Sri Nrisinha Chaturdashi
বৈশাখের শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে শ্রীনৃসিংহদেব আবির্ভূত হইয়াছিলেন,সুতরাং উক্ত তিথিতে শ্রীনৃসিংহদেবের পূজারূপ উৎসব উপবাসাদি নিয়ম সহকারে পালন উচিত ৷
বৃহন্নারসিংহ পুরাণে ভগবান শ্রীনৃসিংহদের ভক্ত প্রহ্লাদকে বললেন-
বর্ষে বর্ষে তু কর্তব্যং মম সন্তুষ্টি কারণম। মহা গুহ্যমিদং শ্রেষ্ঠং মানবৈর্ভব ভীরুভিঃ।
‘প্রতি বছর আমার সন্তুষ্টি উদ্দেশ্যে চতুর্দশী ব্রত্য কর্তব্য। জন্ম-মৃত্যুময় সংসার ভয়ে মানুষ এই পরম গোপনীয় ও শ্রেষ্ঠ ব্রত পালন করবে।’
বৃহন্নার সিংহপুরাণে শ্রীভগবননৃসিংহ-প্রহলাদসংবাদে ব্রতবিধিকখনে, যথা- (হে প্রহ্লাদ!) মৎপ্রীতির জন্য ভবভয়ভীত মানবকুলের বৎসরে বৎসরে এই অতিগোপ্য ব্রতরাজ চতুর্দশীব্রতের অনুষ্ঠান করা উচিত। আরও, যথা—যে ব্যক্তি মদ্দিন জানিয়াও লঙ্ঘন করে ,তাহাকে পাপভাগী হইতে হয়; সুতরাং ইহা জানিয়া মদ্দিনে ব্রতোত্তমের অনুষ্ঠান করিবে; নতুবা চন্দ্রসূর্যের স্থিতিকাল যাবৎ নিরয় বাস করিতে হইবে ।
উক্ত পুরাণেই, যথা—যাবতীয় লোকই মদব্রতানুষ্ঠানে অধিকারী ; বিশেষত: এই ব্রত করা মদ্ভক্ত ও মন্নিষ্ঠব্যক্তি গণের নিশ্চয় কর্তব্য॥
ঐ পুরাণেই, যথা—
শ্রীপ্রহ্লাদ বলিলেন, হে ভগবন্! হে বিষ্ণো! হে নৃসিংহবিগ্রহধারিন্! আপনাকে পুনঃ পুনঃ নমস্কার করি। হে দেবেশ ! আমি ত্বদীয় ভক্ত, কেবলমাত্র ত্বৎসমীপেই যথার্থত: জিজ্ঞাসা করিতেছি। হে স্বামিন্ ! আপনার প্রতি কিরূপে আমার বহুবিধা ভক্তির উদয় হইল ? কিরূপেই বা কিরূপে আমি আপনার সুপ্রিয় হইলাম ? হে প্রভো! মৎসকাশে তাহা কীর্তন করুন।
শ্রীনৃসিংহ বলিলেন, হে মহাপ্রাজ্ঞ ! হে বৎস! মদ্ভক্তি ও মৎপ্রিয়ত্ব প্রাপ্তির কারণ বলিতেছি, একাগ্রমানসে শ্রবণ কর। হে তাত ! পূর্বজন্মে তুমি বিপ্র ছিলে, কিন্তু কিছুমাত্র পঠন কর নাই। তুমি বসুদেব নামে অভিহিত ছিলে এবং বেশ্যাসক্ত হইয়া দিনাতিপাত করিতে। সে জন্মে আমার একটিমাত্র ব্রত ভিন্ন তোমার অন্য কোন পুণ্যকর্ম ছিল না, বেশ্যাসঙ্গেই লুব্ধ ছিলে। সেই মদ্ব্রতের প্রভাবেই ঈদৃশী ভক্তি প্রাপ্ত হইয়াছ ।
শ্রীপ্রহ্লাদ বলিলেন, হে নৃসিংহ! হে অচ্যুত ! হে প্রভো! আমি কাহার পুত্র ছিলাম, কিরূপ কার্যই বা করিয়াছিলাম, বেশ্যানুরক্ত থাকিয়াই বা কিপ্রকারে তদব্রত করিয়াছিলাম, এই সমস্ত সবিস্তরে বলুন ।
শ্রীনৃসিংহ বলিলেন, (হে বৎস! ) পুরাকালে অবন্তীনগরে সর্বজন-বিখ্যাত বহুশর্মা নামে জনৈক বেদবিদ্ ব্রাহ্মণ বাস করিতেন। তিনি প্রত্যহ হোমামুষ্ঠানে তৎপর ও নিখিল বৈদিক ক্রিয়ায় রত থাকিতেন। তিনি অগ্নিষ্টোমাদি যজ্ঞসমূহ দ্বারা দেবোত্তমদিগকে তুষ্ট করিতেন। জীবিতাবস্থায় তাঁহার কোন প্রকার দুষ্কার্যই নয়নগোচর হয় নাই। সুশীলা নাম্নী তাঁহার পতিব্রতা পত্নী সদাচার ও পতিভক্তি-পরায়ণ হইয়া ভুবনত্রয়ে বিখ্যাত হইয়াছিলেন। সেই দ্বিবরের ঔরসে সুশীলার গর্ভে পাঁচটি পুত্র জন্মগ্রহণ করিল। পুত্রগণ সুবিদ্বান্, সদাচারপরায়ণ ও পিতৃভক্ত হইল; কিন্তু তন্মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ তুমি সর্বদা বেশ্যাসক্ত হইয়া উঠিলে। তুমি সর্বদা বেশ্যারত থাকায় মদ্যপানে ও পাপকর্মে লিপ্ত হইয়া কিছুমাত্রও অধ্যয়ন করিলে না, সতত বেশ্যালয়েই তোমার বাস হইল। একদিন সেই বেশ্যার গৃহে তাহার সহিত তোমার দারুণ কলহ হইল,তজ্জন্য সেদিন তুমি অনাহারী থাকিলে। সে দিন অজ্ঞানবশে তুমি আমার ব্রতরাজের অনুষ্ঠান করিয়াছিলে, এবং সেই বেশ্যাসহ কলহনিবন্ধন তোমার রাত্রিজাগরণও ঘটিল। তোমার সঙ্গবশত: সেই বেশ্যাকর্তৃকও ব্রতাদি অনুষ্ঠিত হয় এবং জাগরণ নিবন্ধন তদীয় দেহও শুদ্ধ হইল। এইরূপে তুমি অজ্ঞানে বহুপুণাদ মদব্রত অনুষ্ঠান করিয়াছিলে॥
এই ব্রত করিয়াই দেবগণ অধুনা দেবলোকে আনন্দ ভোগ করিতেছেন। ব্রহ্মাও সৃষ্টির নিমিত্ত মদীয় এই উত্তম ব্রতানুষ্ঠান করেন, এই ব্রতের প্রভাবেই তিনি চরাচর জগৎ সৃষ্টি করিয়াছেন। মহেশ্বর ও ত্রিপুর বিনাশের জন্য এই ব্রন্থের অনুষ্ঠান করিয়া ইহার অনুগ্রহে উক্ত ত্রিপুর ধ্বংস করেন। অন্যান্য বহুসংখ্য দেব, প্রাচীন ঋষি ও মহামতি নৃপতিগণ এই উত্তম ব্রতের অনুষ্ঠান করিয়া ছিলেন। এট ব্রতের প্রভাবে সকলেই সিদ্ধি প্রাপ্ত হইয়াছেন। বেশ্যা ও ইহার প্রভাবে ত্রিভুবনসুখচারিণী ও মৎপ্রিয়পাত্রী হইয়াছে। হে বৎস! আমার এই ব্রত ত্রিভুবনপ্রসিদ্ধ, ধূর্ত । বিলাসিনী নারীর জন্যও এই ব্রত সমাগত হয়; অর্থাৎ তাহারাও এই ব্রত অনুষ্ঠান করিয়া তৎফল পাইতে পারে। হে প্রহ্লাদ ! এইহেতু আমার প্রতি তোমার উত্তমা ভক্তি জন্মিয়াছে ৷
হে প্রহলাদ ! সেই বেশ্যা দেবলোকে অপ্সরারূপে বহুবিধ ভোগ সম্ভোগ করিয়া আমাতে বিলীনা হইয়াছে, তুমিও আমাতে প্রবিষ্ট হইয়াছিলে। কার্যসাধনার্থ মদ্দেহ হইতে ভিন্ন হইয়াই তোমার এই অবতার, তুমি সর্ব কার্য সমাধা করিয়া সত্বর আমাতে প্রবিষ্ট হইবে। মানবগণ আমার এই ব্রতরাজের অনুষ্ঠান করিলে শতকোটি কল্পেও আর তাহাদিগকে এই সংসারে আসিতে হয় না ॥
এই ব্রতপ্রভাবে পুত্রহীনের অতি সুন্দর পুত্রসমূহ লাভ হয়, দীন ব্যক্তি কুবেরতূল্য লক্ষ্মীবান্ হইতে পারে এবং তেজস্কামী তেজঃ, রাজ্যাকাঙ্ক্ষী উত্তম রাজ্য ও আয়ুষ্কামী শিবসদৃশ দীর্ঘায়ু লাভ করিতে পারে। এই ব্রত স্ত্রীগণ পক্ষে সচ্চরিত্র-পুত্রদায়ক, সৌভাগ্যজনক, অবৈধবাকর, পুত্রশোকনাশন, ধনধান্যপ্রদ, পতিপ্রিয়কর ও শুভকর। এই ব্রতানুষ্ঠানে নারীবৃন্দ সার্বভৌমানন্দ ও স্বর্গসুখ পাইতে পারে। হে প্রহ্লাদ! এই শ্রেষ্ঠ ব্রতের অনুষ্ঠান করিলে নর বা নারী, সকলকেই সুখ ও ভুক্তিমুক্তিফল দিয়া থাকি ।
হে নৃসিংহদেব তোমার আশীর্বাদে যেন জন্মজন্মান্তরে এই ব্রত করিতে সক্ষম হই। এই প্রার্থণা জয় নৃসিংহদেব কী জয়। জয় প্রহ্লাদ মহারাজ কী জয়।