Disappearance Day of Sri Srimad Bhaktisrirup Bhagwat Goswami maharaj

 
 
 
শ্রীগুরুদেব শ্রীকৃষ্ণের কৃপামূর্তি, করুণাশক্তি। নামরূপে শ্রীহরি যেমন কৃপা করছেন, তেমনি সাধু শাস্ত্র গুরুরূপে কৃপা করছেন। ভগবান নিত্যকাল সাধু গুরু ও শাস্ত্ররূপে কৃপা করছেন।
 
শ্রীহরি বলেছেন—– বৈষ্ণব আমার প্রাণ, বৈষ্ণব হৃদয়ে আমি সতত বিশ্রাম করি। ভগবান ও ভক্ত অভেদাত্ম। ভগবানের আবির্ভাব তিথি যেমন পবিত্র তেমন বৈষ্ণব গুরুর আবির্ভাব তিথি পরম পবিত্র।
 
ভগবান শুকররূপে আবির্ভূত হলেও তাকে শূকর বলা অপরাধ, শ্রীহনুমান বানরকুলে আবির্ভূত বলে বানর মনে করাও অপরাধ। তেমনি সাধু গুরু যে কোন কুলে আসুন না কেন তাঁকে সেই কুল জাতি বুদ্ধি করা অপরাধ।
 
পূর্ব্ববঙ্গের খুলনা জেলার ডুমারিয়া থানান্তর্গত রুদাঘরা নামক গ্রামে এক কুলীন কায়স্থ জমিদার বংশে আচার্য্যপাদের জন্ম হয়। পিতার নাম শ্রীযুক্ত সীতানাথ হালদার, মাতার নাম শ্রীযুক্তা কুমুদিনী। জন্ম বাংলা ১৩০৩ সালে জ্যৈষ্ঠ মাসে শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের স্নান যাত্রা দিবসে। পিতামাতা পরম ধর্মনিষ্ঠ ছিলেন, তাই ভগবান্ তাঁদের একটি অপূর্ব্ব পুত্র ধন অর্পণ করেছেন।
 
আচার্য্যপাদ শৈশব কাল হতেই পরম সাত্ত্বিক প্রকৃতির ছিলেন। মিথ্যা বলা, অন্যের সঙ্গে মিথ্যা কলহ করা, অকারণ গল্পগুজব করা, কোন প্রকার নেশাদি করা, মৎস্য মাংসাদি ভোজন করা একেবারেই পছন্দ করতেন না। তিনি চিরকাল সাত্ত্বিক ভোজী ছিলেন।
 
তিনি ছিলেন ধীর, গম্ভীর, বিনয়, নম্র, অমানী, পরোপকারী ও মৎসর আদি দোষ শূন্য।
 
তিনি শৈশবে ডুমারিয়া থানান্তর্গত পাঁজিয়া গ্রামের হাইস্কুলে ম্যাট্রিক পাশ করেন, অনন্তর দৌলতপুর কলেজ থেকে বি. এ. পাশ করেন। কলেজে পড়ার সময় তিনি সহস্তে রন্ধন করে ভোজন করতেন। গীতাশাস্ত্র ছিল তাঁর চির সঙ্গী।
 
রুদাঘরা গ্রামে জগদ্গুরু ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদ ২৭শে মার্চ (ইং ১৯৩৫ সনে) শুভ বিজয় করেন, এ বিষয়ে গৌড়ীয় ১৩ খণ্ডে ৩৫ সংখ্যায় লিখিত আছে “শ্রীল প্রভুপাদ রুদাঘরা নিবাসী শ্রীযুক্ত রাসবিহারী দাসাধিকারী মহাশয়ের ভবনে শুভবিজয় করেন। রুদাঘরা নিবাসী ভক্তবৃন্দের পক্ষ হতে স্থানীয় ইউ পি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহাশয় আচার্য্যের শুভ বিজয় উপলক্ষ্যে একটি অভিনন্দন পত্র পাঠ করিবার পর প্রভুপাদের অনুজ্ঞায় ত্রিদণ্ডিস্বামী শ্রীমদ্ভক্তি বিলাস গভস্তনেমি, শ্রীমদ্ভক্তি ভূদেব শ্রৌতী ও শ্রীমদ্ভক্তি ভারতী মহারাজ যথাক্রমে “বৈষ্ণবের অপ্রাকৃতত্ব ও সর্বপূজ্যত্ব বিষয়ে বক্তৃতা প্রদান করেন। শ্রীল প্রভুপাদ শ্রীপাদ রাসবিহারী দাসাধিকারীর গৃহে এক রাত্র বাসপূৰ্ব্বক গৌড়ীয় মঠাভিমুখে যাত্রা করেন। তার শ্রীমুখ বিগলিত হরিকথামৃত পান করে গ্রামবাসীগণ পরম ধন্যাতি ধন্য হয়েছিলেন।
 
যখন প্রভুপাদ রুদাঘরা গ্রামে বিজয় করেন তখন আচার্য্যপাদ কোন কার্য্যন্তরে অন্যত্র গিয়েছিলেন। তথাপি শ্রীল প্রভুপাদ অলক্ষ্যে স্বীয় পদধূলি তাঁর শিরে বর্ষণ করেছিলেন। তিনি যখন কয়েক দিবস পরে গ্রামে ফিরে এলেন, তখন তার এক ভাই বলেছিলেন, তুমি ছিলে না সাক্ষাৎ শ্রীশুকদেব গোস্বামী এসেছিলেন। এখানে তিনি অমৃত বর্ষণ করেছিলেন। এ দিন হতে আচার্য্যপাদ তাঁর দর্শন হল না বলে খুব বিষাদিত হয়ে খেদ করে বলেছিলেন এ অধনের ভাগ্যে দর্শন হল না। দর্শন উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করতে লাগলেন।
 
আচার্য্যপাদ কাৰ্যোপলক্ষ্যে গয়াধামে কোন বিশেষ আত্মীয় গৃহে এলেন এবং কয়েকদিন অবস্থান করে ব্যক্তিগত কিছু ছাত্রগণকে পড়াতে লাগলেন। তাঁর হৃদয়ে কৃষ্ণ ভজনের প্রবল ইচ্ছা জাগছে। গুরু পদাশ্রয় ছাড়া ভজন হয় না, সেই গুরু পাদপদ্ম কবে কৃপা করবেন সে দিনের প্রতীক্ষায় আছেন।
 
বাংলা ১৩৪২ সালে ৬ই বৈশাখ ইং ১৯শে এপ্রিল ১৯৩৫ খৃষ্টাব্দে গয়াধামে ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীশ্রীভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদ শুভ বিজয় করেন। তাঁর অনুসন্ধানে ত্রিদণ্ডিস্বামী শ্রীমদ্ভক্তিবিলাস গভক্তনেমি মহারাজ, মহামহোপদেশক আচার্য্যত্রিক শ্রীপাদ কুঞ্জবিহারী বিদ্যাভূষণ, মহোপদেশক শ্রীপ্রণবানন্দ রত্ন বিদ্যালঙ্কার, শ্রীপ্যারীমোহন ব্রহ্মচারী ভক্তিশাস্ত্রী কারু কোবিদ, শ্রীসজ্জনানন্দ ব্রহ্মচারী, ও গৌড়ীয় পত্রিকার সম্পাদক শ্রীমৎ সুন্দরানন্দ বিদ্যাবিনোদ বি, এ, প্রভৃতি ভক্তগণ ছিলেন। গয়া ষ্টেশনে গাড়ী পৌঁছলে কাশী সনাতন গৌড়ীয় মঠের প্রচারক উপদেশক শ্রীসর্ব্বেশ্বরানন্দ ব্রহ্মচারী রাগরত্ন ভক্তিশাস্ত্রী মহাশয় গয়া গৌড়ীয় মঠের সেবকগণসহ স্টেশনে প্রভুপাদকে বিপুল অভিনন্দন জানান।
 
৭ই বৈশাখ “শ্যামবাবুর” কুটীরে এক অধিবেশন হয়। সভাপতি হন রায় বাহাদুর শ্রীযুক্ত পূর্ণচন্দ্র ঘোষ মহোদয়। সভায় সমুপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ স্থানীয় টাউন স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রীযুক্ত তাশ্রুরঞ্জন মিত্র, অমৃত বাজার পত্রিকার রিপোর্টার শ্রীযুক্ত যতীন্দ্র লাল দাস, গয়া জেলাস্কুলের অ্যাসিস্টেন্ট হেড মাষ্টার শ্রীযুক্ত সুরেন্দ্র মোহন অ্যাজভোকেট শ্রীযুক্ত হরিদাস বাবু, শ্রীযুক্ত চারুচন্দ্র মজুমদার ও শ্রীযুক্ত রূপলাল হালদার বি, এ, প্রভৃতি ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।
 
এই রূপলাল হালদার হলেন আমাদের বর্তমান গৌড়ীয় মিশনের আচার্য্যপাদ। তিনি শ্রীল প্রভুপাদের আজানুলম্বিত ভুজ সমন্বিত পরমোজ্জ্বল দীর্ঘ তনু দর্শন করে স্তম্ভিত হলেন এবং তাঁর শ্রীমুখে কয়েক ঘন্টাকাল শ্রীচরণের বারি ধারার ন্যায় অবিরাম কৃষ্ণ কথা কীৰ্ত্তন শ্রবণে পরম তৃপ্ত হলেন। তিনি জীবনে যা আকাঙ্খা করেছিলেন তা যেন পেয়ে গেলেন। সভা শেষ হলে প্রভুপাদ নিজ বাসস্থানে ফিরে এলেন। প্রভুপাদের পশ্চাৎ পশ্চাৎ আচার্য্যপাদ ও আর কয়েকজন সজ্জন সেখানে এলেন, প্রভুপাদ উপস্থিত ব্যক্তিদিগের কাছে হরিকথা বলতে লাগলেন। প্রভুপাদ কথা বলতে বলতে মাঝে মাঝে সকরুণ দৃষ্টিতে আচার্য্যপাদের দিকে দৃষ্টিপাত করতে ছিলেন। কথার শেষে আচার্যপাদের একটু পরিচয় নিলেন এবং বললেন কাল আসবেন।
 
অতঃপর কয়েকদিন ধরে আচার্য্যপাদ শ্রীল প্রভুপাদের শ্রীমুখে হরিকথা শ্রবণ করলেন। প্রভুপাদের সঙ্গে সমস্ত ভক্তগণ এসেছিলেন তাঁরাও আচার্য্যপাদকে বহু হরিকথা বললেন।
 
প্রভুপাদ কয়েক দিন গয়া ধামে প্রচার করবার পর দিল্লী অভিমুখে চললেন।
 
আচার্য্যপাদ গৌড়ীয় মঠে ও গৌড়ীয় সিদ্ধান্তের প্রতি খুব নিষ্ঠা যুক্ত হলেন। (গৌড়ীয় ১৩ খণ্ড ৩৭ সং )
 
শ্রীল প্রভুপাদ পুনঃ ১১ই নভেম্বর ইং ১৯৩৫ সনে গয়া ধামে শুভ বিজয় করলেন। এই সময় ১৩ই নভেম্বর শ্রীবিগ্রহ প্রকট মহামহোৎসব করলেন। এ দিবস শ্রীবিগ্রহগণের সম্মুখে শ্রীআচার্য্যপাদের হরিনাম ও দীক্ষা হল। দীক্ষার নাম হল, শ্রীরূপবিলাস দাস ব্রহ্মচারী। পূর্ব্বে গয়ার মঠ চার্চিল রোডে ছিল ! ১৯৩৫ খৃঃ রমনা রোডে মঠ স্থানান্তরিত হল। প্রভুপাদ স্বয়ং গয়া গৌড়ীয় মঠের সেবাভার আচার্য্যপাদের হাতে দিয়ে যান।
 
ইং ১৯৩৫ ডিসেম্বর প্রয়াগ ধামে অর্ধকুম্ভযোগে শ্রীল প্রভুপাদ শুভবিজয় করেন। রামবাগ ষ্টেশনের নিকটবর্ত্তী বাহিরানা নামক স্থানে অবস্থান করতেন। ইং ১৯৩৬ সনে ৭ই জানুয়ারীতে শ্রীরূপ শিক্ষা প্রদর্শনীর দ্বার উন্মুক্ত করেন। শ্রীল প্রভুপাদ। প্রভুপাদ ৯ই জানুয়ারী পর্য্যন্ত প্রয়াগে থাকেন। এ সময়ও শ্রীআচার্য্যপাদকে, প্রভুপাদ প্রয়াগ ধামে ডাকেন এবং বেশ কয়েকদিন হরিকথা শুনান।
 
ইং ১৯৩৬ সনে ১৩ই আগষ্ট শ্রীল প্রভুপাদ যখন পুরুষোত্তম ব্রত পালনের জন্য মথুরা ধামে শুভবিজয় করেন, ড্যাম্পিয়ার পার্ক “শিবালয়” নামক ভবনে, তখন সেখানে প্রভুপাদ, আচার্য্যপাদকে ডেকে নিয়েছিলেন। ১৩ই আগষ্ট থেকে ৬ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রভুপাদের শ্রীমুখে তিনি হরিকথা শ্রবণ করেন।
 
পুনঃ শ্রীল প্রভুপাদ ২৫শে অক্টোবর হ’তে ৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরীধামে অবস্থান করেছিলেন। এ সময়ও প্রভুপাদ আচার্য্যপাদকে ডেকে নিয়ে পুরীতে বসে অনেক কথা শুনিয়ে ছিলেন।
 
এ সময় হতে আচার্যপাদ খুব নিয়ম নিষ্ঠার সহিত শ্রীনাম ভজন ও শ্রবণ কীর্ত্তনাদি করতে থাকেন।
 
৭ই ডিসেম্বর ইং ১৯৩৬ সনে প্রভুপাদ শ্রীজগন্নাথদেবের থেকে বিদায় নিয়ে কলিকাতা শ্রীগৌড়ীয় মঠে শুভাগমন করেন।
 
ইংরাজী ১৯৩৬ সনে ৩১শে ডিসেম্বর কলিকাতা শ্রীগৌড়ীয় মঠে ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীশ্রীল প্রভুপাদ নিত্যলীলায় প্রবেশ করলেন। অনন্তর ইং ১৯৩৭ সনে ২৬শে মার্চ্চ শ্রীশ্রীগৌরজয়ন্তী বাসরে ত্রিদণ্ডী সন্ন্যাসীগণের এবং ব্রহ্মচারী গৃহস্থগণের সমর্থনে শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিপ্রসাদ পুরী গোস্বামী গৌড়ীয় মিশনের আচার্য্যপদে নির্ব্বাচিত হলেন। তখন হতে শ্রীপুরী গোস্বামী আচার্য্যের কার্য্য করতে লাগলেন।
 
শ্রীআচার্য্যপাদ শ্রীল পুরী গোস্বামীর একান্ত অন্তরঙ্গজন ছিলেন। তাঁকে সৰ্ব্বক্ষণ কাছে রেখে ষট্ সন্দর্ভের নিগূঢ় সিদ্ধান্ত সকল এবং ভাগবত সিদ্ধান্ত সকল শুনাতেন। পরস্পর এরূপ আলোচনায় ভাবযুক্ত হতেন।
 
ইং ১৯৩৮ সনে মার্চ্চ মাসে, ফাল্গুন পূর্ণিমা দিবসে শ্রীগৌর জন্মোৎসব বাসরে গৌড়ীয় মিশনের তদানীন্তন আচার্য্য ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিপ্ৰসাদ পুরী গোস্বামী মহারাজের অধ্যক্ষতায় বিশ্ববৈষ্ণব রাজসভার কার্য্য আরম্ভ হয়। সে সভার সভাপতি হন মহামহোপদেশক পণ্ডিত শ্রীঅতুলচন্দ্র দেব শর্মা (ভক্তি সারঙ্গ) মহোদয়। তিনি আচার্য্যপাদকে শ্রীগৌর আশীর্ব্বাদ পত্র প্রদান করেন।
 
ব্রহ্মচারী বরেণ শ্রীরূপ বিলাস-সংজ্ঞিনে।
বি, এ, ইত্যুপনাঙ্গে চ বিদ্বদ্বরায় বাগ্মিনে।।
গুরুসেবৈক নিষ্ঠায় প্রতিষ্ঠাশাবিবর্জিনে।
দুঃসংগত্যাগ-দক্ষায় বৈষ্ণব প্রীতি ভাগিনে।।
সৎসিদ্ধান্তেদভিজ্ঞায় মাৎসর্য্য রহিতায় চ।
দাক্ষাদাঢ্যসমাসেন গয়াস্থ মঠরক্ষিনে।।
বিদ্যার্ণব ইতি খ্যাতি—‘রুপদেশক’ সংজ্ঞয়া।
প্রদীয়তে সভাসদ্ভিধাম সেবাপ্রচারকৈঃ।।
গ্রহেযু বসু চন্দ্রাব্দে মায়াপুরে শুভোদয়ে।
ফাল্গুন পূর্ণিমায়াং শ্রীগৌরাবির্ভাব-বাসরে।।
 
স্বাঃ— শ্রীঅতুলচন্দ্র দেবশর্মা (ভক্তিসারঙ্গ)
সভাপতি
 
 
আচার্য্যপাদ কিছুদিন গৌড়ীয় মিশনের সাধারণ সভ্য পদে নির্ব্বাচিত হন। তদানীন্তন মিশনের সেক্রেটারী ছিলেন শ্রীমৎ সুন্দরানন্দ বিদ্যাবিনোদ বি এ, তিনি ইংরাজী ১৯৫৪ সনে ৪ঠা সেপ্টেম্বরে অবসর গ্রহণ করেন। তখন সেক্রেটারী পদে ব্রতী হন শ্রীল আচার্য্যপাদ শ্রীমদ্ভক্তিশ্রীরূপ ভাগবত মহারাজ। সে সময় গৌড়ীয় মিশনের সভাপতি বা আচার্য্য পদে কিছু দিন অধিষ্ঠিত ছিলেন ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তিপ্রদীপ তীর্থ গোস্বামী মহারাজ। অনন্তর আচার্য্য পদে অধিষ্ঠিত হলেন ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীশ্রীভক্তিকেবল ঔড়ুলোমি মহারাজ।
 
সেকালে শ্রীল প্রভুপাদ শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী মহারাজের প্রতিষ্ঠিত বহু মঠ, মন্দিরাদি ভাড়া বাড়ীতে ছিল। শ্রীগুরু মহারাজের ইচ্ছানুসারে; সেক্রেটারী শ্রীআচার্য্যপাদ, জমি খরিদাদি পূৰ্ব্বক নবমন্দির প্রভৃতির নির্মাণ কার্যে বিশেষ দক্ষতা প্রকাশ করেছিলেন। গয়া, কুরুক্ষেত্র, এলাহাবাদ, পাটনা, লক্ষ্ণৌ ও আসাম প্রভৃতি স্থানে সুরম্য মন্দির, নাট্য মন্দির ও ভক্তনিবাসাদি নির্মিত হয়।
 
শ্রীল আচার্য্যপাদ শ্রীল গুরুমহারাজের নির্দেশমত, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, বাংলা, উড়িষ্যা, আসাম, দিল্লী, বোম্বে ও পাঞ্জাবাদি প্রদেশস্থিত মঠসমূহ পরিদর্শন কার্য্যেরত থাকতেন। তিনি যেমন সরল তেমনি কঠোর। তাঁর শুদ্ধভক্তি আচার বিচারে সকলেই সম্ভ্রমের সহিত আনুগত্যে চলতেন।
 
আচার্য্যপাদ কখনও সত্যের বিরুদ্ধ অসিদ্ধান্ত কার্য্যের অনুমোদন করেননি।
 
আচার পরায়ণ ব্যক্তি আচার্য্যপাদ বাচ্য। তিনি স্বতঃসিদ্ধ আচার্য্য, আচার্য্যপাদ ১৯৬৮ খৃষ্টাব্দে মার্চ মাসে শ্রীগৌরজয়ন্তী বাসরে শ্রীল ভক্তিকেবল ঔড়ুলোমি মহারাজের নিকট থেকে ত্রিদণ্ডি সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। নাম হল শ্রীমদ্ভক্তিশ্রীরূপ ভাগবত মহারাজ। তাঁর বিশেষ প্রচেষ্টায় আসাম প্রদেশে কাছাড় লালা শহরে শ্রীরাধাগোবিন্দ গৌড়ীয় মঠ স্থাপিত হয়। উড়িষ্যা রেমুণাস্থিত শ্রীমাধবেন্দ্র গৌড়ীয় মঠের মন্দির, নাট্যমন্দির, শ্রীগুরু মহারাজের ভজন কুটির নির্মিত হয়।
 
তিনি মিশনের উন্নতি সাধন কল্পে আপ্রাণ চেষ্টা পরায়ণ।
 
৬ই জানুয়ারী ইং ১৯৮২ সন, শ্রীগোক্রম ধামে একাদশী তিথির নিশীথে ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংস শ্রীশ্রীমদ্ভক্তি কেবল ঔড়ুলোমি মহারাজ অপ্রকট হন।
 
অতঃপর গৌড়ীয় মিশনের শিষ্য ও ভক্তগণের অনুরোধে শ্রীল আচার্য্যপাদ গৌড়ীয় মিশনের সভাপতি ও আচার্য্যপাদ স্বীকার করেন। তিনি শ্রীগুরু মহারাজের সমাধি মন্দির ও শ্রীগুরু মহারাজের শ্রীমূর্তি স্থাপন করেন। এবং গোদ্রম ধামের বহু সেবায় ঔজ্জ্বল্য বিধান করেন।
 
শ্রীভক্তিবিনোদ ধারায় তিনি বাস্তব জীবন যাপন করেছেন। শ্রীল প্রভুপাদের গৌরবাণী প্রচারে যে অদম্য উৎসাহ ছিল, তিনি তাঁর অনুসরণে শ্রান্তি ক্লান্তি বিরহিত হয়ে সর্ব্বত্রই গৌরবাণী প্রচার করেছেন। প্রতি বৎসর বহু ভক্ত সঙ্গে দিল্লী, বোম্বে, লক্ষ্ণৌ, পাটনা, এলাহাবাদ, গয়া, কাশী, পুরী, কটক, বৃন্দাবন, রেমুণা ও আসাম প্রভৃতি স্থানে গৌরবাণী প্রচার করেছেন।
 
মহাপ্রভু শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যদেবের পাঁচশত বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে, গৌরকথা প্রচার উপলক্ষ্যে শতাধিক ভক্ত সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের তীর্থসমূহ দর্শন করতে বহির্গত হন। ইং ১২।৪।৮৪ তারিখ হতে আরম্ভ হয়ে ইং ৮|৫|৮৪ তারিখে পরিক্রমা শেষ হয়।
 
ভ্রমণের প্রসিদ্ধ তীর্থসমূহের নাম জিওড়নৃসিংহ ক্ষেত্র (ওয়ালটিয়ারে) পানানৃসিংহদেবের দর্শন (বিজওয়াড়ায়)।
শ্রীগৌড়ীয় মঠ ও পার্থ সারথি দর্শন (মাদ্রাজ), শ্রীঅনন্ত পদ্মনাভ দর্শন (ত্রিবান্দ্রাম), কন্যাকুমারী দর্শন, মাদুরাই দর্শন, ইং ২১।৪।৮৪ রামেশ্বর দর্শন, শ্রীবৃহদেশ্বর শিব দর্শন (তাঞ্জোরে), সারঙ্গপাণি মহাবিষ্ণু ও আদি কুত্তেশ্বর শিবদর্শন (কুম্ভকোনম), নটরাজ শিব দর্শন (চিদাম্বরম), পণ্ডিচেরীতে সমুদ্র ও অরবিন্দাশ্রম দর্শন, বেদ গিরীশ্বর শিব ও পক্ষীতীর্থ। তথা মহাবলি পুরম দর্শন, শিব কাঞ্চি ও বিষ্ণু কাঞ্চি দর্শন, তিরুপতি ব্যেঙ্কটেশ্বর দর্শন। ইংরাজী ৪।৫।৮৪ রাজ মাহেন্দ্রী ও গোদাবরী স্থান ও মহাপ্রভুর সহিত রায় রামানন্দের মিলনস্থলী দর্শনের পর ইং ৮।৫।৮৪ তারিখে ভক্তবৃন্দসহ শ্রীল আচার্য্যপাদ কলিকাতা শ্রীগৌড়ীয় মঠে প্রত্যাবর্ত্তন করেন।
 
ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদ বহু বর্ষ পূর্বে ভগেণসহ গৌড়মণ্ডল পরিক্রমা করেছিলেন। শ্রীল আচার্য্যপাদ শ্রীল প্রভুপাদের পদাঙ্কানুসারে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর পাঁচশত বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে বহু ভক্তগণ সঙ্গে গৌড়মণ্ডল পরিক্রমা করেন।
 
গৌড়মণ্ডল পরিক্রমা আরম্ভ হয় ইংরাজী ১২ এপ্রিল ১৯৮৪ এবং ইং ১৯শে এপ্রিল ১৯৮৪তে সমাপ্ত হয়।
 
গৌড়মগুলের প্রসিদ্ধ স্থান সমূহের নাম—
 
সাগর দ্বীপ কপিল মুনির আশ্রম, আটিসারা, ছত্রভোগ শ্রীভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদ প্রতিষ্ঠিত ৪৪৭ চৈতন্যাব্দে চৈতন্য পাদপীঠ। ছত্রভোগে অম্বুলিঙ্গ শিব দর্শন। বরাহ নগর শ্রীল রঘুনাথ ভাগবতাচার্য্যের শ্রীপাঠ দর্শন। পানিহাটিতে গঙ্গার উপকূলে বটবৃক্ষ তলায় দধি চিড়া মহোৎসব স্থান দর্শন, পণ্ডিতের শ্রীসমাধিপীঠ দর্শন। কুমার হট্ট (হালিশহর) শ্রীঈশ্বর পুরীপাদের জন্মভিটা দর্শন। চাকদহ শ্রীমহেশ পণ্ডিতের শ্রীপাঠ দর্শন। স্বানন্দ সুখদকুঞ্জে গোদ্ৰমধামে শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের সমাধি দর্শন। উলাগ্রাম (নদীয়া) শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের জন্মস্থান দর্শন। শ্রীধাম মায়াপুর শ্রীগৌরসুন্দরের জন্মস্থলী নিম্ন বৃক্ষ দর্শন। অদ্বৈত ভবন, শ্রীবাস অঙ্গন ও শ্রীচৈতন্য মঠ দর্শন। বহরমপুর সৈয়াদাবাদ—শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুরের শিষ্য রামকৃষ্ণাচার্য্যের সেবিত শ্রীমোহন রায়, শ্রীবিশ্বনাথ চক্রবর্ত্তী ঠাকুরের বৈঠক ও শ্রীরামচন্দ্র কবিরাজের শিষ্য শ্রীহরি রামাচার্য্যের সেবিতশ্রীকৃষ্ণ রায় দর্শন। গাম্ভীলা (জিয়াগঞ্জ) শ্রীগঙ্গানারায়ণ চক্রবর্তীর শ্রীরাধাগোবিন্দ শ্রীবিগ্রহ দর্শন। রামকেলি (গৌড়নগর) (মালদহ) শ্রীরূপ সনাতনের প্রতিষ্ঠিত শ্রীমদনমোহন দর্শন, কানাই নাটশালায় শ্রীকানাইয়ের শ্রীমূর্তি দর্শন।
 
একচক্রাগ্রাম—শ্রীনিত্যানন্দপ্রভুর জন্ম ভিটা দর্শন। বক্রেশ্বর—শিব দর্শন। জয়দেব—শ্রীজয়দেব গোস্বামীর শ্রীপাঠ দর্শন, শ্রীখণ্ড— শ্রীনরহরি সরকার ঠাকুরের সেবিত শ্রীগৌরাঙ্গবিগ্রহ দর্শন। যাজীগ্রাম—শ্রীনিবাস আচার্য্যের শ্রীপাট দর্শন। মামগাছি—(বর্ধমান) শ্রীসারঙ্গ মুরারির গোপীনাথ ও শ্রীবাসুদেব দত্তের শ্রীরাধা মদন গোপাল দর্শন।
 
শ্রীল আচার্য্যপাদ উজ্জাব্রতকালে পূর্ব্ব গুৰ্ব্বানুগত্যে ভক্তগণ সহ ব্রজমণ্ডল পরিক্রমা ইংরাজী ১৯৮৬ সন ১৭ই অক্টোবর শুক্রবার হতে ২৬শে অক্টোবর পর্যন্ত করেন।
 
বৃন্দাবন পরিক্রমার পর ইং ২৭শে অক্টোবর ১৯৮৬ সন জয়পুর, পুষ্কর ও শ্রীনাথদ্বার প্রভৃতি দর্শন করে কলিকাতা শ্রীগৌড়ীয় মঠেফিরে আসেন। শ্রীশ্রীগৌরসুন্দরের পাঁচ শত বর্ষপূৰ্ত্তি আবির্ভাব মহোৎসব উপলক্ষ্যে শ্রীগোম ধামে বহু অর্থ ব্যয় করে শ্রীভক্তিকেবল গৌরাঙ্গ লীলামন্দির নির্ম্মাণ পূর্ব্বক জগতে শ্রীগৌরসুন্দরের এবং গুরুবর্গের বিশেষ প্রীতিপ্রদ কাৰ্য্য সম্পাদন করেছেন। শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর পঞ্চ শতবর্ষপূর্ত্তি আবির্ভাব উপলক্ষ্যে শ্রীল আচার্য্যপাদের প্রয়াগ ধামে শ্রীমন্ মহাপ্রভুর পাদপীঠ স্থাপন একটি বিশেষ কীর্তি। এতদ্ উপলক্ষ্যে ১৯৮৬ সালে শ্রীনবদ্বীপ ধাম পরিক্রমার পর ইং ২২।৪।৮৬ তারিখ ভক্তগণসহ তিনি কলিকাতা শ্রীগৌড়ীয় মঠ হইতে প্রয়াগস্থ শ্রীরূপ গৌড়ীয় মঠে শুভ বিজয় করেন। ২৪।৪।৮৬ তারিখ নগর কীৰ্ত্তন সংযোগে শ্রীবেণীমাধবজীর মন্দির দর্শনান্তে শ্রীরূপ শিক্ষাস্থলীতে শ্রীচৈতন্য পাদপীঠ স্থাপন করেন এবং ধূপ-দীপ-মাল্য ইত্যাদি প্রদানকরতঃ পাদপীঠে ভোগ নিবেদন করেন।
 
গৌড়ীয় মিশনের আচার্য্য পদে অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি সৰ্ব্ব প্রথম পাশ্চাত্ত্য দেশে গৌরবাণী তথা ভাগবত বাণী প্রচারোদ্দেশ্যে কলিকাতা গৌড়ীয় মঠ হইতে ইং ৮ই আগষ্ট ১৯৮৭ তারিখে কতিপয় প্রচারকসহ যাত্রা করিয়া লঙ্ঘস্থিত শ্রীবাসুদেব গৌড়ীয় মঠে শুভ বিজয় করেন। ইতঃপূর্বে মিশনের আচার্য্য পদে অধিষ্ঠিত হয়ে কাহাকেও পাশ্চাত্ত্য দেশে প্রচার করিতে দেখা যায় নাই। তত্ অঞ্চলে তিনি কিছুকাল অবস্থানপূর্ব্বক আয়োজিত কয়েকটি শ্রীভাগবত ধর্মসভায় মনোমুগ্ধকর শ্রীহরিকথা কীর্ত্তন করেন। তাঁর শ্রীহরিকথা শ্রবণে আকৃষ্ট হয়ে বিশিষ্ট তথাকার সম্ভ্রান্ত সজ্জন এবং হল্যাণ্ডবাসী তাঁহার পাদপদ্ম আশ্রয়পূর্ব্বক শ্রীহরি ভজনে প্রবৃত্ত হন।
 
শ্রীকাশী ধামে জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদ ইং ১৯৩২ সালে ভাড়া বাড়ীতে শ্রীসনাতন গৌড়ীয় মঠ স্থাপনপূর্ব্বক শ্রীগৌরাঙ্গ ও শ্রীরাধাবিনোদ জীউর বিগ্রহ সমূহের সেবা পূজার ব্যবস্থা করেন। তৎপরে ইং ১৯৬৪ সালে তথায় জমি সংগ্রহ হইলেও কোন কারণবশতঃ মন্দির নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীকালে শ্রীল আচার্য্যপাদের শুভেচ্ছায় ইং ১৯৮৭ সালে উক্ত জমিতে মন্দির ও সুরম্য নাট্যমন্দিরাদি নির্মিত হইলে তাঁর শ্রীকরকমলে ইং ১৯৮৭ সালে ৩রা ডিসেম্বর শ্রীগীতা জয়ন্তীর দিন নব নির্ম্মিত শ্রীমন্দিরে শ্রীবিগ্রহত্রয়ের প্রবেশ উৎসব সুসম্পন্ন হয়।
 
পরমারাধ্যতম শ্রীল আচার্য্যপাদ পরিব্রাজকরূপে আসমুদ্র হিমাচল শ্রীগৌরবাণী তথা শ্রীভাগবত বাণী যেমন প্রতিবৎসর সন্ন্যাসী, ব্রহ্মচারীসহ ভারতের বিভিন্ন শাখা মঠগুলিতে প্রচারে থাকেন, তদ্রূপ শাখা মঠগুলি ছাড়া অন্যান্য স্থানে যথা বদ্ধ মান, ২৪ পরগণা, মেদিনীপুর, নদীয়া, উড়িষ্যা, আসাম, উত্তরপ্রদেশ ও আগরতলার বিভিন্ন স্থানে বিপুল উৎসাহে শ্রীগুরুগৌরাঙ্গের বাণী প্রচার করিতে থাকেন।
 
মোগলসরাইতে শ্রীভক্তিকেবল ঔডুলোমি গৌড়ীয় মঠ স্থাপন একটি তাঁর বিশেষ কীৰ্ত্তি। মোগলসরাইতে পরমারাধ্যতম শ্রীল আচার্য্যপাদের বিশেষ ইচ্ছায় নিজস্ব সংগৃহীত ভূ-খণ্ডে মঠ নির্মিত হয়। ইং ১৯৮৫ সাল ৯ই মে শ্রীগৌর-গদাধর ও শ্রীরাধাগোবিন্দ বিগ্রহ স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে তথায়। সুরম্য মন্দির, নাট্যমন্দির ও সেবক খণ্ড নির্মিত হইয়া ২১শে এপ্রিল ১৮৮৮ সালে নব-নির্মিত শ্রীমন্দিরে বিগ্রহগণকে শ্রীল আচার্য্যপাদের করকমলে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
 
বোম্বে শহরে জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদ ১৯৩৪ সালে ভাড়া বাড়ীতে শ্রীগৌড়ীয় মঠ স্থাপন করেন। দীর্ঘকালযাবৎ বহু চেষ্টা সত্ত্বেও মন্দিরোপযোগী নিজস্ব ভূখণ্ড সংগৃহীত না হওয়ায় তথায় শ্রীগৌরাঙ্গ ও শ্রীরাধাগোবিন্দ বিগ্রহ (বিনোদ বৈভবানন্দ) বহু অসুবিধার মধ্যে সেবিত হইতেছিল। শ্রীল প্রভুপাদের প্রেরণায় শ্রীল আচার্য্যপাদের শুভ ইচ্ছায় বোম্বে শহরে নতুন মন্দির স্থাপনের জন্য মহারাষ্ট্র গভর্ণমেন্টের নিকট হইতে ৪ঠা মে ১৯৮৯ তাং-এ সংগৃহীত হয় এবং উক্ত স্থানে তিনি শ্রীমন্দির নির্মাণার্থে ভিত্তি স্থাপন সংকীৰ্ত্তন সহকারে উৎসব করেন।
 
মেদিনীপুর জেলায় হলদিয়া বন্দরে প্রচার কেন্দ্র স্থাপনাথে পরমারাধ্যতম শ্রীল আচার্য্যপাদের শুভেচ্ছায় ভূখণ্ড সংগৃহীত হইলে তিনি ২৯।৩।৯১ তাং প্রচারকগণসহ তথায় শুভাগমন পূর্ব্বক শ্রীকৃষ্ণের বাসন্তরাস পূর্ণিমা দিবস মঠ নির্মাণকল্পে ভিত্তি স্থাপন করেন।
 
আসাম অঞ্চলে গুরু গৌরাঙ্গের বাণী প্রচারকল্পে করিমগঞ্জে মঠাদি নির্মাণের জন্য শ্রীল আচার্য্যপাদ অভিলাষ করিলে তত্রস্থ চরবাজারে মঠোপযোগী ভূখণ্ড সংগৃহীত হয় এবং ২১।১১।৯১ তাং তথায় শ্রীরাধাগোবিন্দ বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত হয়। শ্রীল আচার্য্যপাদের নাম অনুযায়ী উক্ত মঠের নাম করা হয় শ্রীভাগবত গৌড়ীয় মঠ।
 
বোম্বেতে বান্দ্রা অঞ্চলে নূতন মন্দির, নাট্যমন্দির সেবক খণ্ডাদি নির্মাণ কাৰ্য্য দ্রুত চলিতে থাকে। শ্রীল আচার্য্যপাদের হৃদয়ের অন্তিম বাসনা যে শ্রীল প্রভুপাদের প্রতিষ্ঠিত বিগ্রহগণকে তথাকার নব-নির্মিত শ্রীমন্দিরে প্রবেশোৎসব সম্পাদন পূর্ব্বক বিগ্রহগণের সেবার ঔজ্জ্বল্য বিধান করা। তিনি ১৯৯১-৯২ সালে কিছুকাল অসুস্থ লীলা অভিনয় করেন। তিনি তাঁর প্রাপ্ত প্রণামী অর্থ হইতে নির্মাণ কার্য্যের জন্য বোম্বে মঠে পাঠিয়ে দিয়ে মন্দির নির্মাণের কার্য্য যাতে দ্রুত গতিতে চলে সেভাবে নির্দেশ দিতেন। ১৯৯২ সালের ১০ই নভেম্বর শ্রীকৃষ্ণের রাস পূর্ণিমা তিথিতে আগষ্টক্রান্তি মার্গস্থিত ভাড়া বাড়ীতে সেবিত বিগ্রহগণ বান্দ্রাস্থিত নব-নির্মিত মন্দিরে তাঁর করকমলে প্রতিষ্ঠিত হন। এতদ্ উপলক্ষ্যে বিরাট সংকীর্তন শোভাযাত্রা এবং ভাগবদ্ধর্ম সভার ও গুরু পূজার আয়োজন হয়। উৎসবান্তে তিনি কিছুদিন তথায় অবস্থানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ১১।২।৯৩ তাং পর্যন্ত তথায় তাঁর শ্রীঅঙ্গ একপ্রকার সুস্থই ছিল।১২।২।৯৩ তাং প্রত্যূষে মিশনের সমস্ত শিষ্য-শিষ্যাবর্গকে শোকসমুদ্রে নিমজ্জিত রেখে শ্রীরাধাকৃষ্ণের নিশান্ত লীলায় প্রবেশ করেন। তাঁর দিব্য দেহকে বিমানযোগে কলিকাতায় আনয়ন পূৰ্ব্বক ১৪।২।৯৩ তাং বেলা ১টায় শ্রীগোদ্ৰমে শ্রীমদ্ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গৌড়ীয় মঠে তাঁর ভজন কুটীরে সমাধিস্থ করা হয়।
 
শ্রীল আচার্য্যপাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পূর্ব পর্য্যন্ত যেমন বিপুল উদ্যম উৎসাহের সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম স্বীকার পূর্ব্বক দিনের পর দিন হরিকথা, ভাগবত কথা কীর্তনে ব্রতী ছিলেন, অনুরূপে বৃহদ মৃদঙ্গের (শ্রীভাগবত প্রেমের) উন্নতি বিধানপূর্বক উক্ত মুদ্রাযন্ত্র দ্বারা তাঁর প্রচেষ্টায় দ্বাদশ স্কন্ধ সমন্বিত শ্রীমদ্ ভাগবত গ্রন্থ সম্পূর্ণ, শ্রীচৈতন্যভাগবত, শ্রীকৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিণী, জৈবধর্ম, ব্রহ্মসংহিতা, শ্রীকৃষ্ণলীলাক্তব, শ্রীভক্তিবিনোদ গীতি সংগ্রহ, গৌরপার্যদচরিতাবলী, শ্রীমদ্ভাগবত গীতা প্রভৃতি গ্রন্থগুলি বাংলা ও ইংরাজী ভাষায় প্রকাশিত হইয়াছে। এছাড়া তাঁর সিদ্ধান্তপূর্ণ বক্তৃতাবলী সমূহ বাংলা ও হিন্দিতে ৪টি খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে ও ইংরেজিতে Beacon Light of Transcendence নামক গ্রন্থ প্রকাশিত হইয়াছে।
 
আচার্য্যপাদ পূৰ্ব্ব পূৰ্ব্ব গুৰ্ব্বানুগত্যে অতিশয় প্রেমার্দ্র হৃদয়ে তুলসী সেবা, ভগবদ্ মন্দির পরিক্রমা, তুলসী মন্দির পরিক্রমা, শ্রীবিগ্রহ সেবা ও শ্রীনাম সংকীৰ্ত্তন সহ প্রেমারতি প্রভৃতি তাঁর জীবনের দৈনন্দিন আদর্শ। তিনি প্রতিদিন ভক্তগণসহ ইষ্টগোষ্ঠি এবং শিষ্যগণের ভক্তিসন্দর্ভ প্রভৃতি গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শন গ্রন্থাদি স্বাধ্যায় করাতেন। শিষ্যগণের প্রতি করুণাবশ হয়ে নিত্য ভজন বিষয়ে শিক্ষাদান করা তাঁর জীবনের এক ব্রত ছিল। জয় ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংস শ্রীশ্রীমদ্ভক্তি শ্রীরূপ ভাগবত মহারাজ কি জয়।
 
 
 
 
 
  • February 20-21, 2022 Puri, Odisha
  • 3rd of July in 2022 Balasore, Odisha
  • August 24-26, 2022 Kurukshetra, Haryana
  • October 7, 2022 Prayagraj, Uttar Pradesh
  • November 30 -1, 2022 Agartala, Tripura
  • December 3-4, 2022 Lalabazar, Assam
  • December 7, 2022 Guwahati, Assam
  • February 17-18, 2023 Baruipur, West Bengal
  • May 27-28, 2023 Patna, Bihar
  • June 26, 2023 Bhubaneswar, Odisha
  • November 26, 2023 Gaya, Bihar
  • February 8, 2024 Delhi
  • February 13-15, 2024 Balighai, Medinipur
  • March 19, 2024 Nabadwip, West Bengal
  • May 27 2024 Florida, USA
  • June 23-24, 2024 Baripada, Odisha
  • June 26-27, 2024 Paradeep, Odisha
  • June 29-30, 2024 Cuttack, Odisha
  • July 14, 2024 Chennai, Tamilnadu
  • August 31 2024 London
  • September 07 2024 London
  • September 08 2024 Berlin (Germany)
  • September 13 2024 Canada
  • September 14-15 2024 Rochester (USA)
  • September 21 2024 New Jersey (USA)
  • Upcoming Events