Madhu Purnima
মধুপূর্ণিমা বৌদ্ধদের একটি ধর্মীয় উৎসব। ‘পারিল্যেয়ক’ বনে অবস্থানকালে বুদ্ধের প্রতি বন্য প্রাণীদের সেবাপরায়ণতা ও সহযোগিতার স্মারক হিসেবে ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এ উৎসব পালিত হয়। এর উদ্দেশ্য দানের মহিমা প্রচার করা। বুদ্ধদেব যখন ‘পারিল্যেয়ক’ বনে দশম বর্ষাবাস ব্রত পালন করছিলেন, তখন একটি হাতি ও একটি বানর ভিক্ষা করা, ফলমূল সংগ্রহ করা, হিংস্র প্রাণীদের হাত থেকে আত্মরক্ষা ইত্যাদি কাজে বুদ্ধকে সব সময় সাহায্য করত। এভাবে তাদের সেবা পেয়ে বুদ্ধ নির্বিঘ্নে বর্ষাবাস যাপন করছিলেন। একদিন বানরটি বুদ্ধকে একটি মৌচাক এনে দিলে তিনি তা থেকে মধু সংগ্রহ করেন। তা দেখে আনন্দচিত্ত সেই বানর গাছে গাছে লাফালাফি করতে গিয়ে মাটিতে পড়ে মৃত্যুবরণ করে। সেদিন ছিল ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা তিথি। তাই একটি মানবেতর প্রাণীর দানের মহিমা স্মরণীয় করে রাখার জন্য এদিনটিকে ‘মধুপূর্ণিমা’ নামে আখ্যায়িত করা হয়।
দানের মহিমা প্রচার ছাড়া এ পূর্ণিমার আর একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো পারস্পরিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা। কৌশাম্বীবাসী ভিক্ষুসংঘের মধ্যে যে দ্বিধাবিভক্তি ছিল, তার অবসানে এদিন ভিক্ষুসংঘ পারিল্যেয়ক বনে গিয়ে বুদ্ধের নিকট ঐক্যমন্ত্রে দীক্ষিত হয়। বুদ্ধ তাঁদের উপদেশ দিয়ে বললেন: এই হাতি তার উপযুক্ত সঙ্গী না পেয়ে একাকী বনে বাস করছে। প্রজ্ঞাবান ও উচ্চ মার্গের সঙ্গী না পেলে জগতে একাকী অবস্থান করাই শ্রেয়, কারণ মূর্খ সঙ্গী দুর্ভোগ বাড়ায়।
মধুপূর্ণিমার শিক্ষা হলো দান, সেবা ও একতা সমাজজীবনে যেমন, তেমনি আরণ্যজীবনেও অপরিহার্য। ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য পারস্পরিক সহিষ্ণুতার প্রয়োজন। দান-সেবা শুধু মানুষের জীবনে নয়, মানবেতর প্রাণীর জীবনেও পরিবর্তন আনে। তাই সর্বদা মৈত্রী, করুণা ও ত্যাগের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পারস্পরিক কল্যাণবোধের মানসিকতা নিয়ে জীবন অতিবাহিত করা উচিত। এতে সকলের কল্যাণ সাধিত হয়। এদিন বৌদ্ধ উপাসক-উপাসিকা ও আবালবৃদ্ধবণিতা মধু দিয়ে বুদ্ধপূজা করে এবং ভিক্ষুসংঘকে মধু দান করে। সকল বৌদ্ধবিহারে এদিন আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।