Sri Gauridasa Pandita Disappearance

শ্রীনিত্যানন্দ শাখা বর্ণনে শ্রীমদ্ কৃষ্ণদাস কবিরাজ লিখেছেন—

শ্রীগৌরীদাস পণ্ডিতের প্রেমোদ্দন্ড ভক্তি।
কৃষ্ণ প্রেমা দিতে নিতে ধরে মহাশক্তি।।
নিত্যানন্দে সমর্পিল জাতিকুল পাতি।
শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দে করি প্রাণপতি।।
–(চৈঃ চঃ আদি ১।২৬-২৭)

শ্রীগৌরীদাস পণ্ডিতের পিতার নাম—শ্রীকংসারি মিশ্র, মাতার নাম শ্রীকমলা দেবী। তারা ছয় ভ্রাতা ছিলেন-দামোদর, জগন্নাথ, সূর্য্যদাস, গৌরীদাস, কৃষ্ণদাস ও নৃসিংহ-চৈতন্য। শ্রীগৌরীদাস পণ্ডিতব্রজের দ্বাদশ গোপালের অন্যতম সুবল সখা ছিলেন।

বৰ্দ্ধমান জেলায় অম্বিকা কালনা-এ ক্ষুদ্র মহকুমা শহর শাস্তিপুরের পর পারে। এ শহরে শ্রীগৌরীদাস পণ্ডিত বাস করতেন। বর্ত্তমানে শ্রীগৌরীদাস পণ্ডিতের গৃহে শ্রীগৌরনিত্যানন্দের শ্রীমূর্ত্তি বিরাজ করছেন। শ্রীমন্দিরে মহাপ্রভুর শ্রীহস্ত-লিখিত গীতা পুঁথি আছে। প্রবাদ আছে শ্রীমহাপ্রভু নৌকাযোগে গঙ্গা পার হয়ে বৈঠাখানি শ্রীগৌরীদাস পণ্ডিতের কাছে এ বলে রেখে যান— এ বৈঠা দিয়ে তুমি জীবদের ভব নদীর পর পারে নিয়ে যেয়ো। মন্দিরে আজও এ বৈঠা আছে। গৌরীদাস পণ্ডিতের বড় ভাই সূর্য্যদাস সরখেল। তার দুই কন্যা–শ্রীবসুধা ও জাহ্নবা দেবী। শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু ও দুই কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন।

শ্রীমহাপ্রভু নবদ্বীপে বিবিধ লীলা বিলাস করবার পর যখন সন্ন্যাস লীলা করতে ইচ্ছা করেন এবং কালনায় শ্রীগৌরীদাস পণ্ডিতের নিকট বিদায় চাইতে আসেন, তখন শ্রীগৌরীদাস পণ্ডিত অত্যন্ত বিরহ কাতর হয়ে পড়লেন।

শ্রীগৌরীদাসের প্রেমাধীন হয়ে শ্রীগৌর নিত্যানন্দ শ্রীমূর্ত্তি ধারণপূর্ব্বক বিহার করতে লাগলেন, শ্রীগৌর নিত্যানন্দ মৃদু হাস্য করতে করতে গৌরীদাসকে বললেন-হে গৌরীদাস ! তুমি পূর্ব্বে সুবলসখা ছিলে। এ সব কি তোমার মনে নাই? যমুনা পুলিনে আমরা কত বিলাস করেছি। শ্রীগৌর নিত্যানন্দ এ-রূপ মধুর আলাপ করতে করতে কৃষ্ণ বলরাম মূর্ত্তি ধারণ করলেন। সেই গোপবেশ, হস্তে শিঙ্গা, বেত্র ও বেণু; শিরে শিখি-পুচ্ছ। গলে বনমালা, চরণে নূপুর দাম। শ্রীগৌরীদাসও পূর্ব্বভাব ধারণ করলেন। এ ভাবে কিছুক্ষণ বিলাস করলেন। অতঃপর প্রভুর ইচ্ছায় শ্রীগৌরীদাস স্থির হলেন। শ্রীগৌর-নিত্যানন্দ সিংহাসনে উপবেশন করলেন।

প্রতিদিন বহুবিধ ব্যঞ্জন রন্ধন করে শ্রীগৌরীদাস শ্রীগৌরনিত্যানন্দকে ভোগ দিতেন। সর্ব্বদা সেবায় তন্ময়। নিজের শারীরিক ক্লেশাদির অনুভূতি নাই। পণ্ডিত ক্রমে বার্দ্ধক্য দশায় উপনীত হলেন। তথাপি ঐরূপ রন্ধন করে ভোগ দেওয়া বন্ধ করলেন না। তাঁর রন্ধন শ্রম দেখে শ্রীগৌর নিত্যানন্দ একদিন বাইরে রোষ-ভাব দেখিয়ে অভুক্ত অবস্থায় রইলেন। তখন পণ্ডিত প্রণয়-কোপ করে বলতে লাগলেন–

বিনা ভক্ষণেতে যদি সুখ পাও মনে৷
তবে মোরে রন্ধন করাহ কি কারণে।।
এত কহি গৌরীদাস রহে মৌন ধরি।
হাসি প্রভু পণ্ডিতে কহয়ে ধীরি ধীরি।।
অল্পে সমাধান নহে তোমার রন্ধন।
অন্নাদি করহ বহু প্রকার ব্যঞ্জন।।
নিষেধ না মান শ্রম দেখিতে না পারি।
অনায়াসে যে হয় তাহাই সর্বোপরি।।

শ্রীগৌর-নিত্যানন্দের এ উক্তি শুনে শ্রীগৌরীদাস বললেন আজ ত’ ভোজন কর; বহু পদ করে তোমাদের আর ভোজন করাব না। শাক-মাত্র রন্ধন করে তোমাদের পাতে দিব। পণ্ডিতের কথা শুনে দুই ভাই হাসতে হাসতে ভোজন করতে লাগলেন।

কোন সময় পণ্ডিতের ইচ্ছা হল গৌর নিত্যানন্দকে অলঙ্কার পরাবেন। তার এ ইচ্ছা জানতে পেরে শ্রীগৌর-নিত্যানন্দ বিবিধ অলঙ্কার পরে সিংহাসনে বিরাজ করতে লাগলেন। পণ্ডিত মন্দিরে প্রবেশ করে অবাক্ হলেন। এত অলঙ্কার কোথা থেকে এল? শ্রীগৌরীদাস আনন্দে বিহ্বল হলেন। শ্রীগৌর নিত্যানন্দ এরূপে কত ভাবে কত লীলা বিলাস করে শ্রীগৌরীদাসের ঘরে বিরাজ করতে লাগলেন।

শ্রীগৌরীদাসের প্রিয় শিষ্য ছিলেন শ্রীহৃদয়চৈতন্য। একবার শ্রীগৌরসুন্দরের জন্মতিথি উপলক্ষে শ্রীগৌরীদাস শিষ্য-গৃহে গেলেন। যাবার সময় শ্রীহৃদয়-চৈতন্যকে শ্রীগৌর-নিত্যানন্দের সেবাভার দিয়ে গেলেন। হৃদয়চৈতন্য খুব প্রেমভরে সেবা করতে লাগলেন।

গৌর-জন্মোৎসব নিকটবর্তী হল। মাত্র তিন দিন সময় আছে। এখন পর্যন্ত শ্রীগৌরীদাস ফিরে এলেন না। হৃদয়চৈতন্য খুব চিন্তা করতে লাগলেন। অতঃপর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে উৎসবের পত্রাদি লিখে শিষ্য-ভক্তদের কাছে প্রেরণ করলেন। ঠিক এ সময় শ্রীগৌরীদাস ফিরে এলেন, হাদয়চৈতন্য শ্রীগুরুদেবের কাছে পত্রাদি লিখে তিনি যে শিষ্য ভক্তদের আমন্ত্রণ করেছেন তা জানালেন। অন্তরে যদিও সুখী হলেন তথাপি বাইরে ক্রোধ দেখিয়ে বলতে লাগলেন–

মোর বিদ্যমানে কৈলা স্বতচরণ।।
নিমন্ত্রণ পত্রী পাঠাইলা যথা তথা
যে কৈলা সে কৈলা এবে না রহিবা এথা।।
ঐছে শুনি প্রণমিয়া চরণ-যুগলে।
গঙ্গা তীরে গিয়া রহিলেন বৃক্ষতলে।।

শ্রীহাদয়চৈতন্য শ্রীগুরু চরণে প্রণাম করে গঙ্গাতীরে এলেন এবং এক বৃক্ষতলে অবস্থান করতে লাগলেন। এমন সময় একজন ধনী নৌকায় বহুধন নিয়ে হৃদয়চৈতন্যের নিকট এলেন। হৃদয়চৈতন্য সেই ধন গুরু—গৌরীদাসের নিকট পাঠায়ে দিলেন। সেই ধন দিয়ে শ্রীগৌরীদাস হৃদয় চৈতন্যকে গঙ্গাতীরে উৎসব করতে বললেন। শ্রীগুরুদেবের আদেশ পেয়ে শ্রীহহৃদয়চৈতন্য গঙ্গা তীরে উৎসব আরম্ভ করলেন। ক্রমে ক্রমে বৈষ্ণবগণ সেখানে সমবেত হতে লাগলেন। হৃদয় চৈতন্য ভক্ত মহান্তগণকে নিয়ে উদ্দন্ড নৃত্য কীৰ্ত্তন আরম্ভ করলেন। তাঁদের মধ্যে স্বয়ং শ্রীগৌর-নিত্যানন্দ নৃত্য গীত করলেন; হৃদয় চৈতন্য স্বচক্ষে তা দেখতে পেলেন। এদিকে শ্রীগৌরীদাস উৎসব করছেন; পূজারী বড় গঙ্গাদাস মন্দিরে প্রবেশ করে দেখেন সিংহাসনে শ্রীগৌরনিত্যানন্দ নাই। এ-ব্যাপার তিনি শীঘ্র শ্রীগৌরীদাসকে জানালেন। পণ্ডিত বুঝতে পারলেন—হৃদয়চৈতন্যের প্রেমে বশ হয়ে দুই ভাই তাঁর কীর্ত্তনে যোগদান করেছেন। তখন শ্রীগৌরীদাস মৃদু হাসতে হাসতে একখানি যষ্টি হাতে নিয়ে গঙ্গাতটে যেখানে কীর্তন হচ্ছিল সেখানে এলেন।

চলিলেন গঙ্গাতটে যথা সংকীৰ্ত্তন।
দেখে দুই ভাই তথা করয়ে নর্তন।।
দুই ভাই দেখি পণ্ডিতের ক্রোধাবেশ।
অলক্ষিতে গিয়া কৈল মন্দিরে প্রবেশ।।

শ্রীগৌরীদাস দেখলেন গৌর নিত্যানন্দ শ্রীহৃদয়ের হৃদয়-মন্দিরে প্রবেশ করছেন। তা দেখে আনন্দে শ্রীগৌরীদাস নয়নাশ্রু সংবরণ করতে পারলেন না। বাহ্যতঃ যে ক্রোধ ছিল তা ভুলে গেলেন ও দুই ভুজ উত্তোলন করে ধেয়ে জড়িয়ে ধরলেন শ্রীহৃদয়কে, বললেন তুমি ধন্য ! আজ হতে তোমার নাম “হাদয় চৈতন্য” হল ! নয়ন জলে হৃদয় চৈতন্যকে সিক্ত করতে লাগলেন। হৃদয় চৈতন্য প্রেমে লুটিয়ে পড়লেন শ্রীগৌরীদাসের শ্রীচরণ তলে। অতঃপর পণ্ডিত হৃদয় চৈতন্যকে নিয়ে স্বগৃহে এলেন এবং প্রাঙ্গণে মহাসংকীৰ্ত্তন নৃত্য আরম্ভ করলেন। বৈষ্ণবগণ মহা ‘হরি’ ‘হরি’ ধ্বনিতে দশদিক্‌ মুখরিত করতে লাগলেন। এইরূপে শ্রীগৌরসুন্দরের জন্মোৎসব শেষ হল। অতঃপর শ্রীগৌরীদাস শ্রীহদয় চৈতন্যকে সেবার অধিকার প্রদান করলেন।

শ্রাবণ শুক্লা ত্রয়োদশীতে শ্রীগৌরীদাসের তিরোভাব হয়। শ্রীগৌরীদাসের শিষ্য শ্রীহৃদয় চৈতন্য ও শ্রীহৃদয় চৈতন্যের শিষ্য শ্রীশ্যামানন্দ। শ্রীনরহরি চক্রবর্তী ঠাকুর শ্রীভক্তিরত্নাকর গ্রন্থে সপ্তম তরঙ্গে শ্রীগৌরীদাসের মহিমা বর্নন করেছেন ।

Hare Krishna

Anna Daan Seva

All Time Donation

Cow Service (Gau Seva)

All Time Donation

Daily Deity Seva

All Time Donation

Vaishnava Bhojan

All Time Donation

Naivaidyam Seva

All Time Donation

EXCLUSIVE

Nitya Seva

All Time Donation