২৬ আগষ্ট ২০২৪, সোমবার
(রা ১১।১৭মিঃ গতে রা ১২।৫মিঃ মধ্যে)
[পরের দিন দি ৯।৩৩মিঃ মধ্যে জন্মাষ্টমী ব্রতের পারণ]
শ্রীযুধিষ্ঠির ( শ্রীকৃষ্ণকে ) বলিয়াছেন—হে অচ্যুত ! আমার নিকটে জন্মাষ্টমীব্রত বিশেষরূপে কীর্তন কর। কখন এই ব্রত উৎপন্ন হইয়াছে, ইহার সাধনে কি পুণ্য হয় এবং তদ্বিধিই বা কিরূপ?
শ্রীকৃষ্ণ বলিলেন—-
হে যুধিষ্ঠির ! মথুরাপুরে দুরাচার কংস হত হইলে এবং মল্লযুদ্ধ সমাপ্ত হইবার পর তত্রস্থ রঙ্গভূমি সর্বজনের মহোৎসবে পূর্ণ হইল; দেবকী দেবী তৎকালে কুকুর, অন্ধক প্রভৃতি স্নেহপরায়ণ আত্মীয়গণকর্তৃক ও তত্তৎ-স্ত্রীগণে পরিবেষ্টিত হইয়া আমাকে আলিঙ্গন করতঃ অঙ্কে লইয়া কাঁদিতে লাগিলেন। বসুদেবও তথায় মৎসন্নিধানে গিয়া সুতবাৎসল্যবশতঃ আমাকে আলিঙ্গনপূর্বক ‘পুত্র পুত্র’বলিতে বলিতে কাঁদিতে লাগিলেন।
তিনি গদ্গদম্বরে দীনভাবে বাষ্পপুরিতনেত্রে বলভদ্র ও আমাকে আলিঙ্গনপুর্বক বলিলেন, ‘তোমরা দুইজন যদু কুলে উৎপন্ন আমার পুত্র, আজ তোমাদিগের উভয়ের সহিত মিলনে মদীয় জন্ম সার্থক হইল, আমার জীবনও সুজীবন হইল।’
হে নৃপ! দম্পতী বসুদেব-দেবকীর এবং বিধ আনন্দ দর্শনে সকলই পুলকিত হইল। তত্রস্থ সকলে হর্ষসহকারে আমাকে প্রণতি জানাইয়া বলিলেন, ‘হে জনার্দন! আজ আমাদিগের আনন্দের উদয় হইল; আজ মল্লযুদ্ধে দুরাত্মা কংসেরও নিপাত ঘটিল। হে মধুসুদন! এইরূপ মহোৎসব দর্শন করিয়া সমাজের প্রতি তুষ্ট হউন। অন্যান্য ব্যক্তির প্রতিও আশু রূপা প্রদর্শন করুন। হে জনার্দন! দেবকী দেবী যে দিনে আপনাকে প্রসব করিয়াছেন, আমরা সেই দিনে আপনার উৎসব সম্পাদন করিব, আপনি আমাদিগকে অনুমতি দিউন। হে কেশব! আমরা সম্পূর্ণ ভক্তিভরে আপনার শরণ লইলাম, আমাদিগকে অনুগ্রহ করুন। এই বাক্য সভাতলে সর্বজনের মুখেই উচ্চারিত হইলে বসুদেব ও পরম বিস্ময়াপন্ন হইয়া বলদেবের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া আনন্দে রোমাঞ্চিত দেহে ( আমার প্রতি) বলিতে লাগিলেন, লোকসমূহের প্রার্থনা পূর্ণ হউক্, তুমি যথারীতি আজ্ঞা প্রদান কর’ ॥
হে পার্থ ! তৎপরে পিতার অনুমতানুসারে মথুরায় মানবগণের নিমিত্ত আমি জন্মাষ্টমীব্রত সম্যক্ প্রকাশ করিলাম। পৌরগণ ও অন্যান্য ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্রাদি অপরাপর ধর্মাবলম্বী লোকসমূহ অষ্টমবর্ষ বয়ঃক্রম হইতে আরম্ভ করিয়া অশীতিবর্ষ বয়ঃক্রম যাবৎ জন্মাষ্টমী নামক মদব্রত সাধন করুক্
হে মানবগণ ! সূর্য সিংহরাশিগত হইলে, আকাশে মেঘোদয়ে, ভাদ্রমাসীয় কৃষ্ণাষ্টমীর অর্ধনিশায় বৃষরাশিস্থ চন্দ্রে রোহিণীনক্ষত্রে বসুদেব হইতে দেবকীর পুত্ররূপে আমি স্বেচ্ছায় জন্মগ্রহণ করিয়াছিলাম। এইরূপে এই জন্মাষ্টমী ব্রত ভূবনে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছে। মথুরানগরীতে ভগবতী দেবকী বা দুর্গাদেবীরও ঐরূপ মহোৎসব অনুষ্ঠান কর। তৎপরে জনসমাজে প্রসিদ্ধ হইবে।
( হে পার্থ ! ) আমি যাহা বলিলাম তাহা শুনিয়া মানবগণ ও তদহরূপ আচরণ করিল। শাস্তি হউক, আনন্দোদয় হউক ও লোকসমূহ নিরাময় হউক ॥
ভগবান্ প্রীত হন, বর্ষে বর্ষে করণীয় বলিয়া শাস্ত্রবিধি রহিয়াছে এবং অকরণে অধোগতিরূপ অনিষ্ট হয়, এই ত্রিবিধ কারণেই জন্মাষ্টমীব্রতের নিত্যত্ব প্রসিদ্ধ।