Srila Lokanatha Gosvami Disappearance Day

শ্রীমদ্রাধাবিনোদৈকসেবাসম্পৎসমন্বিতম্।
পদ্মনাভায়জা শ্রীমলোকনাথ প্রভু ভজে ।।
শ্রীশ্রীরাধাবিনোদের ঐকান্তিক সেবাসম্পত্তি বিশিষ্ট শ্রীপদ্মনাভ তনয় শ্রী লোকনাথ প্রভুকে আমি ভজনা করি।
যশোহরের অন্তর্গত তালখড়ি গ্রামে, তার পূর্বে কাচনাপাড়ায় শ্রীপদ্মনাভ ভট্টাচাৰ্য্য পত্নী শ্রীসীতা দেবীর সঙ্গে বাস করতেন। পূর্ব্ববঙ্গ রেলপথে যশোহর ষ্টেশন থেকে মোটরে সোনাখালি হ’য়ে খেজুরা এবং খেজুরা থেকে তালখড়ি যাওয়া যায়।
শ্রীপদ্মনাভ ভট্টাচাৰ্য্য শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্যের বড় প্রিয় ও অনুগত ছিলেন। শ্রীপদ্মনাভ ও শ্রীসীতা দেবীর গৃহে শ্রীল লোকনাথ গোস্বামী আবির্ভূত হন। শ্রীলোকনাথের ছোট ভাইয়ের নাম শ্রীপ্রগল্ভ ভট্টাচার্য্য বংশধর অদ্যাপি তালখড়ি গ্রামে বসবাস করছেন।
শৈশবকাল থেকে শ্রীলোকনাথ সংসারের প্রতি উদাসীন ছিলেন। পিতা-মাতা ও গৃহত্যাগ করে তিনি নবদ্বীপ শ্রীমায়াপুরে শ্রীগৌরসুন্দরের শ্রীচরণ দর্শনের জন্য উপস্থিত হন। শ্রীগৌরসুন্দর শ্রীলোকনাথকে প্রণয়ভরে আলিঙ্গন করে শীঘ্র শ্রীবৃন্দাবনধামে যেতে আদেশ করেন। কিন্তু শ্রীলোকনাথ অনুমানে বুঝতে পারলেন মহাপ্রভু দুই তিন দিনের মধ্যে গৃহ ত্যাগ করবেন। তাই তিনি বড় কাতর হ’য়ে পড়লেন।
মহাপ্রভু শ্রীলোকনাথের মনোভাব বুঝতে পেরে তাঁকে অনেক প্রবোধ দিলেন এবং বললেন—শ্রীবৃন্দাবন ধামেই তাঁদের পুনর্মিলন হ’বে।
এ সম্বন্ধে শ্রীল নরহরি চক্রবর্তী ঠাকুর ভক্তি-রত্নাকরে প্রথম তরঙ্গে লিখেছেন–
“কাঁদিতে কাঁদিতে প্রভুপদে প্রণমিল৷৷
অন্তৰ্য্যামী প্রভু লোকনাথে আলিঙ্গিয়া।
করিলেন বিদায় গোপনে প্রবোধিয়া।।
লোকনাথ প্রভুপদে আত্ম-সমর্পিল।
প্রভুগণে প্রণমিয়া গমন করিল।।”
— (শ্রীভক্তিরত্নাকর প্রথম ৩০৫-৩০৭)
শ্রীল লোকনাথ আর গৃহে প্রত্যাবর্ত্তন করলেন না। বিরহবিধুর হয়ে তীর্থ-ভ্রমণ করতে লাগলেন।
দুঃখী হৈয়া কৈল বহু তীর্থ-পৰ্য্যটন।
কতদিন পরেতে গেলেন বৃন্দাবন।।
—(শ্রী শ্রী ভঃ রঃ প্রথম ৩০৮)
কিছুদিন তীর্থ-পর্য্যটন করে লোকনাথ বৃন্দাবনে গেলেন।
এদিকে ভগবান শ্রীগৌরসুন্দর সন্ন্যাস গ্রহণপূর্ব্বক শ্রীনীলাচলে এলেন। কিছুদিন নীলাচলে অবস্থান করে জীবোদ্ধার মানসে দক্ষিণে তীর্থ ভ্রমণ করতে লাগলেন। মহাপ্রভুর দক্ষিণে যাত্রার কথা শুনে শ্রীলোকনাথও দক্ষিণ-তীর্থ ভ্রমণে বহির্গত হ’লেন।
মহাপ্রভু দক্ষিণ ভ্রমণ করে বৃন্দাবনে এলেন। একথা শুনে শ্রীলোকনাথ প্রভুও শীঘ্ৰ বৃন্দাবনে গেলেন। ইতিমধ্যে মহাপ্রভু বৃন্দাবন হয়ে প্রয়াগ-ধামে গেলেন। শ্রীল লোকনাথ মহাপ্রভুর দর্শন পেলেন না, তাই তিনি বড় বিষণ্ণ হলেন। ঠিক করলেন পরদিন প্রভাতে প্রয়াগ-ধাম অভিমুখে যাত্রা করবেন।
“স্বপ্নে প্রভু প্রবোধি রাখিলা বৃন্দাবনে।।
লোকনাথ প্রভু আজ্ঞা লঙ্ঘিতে নারিল।
অজ্ঞাত রূপেতে ব্রজবনে বাস কৈল।।”
—(ভক্তি রত্নাকর ১ম তরঙ্গ ৩১৩-৩১৪)
মহাপ্রভু স্বপ্নযোগে শ্রীলোকনাথ প্রভুকে প্রবোধ দিয়ে বৃন্দাবনে থাকতে আদেশ করলেন।
শ্রীল লোকনাথ গোস্বামী অজ্ঞাত ভাবে ব্রজে বাস করতে লাগলেন। কিছুদিন পরে মহাপ্রভুর অত্যন্ত প্রিয়জন—শ্রীরূপ, শ্রীসনাতন,শ্রীগোপালভট্ট, শ্রীভূগর্ভ প্রভৃতির সঙ্গে শ্রীল লোকনাথ গোস্বামীর মিলন হল।
পরস্পরের প্রতি তাঁদের কি অদ্ভুত স্নেহ! সকলে যেন অভিন্নাত্মা ছিলেন।
গোস্বামিগণের মধ্যে শ্রীমদ্ লোকনাথ গোস্বামী অতি প্রবীণ। তিনি সব সময় প্রেমে বিহ্বল থাকতেন। শ্রীহরিভক্তিবিলাস গ্রন্থের মঙ্গলাচরণে শ্রীসনাতন গোস্বামী শ্রীলোকনাথ গোস্বামীকে বন্দনা করেছেন—
বৃন্দাবন্প্রিয়ান্ বন্দে শ্রীগোবিন্দপদাশ্রিতান্।
শ্রীমৎকাশীশ্বরং লোকনাথং শ্রীকৃষ্ণদাসকম্।।
—( শ্রী ভক্তিরত্নাকর প্রথম ৩২৩ )
শ্রীবৃন্দাবনপ্রিয় শ্রীগোবিন্দদেবের শ্রীপাদপদ্মাশ্রিত শ্রীমদ্ কাশীশ্বর ও শ্রীমদ্ লোকনাথ ও শ্রীমদ্ কৃষ্ণদাস কবিরাজকে আমি বন্দনা করি।
বৃন্দাবনের বনে বনে শ্রীকৃষ্ণ লীলাস্থলী সকল দর্শন করে লোকনাথ গোস্বামী আনন্দে ভ্রমণ করতেন। ছত্রবনের পাশে ‘উমরাও’ নামক গ্রামে কিশোরী কুন্ড -তীরে কিছুদিন বাস করেন। শ্রীবিগ্রহ সেবা করবার তাঁর বড় ইচ্ছা হয়। অন্তৰ্য্যামী প্রভু তা জানতে পেরে স্বয়ং একটি বিগ্রহ তাঁর করে অর্পণ করে বললেন একে তুমি পূজা কর। এ বিগ্রহের নাম ‘রাধাবিনোদ বিগ্রহ দাতা অকস্মাৎ কোথায় অন্তর্ধান হ’লেন। শ্রীলোকনাথ গোস্বামী আর তাঁকে দেখতে পেলেন না। তিনি খুব চিন্তা করতে লাগলেন।
শ্রীল লোকনাথকে এরূপ চিন্তা মগ্ন দেখে শ্রীরাধাবিনোদ হাস্য করে বলতে লাগলেন—আমাকে কে আনবে এখানে? আমি স্বয়ং এসেছি। আমি এ উমরাও গ্রামের বনে থাকি। এই যে কিশোরীকুন্ড দেখছ, তা আমার বাসস্থান। তুমি শীঘ্র আমায় কিছু ভোজন করতে দাও।
শ্রীল লোকনাথ গোস্বামীর আনন্দের সীমা রইল না। প্রেম-নীরে ভাসতে ভাসতে তখনই কিছু নৈবেদ্য তৈরী করে ঠাকুরের ভোগ লাগালেন।তারপর পুষ্প শয্যা করে ঠাকুরকে শয়ন করালেন।
পল্লবে বাতাস করিলেন কতক্ষণ।
মনের আনন্দে কৈল পাদ-সম্বাহন।।
তনুমনঃ প্রাণ প্রভুপদে সমর্পিলা।
সে রূপ-মাধুর্য্যামৃত পানে মগ্ন হৈলা।।
—(ভক্তি রত্নাকর ১ম তরঙ্গ ৩৩৫-৩৩৬)
শ্রীল লোকনাথ গোস্বামী অনিকেত ছিলেন। গ্রামবাসী গোপগণ তাঁর ভজন কুটির তৈরী করে দিতে চাহিলেও তিনি তাতে রাজি হ’তেন না। শ্রীরাধাবিনোদের থাকবার জন্য একটী ঝুলি তৈরী করেন, সেটা সব সময় কণ্ঠদেশে ঝুলিয়ে রাখতেন। শ্রীরাধাবিনোদ তাঁর কন্ঠমণি-স্বরূপ ছিলেন।ঝুলিটিই মন্দির স্বরূপ। তাঁর আচরণে চরম বৈরাগ্যের পরিচয় পাওয়া যেত। গোস্বামিগণ অনেক যত্ন করে তাঁকে সঙ্গে রাখতেন।
শ্রীমহাপ্রভুর পরমপ্রিয় লোকনাথের চরিত্র বিশ্লেষণ করা বড় কঠিন। যখন মহাপ্রভু ও তাঁর প্রিয় শ্রীরূপ-শ্রীসনাতনাদি অদর্শন-লীলা আবিষ্কার করলেন, তখন শ্রীলোকনাথ গোস্বামীর বিরহ যাতনা অসহনীয় হল। তখন তিনি একমাত্র মহাপ্রভুর ইচ্ছায় যেন প্রকট ছিলেন।
শ্রীল লোকনাথ গোস্বামী শ্রীনরোত্তম দাসকে দীক্ষামন্ত্র প্রদান করেন। তাঁর অন্য কোন শিষ্যের উল্লেখ কোন গ্রন্থে পাওয়া যায় না।
শ্রীনরোত্তম দাস যেভাবে গুরু শ্রীলোকনাথ গোস্বামীর সেবা করতেন তা’ অবর্ণনীয়। রাত্রি প্রভাতের আগে শ্রীগুরুদেবের মল-মূত্রাদি পরিষ্কার করে রাখতেন।
শ্রীল লোকনাথ গোস্বামী দীর্ঘ বয়স পর্যন্ত খদির-বনে (খয়রা গ্রামে)ভজন করতে করতে নিত্য লীলায় প্রবেশ করেন। এস্থানে শ্রীযুগল-কুন্ড নামেএকটি দীঘি আছে। তারই তীরে শ্রীল লোকনাথ গোস্বামীর সমাধি।
কথিত আছে শ্রীকৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত রচনা করবার সংকল্প নিয়ে শ্রীল লোকনাথ গোস্বামীর নিকট আশীর্ব্বাদ, অনুমতি ও উপকরণাদি প্রার্থনা করলে শ্রীল লোকনাথ গোস্বামী নিজ নাম বা চরিতাদি সম্বন্ধে কিছু বর্ণন করতে নিষেধ করেন। শ্রীমদ্ লোকনাথ গোস্বামিপাদের আজ্ঞা ভঙ্গ হয়, এ ভয়ে শ্রীকৃষ্ণদাস কবিরাজ শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে তাঁর সম্বন্ধে কিছু লিখেন নাই। শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণাষ্টমী তিথিতে শ্রীলোকনাথ গোস্বামী নিত্যলীলায় প্রবিষ্ট হন।
শ্রীল নরোত্তমদাস ঠাকুর মহাশয় শ্রীগুরু-পাদপদ্মে এ প্রার্থনা করেছেন—
“হা হা প্রভু লোকনাথ রাখ পদদ্বন্দ্বে।
কৃপাদৃষ্ট্যে চাহ যদি হইয়া আনন্দে ।।
মনোবাঞ্ছা সিদ্ধি তবে হঙ পূর্ণ তৃষ্ণ।
হেথায় চৈতন্য মিলে, সেথা রাধাকৃষ্ণ।।
তুমি না করিলে দয়া কে করিবে আর।
মনের বাসনা পূর্ণ কর এইবার।।
এ তিন সংসারে মোর আর কেহ নাই।
কৃপা করি, নিজ পদতলে দেহ ঠাঞি।।
রাধাকৃষ্ণ লীলাগুণ গাঙ রাত্রি-দিনে।
নরোত্তম বাঞ্ছা পূর্ণ নহে তুয়া বিনে।।”

Hare Krishna

Anna Daan Seva

All Time Donation

Cow Service (Gau Seva)

All Time Donation

Daily Deity Seva

All Time Donation

Vaishnava Bhojan

All Time Donation

Naivaidyam Seva

All Time Donation

EXCLUSIVE

Nitya Seva

All Time Donation