Disappearance Day of Srila Rasikananda Deb Goswami
১৯৫০ খৃষ্টাব্দে ১৮ই কার্ত্তিক (শকাব্দ ১৫১২) শুরু-প্রতিপদ তিথিতে দ্বীপমালিকা মহোৎসব রাত্রে শ্রীরসিকানন্দদেব আবির্ভূত হন। তাঁর পিতা ছিলেন রয়ণী বা রোহিণীর জমিদার রাজা শ্রীঅচ্যুতদেব। তিনি বহুকাল অপুত্রক ছিলেন পরে শ্রীজগদীশের করুণায় এই পুত্র-রত্ন লাভ করেন।
শ্রীরসিকানন্দের অন্য নাম মুরারি। অনেকে তাঁকে শ্রীরসিক মুরারি বলতেন। রাজা অচ্যুতদেব অল্প বয়স্ক পুত্রের বিবাহ দিয়েছিলেন। শ্রীরসিকানন্দের পত্নীর নাম ছিল শ্যামদাসী। শ্রীরসিক যেমন রূপবান তেমনি বিদ্বান ছিলেন ও সৰ্ব্ববিষয়ে যোগ্যতা সম্পন্ন ছিলেন। তিনি শ্রীগুরু পদাশ্রয় করবার জন্য উদ্গ্রীব হলেন। এমন সময় একদিন আকাশ বাণীতে শুনলেন
হইল আকাশ বাণী—চিন্তা না করিবে।
এথায় শ্রীশ্যামানন্দ স্থানে শিষ্য হবে।।
(ভঃরঃ ১৫।৩৩)
আকাশ-বাণী শুনলেন—তুমি চিন্তা কর না। শ্রীশ্যামানন্দ নামে একজন মহাভাগবত পুরুষ শীঘ্র এখানে আগমন করবেন। তুমি তাঁর পদাশ্রয় কর। তখন থেকে শ্রীরসিক শ্রীশ্যামানন্দ প্রভুর পথ দেখতে লাগলেন।
এমন সময় ধারেন্দা বাহাদুরপুর থেকে ভক্তগণ-সঙ্গে শ্রীশ্যামানন্দ প্রভু রোহিণীতে শুভাগমন করলেন। শ্রীরসিকের স্বপ্ন সত্য হল, তাঁকে দেখেই বুঝতে পারলেন ইনি শ্রীশ্যামানন্দ। আচার্য্যের অপূর্ব্ব অঙ্গদ্যুতি, সর্ব্বদা গৌর কৃষ্ণ-রসে বিহ্বল, নয়ন যুগল হতে প্রেমাশ্রু ধারা ক্ষরিত হচ্ছে। হস্তে জপমালিকা শোভা পাচ্ছে। শ্রীরসিক সাষ্টাঙ্গে বন্দনা করে, সাদরে আহ্বান পুৰুৰ্ব্বক নিজ রাজপুরে নিয়ে এলেন। শ্রীপাদপদ্ম যুগল ধৌত পূর্ব্বক গন্ধ পুষ্প দিয়ে পূজা করলেন এবং রাজ্য কলত্রও পুত্রাদির সহিত আত্মসমর্পণ করলেন। শুভ দিনে শ্রীশ্যামানন্দ প্রভু রসিকানন্দকে ও তাঁর পত্নীকে রাধাকৃষ্ণ মন্ত্রে দীক্ষিত করলেন।
শ্রীরসিকানন্দ, মন্ত্র গ্রহণের পর হ’তে, নিয়ত শ্রীগুরু পাদপদ্মের সঙ্গে সঙ্গে পরিভ্রমণ করতেন। তিনি আচার্য্যের অন্তরঙ্গ শিষ্য হলেন। শ্রীগোপী বল্লভপুরের শ্রীরাধা-গোবিন্দদেবের সেবাভার শ্রীশ্যামানন্দ প্রভু শ্রীরসিকানন্দকে সমর্পণ করলেন।
শ্রীরসিকাননদ দেব গোপীবল্লভপুরে শ্রীরাধা-গোবিন্দদেবের সেবায় নিযুক্ত হলেন। তাঁর অপূর্ব্ব সেবায় ভক্তগণ মুগ্ধ হলেন। তিনি গোপীবল্লভপুরে ও অন্যান্য স্থানে বিশেষ ভাবে গৌর-নিত্যানন্দের বাণী প্রচার করতে লাগলেন। তাঁর প্রভাবে বহু নাস্তিক পাষণ্ডী ব্যক্তিও গৌর-নিত্যানন্দের ভক্ত হয়েছিল।
রসিকানন্দের মহাপ্রভাব প্রচার।
কৃপা করি কৈলা দস্যু পায়ন্তী উদ্ধার।।
ভক্তিরত্ন দিলা কৃপা করিয়া যবনে।
গ্রামে গ্রামে ভ্ৰমিলেন লৈয়া শিষ্যগণে।।
দুষ্টের প্রেরিত হস্তী তারে শিষ্য কৈল।
তারে কৃষ্ণ-বৈষ্ণব সেবায় নিয়োজিল।।
সে দুষ্ট যবন-রাজ প্রণত হইল।
না গণিলা ঘর—কত জীব উদ্ধারিল।।
শ্রীরসিকানন্দ সদা মত্ত সংকীৰ্ত্তনে।
কেবা না বিহ্বল হয় তাঁর গুণগানে।।
–(ভঃরঃ ১৫।৮২-৮৬)
শ্রীরসিকানন্দের কৃপায় বহু যবন, পাষণ্ডী ও নাস্তিক ব্যক্তি ভগবদ ভজন করে। ময়ূরভঞ্জের রাজা বৈদ্যনাথ ভঞ্জ, পটাশপুরের রাজা গজপতি, ময়নার রাজা চন্দ্রভানু প্রভৃতি সজ্জন রাজন্যবর্গ তাঁর শ্রীচরণ আশ্রয় করেন। পাপকর্ম পরায়ণ জমিদার ভীম, যবন সুবা আহম্মদবেগ ও পাষণ্ডী শ্রীকর প্রভৃতি ব্যক্তিগণ তাঁর শ্রীচরণ আশ্রয় নিয়েছিল। দুষ্ট বন্য হস্তী শ্রীরসিকানন্দ দেবের কুপায় শিষ্ট হয়ে গোপালদাস নাম প্রাপ্ত হয়েছিল, দুই বন্য ব্যাঘ্র শ্রীরসিকানন্দের কৃপায় হিংস্র ভাব ত্যাগ করেছিল।
শ্রীরসিকানন্দ দেব শ্রীগুরু শ্যামানন্দের আজ্ঞা শিরে ধারণ করে প্রায় ছেচল্লিশ বৎসর কাল ধরাতলে শ্রীগৌরবাণী প্রচার করেছিলেন। অতঃপর তিনি রেমুনায় শ্রীগোপীনাথ দেবের শ্রীচরণ তলে নিত্যলীলায় প্রবেশ করেন।
শকাব্দ ১৫৭৪ ফাল্গুন শুক্ল প্রতিপদ তিথিতে ১৬৫২ খৃষ্টাব্দে শ্রীরসিকানন্দ দেব সরতা গ্রাম হতে সকলের অলক্ষ্যে পদব্রজে রেমুনা গ্রামে আগমন করেন এবং তত্রস্থ ভক্তগণের সঙ্গে কিছুক্ষণ কৃষ্ণকথা আলাপ করে সকলকে কৃষ্ণ ভজন করতে আদেশ দিয়ে শ্রীগোপীনাথের মন্দিরে প্রবেশ করেন। শ্রীগোপীনাথের শ্রীচরণ যুগল স্পর্শ করে তিনি তাঁর অভয় শ্রীচরণে বিলীন হন।
শ্রীরসিকানন্দ দেবের তিন পুত্র – (১) শ্রীধারানন্দ, (২) শ্রীকৃষ্ণ গোবিন্দ ও (৩) শ্রীরাধাকৃষ্ণ। শ্রীগোপীবল্লভপুরের বর্তমান মহান্ত বংশধরগণ শ্রীরসিকানন্দ দেবের এই পুত্রদেবের বংশধর।
শ্রীরসিকানন্দ দেবের রচিত গ্রন্থ—শ্রীশ্যামানন্দ শতক, শ্রীমদ্ভাগবতাষ্টক ও বিবিধ স্তবাদি গীতাদি।