Madhukrishna Tryadashi
মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী হিন্দু দেবতা শিবকে উৎসর্গ করা হয়। এটি ফাল্গুন বা ফাল্গুন মাসে চাঁদের (কৃষ্ণপক্ষ) ক্ষয় হওয়ার সময় 13 তম দিনে (ত্রয়োদশী) পালন করা হয়। 13 তম দিনে উপবাস এবং উপবাস সাধারণত শিবকে উত্সর্গ করা হয়। এই দিনে বিল্ব গাছ রোপণ করা অত্যন্ত পুণ্যজনক বলে বিবেচিত হয়।
চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশীকে মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী বলা হয়। শাস্ত্রে চৈত্র মাসকে মধুমাস বলাহয়।যথা- (মধুশ্চৈত্রমাসেতিঃ- ইতি চ তিথিতত্ত্বে)।এ চৈত্র বা মধু মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশীতে শতভিষা নক্ষত্রের যোগ হলে তখন বারুণীযোগ উপস্থিত হয়।শতভিষা নক্ষত্রের আরেক নাম বরুণ।তাই শতভিষা নক্ষত্র তথা বরুণ নক্ষত্রের প্রধান্যতা বিধায় বরুণ নক্ষত্রের নামানুসারে এ যোগকে বারুণীযোগ বলাহয়।তিথি,নক্ষত্র,যোগ ও বারের যোগাযোগের ভিত্তিতে এ যোগটি বারুণী,মহাবারুণী ও মহামহাবারুণী বলে খ্যাত হয়। স্কন্ধপুরাণের বর্ণনানুসারে বারুণেন সমাযুক্তা মধৌ কৃষ্ণাত্রয়োদশী।গঙ্গায়া যদি লভ্যেত সূর্যগ্রহশতৈ সমাঃ।।অনুবাদ- চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীতে শতভিষা ( বরুণ) নক্ষত্রের যোগহলে তাকে বারুণী বলে। এ সময় গঙ্গাস্নানে বহুশত সূর্যগ্রহন জনিত গঙ্গাস্নানের সমান ফল লাভ হয়। মহাবারুণী শনিবার সমাযুক্তা সা মহাবারুণী স্মৃতাঃ।গঙ্গায়া যদি লভ্যেত কোটিসূর্যগ্রহৈঃ ভবেৎ।।অনুবাদ- এ দিন যদি শনিবার হয় তাহলে মহাবারুণী যোগ উপস্থিত হয়।এ সময় গঙ্গাস্নানে কোটি সূর্যগ্রহন কালীন গঙ্গাস্নানের সমান ফল লাভ হয়। “শুভযোগ সমাযুক্তা শনৌ শতভিষা যদি।মহামহেতি বিখ্যাতা ত্রিকোটি কুলমুদ্ধরেৎ।।” মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে শনিবার,শুভযোগ ও শতভিষা নক্ষত্রের যোগ হলে মহামহাবারুণী যোগ উপস্থিত হয়।এ সময় গঙ্গাস্নানে ত্রিকোটি কুল উদ্ধার প্রাপ্ত হয়।।কেউ কেউ এ তিথিকে গঙ্গার ধরাতলে অবতরণের তিথি বলে থাকেন। কিন্তু তা নয়,গঙ্গা পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন জ্যৈষ্ঠ মাসের দশহরা তিথিতে।বারুণী হল গঙ্গা স্নানের একটি বিশেষ যোগ। সমুদ্রে,গঙ্গা,যমুনা,সরস্বতী এ সমস্ত নদীর জল বর্তমান থাকে বলে সমুদ্রেও স্নান করা য়ায়। অথবা যে কোন পূণ্য সলিলা নদীতে স্নান করা যায়।তবে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের বর্ণনানুসারে বৈষ্ণবগণ পুণ্যের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে কৃষ্ণসেবা প্র্রার্থনা করেই গঙ্গাস্নান করে থাকেন। ঐ পুরাণে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে ভগবান কৃষ্ণ বলেছেন- হে গঙ্গা, পাপীরা যখন তোমার জলে স্নান করে পাপ অর্পন করবে,তখন বৈষ্ণবগণ তোমার জলে স্নান করলে তুমিও পাপ মুক্ত হবে। আর এ কলিযুগে হরিনাম সংকীর্তন ও বৈষ্ণবগণ এতই মাহাত্ম্যপূর্ণ যে, যখন বৈষ্ণবগণ হরিনাম সংকীর্তন করেন সেই সংকীর্তনের ধুলাও যদি গঙ্গাজলে পতিত হয় তবে গঙ্গাদেবীও পবিত্র হন। “সংকীর্তনের ধুলা যদি পরে গঙ্গাজলে। গঙ্গা পবিত্র হয় ভাগবতে বলে।।” তাই বৈষ্ণব গণ এইদিন গঙ্গাস্নানে গিয়ে সবাইকে নিয়ে হরিনাম সংকীর্তন করেন।