পুরুষোত্তমক্ষেত্র নীলাচল গিরির সন্নিধানে উপস্থিত হলেন। ঐ ধামে প্রবেশের পথে তিনি এক নৃসিংহ মন্দির স্থাপন করে সব্ববিঘ্ন দুর ও মনোবাঞ্ছিত কার্যসিদ্ধির জন্য মহাপূজা করলেন এবং একটি সরোবর খনন করলেন। ঐ সরোবরের নাম হল ইন্দ্রদ্যুম্ন সরোবর। অদ্যাপি সরোবরটি দর্শন হয়।
 
পুরীর প্রবেশ দ্বারে একটি বসতবাটি নির্মাণ করলেন। ঐ বাটিকার নাম গুণ্ডিচা বাটিকা। রাণীর নাম ছিল গুণ্ডিচাদেবী। অদ্যাপি ঐ বাটিতে জগন্নাথদেব রথযাত্রায় বহির্গত হয়ে পনের দিবস নিবাস করেন।
 
অতঃপর মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন নিজ পুরোহিত বিদ্যাপতিকে নীলমাধবের খোঁজে পাঠালেন। তিনি বহু খোঁজ করে কিছুদিন পরে সন্ধান পেয়ে রাজার নিকট ফিরে এলেন, মহারাজ খুব খুশি হলেন। শুভদিনে পুরোহিত ব্রাহ্মাণদিগের সঙ্গে তাঁর দর্শনে যাত্রা করলেন, এমন সময় দৈবক্রমে মহাঝড়ের উদয় হল। কেবল ধূলিবর্ষা। নীলগিরি ধূলিতে আচ্ছন্ন হল। নীলমাধব অদৃশ্য হলেন। রাজার আর দর্শন হল না। তখন মহারাজ ও রাণী দুঃখে অনশন ব্রত করতে লাগলেন। সেইকালে আকাশবাণী হল—হে রাজন! তুমি নীলগিরির উপর মন্দির নির্মাণ কর, তথায় দারুব্রহ্মরূপে আমার দর্শন পাবে।
 
অতঃপর মহারাজ নীলগিরির উপর বিশাল মন্দির নির্মাণ করলেন। এখন দারুব্রহ্মকিভাবে প্রকট হবেন, ভাবতে ভাবতে ব্রতাচারণ পূর্ব্বক ভগবানের নিকট প্রার্থনা করতে লাগলেন। ভগবদ্ প্রেরণায় এমন সময় শ্রীনারদমুনি তথায় আগমন করলেন। মহারাজ নারদমুনিকে মহাসমাদরে স্বাগত করতঃ উত্তমাসনে সভা মধ্যে বসালেন এবং পাদপুজাদি করবার পর করজোড়ে বললেন— হে ভগবন্! আমার প্রতি কি আদেশ বলুন।
 
নারদমুনি বলতে লাগলেন-হে রাজন! শ্রবণ কর। জ্যৈষ্ঠী পূর্ণিমাতে ভগবান দারুব্রহ্মরূপে সমুদ্রের মধ্য দিয়ে ভেসে আসবেন। আপনি মহাপুজাদি করে এ মন্দিরে তাঁকে স্থাপন করবেন, মূর্ত্তি নির্মাণ হলে, পিতা পরমেষ্ঠি ব্রহ্মা স্বয়ং এসে শ্রীবিগ্রহের প্রতিষ্ঠা করবেন। মহারাজ এ কথা শ্রবণে পরম হৃষ্ট হলেন। তিনি জ্যৈষ্ঠী পূর্ণিমা তিথির দিকে চেয়ে রইলেন।
 
অতঃপর জ্যৈষ্ঠী পূর্ণিমাতে মহারাজ যাবতীয় পুরোহিত, বাদক, গায়ন সকলকে নিয়ে চক্রতীর্থের সন্নিধানে দণ্ডায়মান রইলেন। এমন সময়, মহাজ্যোতির্ময়রূপে দশদিক্ উজ্জ্বল করতে করতে সেই দারুব্রহ্মকে ভেসে আসতে দেখলেন। তৎকালে মহারাজ মহানন্দে বেদধ্বনি ও সঙ্কীর্ত্তন মহারোল হরিধ্বনিতে দশদিক্ মুখরিত করতে লাগলেন।
 
অনন্তর দেখতে দেখতে দারুব্রহ্ম তীরে পৌঁছিলেন, মহারাজ দণ্ডবৎ প্রণাম পূৰ্ব্বক মহামহা বলিষ্ঠ লোকগণ দ্বারা তুলে নববস্ত্র পেতে তাতে দারুব্রহ্মত্রয়কে স্থাপন করলেন। নীলবর্ণের বস্ত্রোপরি বলরামকে, পীতবর্ণের বস্ত্রোপরি সুভদ্রাদেবীকে ও বিদ্যুৎত্বর্ণের বস্ত্রোপরি শ্রীকৃষ্ণকে উপবেশন করালেন। তারপর অভিষেক পূজাদি করতঃ দারুত্রয়কে রথে করে মন্দিরে আনয়ন করলেন। এবার মহারাজ মূর্তি নির্মাণ বিষয়ে ভাবতে লাগলেন। বহু ছুতার মিস্ত্রী এনে দেখালেন, কিন্তু কেহই ঐ দারুবৃক্ষ দিয়ে মূর্ত্তি নির্মাণ করতে রাজি হলেন না। রাজা-রাণী খুব চিন্তান্বিত হলেন। কে মূর্তি নির্মাণ করবেন? এমন সময় এক বৃদ্ধ ছুতার মিস্ত্রী তথায় এলেন। তিনি বললেন, মূর্ত্তি নির্মাণ করতে পারবেন। এ কাজ তিনি একাকিই করবেন।
 
মহারাজ বললেন—কতদিন লাগবে?
মিস্ত্রী বললে—একুশ দিন লাগবে।
রাজা বললেন—বেশ কথা, আপনি কাজ আরম্ভ করুন, আপনাকে যথাযথ বেতন দেওয়া হবে।
মিস্ত্রী বললে—ভগবানের কাজে বেতন গ্রহণ করি না।
 
অতঃপর তিনি মূর্তি নির্মাণ করবার জন্য মন্দির অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন, সঙ্গে কাহাকেও নিলেন না। মন্দিরের দরজা বন্ধ হল। দশ বারদিন পর্যন্ত কাজের শব্দ পাওয়া গেল তারপর আর কোন শব্দ শোনা গেল না। সকলে বিচার করলেন বুড়ো ছুতার বিনা ভোজনে নিশ্চয় নির্মাণ কার্য্য করতে সক্ষম নহেন, অথবা প্রাণহানি হল না কি? নানা প্রকার সন্দেহ করতঃ রাজারাণী বড়ই কাতর হয়ে পড়লেন। পরিশেষে রাজারাণীর ইচ্ছায় চতুদর্শ দিবসে মন্দিরের দরজা খোলা হল। কিন্তু দেখলেন সেই বুড়া ছুতার মিস্ত্রী তথায় নাই। আশ্চর্য্য ব্যাপার? মূর্ত্তিগুলি অসম্পূর্ণ তৈয়ারী, পূর্ণ নির্মাণ হয়নি। রাজা রাণী বড়ই ব্যাকুল হলেন। প্রধান মন্ত্রী বললেন—বুড়ো ছুতার মিস্ত্রী আর কেহই নন, স্বয়ং জগন্নাথ।
 
রাজা-রাণী দুঃখে প্রাণত্যাগ করতে সংকল্প করলেন। সে রাত্রে স্বপ্নে স্বয়ং জগন্নাথ দর্শন দিয়ে বলতে লাগলেন—হে রাজন! খেদ পরিহার কর। আমি প্রাকৃত হস্ত-পদাদি রহিত হলেও নিত্য অপ্রাকৃত বিগ্রহবান্। ভক্তগণ প্রেম চক্ষে তা দর্শন পান। হে রাজন! আমার হস্ত পদাদি দর্শন করতে ইচ্ছা করলে স্বর্ণ বা রৌপ্য নির্মিত হস্ত-পদাদি দ্বারা সুশোভিত করতে পার।
 
অনন্তর শ্রীজগন্নাথ রাজার নিকট স্বীয় সেবা পূজা যাত্রাদির নিয়ম-নীতি প্রভৃতি সম্বন্ধে বলে অন্তর্ধান হন। অদ্যাপি সেই বিধি-অনুসারে জগন্নাথের সেবাপূজাদি এবং রথযাত্রা, স্নানযাত্রা ও চন্দনযাত্রাদি হয়ে থাকে।
 
তারপর সেই মূর্ত্তি প্রতিষ্ঠাকালে ব্রহ্মাকে আমন্ত্রণ করলেন। ব্রহ্মা শিবাদি সমস্ত দেবতাগণ স্বহস্তে সেই মূৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠা উৎসব অনুষ্ঠান করলেন। সেই মহামহাভিষেক উৎসবে দ্যুলোক, ভূলোক ও স্বর্গলোক আনন্দে ভরে উঠল।
 
ভগবান্ মর্ত্য ধামে দারুব্রহ্মরূপে বৈকুণ্ঠধামের সহিত সমগ্র জীবজগতকে দর্শন দিলেন। নীলাচল ক্ষেত্র সাক্ষাৎ বৈকুণ্ঠধাম। ভগবান চতুর্ভুজরূপে নিত্য বিদ্যমান। যাঁরা একবার এ দিব্যধামে এসে পূজা, পরিক্রমা ও উৎসবাদি দর্শন করবেন, তারা অবশ্যই মুক্তিপদ প্রাপ্ত হবেন। সমস্ত শাস্ত্রে এ দিব্যধামের মহিমা কীৰ্ত্তিত হয়েছে।
 
ব্রহ্মা অভিষেকানন্তর এ স্তব করেন-
তির্য্যঙমনুষ্যবিবুধাদিষু জীবযোনি-
স্বাত্মেচ্ছয়াত্মকৃতসেতুপরীপ্সয় যঃ।
রেমে নিরস্ত বিষয়োপ্যরুদ্ধ দেহ
স্তস্মৈ নমো ভগবতে পুরুষোত্তমায়।।
 
ব্রহ্মা বললেন—হে পুরুষোত্তম! আপনি আপনার ধর্মসেতু রক্ষার জন্য মনুষ্য, তির্যাক্, ঋষি ও দেবাদি যোনিতে অবতীর্ণ হয়ে জগৎবাসীকে কৃপা করেন। আপনাকে বার বার নমস্কার করি। যাঁরা শ্রীহরিবাসরে পুণ্ডরীক বিষ্ণুর মহিমা শ্রবণ করবেন তাঁরা মুক্তি পদ প্রাপ্ত হবেন।
 
ইতি শ্রীহরিবাসরে বিজয়া একাদশী তিথি বাসরে পুণ্ডরীক বিষ্ণুর কথা সমাপ্ত।
 
 
 

Date

Feb 17 - 18 2023
Expired!

Time

All Day
Category