Nabadwip Dham Parikrma
পঞ্চম দিনের পরিক্রমা
৬ মার্চ ২০২৩
(অন্তর্দ্বীপ বা শ্রীমায়াপুর পরিক্রমা)
শ্রীঅন্তর্দ্বীপ বা শ্রীমায়াপুর–- শ্রীমন্মহাপ্রভুর জন্মভিটা তথা শচীর আঙ্গিনা, যোগপীঠ, শ্রীবাস অঙ্গন, শ্রীল প্রভুপাদের সমাধি মন্দির ও শ্রীচৈতন্য মঠ আদি দর্শন। ১৮৯৩ সালে এই স্থানটির আবিষ্কার করেন শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজ ও শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর। এস্থান গৌড়ীয় ভক্তদের জন্য “আত্মনিবেদন” ভক্তির পীঠস্বরূপ। এইস্থানে ব্রহ্মা দ্বাপরযুগে শ্রীকৃষ্ণের চরণে গোবৎস হরণরূপ অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করবার জন্য তপস্যা করেছিলেন। তপস্যার প্রভাবে শ্রীমন্মহাপ্রভু তাঁকে দর্শন দিয়ে বলেছিলেন—“তুমি চিন্তা করো না আমি এই নবদ্বীপে অবতীর্ণ হয়ে নাম সংকীর্তনের মাধ্যমে জগৎকে প্লাবিত করব। সেই সময় তুমি নামাচার্য হরিদাস ঠাকুর রূপে জন্ম নিয়ে আমার লীলার সাহায্য করবে। তোমার সব অপরাধ নামের প্রভাবে মার্জিত হবে।” এই সকল অন্তরের কথা শ্রীমন্মহাপ্রভু ব্রহ্মাকে বলেছিলেন তাই এই দ্বীপকে অন্তদ্বীপ বলা হয়।
জন্মভিটা মন্দির ও যোগপীঠ মন্দিরে যাবতীয় বিগ্রহগণ শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজের ইচ্ছানুসারে স্থাপিত হয়। মিশন কর্তৃক পরিক্রমাকালে প্রায় ৪০ ঝুড়ি সিদা সাজিয়ে ্রীমন্মহাপ্রভুর ভোগের জন্য উপহার দেওয়া হয়।
শ্রীবাসঅঙ্গন—যোগপীঠের অনতিদূরে শ্রীমন্মহাপ্রভুর পার্ষদ শ্রীবাস পণ্ডিতের গৃহ। এইস্থানে শ্রীগৌরসুন্দরের সংকীর্ত্তন রাসস্থলী।
শ্রীঅদ্বৈত ভবন—শ্রীবাস অঙ্গনের নিকটে শ্রীঅদ্বৈত আচার্যের ভবন। এখানে বসে তিনি তুলসী ও গঙ্গাজল দিয়ে হরি আরাধনা করে শ্রীকৃষ্ণকে কলিযুগে শ্রীমন্মহাপ্রভু রূপে আবির্ভূত হতে বাধ্য করেছিলেন। তাই এঁনাকে গৌরআনা ঠাকুর বলা হয়।
শ্রীচৈতন্য মঠ—এটি শ্রীচন্দ্রশেখর আচার্যের ভবন বা শ্রীমন্মহাপ্রভুর মাসীর বাড়ি নামে পরিচিত। এখানে শ্রীল প্রভুপাদ ১৯০৫ সালে শতকোটি হরিনাম যজ্ঞ করেছলেন এবং ব্রজপত্তন স্থাপন পূর্বক তিনি ভজন করতেন। পরবর্তীকালে ১৯১৮ সালে তিনি ত্রিদণ্ডী সন্ন্যাস গ্রহণ পূর্বক গৌরবাণী প্রচার করবার সংকল্প নিয়ে শ্রীচৈতন্য মঠ স্থাপন করেন। শ্রীচৈতন্য মঠে শ্রীগৌর রাধাবিনোদপ্রাণ বিগ্রহ স্থাপন করে তিনি প্রচার কার্য শুরু করেছিলেন। এই মঠের ঠিক পাশেই শ্রীল প্রভুপাদের সমাধি মন্দির বিরাজমান। ১৯৩৭ সালের ১লা জানুয়ারী এস্থানে শ্রীল প্রভুপাদের অপ্রাকৃত অঙ্গ সমাধিস্থ করা হয়। শ্রীল প্রভুপাদ পার্শ্ববর্তী স্থানে শ্রীরাধাকুণ্ড ও শ্রীশ্যামকুণ্ড স্থাপন করে অভিন্ন গোবর্ধন আনে ব্রজপত্তনে ভজন করতেন। আজও সেই ভজন কুটীর তথায় বিরাজমান।
শ্রীল গৌরকিশোর দাস বাবাজী মহারাজের সমাধি — শ্রীচেতনা মঠের এক পার্শ্বে শ্রীল গৌরকিশোর দাস বাবাজীর সমাধি মন্দির বিরাজমান। পূর্বে এই সমাধি গঙ্গার স্রোতে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গঙ্গার গর্ভে চলে যাচ্ছিল। শ্রীল প্রভুপাদ স্বয়ং সেই সমাধি উঠিয়ে সমাধি স্থাপন করেন এবং পরবর্তীকালে বাবাজী মহারাজের বিগ্রহ স্থাপন করেন। এই স্থান দর্শন করে পরিক্রমা পার্টি গোদ্রুম মঠে ফিরে যান।