Yogini Ekadashi

শ্রীনারায়ণের ষোড়শ উপচারে পূজা। পঞ্চামৃতে শ্রীহরির স্নান। নৈবেদ্য, পায়স, শালি তন্ডুলের অন্ন, বিবিধ ব্যঞ্জন, দধি, দুগ্ধ, বিবিধ মিষ্টান্ন, বিবিধ ফল, সরবৎ প্রভৃতি প্রদান। মধ্যাহ্নকালে ভোগারতি অন্তে দণ্ডবৎ প্রণাম ও স্তবস্তুতি।
 
অতঃপর শ্রীশ্রীনারায়ণ মহিমা কথারম্ভ –
বন্দনা
নমামি নারায়ণ পাদপঙ্কজং
করোমি নারায়ণ পূজনং সদা।
বদামি নারায়ণ নাম নির্মলং
স্মরামি নারায়ণ তত্ত্বমব্যয়ম্।।
শ্রীমদ্ভাগবত সুত শৌনক সংবাদ—
 
পূৰ্ব্বকালে কান্যকুব্জ নামক দেশে অজামিল নামক এক ব্রাহ্মণ বসবাস করতেন। সে বড় কুলীন বংশে জন্মগ্রহণ করে, সে পিতা মাতার সেবা পরায়ণ ছিল। অজামিল নারায়ণের নিত্য অর্চ্চন, নানাবিধ ব্রতাচরণ, শাস্ত্র পুরাণাদি অধ্যয়ন পরায়ণ ছিল। সে একদা পিতা মাতার ও নারায়ণের সেবার জন্য নদীতটে ফল-মূল, কুশ-কাশ ও পুষ্পাদি আহরণ করবার জন্য গমন করেছিল। নদীতট হ’তে এসব সংগ্রহ করে ফেরার পথে নগর প্রান্তে শূদ্রনিবাসে মৈরেয় নামক মদ্যপানে মত্ত এক শূদ্রকে দিবাভাগে বারবণিতা উপভোগ করতে দেখে অজামিল অকস্মাৎ কামে বিমোহিত হয়ে পড়ল। প্রথমতঃ সে তার যাবতীয় শাস্ত্র জ্ঞানাদি বলে সেই মহাপাপ কর্ম থেকে নিবৃত্তি ইচ্ছা করেছিল, কিন্তু পাপরূপী সেই প্রবল মত্ত হস্তীর হাত থেকে নিজেকে ত্রাণ করতে সমর্থ হল না। দৈব যেন একেবারেই বিমুখ। অজামিল সেই মহাপাপরূপী ঘোর তমসা দ্বারা একেবারেই আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল।
 
অনন্তর অজামিল পিতামাতা ও ধর্মপত্নীকে ত্যাগ করে সেই বেশ্যার সহিত অবস্থান করতে লাগল। পিতামাতা তার এরূপ মহাদুষ্কর্ম দর্শনে দুঃখ শোকে প্রাণত্যাগ করল। সাধ্বী পত্নী নিরুপায় দেখে পিতৃ গৃহাশ্রয় করল।
 
অজামিল বেশ্যা সঙ্গে নিবাস ও ডাকা চুরি প্রভৃতি পাপ কর্ম করে বেশ্যার প্রতিপালন করতে লাগল। ক্রমে তার দশটি সন্তান হল বেশ্যার গর্ভে। সর্ব্ব কনিষ্ঠ পুত্রের নাম রেখেছিল নারায়ণ। কনিষ্ঠ শিশু পুত্রকে অজামিল সর্বাধিক স্নেহ করত। তাই নারায়ণ! নারায়ণ! বলে শিশুর ভোজন, শয়ন, গমন, উপবেশন কালে আহবান করত। নারায়ণ ভোজন কর, নারায়ণ শয়ন কর, নারায়ণ এস ও নারায়ণ নিকটে বস। সর্বদা এরূপ বলত।
 
শ্রদ্ধা বা অশ্রদ্ধায় নারায়ণ নাম করলে তার ফল আছে। যেমন বিষ জ্ঞাত বা অজ্ঞাত ভাবে খেলে তার ক্রিয়া হবে। ক্রমে অজামিলের বার্দ্ধক্যকাল এল এবং ক্রমে মৃত্যুকালও উপস্থিত হল। সর্বদা রোগ শয্যায় শয়নে থাকে, ধারে প্রায় কেহই আসে না। মাঝে মাঝে কনিষ্ঠ নারায়ণ বাবা! বাবা! বলতে বলতে আসে। তাই অজামিল বার বার নারায়ণ! নারায়ণ! বলে আহ্বান করে।
 
ক্রমে মৃত্যুকাল উপস্থিত হল। অকস্মাৎ ভয়ঙ্কর আকৃতি বিশিষ্ট তিনটি যমদূত রজ্জু ও দণ্ড হস্তে ক্রোধে রক্তবর্ণ নেত্রে উপস্থিত হল। অনন্তর যমদূতত্রয় পাপী অজামিলের অন্তঃহৃদয় প্রাণটিকে বন্ধনপূর্বক রোষভরে আকর্ষণ করতে লাগলেন। অজামিল তৎকালে পরম ভীত হয়ে দূরে খেলা-প্রমত্ত বালককে প্লুতস্বরে নারায়ণ! নারায়ণ !! নারায়ণ!! বলে তিনবার ডাকল।
 
অজামিল যখন তিনবার প্লুতস্বরে নারায়ণ নাম উচ্চারণ করে, তৎক্ষণাৎ তথায়
শঙ্খ ও পদ্ম শোভিত, নবযৌবনসম্পন্ন বড়ই সুন্দর মুর্তিধারী। তাঁদের প্রভাব দেখে যমদূতত্রয় অজামিলকে ছেড়ে দিয়ে দূরে দাঁড়াল।
 
অতঃপর বিষ্ণুপুগণ যমদূতগণকে বললেন—তোমরা কে? কেন অজামিলকে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছ?
 
যমদূতগণ বলল আমরা ধর্মরাজের দূত।
 
বিষ্ণুদূতগণ বললেন—তোমরা ধর্ম্মের রাজ্যের দূত? ধর্মের লক্ষণ কি বল ?
 
যমদূতগণ বললে—বেদ ধর্মের লক্ষণ বলেছেন। বেদ স্বয়ং নারায়ণ। কোন পুরুষ কর্তৃক রচিত নহে—অপৌরুষেয়। বেদে কথিত ধর্মের লক্ষণ— সত্য, শৌচ, দয়া, ক্ষমা, আৰ্জ্জব, ব্রহ্মচর্য্য, শম, দম, তিতিক্ষা, দান, ধ্যান, তপ, স্বাধ্যায়, জপ, হোম ও সন্ন্যাস প্রভৃতি। ধর্মের সাক্ষী—সূর্য্য, অগ্নি, আকাশ, বায়ু, ধর্ম, চন্দ্র, মরুৎগণ, দিবারাত্র, দিক ও পরমাত্মা। অজামিল ব্রাহ্মণ পুত্র কিন্তু বেশ্যার সঙ্গে তার সর্ব ধর্ম নষ্ট হয়েছে। অতএব যমরাজ শাসনে সে নরকে দুঃখ ভোগ করবে।
 
বিষ্ণুদূতগণ যমদূতগণের মুখে ঐসকল বাক্য শ্রবণে বললেন—আরে যমদুতগণ। আমরা জানতে পেরেছি তোমরা নামে মাত্র ধর্মরাজের কিঙ্কর। তোমরা ধর্মের ‘ধ’ জান না। তোমরা ধর্মের বিপরীত লক্ষণ সকলকেই ধর্ম বলে জান। আমরা অদ্যাবধি এরূপ গর্হিত কর্ম কাহাকেও করতে দেখিনি। কানেও শুনিনি। ধর্মসভা নামে মাত্র, এ সভা অধর্মতে পরিপূর্ণ। যাকে দণ্ড দেওয়া কখনই উচিৎ হয় না এরূপ অদণ্ডজনের প্রতি দণ্ডের ব্যবস্থা হয়েছে।
 
অরে যমদূতগণ! শ্রবণ কর। এ অজামিল পূর্বে ভোজনাদি সময়ে বৎস নারায়ণ শীঘ্র এস, বৎস নারায়ণ এস্থানে বস, বৎস নারায়ণ এখন শয়ন কর ইত্যাদি উচ্চারণ করেছিল। তখনই নারায়ণ নামের অভ্যাসে তার অশেষ জন্মের পাপ বিনষ্ট হয়েছিল।
 
যতপ্রকার মহাপাপ, অতিপাপ আছে—শ্রীবিষ্ণুর নাম উচ্চারণমাত্রই সে সব শুদ্ধ হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি নাম উচ্চারণ করে তার সম্বন্ধে শ্রীবিষ্ণু মতি হয়ে থাকে—এ ব্যক্তি আমার নিজজন, ইহাকে সর্বতোভাবে রক্ষা করা আমাদের কর্ত্তব্য।
 
হে যমদূতগণ। আরও শ্রবণ কর—এ অজামিল মৃত্যুপাশে বন্দী হয়ে শ্রীবিষ্ণুর নাম সম্পূর্ণরূপে উচ্চারণ করেছে; তদ্দ্বারাই তার অশেষ জন্মের পাপ বিনষ্ট হয়েছে সুতরাং তোমরা ইহাকে নরকাদি পাপ মার্গে লইতে পার না। ভগবানের নাম— সঙ্কেত, পরিহাস, স্তোভ ও হেলা করে নিলেও বৈকুণ্ঠ গতি হয়ে থাকে।
যমদূতগণ বিষ্ণুদূতগণের মুখে এরূপ অভূতপূর্ব কথা সকল শ্রবণ করে অজামিলকে পরিত্যাগ পূর্বক চলে গেল। অজামিল মহাভাগবত বিষ্ণুদূতগণের মুখে শ্রীহরিকথা শ্রবণে যাবতীয় পাপ হতে বিশুদ্ধ হল। সে সেইক্ষণে সর্বসঙ্গ পরিত্যাগ পূর্বক নির্জ্জনে গঙ্গাতীরে গমন পূর্বক বিশ বৎসরকাল নিরন্তর নাম গান করতে করতে বৈকুণ্ঠগতি লাভ করল। শ্রীনারায়ণ নামের প্রভাবে অজামিল বৈকুণ্ঠ গতি পেল। যাঁরা শ্রদ্ধান্বিত চিত্তে একাদশী বাসরে শ্রীনারায়ণ নাম মাহাত্ম্য শ্রবণ ও কীর্ত্তন করবেন অন্তিমে তাঁরা বিষ্ণুপদ লাভ করবেন।
ইতি যোগিনী একাদশীবাসরে নারায়ণ নাম মাহাত্ম্য সমাপ্ত।
 
 
  • February 20-21, 2022 Puri, Odisha
  • 3rd of July in 2022 Balasore, Odisha
  • August 24-26, 2022 Kurukshetra, Haryana
  • October 7, 2022 Prayagraj, Uttar Pradesh
  • November 30 -1, 2022 Agartala, Tripura
  • December 3-4, 2022 Lalabazar, Assam
  • December 7, 2022 Guwahati, Assam
  • February 17-18, 2023 Baruipur, West Bengal
  • May 27-28, 2023 Patna, Bihar
  • June 26, 2023 Bhubaneswar, Odisha
  • November 26, 2023 Gaya, Bihar
  • February 8, 2024 Delhi
  • February 13-15, 2024 Balighai, Medinipur
  • March 19, 2024 Nabadwip, West Bengal
  • May 27 2024 Florida, USA
  • June 23-24, 2024 Baripada, Odisha
  • June 26-27, 2024 Paradeep, Odisha
  • June 29-30, 2024 Cuttack, Odisha
  • July 14, 2024 Chennai, Tamilnadu
  • August 31 2024 London
  • September 07 2024 London
  • September 08 2024 Berlin (Germany)
  • September 13 2024 Canada
  • September 14-15 2024 Rochester (USA)
  • September 21 2024 New Jersey (USA)
  • Upcoming Events