শ্রীমদ্ বৃন্দাবন দাস ঠাকুরের জননীর নাম- শ্রীনারায়ণী দেবী। শ্রীদেবী শ্রীবাস পণ্ডিতের ভ্রাতৃদুহিতা। শ্রীবাস পরবর্তী কালে কুমারহট্টে গিয়ে বাস করেছিলেন। শ্রীবাস, শ্রীপতি, শ্রীরাম ও শ্রীনিধি এঁরা চারি ভাই। শ্রীবাসের একটি পুত্র ছিল, অল্পবয়সে তার পরলোক প্রাপ্তি হয়। এঁরা পূর্ব্বে শ্রীহট্টে বাস করতেন। গঙ্গাতীর্থে ভক্তসঙ্গে বাস কামনা করে নবদ্বীপে এলেন।
শ্রীমহাপ্রভু যখন শ্রীবাস অঙ্গনে মহাভাব প্রকাশ করে ভক্তগণকে আত্ম-স্বরূপ দর্শন করিয়েছিলেন তখন নারায়ণী দেবী ছিলেন চার বছরের বালিকা।
“সর্বভূত-অন্তৰ্য্যামী শ্রীগৌরাঙ্গ-চান্দ।
আজ্ঞা কৈলা, ‘নারায়ণী’! ‘কৃষ্ণ’ বলি কান্দ।।
চারি বৎসরের সেই উন্মত্ত চরিত।
‘হা কৃষ্ণ’ বলিয়া কান্দে, নাহিক সম্বিত।।
অঙ্গ বহি’ পড়ে ধারা পৃথিবীর তলে।
পরিপূর্ণ হৈল স্থল নয়নের জলে।।”
(চৈঃ ভাঃ মঃ – ২। ৩২৩-৩২৫)
শ্রীনারায়ণী দেবীর পুত্র শ্রীবৃন্দাবন দাস ঠাকুর। তিনি শ্রীচৈতন্য ভাগবতে শ্রীনারায়ণী দেবী কিরূপ গৌরসুন্দরের স্নেহ পাত্রী ছিলেন তা লিখেছেন—
“ভোজনের অবশেষ যতেক আছিল।
নারায়ণী পুণ্যবতী তাহা সে পাইল।।
শ্রীবাসের ভ্রাতৃসুতা-বালিকা অজ্ঞান।
তাহারে ভোজন শেষ প্রভু করে দান।।”
(চৈঃ ভান ১০ (২৯০ ২৯১)
মহাপ্রভুর এই কৃপাপ্রসাদ প্রভাবে ব্যাসাবতার শ্রীবৃন্দাবন দাস জন্মগ্রহণ করেছেন।গৌর-নিত্যানন্দ হলেন তার প্রাণ।
শ্রীমদ্ বৃন্দাবন দাস ঠাকুর স্বীয় পিতৃ-পরিচয় কোন স্থানে দেন নাই,সর্ব্বত্রই জননীর পরিচয় দিয়েছেন।
শ্রীচৈতন্য ভাগবতের ভূমিকায় শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদ লিখেছেন— “তিনি শ্রীমালিনী দেবীর পিত্রালয়ে পতিগৃহ লাভ করিয়া শ্রীল বৃন্দাবন দাসের পৌগগু কাল পর্যন্ত পুত্র রত্নের লালন পালনাদি করিয়াছিলেন।”
অনেক তথ্য অনুসন্ধান করে জানা যায় মামগাছির নিকটবর্তী কোন গ্রামে শ্রীনারায়ণী দেবীর বিবাহ হয়। গর্ভ অবস্থায় তিনি বিধবা হন। দরিদ্র ব্রাহ্মণের ঘরে অভাব অনটনে পড়ায় শ্রীবাসুদেব দত্ত ঠাকুরের বাড়ীতে তিনি কামদারী স্বীকার করেন। এখানেই শ্রীবৃন্দাবন দাস ঠাকুরের জন্ম হয় এবং তথায় তিনি অধ্যয়নাদি করেন।
শ্রীগৌরসুন্দরের সন্ন্যাস গ্রহণের চার বৎসর পরে শ্রীবৃন্দাবন দাস ঠাকুরের জন্ম হয়। যখন মহাপ্রভু অপ্রকট লীলা করেন, তখন শ্রীবৃন্দাবন দাস ঠাকুরের বয়স বিশ বছরের অধিক নয়। শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর কাছ থেকে তিনি দীক্ষাদি গ্রহণ করেন। তিনি নিত্যানন্দের শেষ ভৃত্য। “সৰ্ব্বশেষ, ভৃত্য শ্রীবৃন্দাবন দাস”। শ্রীবৃন্দাবাদাস ঠাকুর শ্রীজাহ্নবা মাতার সঙ্গে খেতরি গ্রামে মহোৎসবে গিয়েছিলেন। শ্রীকৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী শ্রীবৃন্দাবন দাসের মহিমা বিশেষ ভাবে কীর্ত্তন করেছেন।
কৃষ্ণলীলা ভাগবতে কহে বেদব্যাস।
চৈতন্য-লীলার ব্যাস-বৃন্দাবন দাস।।
বৃন্দাবন দাস কৈল চৈতন্যমঙ্গল।
যাহার শ্রবণে নাশে সৰ্ব্ব অমঙ্গল।।
চৈতন্য নিতাইয়ের যাতে জানিয়ে মহিমা।
যাতে জানি কৃষ্ণভক্তি সিদ্ধান্তের সীমা।।
ভাগবতে যত ভক্তিসিদ্ধান্তের সার।
লিখিয়াছেন ইহা জানি’ করিয়া উদ্ধার।। ‘
চৈতন্যমঙ্গল’ শুনে যদি পাষণ্ডী, যান।
সেহ মহাবৈষ্ণব হয় ততক্ষণ।।
মনুষ্য রচিতে নারে ঐছে গ্ৰন্থ ধন্য।
বৃন্দাবনদাস মুখে বক্তা শ্রীচৈতন্য।।
বৃন্দাবনদাস পদে কোটি নমস্কার।
ঐছে গ্রন্থ করি তেঁহ তারিলা সংসার।।
(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত)