Utthan Ekadashi

 
[একাদশীতে কী কী করা এবং খাওয়া উচিত নয়
 
একাদশী একটি চান্দ্র তিথি। চাঁদের শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথি, হিন্দু ধর্মমতানুসারে পূণ্যতিথি হিসেবে বিবেচিত। হিন্দুধর্মমতে এ দিন বিধবাদের, বিশেষত উচ্চবর্ণীয় বিধবাদের নিরম্বু উপবাস বিহিত। অবশ্য বর্ণ ও লিঙ্গ নির্বিশেষে যে কেউ একাদশী পালন করতে পারেন। এই সময় সাধারণত ফলমূল ও বিভিন্ন সবজি এবং দুধ খাওয়া যায়। তবে একাদশীতে পঞ্চরবি শস্য বর্জন করা বাঞ্ছনীয়।
 
এখন দেখে নেওয়া যাক একাদশীতে কোন পাঁচ প্রকার রবিশস্য গ্রহণ নিষিদ্ধ:
 
১। ধান জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন চাল, মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েস, খিচুড়ি, চালের পিঠা, খই ইত্যাদি
 
২। গম জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন আটা, ময়দা, সুজি, বেকারির রুটি, সব রকম বিস্কুট, হরলিকস ইত্যাদি।
 
৩। যব বা ভূট্টা জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন ছাতু, খই, রুটি ইত্যাদি।
 
৪। ডাল জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন মুগ, মাসকলাই, খেসারি, মুসুরী, ছোলা, অড়হর, মটরশুঁটি, বরবটি ও সিম ইত্যাদি।
 
৫। সরষের তেল, সয়াবিন তেল, তিল তেল ইত্যাদি। উপরোক্ত পঞ্চ রবিশস্য যে কোনও একটি একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হয়।]
 
 
শ্রীদামোদরের ষোড়শোপচারে পূজা। পঞ্চমৃতে স্নান। নৈবেদ্য-পায়স,ক্ষীর,লাড্ডু, সর, পুলি, পিঠা, পানা, উত্তম-অন্ন, বিবিধ ব্যঞ্জন, বিবিধ মিষ্টি ও বিবিধ সৌগন্ধ পুষ্পাদি অর্পণ করবে।
 
এখানে শ্রীদামোদরদেবকে গোলাপফুল, বকুল, অশোকপত্র, শমীপত্র, তুলসীপত্র, মালা, চাঁপাফুল, কেতকী ও কদম্ব প্রভৃতি পুষ্প অর্পণ মহামাহাত্ম্যযুক্ত হয়। মধ্যাহ্নকালে ভোগপ্রদান, আরতি সংকীর্ত্তন, পরিক্রমণ, স্তব ও দণ্ডবৎ। অনন্তর দামোদর দেবের মহিমা শ্রবণ।
 
কথারম্ভ স্তব —
 
বালং নবীনশতপত্র বিশালনেত্রং
বিম্বাধরং সজলমেঘরুচিরং মনোজ্ঞম্।
মন্দাস্মিতং মধুর-সুন্দরাননং
শ্রীনন্দনন্দামহং মনসা নমামি।।
স্তনং পিবন্তং জননীমুখাম্বুজং
বিলোক্যমন্দাস্মিতমুজ্জ্বলাঙ্গম্।
স্পৃশন্তমন্যস্তনমুঙ্গুলাভি
বন্দে যশোদাঙ্কগতং মুকুন্দম্।।
 
শ্রীমদ্ভাগবত শুক পরীক্ষিৎ সংবাদ–
শ্ৰীশুক উবাচ—
 
কালেন ব্রজতাল্পেন গোকুলে রামকেশবৌ।
জানুভ্যাং সহপাণিভ্যাং রিঙ্গমাণৌ বিজহ্র্রতুঃ।।
 
—(ভাঃ ১০(৮।২১)
 
শ্রী শুকদেব বললেন –
হে রাজন ! শ্রীকৃষ্ণের অদ্ভুত শৈশব লীলার কথা শ্রবণ করুন। ভক্তবৎসল ভগবান ভক্তের ভক্তিতে ঋণী হয়ে ভক্তের কোলে শিশুরূপে ক্রীড়া করছেন। শিশুলীলার সহায়ক হলেন শ্রীবলরাম। যশোদার অঙ্গনে বাল্যলীলাচ্ছলে বলরামের সঙ্গে হামাগুড়ি দিয়ে ভ্রমণ করছেন। সর্ব্বজ্ঞ হয়েও অসর্ব্বজ্ঞের ন্যায় লীলা। কটিতটে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিঙ্কিণীর শব্দে মুগ্ধ হয়ে চারিদিকে দৃষ্টিপাত বিবিধ মিষ্টি করছেন—এ মধুর শব্দ কোথা হতে আসছে। সামনে যে গোপ-নারীকে | দেখছেন মা বলে তাঁকে জড়িয়ে ধরছেন। কখনও নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে | ভ্রমবশতঃ তাঁকে ধরবার জন্য ক্রন্দন করছেন। তা দেখে গোপ গোপীগণ আনন্দে হাস্য করছেন।
 
শিশুলীলাকারী হরি কখনও রোদন, কখনও হাস্য, কখনও নৃত্যগীত করছেন। নন্দের ভবন আনন্দময়। আবার কখনও কখনও যশোদার ক্রোড়ে স্তন পান করছেন, ক্রোড়ে নৃত্য করছেন, মা-মা আধ আধ বাক্য উচ্চারণ করছেন। মা যখন ভূতলে রাখছেন, যশোদার চরণোপরি মস্তক লুণ্ঠন করছেন। কি অপূর্ব্ব ভগবানের বাল্যলীলা মাধুরী !
 
মা কোনদিবস স্বর্ণবাটিতে কিছু লাড্ডু শিশুকে দিলেন। শিশু সে বাটি হাতে করে বাইরের বারান্দাতে বসে খাচ্ছেন আর কাক শালিক বানরগণকে একটু একটু করে খাওয়াচ্ছেন। আর চারিদিকে দৃষ্টিপাত করছেন। এমন সময় একটি কাক শিশুর বাটি থেকে মাখন রুটি নিয়ে গেল। বালক তা দেখে কেঁদে ধরাতলে লুটিয়ে পড়লেন। দূর হ’তে মা বালকের ক্রন্দন ধ্বনি শুনে তাড়াতাড়ি তথায় এলেন এবং বালককে কোলে নিয়ে বলতে লাগলেন বাপ নীলমণি। বল কি হয়েছে? কেন ভূতলে পড়ে কান্না করছ?
 
বালক বললেন—মা কাকে রুটি নিয়ে গেছে। মা বললেন—তাতে কি হয়েছে, তোমাকে আবার রুটি দেব। বাপধন নীলমণি। ওরা ত’ তোমার বাবার রাজ্যে থাকে, পাখী জাতি, খেতে না দিলে ওরা কোথায় খাবে? গোপাল এ কথা শুনে সুখী হলেন, সেদিন থেকে আদর করে সকলকে খাওয়াতে লাগলেন।
 
নগরের অপরাপর শিশুগণ প্রতিদিন নন্দভবনে এসে গোপালের সঙ্গে খেলতে লাগলেন। কোনদিন গৃহ বারান্দায়, কোনদিন রাস্তা পাশে খেলেন। একদিন বালু দিয়ে মন্দির নির্মাণ খেলা করছেন। গোপাল বালু দিয়ে একটি মন্দির নির্মাণ করে সখাদিগের প্রতি বললেন—আমি কত সুন্দর মন্দির। নির্মাণ করেছি। এমন সময় এক চঞ্চল শিশু মন্দিরটি ভেঙে দিয়ে পালাল। তা দেখে গোপাল কেঁদে ধরাতলে গড়াগড়ি দিতে লাগলেন—বললেন আমার মন্দির ভেঙে দিল। তখন গোপীগণ ছুটে এলেন এবং কোলে তুলে নিলেন, বললেন কাঁদছ কেন? আবার তুমি একটি মন্দির তৈয়ারী কর; এবার আমরা পাহারা দিব। যিনি ভ্রু-ভঙ্গিতে বিশ্ব সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয় করে থাকেন, তার এ কি বিচিত্র শিশুলীলা !
 
দীপাবলীদিবস মা যশোদা দাসী গোপীগণকে অন্যান্য কাৰ্য্যে লাগিয়ে স্বয়ং দামোদরের জন্য দধিমন্থন দুধ জ্বালাতে লাগলেন। শিশু প্রাতঃ নিদ্রা ভাঙার পর শয্যা মধ্যে মাকে না দেখে মা ! মা !! বলে কাঁদতে লাগলেন। মা দূর থেকে ‘গোপাল এখানে এস, এখানে এস’ বলে আহ্বান করতে লাগলেন। বালক করকমলে নেত্রদ্বয় মার্জ্জন করতে করতে কাছে এলেন এবং মন্থনদণ্ডী ধরলেন, মা তৎক্ষণাৎ মন্থন বন্ধ করলেন এবং সে স্থানে বসলেন ও বালককে স্তনপান করাতে আরম্ভ করলেন। অন্যগৃহ মধ্যে দুধ জাল হচ্ছে। দুধ উথলিয়ে পড়ছে দেখে তাড়াতাড়ি মা গোপালকে বসিয়ে রেখে দুধের স্থানে এলেন। বালকের মনে ক্রোধ হল। আমাকে খেতে না দিয়ে মা কেন চলে গেল।
 
অনন্তর ক্রোধাবেশে একটিনুড়ি দিয়ে দধির ভাণ্ডটীর তলদেশ ভেঙে দিলেন। সব দধিতে ঘর ভরে গেল। বালক হাস্য করলেন আবার ভয় করতে লাগলেন। আজ মা আমাকে নিশ্চয় মারবেন। গোপাল গৃহান্তরে প্রবেশ করলেন এবং দেখলেন গৃহমধ্যে শিকোপরি মাখন দধি ঝুলছে চঞ্চল বালক একটি উদুখল টেনে এনে উপুড় করে, তার উপর বসলেন এবং দধিমাখন বের করে জানলার ফাঁক দিয়ে বানর ও কাককে খাওয়াতে লাগলেন। মা জানালা দিয়ে কিছুক্ষণ এ লীলা দেখে মনে মনে বললেন—শিশু বড় হলে খুব দানী-মানী হবে। প্রাতেঃ নিজের ক্ষুধার প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে অন্য জীবের কিরূপ সেবা করছে। তারপর মা বললেন— গোপাল এঘরে কি করছ? শিশু মাকে দেখে ভয়ে উদুখল থেকে লাফ দিয়ে পালাতে চেষ্টা করতে লাগলেন। মা গৃহদ্বার বন্ধ করে দিলেন। বালকের পিছে পিছে ছুটতে লাগলেন। শুকদেব গোস্বামী বললেন—শুন পরীক্ষিৎ, যোগীগণ যাঁকে ধ্যানযোগে দর্শন পায় না। ভক্ত তাঁকে ‘আমার পুত্র’-জ্ঞানে ধরবার জন্য পিছে পিছে ছুটছেন। ভক্ত-ভগবানের কলহ হলে ভগবান পরাজিত হন। যশোদা মা দৌড়ে দৌড়ে পিছন থেকে কৃষ্ণকে ধরে ফেললেন। মায়ের হাতে লাঠি দেখে বালক জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন। মা বললেন কাঁদছ কেন? গোপাল বললেন তুমি লাঠি দিয়ে আমাকে মারবে?
 
মা—লাঠির এত ভয় ত’ চুরি কর কেন?
গোপাল—আমি চুরি করি না।
যশোদা—কে চুরি করে?
গোপাল—ওদের ঈশ্বর।
যশোদা—তুমি কি ঈশ্বর? পাকাচোর।
গোপাল—আমি চোর নহি, তোমার ঠাকুরদাদা চোর।
যশোদা—কথায় পারা যায় না। এই বলে লাঠি ফেলে দিয়ে দড়ি হাতে করে বললেন—আজ তোমাকে বেঁধে রাখব।
গোপাল—মা! আমাকে বেঁধ না, আমি আর পরের ঘরে যাব না;মাখন চুরি করব না।
 
মা -তোমার কথা শুনব না। আজ তোমাকে বাঁধবই। মা এ কথা বলে বাঁধবার জন্য পূর্ণ উদ্যম করলেন। যতবার বাঁধতে যান, দড়ি আঁটে না; দু’ অঙ্গুলি কম হয়। শরীর ঘর্মে ঘর্মময় মাথার কেশবন্ধন এলিয়ে পড়ল হাত লাল হয়ে গেছে। তথাপি বাঁধবার পূর্ণ চেষ্টা। ভগবান মনে মনে বললেন আমি চিরকাল ভক্তের কাছে পরাজয় স্বীকার করি। অতএব মাকে আর কষ্ট দেই কেন ? পরাজয় স্বীকার করি।
 
দৃষ্ট্বা পরিশ্রমং কৃষ্ণঃ কৃপায়াসিত স্ববন্ধনে।
 
ভক্তশ্রম ও ভগবানের কৃপা দুই একত্র হল। ভগবান্ বন্ধন স্বীকার করলেন। যশোদার জয় জয়কার হল। মা সহাস্যবদনে বালককে কোলে নিলেন এবং অঞ্চলের দ্বারা ধূলি-ধূসরিত অঙ্গখানি মুছিয়ে দিলেন এবং কোলে বসিয়ে স্তন পান করাতে লাগলেন।
 
এদিন থেকে গোপালের এক নাম হল দামোদর।
গোদা শব্দের অর্থ—বড় ভাল। গোদাদামোদর অর্থ বড় ভাল দামোদর। গোপীগণ এ নামে তাঁকে আহ্বান করতেন, ভাল দামোদর। জয় জয় গোদাদামোদর দেব কী জয়।
 
প্রবোধিনী বাসরেতে হরির সাক্ষাতে।
বন্ধনলীলাদি শুনে একান্ত ভাবেতে।।
সর্ব্বপাপ ক্ষয় হয় শুদ্ধ হয় মন।
অস্তে গোবিন্দের পদ পায় সেইজন।।
গুরু পুরীপাদপদ্ম হৃদি করি আশ।
করিল কীর্ত্তন ইহা হরিজন দাস।।
 
ইতি প্রবোধিনী একাদশী শ্রীহরিবাসরে দামোদরদেবের মাহাত্ম্য সমাপ্ত।
 
 
 
 

Date

Nov 03 - 04 2022
Expired!

Time

All Day
Category