মোক্ষদা একাদশীর ব্রতোপবাস

#GaudiyaMission #Gaudiya #prabhupad #prabhupada #srilaprabhupad #prabhupada150 #prabhupad150 #srilaprabhupad #ekadashi #mokshodaekadashi #ekadashi2024 #mokshoda #harekrishna

পরের দিন দি ৬।২৮মিঃ গতে দি ৯।৪৩মিঃ মধ্যে একাদশী ব্রতের পারণ

(একাদশীতে কী কী করা এবং খাওয়া উচিত নয়

১। ধান জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন চাল, মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েস, খিচুড়ি, চালের পিঠা, খই ইত্যাদি

২। গম জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন আটা, ময়দা, সুজি, বেকারির রুটি, সব রকম বিস্কুট, হরলিকস ইত্যাদি।

৩। যব বা ভূট্টা জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন ছাতু, খই, রুটি ইত্যাদি।

৪। ডাল জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন মুগ, মাসকলাই, খেসারি, মুসুরী, ছোলা, অড়হর, মটরশুঁটি, বরবটি ও সিম ইত্যাদি।

৫। সরষের তেল, সয়াবিন তেল, তিল তেল ইত্যাদি। উপরোক্ত পঞ্চ রবিশস্য যে কোনও একটি একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হয়।)

অদ্য বিশ্বরূপধারী শ্রীঅনন্তদেবের ষোড়শোপচারে পূজা। পঞ্চমৃতে শ্রীহরির স্নান। নৈবেদ্য-পায়স, ক্ষীর, লাড্ডু, পিঠা-পানা, উত্তম তত্তুলের অন্ন, ব্যঞ্জন, ভাজা বড়ি, ডাল, চাটনী, দধি-দুগ্ধ, বিবিধ মিষ্ট, বিবিধ ফলাদি ও বিবিধ সৌগন্ধ পুষ্পের মালা প্রভৃতি অর্পণ করবে।

স্নান মন্ত্র -সহস্ৰশীর্ষ পুরুষঃ ইত্যাদি মন্ত্র, মধ্যাহ্নকালে ভোগারতি, নামসংকীর্তন, নৃত্য-গীত, দণ্ডবৎ, স্তব ও স্তুতি প্রভৃতি।

কথারম্ভ -স্তব,-

চিদানন্দং ব্রহ্মা-স্থির-চরগতঞ্চখিল গুরুং,

জগৎসুধ্যায়ন্তবরমপি বুভূৎসন্তি কৃতিনং।

ত্বমানন্দং মূর্ত্ত নব জলধর শ্যামল তনু

মহং বন্দে নন্দাত্মজমপরিমেয়ং সুরবৱৈ।।

অনুবাদ- কৃতিগণ স্থাবর জঙ্গম অন্তর্যামী নিখিল গুরু চিদানন্দ ব্রহ্ম স্বরূপ যে সর্বোত্তম বস্তুকে জগতে ধ্যান সহকারে অবগত হতে ইচ্ছা করেন, আমি সেই নবজলধর মূর্তিমান আনন্দ স্বরূপ দেব-শ্রেষ্ঠগণের পরমধ্যেয় শ্রীনন্দ নন্দনের পাদপদ্মযুগল বন্দনা করছি।

একদা শ্রীনন্দরাজকুমার প্রাত্কালে অন্যান্য শিশু সখাদের সহিত হাতে স্বর্ণ বাটিতে খাবার লাড্ডু নিয়ে যমুনা তীরে বসে খেলতে লাগলেন আর খেতে লাগলেন। এমন সময় শ্রীকৃষ্ণ লাড্ডু রেখে মাটি তুলে খেতে সাগলেন। কারও নিষেধ মানেন না। শিশু সখাগণ মা যশোদার নিকট গমন করলেন এবং কৃষ্ণের মাটি খাওয়ার কথা বলে দিলেন। মা যশোদা শোনা মাত্রই গোপালের স্থানে এলেন এবং মুখে মাটি দেখতে পেলেন। মা ভৎসনা করে বলতে লাগলেন—দুরন্ত পুত্র! খাওয়ার না খেয়ে মাটি খাও কেন? আজ তোমাকে বহু তাড়ন করব।

কৃষ্ণ ভয়ে চকিত নয়নে বলতে লাগলেন—মা! আমায় মেরো না, আমার কথা শুন।এ সমস্ত শিশুগণ মিথ্যাভাষী। আমার মুখে মাটি লাগিয়ে দিয়ে। মার খাওয়াবার জন্য মিথ্যা কথা বলছে। দাদা বলরাম ত’ বলছে না।

যশোদা নিজ পুত্র কথা বিশ্বাস করলেন। কোলে নিয়ে ঘরে গেলেন। অন্য দিবস পুনঃ সেই যমুনা তীরে এসে খাওয়ার খেতে লাগলেন এবং খেলতে লাগলেন, কৃষ্ণ আবার মাটি খেতে লাগলেন, এদিন বলরাম দেখলেন। পুনঃ শিশুগণ যশোদার কাছে গেলেন এবং সবকথা নিবেদন করলেন। মা শ্রবণ মাত্রই ক্রোধভরে ছুটে এলেন। বালকের দুখানি হাত ধরে ফেললেন। মুখে মাটি রয়েছে কথা বলতে পারছেন না। বলরামও বললেন কৃষ্ণ মাটি খেয়েছে। মা খুব তাড়ন ভর্ৎসনা করতে লাগলেন।

মা বললেন—তুমি মুখ ব্যাদন কর। তোমার মুখে কি আছে দেখব। বালক মাকে দেখাতে চান না।

ভগবান বাল্য স্বভাবে তাড়ন ভয়ে মিথ্যা কথাদি বলেন। ইহাতে বাৎসল্য রসের পোষক হয়। বাৎসল্যাদি রস প্রেমবিলাসময় হেতু ভক্তবাৎসল্য গুণ কারণে মিথ্যাদি ভগবানের দোষ নহে, প্রত্যুত মহাগুণ চূড়া-মণিময়। (চক্ৰবৰ্ত্তী)

মা দুহাত ধরে বার বার বলতে লাগলেন মুখ খুলে দেখাও! মুখ খুলে দেখাও!! ভগবান্ মাকে দেখাতে চান না। এ সময় ভগবানের সত্য সঙ্কল্প শক্তি তথায় এলেন এবং প্রভুর ইচ্ছা পূর্ণ করবার জন্য ঐশী শক্তিকে প্রভুর মুখ মধ্যে প্রবেশ পূর্ব্বক ঐশ্বৰ্য্য দেখাতে বল্লেন। ঐশী শক্তি প্রভুর মুখ মধ্যে অধিষ্ঠিত হলেন।

মা যশোদা দুটি অঙ্গুলি শিশুর মুখ মধ্যে দিয়ে বললেন, তোমার মুখ মধ্যে কি আছে আমি দেখব। কৃষ্ণ মুখব্যাদন করলেন। ঐশী শক্তি কৃষ্ণের মুখ মধ্যে বিশ্বরূপ দেখাতে লাগলেন।

মা তখন গোপালের মুখ মধ্যে বিরাট অর্থাৎ বিশ্বরূপ দেখতে লাগলেন ঐ বদন মধ্যে স্থাবর বৃক্ষ, লতা, নদ-নদী ও পর্বতমালা সমূহ। জঙ্গম— পশু, পক্ষী ও মনুষ্য প্রভৃতি; অন্তরীক্ষলোক, দিক্‌, দ্বীপ, সমুদ্র, ভূতল, প্ৰাহ বায়ু, অগ্নি, চন্দ্র, তারকা, জ্যোতিশ্চক্র, জল, তেজ, পবন, আকাশ, অহঙ্কার জাত ভূতসমূহ, ইন্দ্ৰিয়সমূহ, মন তন্মাত্র সত্ত্বঃ, রজঃ, তমঃ এবং জীব, কাল, স্বভাব, কর্ম, সংস্কার ও আশ্রয়কৃত চরাচর শরীর ভেদযুক্ত বিচিত্র বিশ্ব এবং নিজের সহিত ব্রজধাম দর্শন করতঃ পুত্রের অনিষ্টাশঙ্কায় অতিশয় ভীতা হয়ে নিয়ে পড়লেন। কেবল মাধুৰ্য্যময়ী প্রেমযুক্ত বাৎল্যরসে নিমজ্জমনা জননী ঐশ্বর্য্যের কিছুই জানেন না, তাই এসব কোন গ্রহাদির উৎপাত বিচার করে ভয়যুক্তা হয়ে পড়লেন। তখন বিতর্ক করতে লাগলেন—ইহা কি স্বপ্ন! অথবা দেবমায়া ! কিম্বা আমারই বুদ্ধির বিকার, অথবা আমার এ শিশুরই কোন স্বাভাবিক অচিন্ত্য ঐশ্বর্য্য। তারপর জননী স্বীয় ইষ্টদেব নারায়ণের নাম স্মরণ করতে করতে বলতে লাগলেন—যাঁর মায়াবলে গোপরাজ আমার স্বামী, কৃষ্ণ আমার পুত্র, গোধন, গোপ-গোপী সকলেই আমার অনুগত, আমার সেই অচিন্ত্যকর্ম ভগবান্ একমাত্র আশ্রয়। যশোদা মা প্রভুর অনন্ত ঐশ্বর্য্য দর্শন করলেও স্বরূপশক্তি যোগমায়া তাঁকে পুনর্ব্বার মোহিত করে ফেললেন। বেদত্রয় উপনিষৎ সাংখ্যযোগ সাত্বত শাস্ত্র যাঁর মাহাত্ম্য নিরন্তর কীর্ত্তন করেন, যশোদা দেবী সেই শ্রীহরিকে পুত্র বলে মনে করে ভয়ে বিহ্বল হতে লাগলেন।

অনন্তর দেবী শীঘ্রই গৃহে এলেন এবং মন্ত্রবিদ্যা ব্রাহ্মণীগণকে ডাকালেন। গার্গী, জাবালী, গৌতমী, নান্দীমুখী ও পৌর্ণমাসী প্রভৃতি মহা মন্ত্রতন্ত্রবিদগণ তথায় এলেন। কৃষ্ণকে ঈশ্বর বলে তাঁরা জানলেও তাঁরা কেবল মাধুর্য্য প্রেমময়ী মা যশোদার নিকট ঐশ্বর্য্যের কথা কিছুমাত্র প্রকাশ না করে যশোদার অভিপ্রায়ানুসারে প্রাকৃত শিশুর ন্যায়, নানা ভূত বাঁধার মন্ত্র, দেব-দেবীর আবেশ অপসারণ মন্ত্র, নৃসিংহ মন্ত্র, বিষ্ণুনাম ন্যাস মন্ত্র প্রয়োগ করতে লাগলেন।

গোমুত্রে স্নান, গোপুচ্ছ শিরে ভ্রমণ, ভগবদ্ নাম মন্ত্র সকল উচ্চারণ পূর্ব্বক বললেন—সব ভয় দূর হল। এবার যশোদা মা নির্ভয় হলেন, মন্ত্র বলে পুত্র রক্ষা হল, পুত্রকে কোলে তুলে নিলেন এবং পুত্রের বদনে কালির একটি বিন্দু দিলেন যাতে মানুষের নজর না পড়ে। তার মন্ত্র স্বয়ং শ্রীহরিনাম উচ্চারণ পূর্ব্বক তিনবার ফুৎকার প্রদান করলেন। উচ্ছিষ্ট করলে দেব গ্রহাদি কখনও পেতে পারে না।

এ সমস্ত অনন্ত লীলাময় শ্রীহরির প্রেমের বিলাস। এ বিলাসের পার নেই, এ বিলাস অনন্ত বিলাস। তিনি অনন্ত নামে অভিহিত, তাঁর বিলাসও অনন্ত বলে কথিত।

শ্রীহরিবাসরে ভগবানের এ সমস্ত মধুর বাল্যলীলা সমূহের কথা যে শ্রবণ কীর্ত্তন করে, ভগবান্ তার প্রতি সদয় হয়ে থাকেন।

ইতি মোক্ষদা হরিবাসরে বিশ্বরূপধারী শ্রীঅনন্ত ভগবানের কথা সমাপ্ত।

Related Article

Dol yatra gaudiyamission Gour jayanti Sri Chaitanya harekrishna
BLOG

শ্রীগৌরপূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমা

কলিযুগ পাবনাবতারী শ্রীমদ্ গৌরসুন্দরের শুভ আবির্ভাব তিথি ও শ্রীশ্রীগৌরজয়ন্তীর ব্রতোপবাস ১৪ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার ……..শ্রীমদ্ গৌরসুন্দরের শুভ জন্মোৎসব……..শ্রীগৌরপূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমা……..শ্রীশ্রীকৃষ্ণের বসন্তোৎসব……..পূর্ণিমান্তে ৫৩৯ গৌরাব্দ আরম্ভ……..পরের দিন

Read More »
Amlaki_ Ekadashi ekadashi ekadashi special gaudiyamission Gaudiya Harekrishna
BLOG

আমলকী একাদশীর ব্রতোপবাস

১০ মার্চ ২০২৫, সোমবার পরের দিন দি ৮।১৩ মিঃ মধ্যে একাদশী ব্রতের পারণ [একাদশীতে কী কী করা এবং খাওয়া উচিত নয় ১। ধান জাতীয় সকল

Read More »
GaudiyaMission Gaudiya prabhupad prabhupad150 bhagwat_goswami disappearance bhagwat bhagwat_maharaj harekrishna
BLOG

শ্রীশ্রীমদ্ভক্তি শ্রীরূপ ভাগবত গোস্বামী মহারাজের (শ্রীল আচার্যপাদ) ৩২ তম তিরোভাব তিথি

শ্রীগুরুদেব শ্রীকৃষ্ণের কৃপামূর্তি, করুণাশক্তি। নামরূপে শ্রীহরি যেমন কৃপা করছেন, তেমনি সাধু শাস্ত্র গুরুরূপে কৃপা করছেন। ভগবান নিত্যকাল সাধু গুরু ও শাস্ত্ররূপে কৃপা করছেন। শ্রীহরি বলেছেন—–

Read More »