অজা একাদশীর ব্রতোপবাস

#GaudiyaMission #Gaudiya #srilaprabhupada #srilaprabhupadaquotes #prabhupada #prabhupad150 #srilaprabhupada150 #AjaEkadashi #Ekadashi #EkadashiFast #ekadashi2024 #harekrishna

২৯ আগষ্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার

⭐ পরের দিন দি ৭।৫২মিঃ গতে ৯।৩২মিঃ মধ্যে একাদশী ব্রতের পারণ।

একাদশীতে কী কী করা এবং খাওয়া উচিত নয়:-

১। ধান জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন চাল, মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েস, খিচুড়ি, চালের পিঠা, খই ইত্যাদি

২। গম জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন আটা, ময়দা, সুজি, বেকারির রুটি, সব রকম বিস্কুট, হরলিকস ইত্যাদি।

৩। যব বা ভূট্টা জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন ছাতু, খই, রুটি ইত্যাদি।

৪। ডাল জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন মুগ, মাসকলাই, খেসারি, মুসুরী, ছোলা, অড়হর, মটরশুঁটি, বরবটি ও সিম ইত্যাদি।

৫। সরষের তেল, সয়াবিন তেল, তিল তেল ইত্যাদি। উপরোক্ত পঞ্চ রবিশস্য যে কোনও একটি একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হয়।

অদ্য ভগবান শ্রীউপেন্দ্রদেবের ষোড়শ উপচারে পূজা। পঞ্চমৃতে শালগ্রামের স্নান।

এবং শ্রীভগবান্ সর্ব্বে: শালগ্রামশিলাত্মকঃ ।

দ্বিজৈঃ স্ত্রীভিশ্চ শুদ্রৈশ্চ পূজ্যো ভগবতঃ পরৈঃ ।।

(হঃভঃ বিঃ ৫ম বিঃ ২২৩ শ্লোঃ)

সৰ্ব্বজীব কৃপার্থে অবতীর্ণ শালগ্রাম রূপী শ্রীহরিকে দ্বিজ, ভগবদ্ ভক্তিপরায়ণ স্ত্রী ও শূদ্রাদি সকলেই পূজার অধিকারী হন।

শ্রীউপেন্দ্রদেবের নৈবেদ্যে পায়স, ক্ষীর, দধি, লাড্ডু, বিবিধ মিষ্ট, বিবিধ ফলাদি ও বিবিধ সৌগন্ধপুষ্প অর্পণ করবে। মধ্যাহকালে ভোগারতিসংকীর্ত্তন,পরিক্রমা, দণ্ডবন্নতি ও স্তুতি প্রভৃতি করবে। অতঃপর শ্রীউপেন্দ্রদেবের মাহাত্ম্য শ্রবণ।

বন্দনা—

শ্রীনাথ নারায়ণ বাসুদেব

শ্রীকৃষ্ণ ভক্তপ্রিয়ে চক্রপাণে।

শ্রীপদ্মনাভাচ্যুত কৈটভারে

শ্রী রাম পদ্মাক্ষ হরে মুরারে ।।

–(মুকুন্দমালা স্তোত্র)

শ্রীমদ্ভাগবতে সুত শৌনক সংবাদ – শৌনক মুনি জিজ্ঞাসা করলেন— ভগবান শ্রীহরি ইন্দ্রের ছোট ভ্রাতা উপেন্দ্র নাম ধরেছিলেন কেন?

সূত গোস্বামী বললেন- হে দ্বিজগণ, আপনারা ইহার কারণ, শ্রবণ করুন। দৈত্যপতি শ্রীবলিরাজা ইন্দ্রের স্বর্গরাজত্ব অধিকার করলে, একবার ইন্দ্র নিরুপায় হয়ে অদিতি মাতার স্থানে আগমন করেন এবং অসুররাজ বলি কর্তৃক রাজ্যাদি হরণ বৃত্তান্ত বলেন। পুত্রগণের দুঃখে অদিতিমাতা বড়ই দুঃখিতা হলেন এবং পতিদেবের শ্রীচরণে সব দুঃখের কথা জানালেন। মহামুনি কশ্যপ তচ্ছুবণে বললেন আমি ত, কিছুই করতে পারি না। তবে তুমি একমাত্র পরমেশ্বর শ্রীহরির আরাধনা কর, তিনিই সবকিছু করতে পারেন।

অদিতি দেবী বললেন– হে নাথ ! সেই ব্রতের বিধান কি?

কশ্যপ মুনি বললেন – হে প্রিয়ে ! তবে শ্রবণ কর। ফাল্গুন মাসের শুক্লপ্রতিপদ হতে দ্বাদশী পর্য্যন্ত ঐকান্তিকভাবে শ্রীহরির ষোড়শ উপচারে পূজা,দ্বিজগণের সেবা, হোম, দান, দক্ষিণা প্রদান করতে হয়। দ্বাদশদিবস দুগ্ধমাত্র পানপূর্ব্বক সৰ্ব্বক্ষণ হরিনাম চিন্তন ও লীলাদি শ্রবণ করা কর্ত্তব্য। এ ব্রতের নাম পয়ঃপান ব্রত, ইহাতে ভগবান সন্তুষ্ট হয়ে অভিষ্ট বর প্রদান করে থাকেন।

অতঃপর শ্রীঅদিতিদেবী পতিদেবের কথানুসারে ব্রতারম্ভ করলেন। ইন্দ্র ও শচী অহোরাত্র জননী সন্নিধানে অবস্থান পূর্ব্বক যজ্ঞীয় কর্ম সকল সম্পাদন করতে লাগলেন।

পতি কশ্যপের দ্বারা আদিষ্ট হয়ে অদিতিদেবী আলস্য পরিত্যাগ পূর্ব্বক দ্বাদশদিন এ ব্রত অনুষ্ঠান করলেন। অনন্তর শ্রীহরি অদিতি দেবীর সম্মুখে চতুর্ভুজ পীতবাস, শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম ধারণপূর্ব্বক আবির্ভূত হলেন। অদিতিদেবী ভগবানের সেই দিব্যসুন্দর মূর্ত্তি দর্শনে আনন্দে গাত্রোত্থান পূৰ্ব্বক ভূতলে সাষ্টাঙ্গে দণ্ডবৎ প্রণাম করলেন।

শ্রীবিষ্ণু বললেন—“হে দেবমাতঃ । শত্রুগণ কর্তৃক হৃত সম্পদ আমি তোমার পুত্রগণকে যে কোন উপায় অবলম্বন পূর্ব্বক প্রদান করব। আমি সর্বদা ভক্তবাঞ্ছা পূর্ণ করে থাকি।

হে দেবি! আমি তোমার গর্ভে ইন্দ্রের ছোট ভ্রাতা উপেন্দ্র নামে আবির্ভূত হব। এই বলে ভগবান্ অন্তর্ধান হলেন।

সনাতন ভগবান শ্রীঅদিতি গর্ভে অধিষ্ঠিত জ্ঞাত হয়ে ব্রহ্মাদি দেবতাগণ গুহানাম সকল উচ্চারণ পুর্ব্বক তাঁর স্তব করতে লাগলেন।

অতঃপর শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী শ্রীহরি শ্রবণ দ্বাদশীতে অভিজিৎ নক্ষত্রে মধ্যাহকালে সর্ব শুভলগ্নে অদিতি হতে প্রপঞ্চে আবির্ভূত হন। তাঁর আবির্ভাবে দেবতা, গো, পৃথিবী, ব্রাহ্মণ ও সাধুগণ হর্ষান্বিত হলেন। ঐ দিবস “বিজয়” নামে প্রসিদ্ধ।

তৎকালে শঙ্খ, দুন্দুভি, মৃদঙ্গ, পণব, আণক প্রভৃতি বাদ্য ধ্বনিতে ত্রিলোক প্রকম্পিত হয়, অপ্সরাগণ আনন্দে নৃত্য, গন্ধবর্গণ গান, মুনি ও দেবতাগণ স্তব করতে লাগলেন। দেবীগণ পুষ্প বৃষ্টি করতে লাগলেন। অদিতির আশ্রম পুষ্পবর্ষণে সমাকীর্ণ হয়ে উঠল। অদিতি দেবী সেই দিব্য পুরুষকে গৰ্ভসম্ভূত হতে দেখে অতি বিস্ময়ান্বিত হলেন। প্রজাপতি কশ্যপও তদ্দর্শনে বিস্ময়ের সহিত জয় জয় ধ্বনি করতে লাগলেন। অনন্তর শ্রীহরি নট পুরুষের ন্যায় ক্ষণকালের মধ্যে বামন ব্রাহ্মণ কুমার হলেন। মহর্ষিগণ সেই বামন ব্রাহ্মণ কুমারের দর্শনে প্রীত হয়ে উপনয়ন সংস্কার প্রদান করতে লাগলেন। সূর্য্যদের সাবিত্রী-উপদেশ, বৃহস্পতি যজ্ঞসূত্র, কশ্যপ মেখলা, পৃথিবী দেবী কৃষ্ণগজিন, সোমদেব দণ্ড, অদিতিমাতা কৌপীন, ব্রহ্মা কমণ্ডলু, স্বর্গছত্র, সপ্তর্ষিগণ কুশ, সরস্বতী অক্ষমালা, কুবের ভিক্ষা পাত্র, ভবানী দেবী ভিক্ষা প্রদান করলেন।

অতঃপর বামনদেব ব্রাহ্মণ বটু ব্রহ্মচারী রূপে সর্বাগ্রে ভিক্ষা গ্রহণ ইচ্ছায় নর্মদার উত্তর তটে ভৃগুবংশীয় ব্রাহ্মণগণের দ্বারা প্রবর্ত্তিত প্রহ্লাদ পৌত্র বলিরাজের যজ্ঞাভিমুখে যাত্রা করলেন। তদনুগমনে সহস্র সহস্র ব্রাহ্মণ দেবতাগণও চলতে লাগলেন। ক্রমে যজ্ঞ সন্নিধানে পৌঁছিলেন।

তৎকালে ভৃগুবংশীয় বলীর যাজক ব্রাহ্মণগণ যজ্ঞের পূর্বে দ্বারে মহাতেজোময় বপু ভগবান ব্রহ্ম চারীবেশী শ্রীবামনদেবকে দর্শন করে সকলেই হতপ্রভ হয়ে পড়লেন এবং বলতে লাগলেন ইনি কে? সূর্য্যদেব না সনৎকুমার?

অতঃপর বলি মহারাজ স্বাগত পূর্বক যজ্ঞসভা মধ্যে উত্তম আসনে তাঁকে উপবেশন করিয়ে রাণী বিন্ধ্যাবলির সহিত পাদপদ্ম প্রক্ষালন পূর্বক পবিত্র জল সপরিবারে শিরে ধারণ পূর্বক বলতে লাগলেন, –

অদ্যাগ্নয়োমে সুহুতা যথাবিধি

দ্বিজাত্মজ তুচ্চরণাবনেজনৈঃ।

হতাংহসো বার্ডিরিয়ঞ্চ ভূরহো

তথা পুনীতা তনুভিঃ পদৈস্তব।।

–(ভাঃ৮।১৮।৩১)

হে দ্বিজাত্মজ! আপনার শ্রীচরণ প্রক্ষালনবারি দ্বারা হতপাপ অল আমার অগ্নিসকল যথাবিধি হুত হয়েছে এবং এ পৃথিবীও আপনার ক্ষুদ্র শ্রীচরণ স্পর্শে পবিত্র হয়েছে। হে বিপ্রনন্দন। আপনাকে যাচক বলে। মনে হচ্ছে, অতএব আপনার যাহা যাহা ইচ্ছা তাহাই আমার নিকট থেকে গ্রহণ করুন।

শ্রীউপেন্দ্রদেব বললেন –আমি ব্রহ্মচারী, অধিক কিছু আকাঙ্ক্ষী নহি। ত্রিপাদ ভূমিই যথেষ্ট। কথা শুনে বলি মহারাজ ও অন্যান্য সভাসদগণ হাস্য করলেন। বলি মহারাজ ‘তথাস্ত’ বললেন। অনস্তর শ্রীচরণার্চ্চন পূর্বক ন করতে উদ্যত হলে ভগবান দুই পদ দ্বারা ত্রিলোক গ্রহণ করলেন। তৃতীয় পদ কোথায় রাখবেন? মহারাজ বলি তৃতীয় পদ শিরে ধারণ করলেন। দেবতাগণ, গন্ধর্বগণ, সিগণ বলির সেই মহাদান দর্শনে বিস্ময় ও আনন্দে জয় জয় গান ও ভগবানের শিরে পুষ্পবৃষ্টি ও দেবদুন্দুভি ধ্বনিসহ নৃত্য-গীত করতে লাগলেন। ইন্দ্র পুনঃ স্বর্গভূমির অধিকারী হলেন। ভগবান্ উপেন্দ্রদেব স্বচরণ দিয়ে বৈকুণ্ঠসম এক পুরী সুতলে নির্মাণ পূর্বক তথায় বলিকে পাঠিয়ে দিলেন। বলির দ্বারে ভগবান উপেন্দ্রদেব নিত্য আবদ্ধ রইলেন। বলি মহারাজ পিতামহ প্রহ্লাদের ও নিজগণের সহিত নিত্য শ্রীভগবানের সাক্ষাৎ সেবা পূজানন্দে অবস্থিত হলেন।

যারা শ্রীহরিবাসরে অল্পম্বিত চিত্তে ভগবানের এ পবিত্র লীলা গান শ্রবণ ও কীৰ্ত্তন করবেন, তাদের হৃতরাজ্য, ঐশ্বর্য্য, পুত্র, মিত্র, বান্ধবগণ সকলেই সুখে অবস্থান এবং অন্তে পরমপদ প্রাপ্তি হবেন।

অজা একাদশী দিনে শ্রদ্ধাসহকারে।

পবিত্র উপেন্দ্র কথা শুনে ভক্তি ভরে।।

সদয় হইয়া তারে আপনি শ্রীহরি।

ভুক্তি মুক্তি সিদ্ধপদ দিবে দয়া করি।।

গুরু পুরী পাদপদ্ম হৃদে করি আশ।

উপেন্দ্র আখ্যান বলে হরিজন দাস৷৷

ইতি অজা একাদশী বাসরে শ্রীউপেন্দ্রদেব চরিতগাথা সমাপ্ত।

Related Article

GaudiyaMission prabhupad #gudiya prabhupad150 ekadashi sathtila_ekadashi harekrishna ekadashi_special
BLOG

ষট্তিলা একাদশীর ব্রতোপবাস

(তীর্থরাজ প্রয়াগধামে শ্রীমন্মহাপ্রভুর শুভ আগমন মহোৎসব) ২৫ জানুয়ারী ২০২৫ (শনিবার) পারণ: পরের দিন দি ৯।৫৯মিঃ মধ্যে একাদশী ব্রতের পারণ (এখন দেখে নেওয়া যাক একাদশীতে কোন

Read More »
Gaudiya Mission Gopal bhatta sad goswami goswamis
BLOG

শ্রীল গোপাল ভট্ট গোস্বামীপাদের আবির্ভাব তিথি

করুণাময় শ্রীগৌরহরি প্রেম বিতরণ করতে করতে ক্রমে ক্রমে দক্ষিণ দেশের প্রতি নগরে নগরে শ্রীনাম-প্রেম বিতরণ করছেন। তাঁর শ্রীমুখনিঃসৃত হরিনামামৃত পান করে সহস্র সহস্র নরনারীর প্রাণ

Read More »
Udhran dutta thakur Gaudiya Mission Gaudiya hare krishna
Goswamis

শ্রীল উদ্ধারণ দত্ত ঠাকুর ও শ্রীল মহেশ পন্ডিত ঠাকুরের তিরোভাব তিথি

[ শ্রীউদ্ধারণ দত্ত ঠাকুর:::::: শ্রীমদ্ কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী লিখেছেন— মহাভাগবত-শ্রেষ্ঠ দত্ত উদ্ধারণ। সৰ্ব্বভাবে সেবে নিত্যানন্দের চরণ।। —(চৈঃ চঃ আদিঃ ১১/৪১) শ্রীগৌরগণোদ্দেশ দীপিকায় “ সুবাহুর্যো-ব্রজে গোপো

Read More »