Disappearance Day of Srila Biswanath Chakraborty

শ্রীল চক্রবর্তী ঠাকুর সম্ভবতঃ ১৫৮৬ শকাব্দে নদীয়া জেলার অন্তর্গত প্রসিদ্ধ দেবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ইনি রাঢ়ী শ্রেণীর ব্রাহ্মণ ছিলেন। শ্রীরামভদ্র চক্রবর্তী ও শ্রীরঘুনাথ চক্রবর্তী নামে এঁর আর দুটী ভাই ছিলেন।
 
শ্রীচক্রবর্ত্তী ঠাকুর মুর্শিদাবাদ জেলার সৈয়দাবাদ নিবাসী শ্রীযুক্ত কৃষ্ণচরণ চক্রবর্তীর থেকে মন্ত্র গ্রহণ করেন। ইনি বহু দিন গুরুগৃহে অবস্থান করেন এবং তথায় থেকে বহু গ্রন্থাদি রচনা করেন।
 
শ্রীচক্রবর্তী ঠাকুর বহু দিন সৈয়দাবাদে বাস করেছিলেন বলে নিজকে সৈয়দাবাদবাসী বলে বলতেন। অলঙ্কার কৌস্তভের টীকার অন্তিম শ্লোকে লিখেছেন—
 
সৈয়দাবাদনিবাসী শ্রীবিশ্বনাথ শৰ্মণা।
চক্রবর্তীতি নাম্বেয়ং কৃতা টীকা সুবোধিনী।।
 
শ্রীমদ্ বিশ্বনাথ চক্রবর্ত্তী ঠাকুর নদীয়াতে থাকতেই ব্যাকরণ কাব্য অলঙ্কার শাস্ত্রাদি অধ্যয়ন করেছিলেন। প্রবাদ আছে যে পাঠদ্দশাতেই ইনি এক জন দিগ্বিজয়ী পণ্ডিতকে তর্কে পরাস্ত করেন। বাল্যকাল থেকে তিনি সংসারের প্রতি উদাসীন ছিলেন। সংসারে আবদ্ধ করে রাখবার জন্য পিতা তাঁকে অল্পবয়সে বিবাহ দিয়েছিলেন। কিছুকাল চক্রবর্ত্তী ঠাকুর গৃহে ছিলেন। অনন্তর গৃহ ত্যাগ করে তিনি বৃন্দাবনবাসী হন। স্বজনগণ গৃহে ফিরিয়ে আনবার জন্য অনেক চেষ্টা করেন।
 
শ্রীচক্রবর্তী ঠাকুর বৃন্দাবন ধামে গিয়ে রাধাকুণ্ড তীরে শ্রীমদ্ কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীর ভজন কুটীরে তদীয় শিষ্য শ্রীমুকুন্দ দাসের সঙ্গে বসবাস করতেন এবং গোস্বামী গ্রন্থ-পত্র অধ্যয়ন করেন। তিনি বহু গোস্বামী গ্রন্থের টীকা এ স্থানে বসেই লেখেন।
 
শ্রীল চক্রবর্ত্তী ঠাকুর শ্রীগোকুলানন্দ বিগ্রহের সেবা করতেন। তিনি মহান্ত সমাজে শ্রীহরিবল্লভ দাস নামে খ্যাত ছিলেন। তাঁর চক্রবর্ত্তী উপাধিটি ভক্তগণ দিয়েছিলেন। স্বপ্ন বিলাসামৃত গ্রন্থের ভূমিকায় আছে।
 
বিশ্বস্য নাথরূপোসৌ ভক্তিবঘ্ন প্রদর্শনাৎ।
ভক্ত চক্রে বৰ্ত্তীতত্ত্বাচ্চক্ৰবৰ্ত্তামায়া ভবৎ।।
 
রচিত গ্রন্থাবলী
 
শ্রীমদ্ভাগবতের সারার্থদর্শিনী টীকা, শ্রীমদ্ভাগবত গীতার সারর্থবর্ষিণী টীকা, অলঙ্কার কৌস্তুভের সুবোধিনী টীকা, আনন্দ বৃন্দাবনের সুখবর্ত্তিনী টীকা, বিদগ্ধমাধব নাটকের টীকা, শ্রীকৃষ্ণভাবনামৃত মহাকাব্য, স্বপ্নবিলাসামৃত কাব্য, মাধুৰ্য্য কাদম্বিনী, ঐশ্বর্য্য কাদম্বিনী, স্তবামৃতলহরী, চমৎকার চন্দ্রিকা, গৌরাঙ্গ লীলামৃত উজ্জ্বলনীলমণি টীকা, গোপালতাপনীর টীকা, শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতের টীকা অসম্পূর্ণ ও ক্ষণদাগীত চিন্তামণি বাংলাভাষায় ইত্যাদি বহু গ্রন্থ শ্রীল চক্রবর্ত্তী ঠাকুর মহাশয় রচনা করেন।
 
শ্রীবিশ্বনাথ ঠাকুরের গুরু-পরম্পরা
 
শ্রীগৌরসুন্দর থেকে শ্রীলোকনাথ গোস্বামী, তাঁর থেকে শ্রীনরোত্তম ঠাকুর, শ্রীনরোত্তম হতে শ্রীগঙ্গানারায়ণ চক্রবর্ত্তী, তাঁর থেকে শ্রীকৃষ্ণচরণ চক্রবর্তী, এঁর থেকে শ্রীরাধারমণ চক্রবর্ত্তী। এই রাধারমণ চক্রবর্ত্তীর শিষ্য শ্রীবিশ্বনাথ চক্রবর্তী। শ্রীকৃষ্ণচরণ চক্রবর্ত্তী ও শ্রীরাধারমণ চক্রবর্ত্তী সৈয়াদাবাদে বাস করতেন। এখানে শ্রীবিশ্বনাথ চক্রবর্তী অনেকদিন থেকে ভক্তি শাস্ত্র অধ্যায়ন করেন।
 
মাঘ বাসন্তী পঞ্চমী তিথিতে শ্রীবিশ্বনাথ চক্রবর্ত্তীপাদ অপ্রকট হন।
 
শ্রীবিশ্বনাথ চক্রবর্ত্তীপাদের
সিদ্ধান্ত ও শিক্ষা
 
ভগবৎস্বরূপভূতা মহাশক্তি ভক্তিই—মুখ্য অভিধেয় (মাধুৰ্য্য কাদম্বিনী ১/৪); ভক্তি (১) প্রধানী ভূতা, (২) গুণীভূতা, ও (৩) কেবলা ভেদে ত্রিবিধা। শ্রীগীতোক্ত (৭।১৬) আর্ত্ত, জিজ্ঞাসু, অর্থার্থী ও জ্ঞানী এই চারি ব্যক্তি প্রধানীভূতা ভক্তির অধিকারী। ভক্ত ও ভগবানের কারুণ্যাধিকাবশতঃ কখনও প্রধানীভূতা ভক্তিযাজীর শ্রী শুকাদির ন্যায় প্রেমোৎকর্ষও লাভ হইতে পারে।
 
গুণীভূতা ভক্তি—কর্মী, জ্ঞানী ও যোগীতে কর্ম, জ্ঞান ও যোগফল সিদ্ধির জন্য দৃষ্ট হয়। তাহা প্রকৃত ভক্তি নহে। ভক্তি সহায়তার সকাম কর্ম— স্বৰ্গাদি ফল, নিষ্কাম কর্ম—জ্ঞান, এবং জ্ঞান ও যোগ–নির্ব্বাণ মোক্ষফল প্রাপ্তি হয় (সারার্থবর্ষিণী ৭।১৬)
 
কেবল কর্ম জ্ঞানাদি মিশ্র-ভাব শূন্য। অনন্যচেতা, ইহাকে অকিঞ্চনা ভক্তিও বলে। এ ভক্তির বহু ভেদ আছে। দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য ও মধুর ইত্যাদি। কেবলা ভক্তির ফল পার্ষদত্ব প্রাপ্তি। ভগবান্ এই কেবলা ভক্তিমান্ ভক্তকে নিজ আত্মা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ রূপে দেখে। “নাহমান্তানমাশাসে মদ্ভক্তৈঃ সাধুভিবিনা।” (ভাগবত) আমি স্বীয় আত্মাকে তত প্রীতি করি না। অথবা সাধুকে যত ভালবাসি তত প্রীতি নিজ আত্মাকে করি না।
 
এই কেবলা ভক্তিযোগযাজীর পুণ্যাদি কর্ম আশ্রয় কদাপি করা উচিত নহে—
 
সন্ন্যাসার্দেন সাংখ্যেন দান-ব্রত তপো ধ্বরৈঃ।
ব্যাখ্যা সাধ্যায় সন্ন্যাসৈঃ প্রাগুয়াদযত্নবানপি।।
 
ইতি ভগবদুক্তেঃ। (গীতা ৭।২৯) ভগবান্ বলছেন—সন্ন্যাস, সাংখ্যজ্ঞান, দান, ব্রত, তপ, যজ্ঞ, ব্যাখ্যা, স্বাধ্যায় প্রভৃতি দ্বারা বহু যত্ন করলেও আমার এই কেবলা ভক্তি লাভ করতে পারে না, ইহা একমাত্র যাদৃচ্ছিক মদ্‌ভক্ত সঙ্গে লাভ হয়।
 
ভক্তি দুই প্রকার—সাধন ভক্তি ও প্রেম ভক্তি (১) সাধন ভক্তি— শ্রবণ-কীৰ্ত্তনাদিরূপা, (ভাঃ ১।২/৬ সারার্থদর্শিনী টীকা) (২) প্রেম ভক্তি— শ্রবণ-কীৰ্ত্তনাদি ভক্তির পরিপাক অবস্থা যেমন একই আমের কাঁচা অবস্থা ও পাকা অবস্থা। (ভাঃ ১/২/৬)
 
শ্রীভগবানের কৃপা ভক্ত-কৃপানুগামিনী;ভক্তের কৃপা হলেই ভগবানের কৃপা পাওয়া যাবে (ভাঃ ১।২।৬)।
 
ভক্তিযোগী সাধকের ভক্তিযোগ শ্রবণ কীৰ্ত্তনই একমাত্র সাধন। “জ্ঞান বৈরাগ্যার্থং পৃথক্ যত্নো ভক্তের্ন কৰ্ত্তব্যঃ।”(ভাঃ ১/২/৭)
ব্রহ্ম—নিরাকার, জ্ঞাতৃজ্ঞেয়াদি বিভাগশূন্য চিৎসামান্য চিদবিশেষ।
 
পরমাত্মা—সাকার মায়া শক্তি দ্বারা বিশ্বাদি নির্মাণকারক যোগীগণের হৃদয়-আকাশে ধ্যেয় প্রাদেশমাত্র মূৰ্ত্তি বিশিষ্ট।
 
ভগবান্—সাকার ষড়বিধ ঐশ্বর্যপূর্ণ শ্যামসুন্দর মদনমোহন বৃন্দাবন বিহারী।(ভাঃ ১।২।১১)
ভক্তের হরিতোষণ হতেই সাহজিক ভাবে অন্যান্য ধর্মাদি সিদ্ধি হয়। (ভাঃ ১।২।১৩)
ভগবদ্ কথারুচি হবার কারণ মহৎসেবা ও পুণ্যতীর্থ সদ্ গুরুর চরণ সেবা। (ভাঃ ১।২।১৬)
 
অথ ভক্তির ক্রম—সাধুকৃপা, মহৎসেবা, শ্রদ্ধা, গুরুপদাশ্রয়া, জঙ্গলে স্পৃহা, অনর্থনাশ, নিষ্ঠা, রুচি, আসক্তি, রতি ও প্রেম। (ভঃ ১।২(২১)
 
শ্রীভগবানের দুইপ্রকার অবতার (১) চিৎ-শক্তি প্রধান ও (২) মায়া শক্তি প্রধান। চিৎশক্তি প্রধান— মৎস্য, কুর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, রামচন্দ্র ও বলরাম প্রভৃতি।
 
মায়াশক্তি প্রধান—বিষ্ণু, ব্রহ্মা ও রুদ্র। বিষ্ণু সাত্ত্বিক গুণের হলেও নিৰ্গুণ স্বরূপ। মায়া গুণ তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। (ভাঃ ১।২ /২৩)
 
ব্রহ্মা ও শিবের মধ্যে ব্রহ্মা (সুকৃতিশালী) জীব বিশেষ। শিবকে কেহ কেহ ঈশ্বর স্বরূপ বলেন “ব্রহ্মাশিবয়োর্মধ্যে শিবস্যেশ্বরত্বমিতি কচিদাহুঃ।” (ভাঃ ১।২।২৩)
 
সম্বন্ধ ত্রিবিধ – (১) নিয়ামক সম্বন্ধ, (২) সংযোগ সম্বন্ধ ও (৩) সামীপ্য সম্বন্ধ। ব্রহ্মা শিবাদিতে বিষ্ণুর নিয়ামকত্ব সম্বন্ধ। তজ্জন্য তাঁদের ঈশ্বর বলা হয়। (ভাঃ ১।২।২৩)
 
ভগবদ্ ভক্তের নিত্য নৈমিত্তিক কাম্য কর্মাদির ত্যাগে কোন দোষ হয় না। “সর্বং মদ্ভক্তিযোগেন মদ্ভক্তো লভতেমঞ্জসেতি।” (ভাঃ ১২।২০(৩৩) ভগবান বলছেন— আমার ভক্ত আমার ভক্তিযোগ প্রভাবে সব কিছুই অনায়াসে পেয়ে থাকে।
 
ভক্তের কেবল শ্রীঅচ্যুতের পুজাদ্বারা দেব পিতৃ পূজাদিও সিদ্ধি হয়ে থাকে, পৃথক্ ভাবে দেব-তর্পণ বা পিতৃতর্পণ করতে হয় না। “যথা তরোর্মূল নিষেচনেন” ইত্যাদি। (ভাঃ ৪/৩১/১৪)
 
 
 
 
 
 
  • February 20-21, 2022 Puri, Odisha
  • 3rd of July in 2022 Balasore, Odisha
  • August 24-26, 2022 Kurukshetra, Haryana
  • October 7, 2022 Prayagraj, Uttar Pradesh
  • November 30 -1, 2022 Agartala, Tripura
  • December 3-4, 2022 Lalabazar, Assam
  • December 7, 2022 Guwahati, Assam
  • February 17-18, 2023 Baruipur, West Bengal
  • May 27-28, 2023 Patna, Bihar
  • June 26, 2023 Bhubaneswar, Odisha
  • November 26, 2023 Gaya, Bihar
  • February 8, 2024 Delhi
  • February 13-15, 2024 Balighai, Medinipur
  • March 19, 2024 Nabadwip, West Bengal
  • May 27 2024 Florida, USA
  • June 23-24, 2024 Baripada, Odisha
  • June 26-27, 2024 Paradeep, Odisha
  • June 29-30, 2024 Cuttack, Odisha
  • July 14, 2024 Chennai, Tamilnadu
  • August 31 2024 London
  • September 07 2024 London
  • September 08 2024 Berlin (Germany)
  • September 13 2024 Canada
  • September 14-15 2024 Rochester (USA)
  • September 21 2024 New Jersey (USA)
  • Upcoming Events