Hindol Yatra

হিন্দোল-লীলা
         কি অন্যাভিলাষী, কি কৰ্ম্মী, কি অর্চ্চনাধিকারী, কি তথাকথিত ভজনাভিনয়কারী—সকলেই এই সময়ে হিন্দোল-যাত্রা-উৎসবের আড়ম্বর করিয়া থাকেন। অযোধ্যায় শ্রীরামসীতার ঝুলন প্রত্যেক মন্দিরে মন্দিরে অনুষ্ঠিত হইয়া থাকে ও তাহা দর্শন করিবার জন্য বিভিন্ন স্থান হইতে অসংখ্য লোকের সমাগম হয়। বৃন্দাবনে ত ঝুলন উৎসবের কথাই নাই, প্রত্যেক কুঞ্জে, প্রত্যেক গৃহে ঝুলন হইয়া থাকে। তথায় একাদশীরও বহু পূৰ্ব্ব হইতে অনেক স্থানে ঝুলন আরম্ভ হয়। ঝুলন ও দোল-লীলা-উৎসবই শ্রীবৃন্দাবনে সৰ্ব্বাপেক্ষা বড় উৎসব। এই সময় দেশ-বিদেশ হইতে অগণিত যাত্রী তথায় উপস্থিত হন। পুর্ব্ববঙ্গের কোনও কোনস্থানে ঝুলন উৎসব একটা বিশেষ আমোদ-প্রমোদের ব্যাপার। গৃহের বালক বালিকাগণও এই উৎসবে উৎসাহ প্রকাশ করিয়া থাকে। সারা বৎসর ঠাকুরের সহিত কোনও সম্বন্ধ নাই, ঝুলনের কয়েক দিবস বালকগণ কেহ ঠাকুর ধার করিয়া, কেহ বা বৎসরের ৩৬০ দিনের সুপ্ত ঠাকুরকে ৫ দিনের জন্য জাগাইয়া তাহাকে লোকের রুচিকর নানাভাবে সজ্জিত করিয়া থাকে এবং মোলার মধ্যে স্থাপন-পূর্ব্বক ঝুলন যাত্রা করে। পূর্ব্ববঙ্গের “সোণারগাঁও পানাম” নামক স্থান বুলনের জন্য প্রসিদ্ধ। সেখানে ঝুলনের জন্য কয়েক দিবস ব্যাপী পাঠার্থিগণের বিদ্যালয়, ব্যবসায়িগণের ব্যবসায়-ক্ষেত্র এবং যাবতীয় কৰ্ম্মক্ষেত্র বন্ধ থাকে।
 
বিভিন্ন স্থানের ঝুলনযাত্রায় যে সর্ব্বত্রই শ্রীরাধাগোবিন্দকে হিন্দোলে অরোহণ করান হয়, তাহা নহে। কোথায়ও বলদেবকে, কোথায়ও শ্রীরামচন্দ্রকে, কোথায়ও রামকানাইকে কোথায়ও বা গোপালদেবকে কোথায়ও মহাপ্রভু ও নিত্যানন্দ প্রভুকে, কোথায়ও শ্রীশালগ্রামকে, আবার আধুনিক কালে আনুকরণিক নাগরীমতাবলম্বীর কেহ কেহ গৌরবিষ্ণুপ্রিয়াকে ঝুলনে আরোহণ করাইয়া থাকেন।
 
পূর্ব্ববঙ্গের কোনও কোনও ঝুলনবাড়ীতে এ জন্য অজস্র ব্যয় হয়, অনেক আখড়ায়, অনেক ধনাঢ্যের গৃহে শ্রীরাধাগোবিন্দের সম্মুখে বারবনিতার নৃত্য এবং সেই নৃত্যের আসরে নানাপ্রকার কুরুচি ও আসবাদির প্রশ্রয় দেওয়া হয়। এতদ্ব্যতীত ঢপগান, ভাড়াটিয়া পদাবলীগান, যাত্রাগান প্রভৃতি ত’ আছেই।
 
সকলেই স্বতন্ত্র। কাহারও উপদেষ্টা নাই; যাঁহারা কুলক্রমাগত উপদেষ্টার অভিনয় করিতেছেন, তাঁহাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত-বোধ নাই, আচরণ নাই, প্রাণপূর্ণ জীবন নাই, শাসন করিবার সামর্থ্য নাই, তাঁহারাও ইন্দ্রিয়-তর্পণ রোগগ্রস্ত। ঐরূপ আমোদ-প্রমোদ-দ্বারা ইন্দ্রিয়তর্পণ ব্যতীত এবং অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি ব্যতীত অন্য কোনও সুফল হয় না।
 
হিন্দোল-লীলা মাধুর্য্যরসবিগ্রহ অধোক্ষজ্ঞ শ্রীভগবানের সম্ভোগমন্ত্রী লীলা- বিশেষ। শ্রীগোবিন্দলীলামৃতে পূৰ্ব্বাহুলীলাবর্ণনে ৭ম সর্গে হিন্দোল-লীলার বর্ণনা দুষ্ট হয়,—
 
আগ্নেয্যাং ভাতি পদ্মাভরত্নহিন্দোলকুটিমম্।
পূৰ্ব্বাপরদিগুৎপন্ন-প্রবীণবকুলাগয়োঃ।।
সাচি কিঞ্চিদ্বিনির্গতা গত্যা বক্রোদ্ধয়োপরি।
মিলিতাভ্যাং সুশাখাভ্যাং ছাদিতং মণ্ডপাকৃতিঃ।।
তচ্ছাখামূলসংনদ্ধৈঃ পট্টরজ্জু-চতুষ্টয়েঃ।
দৃঢ়ৈবন্ধচতুষ্কোণং নাভিমাত্রোচ্চসংস্থিতিঃ।।
পদ্মরাগাষ্টপট্টীভিঃ প্রবালজপদাষ্টকৈঃ।
ঘটিত হস্তমাত্রোচ্চপট্টীবেষ্টনকেশরম্।।
অষ্টপত্রাম্বুজাকার- রত্নানি চিত্রিকর্ণিকম।
দ্বিদ্বিপাদাম্বীতাম্ভোজদলাভাস্টলৈবৃতম্ ।।
রত্নপট্টীকেশরান্তদ্বারাস্টক সুসংযুতম।
দক্ষিণে দলপার্শ্বস্থারোহদ্বারদ্বয়ান্বিতম্।।
লঘুস্তম্ভদ্বয়াসক্তপট্টীপৃষ্ঠাবলম্বকম্
পট্টতুলী লসম্মধ্যং পার্শ্বপৃষ্ঠোপধানকম্।।
নানাচিত্রাংশুকৈশ্ছননং স্বর্ণসূত্ৰান্তরৈরপি।
লসচ্চন্দ্রাবলীমুক্তাদামগুচ্ছবিতানকম্।।
যন্ত্রাষ্টদলগালীনাং মহাগৌ রাধিকাচ্যুতৌ।
গায়সন্য বয়স্যাভিবৃন্দা দোলয়তীশ্বরৌ।।
 
(শ্রীগোবিন্দলীলামৃত ৭ম\ (৫৫ -৬৩ )
 
অপ্রাকৃত শ্রীবৃন্দাবনের সকলেই চিন্তামণি-সদৃশ, যেখানে কোনও প্রাকৃত বস্তু বা অস্মিতার অবসর নাই। সেখানে সকলেই স্বরূপবুদ্ধ ও পরম মুক্ত। সেখানে বিষয় একজন, আর সকলই আশ্রয়। আশ্রয়গণ আশ্রয় শিরোমণির সহিত একমাত্র অদ্বিতীয় বিষয়ের মিলন করাইয়া তাঁহাদের সেবামুখ তাৎপর্য্যপর অপ্রাকৃত সম্ভোগলীলায় স্ব-স্ব সেবাফল নিয়োগ করেন। সেখানে কৃষ্ণেন্দ্রিয়-সুখ-তাৎপর্য্য ব্যতীত কোনও প্রকার আত্মেন্দ্রিয় প্রীতিবাঞ্ছার লেশ মাত্র নাই। সেইরূপ অপ্রাকৃত শ্রীবৃন্দাবনে অপ্রাকৃত হিন্দোলামুজের অষ্টদলস্থ অপ্রাকৃত ললিতাদি অষ্টসখীগণের মধ্যে অবস্থিত শ্রীরাধাগোবিন্দকে শ্রীবৃন্দাদেবী দোলানিম্নস্থ অন্য অপ্রাকৃত গায়িকা সখীগণের সহিত দোলাইয়া থাকেন।
 
যশোদাদি প্রৌঢ়া গোপীগণ যে বালগোপালকে দোলায় দোলাইয়া থাকেন, তাহা বাৎসল্য রসময়, সেখানেমধুর রসের নায়ক-নায়িকার বিচার নাই। বিষয়-বিগ্রহ শ্রীরামচন্দ্র বা অন্যান্য বিষ্ণুবিগ্রহের সুখবিধানের জন্য যে তাহাদিগকে দোলায় সঞ্চারণ করান হয়, তাহাও মাধুর্য্যময়ী লীলা নহে, তাহা দাস্যরসের বিচারেই প্রতিষ্ঠিত।
 
শ্রীকৃষ্ণের গৌরলীলাবৈশিষ্ট্যে সম্ভোগবাদ নাই, ঔদার্য্যলীলাতনু বিপ্রলম্ভ- বিগ্রহ শ্রীগৌরসুন্দরও নাগর নহেন। এজন্য গৌরপরিকরগণ কখনও আপনাকে অপ্রাকৃত ব্রজনাগরীর অনুকরণে ‘নাগরী’ কল্পনা করিয়া গৌরসুন্দরকে ঝুলনে আরোহণ করান না। তবে যে কোথায়ও কোথায়ও গৌর-গদাধরের ঝুলন-প্রসঙ্গ প্রাচীন গীতি প্রভৃতিতে শ্রুত হয়, তাহা পূর্ব্বাবতারের ঝুলন-লীলারই উদ্দীপক। সেখানে নদীয়া-নাগরীবাদের কোনও পুঁতিগন্ধ নাই।
 
শ্রীগুরুদেব কৃষ্ণপ্রেষ্ঠ ও শিষ্যের পরিমুক্ত দৃষ্টিতে অভিন্ন বার্ষভাবনী হইলেও মহান্ত শ্রীগুরুদেব উপদেশক রূপে—বিপ্রলম্ভের মূর্তি, তাঁহাতে সম্ভোগবাদের কোনও কথা নাই। জীবের অপ্রাকৃত সেবাবৃত্তির অভাব থাকা-কালে বার্ষভাবনী মহান্ত শ্রীগুরুরূপে জীবের নিকট উপস্থিত হন। সুতরাং শ্রীগুরুদেবের, মহাপ্রভুর পার্ষদগণের, ভগবৎপার্ষদগণের শ্রীকৃষ্ণের সহিত ঝুলন নাই। তাঁহারা শ্রীরাধাকৃষ্ণের ঝুলনকালে দূরে অন্য আসনে থাকিবেন। শ্রীশালগ্রামের ঝুলন হইবে না, তবে শ্রীগিরিধারীর ঝুলন হইবে।
 
 
 
  • February 20-21, 2022 Puri, Odisha
  • 3rd of July in 2022 Balasore, Odisha
  • August 24-26, 2022 Kurukshetra, Haryana
  • October 7, 2022 Prayagraj, Uttar Pradesh
  • November 30 -1, 2022 Agartala, Tripura
  • December 3-4, 2022 Lalabazar, Assam
  • December 7, 2022 Guwahati, Assam
  • February 17-18, 2023 Baruipur, West Bengal
  • May 27-28, 2023 Patna, Bihar
  • June 26, 2023 Bhubaneswar, Odisha
  • November 26, 2023 Gaya, Bihar
  • February 8, 2024 Delhi
  • February 13-15, 2024 Balighai, Medinipur
  • March 19, 2024 Nabadwip, West Bengal
  • May 27 2024 Florida, USA
  • June 23-24, 2024 Baripada, Odisha
  • June 26-27, 2024 Paradeep, Odisha
  • June 29-30, 2024 Cuttack, Odisha
  • July 14, 2024 Chennai, Tamilnadu
  • August 31 2024 London
  • September 07 2024 London
  • September 08 2024 Berlin (Germany)
  • September 13 2024 Canada
  • September 14-15 2024 Rochester (USA)
  • September 21 2024 New Jersey (USA)
  • Upcoming Events