Appearance Day of Sri Sri Sita Devi

শ্রীসীতা ঠাকুরাণী  শ্রীশচীদেবীর ন্যায় নিত্য পূজ্যা জগন্মাতা। শ্রীগৌরসুন্দরের প্রতি বাৎসলা প্রেমে তিনি সর্ব্বদা বিহবল থাকতেন এবং শ্রীশচী জগন্নাথ মিশ্রের সদুপদেষ্টা ছিলেন।
 
শ্রীমৎ কৃষ্ণদাস কবিরাজ মহোদয় শ্রীগৌরসুন্দরের আবির্ভাব প্রসঙ্গে সীতা ঠাকুরাণীর বড় মধুর বর্ণনা দিয়েছেন।
 
অদ্বৈত আচাৰ্য্য ভাৰ্য্যা,
জগৎ পুজিতা আৰ্য্যা
নাম তার ‘সীতা ঠাকুরাণী’।
আচার্য্যের আজ্ঞা পাঞা
গেল উপহার লঞা
দেখিতে বালক-শিরোমণি।।
 
 
–(শ্রীচৈঃ চঃ আদি-১৩।১১১)
 
পুত্র ভূমিষ্ঠ হবার পরক্ষণেই শ্রীজগন্নাথ মিশ্র মহোদয় শান্তিপুরে অদ্বৈত আচার্য্যের নিকট লোক প্রেরণ করলেন। সে লোকমুখে অপূৰ্ব্ব পুত্র জন্ম-বাৰ্তা পেয়ে শ্ৰীঅদ্বৈত আচার্য্য আনন্দ সাগরে ভাসতে লাগলেন। শ্রীহরিদাস ঠাকুরের সঙ্গে গঙ্গাস্নান এবং বহু নৃত্য গীত করবার পর সহধম্মিণী সীতা ঠাকুরাণীকে তাড়াতাড়ি নবদ্বীপ মায়াপুরে প্রেরণ করলেন।
 
শ্রীসীতা ঠাকুরাণী যোগমায়া ভগবতী পৌর্ণমাসীর অবতার। দ্বাপরযুগে শ্রীকৃষ্ণ জন্মোৎসবের সময় নন্দগৃহে উপস্থিত থেকে ইনি নন্দ যশোদাকে বিবিধ উপদেশ প্রদান করেছিলেন।
 
পতিদেবের নির্দেশ অনুযায়ী শ্রীসীতা ঠাকুরাণী দোলায় চড়ে ভৃত্যগণসহ মায়াপুরে মিশ্ৰগৃহে শুভাগমন করলেন। বহু সম্মানের সহিত শ্রীজগন্নাথ মিশ্র তাকে অভ্যর্থনা করলেন।
 
ভক্ষ্য, ভোজ্য, উপহার
সঙ্গে লইল বহু ভার
শচীগৃহে হৈল উপনীত।
দেখিয়া বালক-ঠাম
সাক্ষাৎ গোকুল-কান
বর্ণমাত্র দেখি বিপরীত।।
 
 
শ্রীসীতা ঠাকুরাণী জগন্নাথ মিশ্র গৃহে নবজাত শিশু দর্শন করতে লাগলেন। দেখলেন সাক্ষাৎ গোকুলের সেই কৃষ্ণ, বর্ণটি কেবল ভিন্ন। তার বর্ণ ইন্দ্র নীলমণির ন্যায়। এঁর বর্ণ তপ্ত কাঞ্চনের ন্যায়।
 
সৰ্ব্ব অঙ্গ–সুনিৰ্ম্মাণ,
সুবর্ণ-প্রতিমা ভান
সৰ্ব্ব অঙ্গ সুলক্ষণময়।
বালকের দিব্য জ্যোতি
দেখি, পাইল বহু প্রীতি,
বাৎসল্যতে দ্রবিল হৃদয়।।
 
 
শ্রীসীতা ঠাকুরাণীর হৃদয় শিশুটিকে দর্শন করে বাৎসল্য প্রেমে গলে গেল। বাম হাতে বালকের শিরে ধান্য দুর্ব্বা দিয়ে আশীর্ব্বাদ করে বললেন দুই ভাই চিরজীবী হও।
 
দুর্ব্বা, ধান্য, দিল শীর্ষে
কৈল বহু আশীষে
চিরজীবি হও দুই ভাই।
ডাকিণী শাঁখিণী হৈতে,
শঙ্কা উপজিল চিতে
ডরে নাম থুইল ‘নিমাই’।।
 
 
–(শ্রীচৈঃ চঃ আঃ১১।১১৭)
 
এরূপ বাৎসল্য রসাবেশে ধান্য দুর্ব্বা দিয়ে আশীর্ব্বাদ করবার পর শ্রীসীতা ঠাকুরাণী নাম করণ করবেন ভাবলেন। কিন্তু যেন বাৎসল্য রস সাগরে একেবারে ডুবে ডাকিণী শাঁখিণী প্রভৃতির ভয়ে নামটি রাখলেন ‘শ্রীনিমাই’। শুদ্ধ বাৎসল্য প্রীতির কাছে অমিত ঐশ্বৰ্য্য বীৰ্য্য প্রভৃতি হার মানে। এ প্রীতিতে ভগবান্ বড় তুষ্ট হন।
 
কয়েকদিন মায়াপুরে থেকে, শ্রীসীতা ঠাকুরাণী শচী দেবীকে পুত্র পালন সম্বন্ধে নানা উপদেশ দিলেন। পরে শান্তিপুরে নিজ গৃহে ফিরে এলেন। পুত্র জন্মোৎসবে শ্রীজগন্নাথ মিশ্র ও শচীদেবী পরম পুজ্যা শ্রীসীতা ঠাকুরাণীকে মূল্যবান্ নব বস্ত্রাদি দিয়ে বহু সৎকার করেছিলেন।
 
শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্য প্রভুর মায়াপুরেও একটী বাসভবন ছিল৷ তথায়ও তিনি মাঝে মাঝে বাস করতেন এবং শ্রীবাসাদি ভক্তগণসহ কৃষ্ণকথা আলাপে সুখে কাল কাটাতেন। শ্রীগৌরসুন্দরের আবির্ভাবে পর ভক্তগণের ও জগন্নাথ মিশ্রের বিশেষ অনুরোধে শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্য সীতা ঠাকুরাণীর সঙ্গে বেশীর ভাগ সময় মায়াপুরে বাস করতে লাগলেন।
 
শ্রীশচী দেবীর অতিশয় পূজ্যপাত্রী ছিলেন শ্রীসীতাঠাকুরাণী। শচী ও সীতা ঠাকুরাণী যেন এক প্রাণ ছিলেন। সীতা ঠাকুরাণী রোজ তাঁদের গৃহে আসতেন এবং শিশু গৌরসুন্দরকে লালন পালন বিষয়ে উপদেশ দান করতেন। মিশ্র গৃহে দিব্য শিশু ভক্তগণের নয়ন মনের আনন্দ বর্দ্ধন করতে করতে চন্দ্রকলার ন্যায় বৃদ্ধি প্রাপ্ত হতে লাগলেন।
 
কে বছর পরে জগন্নাথ মিশ্রের বড় পুত্র–‘শ্রীবিশ্বরূপ’ হঠাৎ সন্ন্যাসী হয়ে গৃহত্যাগ করলেন। শচী ও জগন্নাথ মিশ্র শোকে বড় কাতর হয়ে পড়লেন এবং শিশু গৌরসুন্দরও ভ্রাতৃবিয়োগ ব্যথা অনুভব করেন। সে সময় অদ্বৈত আচার্য্য ও সীতা ঠাকুরাণী তাঁদের বিশেষ ভাবে প্রবোধ দান করতেন এবং শিশুকে রক্ষা করতেন। শ্রীবাস পণ্ডিতের পত্নী মালিনা দেবীও সব সময় বালককে স্নেহে লালন পালন করতেন। তিনি ও শচীদেবী একাত্মা বিশিষ্টা ছিলেন।
শ্রীগৌরসুন্দর শৈশব লীলার পরক্রমে কৈশোর লীলা এবং যৌবন লীলা করলেন। পরে গয়া ধামে গমন করলেন এবং স্বরূপ প্রকট করলেন। সেখান থেকে ফিরে শ্রীবাস অঙ্গনে ভক্তগণকে নিয়ে কীর্ত্তন আরম্ভ করবার সময় অদ্বৈত আচার্য্য সীতা ঠাকুরাণীকে নিয়ে শান্তিপুর থেকে মায়াপুরে আগমন করলেন এবং সর্ব্ব প্রথমে গৌরসুন্দরের পাদপদ্ম-যুগল পূজা
 
অতঃপর শ্রীগৌরসুন্দর নবদ্বীপের কীর্তন-বিলাস লীলা সমাপ্ত করে জীবোদ্ধার ইচ্ছায় সন্ন্যাস গ্রহণপূৰ্ব্বক বৃন্দাবন অভিমুখে যাত্রা করলেন। তা শুনে সীতা ঠাকুরাণী চারদিন শচীদেবীর ন্যায় নিদারুণ বিরহ বেদনায় পীড়িত হয়ে মৃতপ্রায় ভূতলে পড়ে রইলেন। ভক্তবৎসল গৌরসুন্দর এঁদের প্রীতিবন্ধনে বন্দী হয়ে আর বৃন্দাবনে যেতে পারলেন না। শান্তিপুরে ফিরে এলেন। সীতা ঠাকুরাণীর ও অদ্বৈত আচার্য্যের প্রাণও সঙ্গে সঙ্গে ফিরে এল। চারদিন উপবাসের পর গৌরসুন্দর সীতা-ঠাকুরাণীর হাতে রান্না করা দ্রব্য ভোজন করলেন।
 
সন্ন্যাস গ্রহণের পূর্ব্বেও মহাপ্রভু নিত্যানন্দ প্রভুর সঙ্গে মাঝে মাঝে শান্তিপুরে অদ্বৈতগৃহে আগমন করে অষ্টপ্রহর শ্রীকৃষ্ণ-নাম-লীলা সংকীৰ্ত্তন মহোৎসব অনুষ্ঠান করতেন। তার এক সুন্দর বর্ণন দিয়েছেন পদকর্ত্তা শ্রীপরমেশ্বরী দাস ঠাকুর।
 
একদিন পহুঁ হাসি,
অদ্বৈত মন্দিরে আসি,
বসিলেন শচীর কুমার।
নিত্যানন্দ করি সঙ্গে,
অদ্বৈত বসিয়া রঙ্গে,
মহোৎসবের করিলা বিচার।।
শুনিয়া আনন্দে আসি,
সীতাঠাকুরাণী হাসি,
কহিলেন মধুর বচন।
তা’ শুনি আনন্দ মনে,
মহোৎসবের বিধানে,
কহে কিছু শচীর-নন্দন।।
শুন ঠাকুরাণী সীতা,
বৈষ্ণব আনিয়া এথা,
আমন্ত্রণ করিয়া যতনে।
যেবা গায় যেবা বায়,
আমন্ত্রণ করি তায়,
পৃথক পৃথক্‌ জনে জনে ৷ ৷
এত বলি গোরা রায়,
আজ্ঞা দিল সবাকায়,
বৈষ্ণব করহ আমন্ত্রণে।
খোল করতাল লৈয়া,
অগুরু চন্দন দিয়া,
পূর্ণ ঘট করহ স্থাপনে।।
আরোপণ কর কলা,
তাহে বান্ধ ফুল মালা,
কীৰ্ত্তনমণ্ডলী কুতূহলে।
মাল্য চন্দন গুয়া ,
ঘৃত মধু দধি দিয়া,
খোল মঙ্গল সন্ধ্যাকালে।।
শুনি মহাপ্রভুর কথা,
প্রীতে বিধি কৈল যথা,
নানা উপহার গন্ধ বাসে ৷
সবে হরি হরি বলে,
খোল মঙ্গল করে,
পরমেশ্বর দাস রসে ভাসে।।
 
 
–(শ্রীপদকল্পতরু )
 
নদীয়ার প্রাণধন সন্ন্যাস গ্রহণ করে যখন পুরীধামে অবস্থান করতে লাগলেন, অদ্বৈত আচার্য্য সীতাঠাকুরাণী ও পুত্র অচ্যুতানন্দ বছর বছর তথায় যেতেন। যাবার সময় সীতা ঠাকুরাণী গৌরসুন্দরের প্রিয় খাদ্য দ্রব্য সকল তৈরী করে নিতেন এবং গৌরসুন্দরকে গৃহে নিমন্ত্রণ করে ভোজন করাতেন।
 
মধ্যে মধ্যে আচার্য্যাদি করেন নিমন্ত্রণ।
ঘরে ভাত রাদ্ধে আর বিবিধ ব্যঞ্জন।।
 
– (শ্রীচৈঃ চঃ অঃ ১০।১৩৪ )
 
তাঁদের প্রেমে বাঁধা মহাপ্রভু মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় এসে ভোজন করতেন। সীতাঠাকুরাণী চিরকাল বাৎসল্য রসে তাঁকে পুত্রের ন্যায় স্নেহ করতেন। শ্রীগৌরসুন্দরও শচীমাতা থেকে অভিন্ন মনে করে সীতাঠাকুরাণীকে ভক্তি করতেন। শ্রীসীতাঠাকুরাণীর গর্ভে অচ্যুতানন্দ, কৃষ্ণ মিশ্র ও গোপাল মিশ্র নামে তিন পুত্র জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তারাও গৌরসুন্দরের অনুগত ছিলেন।
 
শ্রীসীতাঠাকুরাণীর পিতা শ্রীনৃসিংহ ভাদুড়ী। সীতাঠাকুরাণীর “শ্রী” নামে একটী ভগিনী ছিলেন।
 
নৃসিংহ ভাদুড়ী অতি উল্লাস অন্তরে।
দুই কন্যা সম্প্রদান কৈলা অদ্বৈতেৱে।।
 
* * *
আচার্য্যের ভার্য্যা দুই জগত পূজিতা।
সৰ্ব্বত্র বিদিত নাম ‘শ্রী’ আর সীতা ৷ ৷
 
– (শ্রীভঃরঃ ১২।১৭৮৫)
তথাহি গৌর গণোদ্দেশ দীপিকায়–
 
যোগমায়া ভগবতী গৃহিণী তস্য সাম্প্রতং।
সীতারূপেণাবতীর্ণা ‘স্ত্রী’ নাম্নী তৎপ্রকাশতঃ।।
 
 
ভগবর্তী যোগমায়া শ্রীঅদ্বৈত প্রভুর পত্নী সীতাদেবী এবং অপ্রকাশ ‘শ্রী’রূপে সম্প্রতি অবতীর্ণ হলেন।
 
জয় শ্রীসীতাঠাকুরাণী কি জয়।
জয় শান্তিপুর নাথ অদ্বৈত আচার্য্য কি জয়।।
 
 
 
  • February 20-21, 2022 Puri, Odisha
  • 3rd of July in 2022 Balasore, Odisha
  • August 24-26, 2022 Kurukshetra, Haryana
  • October 7, 2022 Prayagraj, Uttar Pradesh
  • November 30 -1, 2022 Agartala, Tripura
  • December 3-4, 2022 Lalabazar, Assam
  • December 7, 2022 Guwahati, Assam
  • February 17-18, 2023 Baruipur, West Bengal
  • May 27-28, 2023 Patna, Bihar
  • June 26, 2023 Bhubaneswar, Odisha
  • November 26, 2023 Gaya, Bihar
  • February 8, 2024 Delhi
  • February 13-15, 2024 Balighai, Medinipur
  • March 19, 2024 Nabadwip, West Bengal
  • May 27 2024 Florida, USA
  • June 23-24, 2024 Baripada, Odisha
  • June 26-27, 2024 Paradeep, Odisha
  • June 29-30, 2024 Cuttack, Odisha
  • July 14, 2024 Chennai, Tamilnadu
  • August 31 2024 London
  • September 07 2024 London
  • September 08 2024 Berlin (Germany)
  • September 13 2024 Canada
  • September 14-15 2024 Rochester (USA)
  • September 21 2024 New Jersey (USA)
  • Upcoming Events