Saraswati Puja

 

  আগামী কল্য শ্রীশ্রীসরস্বতী পূজা। বঙ্গদেশের সর্বত্র —কেবল বঙ্গদেশ কেন, সমগ্র ভারত ব্যাপিয়া আজ এক বিরাট ধুমধাম লাগিয়া গিয়াছে। গায়ক, বাদক, নর্তক, কবি, সাহিত্যিক, চিত্রকর, নানা কলাবিদ্যা বিশারদ, পাঠার্থিছাত্রদল, ব্যবসায়িদল, এমন কি শৌত্তিক ও গণিকাগণ পর্যন্তও সরস্বতীদেবীর অর্চ্চনের যথাসাধ্য আয়োজন করিতেছেন। কেহ বা দেবীকে নানা বেশভূষায় সুসজ্জিত। করিতেছেন, কেহ দেবীর সম্মুখে যাত্রা, থিয়েটার, বায়স্কোপ প্রভৃতি রঙ্গরসের ব্যবস্থায় মাতিয়া গিয়াছেন, কেহ আবার ভুরিভোজনের আয়োজনে ব্যস্ত, কেহ বা ভদ্রতা রক্ষার জন্য তাম্রকূট, সিগারেট, গঞ্জিকা, সুরাদি কলিস্থান সংগ্রহের চেষ্টায় রত— এইরূপে সর্বত্রই আজ যেন এক মহা হুলস্থুল—মহা হৈ চৈ পড়িয়া গিয়াছে—সকলেই আজ বড় ব্যস্ত। কিন্তু হায় ! কে বলিয়া দিবে এই ব্যস্ততার পরিণাম কোথায় ? ইহার মর্ম কি? কাহার নাম সরস্বতী পূজা, কে সেই বীণাপাণি দেবী সরস্বতী, আর কেই বা তাঁহার পূজক ? অহো ! তাহা বুঝাইয়া বলিবার লোক যে আজ কেহই নাই সকলেই স্ব-স্ব ইন্দ্ৰিয়-তর্পণ প্রমত্ততাকেই ‘পূজা’, ইন্দ্ৰিয় তর্পণের সহায়কারিণী অবিদ্যাকেই ‘পূজ্যা’ আর ইন্দ্রিয় তর্পণকারী আপনাকেই ‘পূজক’ বলিয়া পরিতৃপ্ত। ইহা অপেক্ষা যে আর কিছুই তাহাদের ‘ভাল’ বলিয়া ধারণা নাই—এই ধারণাই যে তাহাদের যথাসর্বস্ব—ইহাই যে তাহাদের নিকট মনুষ্যত্বের সর্বোত্তম আদর্শ ! হা ভগবান্‌ ! ইহাই নাকি বিংশ শতাব্দীর সভ্যযুগ! এই সভ্যতার বড়াই লইয়াই সভ্যেরা চাহে জগতের দুঃখ দৈন্য ঘুচাইতে —জগতে শান্তি স্থাপন করিতে। “ধন্য কলিযুগ তেরি তামাসা দুখ লাগে আউর হাসি।”

 

“আমি ভোক্তা’, ‘আমি কর্ত্তা -এই অভিমানে যাহারা কৃষ্ণেতর বিষয়-পিপাসা রূপ আত্মেন্দ্রিয়-তর্পন  পর জরীয় কামলালসায় হৃতজ্ঞান হয়, তাহারাই শীঘ্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফললাভের জন্য তত্তৎ কাম্যফল-রাত। দেব-দেবীর উপাসনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, তাহাতে দেবান্তরে স্বাতন্ত্র্য বুদ্ধি অর্থাৎ দেবান্তরেরকে সর্বেশ্বরেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতিদ্বন্দ্বী জ্ঞানে তাঁহা হইতে স্বতন্ত্র বা তাঁহারই সমান দর্শন রূপ ভীষণ নামাপরাধের আবাহন পূর্বক জীবগণ স্ব-স্ব তামসিক ও রাজসিক প্রকৃতি দ্বারা চালিত হইয়া বিশুদ্ধ-স্বত্ব -স্বরূপ ভগবান্‌কে অনাদর করিয়া ভগবচ্চরণে অপরাধ সঞ্চয় করে। ঐরূপ নামাপরাধী উপাসক-সম্প্রদায়ের মধ্যে শক্তি, শৈব, সৌর, গাণপত্য ও বিষ্ণুর সগুণ উপাসক বা সামান্য বৈষ্ণব—এই পঞ্চপ্রকার বিভাগ প্রধান রূপে লক্ষিত হয়। উহাদের মধ্যে বিভিন্ন গুণাবলম্বী ব্যক্তিগণ স্ব স্ব রুচি বা স্বেচ্ছাচারিতার বশবর্তী হইয়া শৈব, শাক্ত, সামান্য বৈষ্ণব প্রভৃতি আখ্যায় এক একটা বিশেষ দেবোপাসক নামে পরিচিত হইলেও তাঁহারা ভোগাৰ্থ ধন-কামনায় লক্ষ্মী, অর্থ বা প্রতিষ্ঠাকরী বিদ্যা কামনায় সরস্বতী প্রভৃতি দেবতাগণের লৌকিক প্রথানুসারে পূজা করিয়া থাকেন। আচার্য শ্রীল জীবপাদ গোস্বামিচরণ তত্ত্বসন্দর্ভে ( ১৭শ অনু) লিখিয়াছেন যে, প্রকৃতিজন-পূজিত।-সরস্বতী দেবী সঙ্কীর্ণ শাস্ত্রাদির প্রতিপাদ্য দেবতা। যথা—“সঙ্কীর্ণেষু সরস্বত্যা:… (মাহাত্ম্যঞ্চ ) নিগদ্যতে। “‘সঙ্কীর্ণ’ শব্দের অর্থ শ্রীজীব “সঙ্কীর্ণেষু সত্ত্বরজস্তমোময়েষু” এবং ‘সরস্বতী’ শব্দের তাৎপৰ্য্য “নানাবাণ্যাত্মক—তদুপলক্ষিতায়া ‘নানা দেবতায় ইত্যর্থঃ’—এইরূপ লিখিয়াছেন। অর্থাৎ ‘সঙ্কীর্ণ’ বলিতে ‘সত্ত্ব রজস্তমোময় শাস্ত্র’ আর ‘নানা বাক্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা’ বাক্যের দ্বারা নানা দেবদেবীও উপলক্ষিত হইয়া থাকেন, কেননা বিবিধ বাক্য দ্বারা বিভিন্ন দেবদেবীর মাহাত্ম্য কীৰ্ত্তিত হইয়া থাকে। সরস্বতী বাগাধিষ্ঠাত্রী বলিয়৷ নানা দেবদেবী উপলক্ষিত হইলেও ‘সরস্বতী’ বলিতে কোন একটি পৃথক্ দেবতাই লক্ষিত হইয়া থাকেন। ইনি বিদ্যা বা জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। জড়জগতের অধিষ্ঠাত্রী দেবী—’দুর্গা’ নামে অভিহিতা, তাঁহার আবরণের মধ্যেই আমরা সরস্বতী দেবীকে অপরা বিদ্যাধিষ্ঠাত্রীরূপে পূজিতা হইতে দেখিতে পাই। 

 

উপনিষদে পরা এবং অপরা দুইটি বিদ্যার উল্লেখ আছে, পরা বিদ্যা দ্বারা অক্ষর ভগবান্‌কে জানা যায়। অপরা বিদ্য| জীবকে ভগবদ্বিমুখ করে। পরা এবং অপরা দুই প্রকার বিদ্যারই অধিষ্ঠাত্রী দেবীর নাম সরস্বতী। যাঁহারা মায়া দ্বারা অপহৃত-জ্ঞান হইয়া কৃষ্ণেতর বিষয় ভোগলিপ্স, হইয়াছেন, তাঁহারাই অপরা বিদ্যাধিষ্ঠাত্রী সরস্বতীর উপাসনায় প্রবৃত্ত হন, কিন্তু কৃষ্ণভক্তিকামিগণ পরবিদ্যাধিষ্ঠাত্রী সরস্বতীর উপাসনা করেন। মায়া-বদ্ধ জীবকুল তাঁহাদের উপাস্য দেবতাকে কৃষ্ণ হইতে স্বতন্ত্র রূপে দর্শন করেন, কিন্তু মায়ামুক্ত জীবকুল তাদৃশ দর্শনের পরিবর্তে সরস্বতীকে কৃষ্ণের স্বরূপ-শক্তির বৃত্তি সাক্ষাৎ কৃষ্ণভক্তি-স্বরূপিণী রূপে দর্শন করিয়া থাকেন। অপরাবিদ্যাধিষ্ঠাত্রী মায়াবদ্ধ-জীবকুল-পূজিতা সরস্বতী পরাবিদ্যাধিষ্ঠাত্রী বাগদেবীরই ছায়াবিশেষ।

 

শ্রীমদ্ভাগবতে মহাভাগবত ঐহতগোস্বামী ভাগবতা রক্তের মঙ্গলাচরণে (ভা: ১/২৪ ) যে “দেবী সরস্বতী ব্যাসং ততো জয়মুদীরয়েৎ” বলিয়া সরস্বতীকে প্রণাম করিতেছেন, তিনি পরাবিদ্যা-রূপিণী সরস্বতী। শ্রীশুকদেব গোস্বামীও “প্রচোদিত যেন পুরা সরস্বতী”—এই বাক্যে ‘বেদরূপ| বাণী ভগবদাজ্ঞায় ব্রহ্মার মুখপদ্মে আবির্ভূতা হইলেন’, ইহা দ্বারা শ্রীসরস্বতীর উপাস্য শ্রীকৃষ্ণ, ইহাই নির্দেশ করিয়াছেন। যথা—সরস্বতী কথম্ভূতা? স্বং শ্রীকৃষ্ণং লক্ষয়তি উপাস্যত্বেন দর্শয়তীতি সা (শ্রীচক্রবর্ত্তী-টীকা)।

 

ঐকান্তিক ভক্তগণ পূজিতা ভগবচ্ছক্তি পরবিদ্যা-বধূ দেবীসরস্বতীর জীবনধন শ্রী:ফ-সঙ্কীৰ্ত্তন—ইহাই কলি = যুগপাবনাবতারী স্বয়ং ভগবান্ শ্রীগৌরসুন্দর তাঁহার স্বকৃত অষ্টকের প্রথমেই “বিদ্যাবধৃজীবনং পরং বিজয়তে শ্রীকৃষ্ণ সংকীৰ্ত্তনং” উক্তি প্রকাশ করিয়াছেন। সুতরাং  পরবিদ্যাবধূর্জীবন কৃষ্ণসংকীৰ্ত্তনৈকপিতা শ্রীগৌরানুগত্যই যথার্থ সরস্বতীপূজা। অপরাবিদ্যাধিষ্ঠাত্রী মায়াশক্তি ভগবৎসম্মুখে গমন করিতে পারেন না। মায়াশক্তি ভগবানেরই শক্তি হইলেও দুষ্টাপত্নী যেমন স্বামী সন্নিধানে যাইতে লজ্জা বোধ করে, সেইরূপ মায়া-শক্তিও “বিলজ্জ মানয়া যস্য স্থাতুমীক্ষাপথেহয়।” (ভাঃ ২।৫।১৩) – এই ভাগবতীয় বচনানুসারে ভগবৎসান্মুখ্য পাইতে পারেন না, কিন্তু পরবিদ্যাবধূ চিচ্ছক্তি ভগবৎ সন্নিধানে নিরন্তর অবস্থান পূর্ব্বক ভগবদ্‌গুণকীর্ত্তন করিয়া ভগবৎসেবাসুখ  লাভ করেন।

 

মায়াশক্তিগত সরস্বতী-উপাসকগণের মধ্যে কবি কালিদাস এবং পরবর্তীকালে মহাপ্রভুর সময়ের দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত কেশব-কাশ্মীরীর সরস্বতীর বরপুত্রত্বরূপে প্রসিদ্ধি অবগত হওয়া যায়। শ্রীচৈতন্যভাগবতে শ্রীল বৃন্দাবন দাস ঠাকুরের “সরস্বতী-প্রসাদে সবেই মহাদক্ষ” (চৈঃ ভাঃ আ ২।৫৮) – এই বাক্যেও তাৎকালিক নবদ্বীপের পণ্ডিতগণের অপরাবিদ্যাধিষ্ঠাত্রীদেবীর আরাধনার কথা জানা যায়। সেই সরস্বতীর দিগ্বিজয়ী কেশবকাশ্মিরীর প্রতি উপদেশ ছলে নিজ সামর্থ্য শ্রীব্যাসবিতার শ্রীবৃন্দাবনদাস ঠাকুরের ভাষায় এইরূপে যায় এইরূপে বর্ণিত হইয়াচ্ছে   ( চৈ: ভাঃ আঃ ১৩শ পঃ )—

 

“সরস্বতী বলেন শুনহ বিপ্রবর। 

যা’র ঠাঞি তোমার হৈল পরাজয় । 

অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড-নাথ সেই সুনিশ্চয় । 

আমি যা’র পাদপদ্মে নিরন্তর দাসী। 

সম্মুখ হইতে আপনারে লজ্জা বাসি।”

 

প্রাচীন বৈষ্ণব শ্রীধরদ্বামীচরণ ভাবার্থদীপিকার প্রারম্ভেই যে “বাগীশা যস্য বদনে……নৃসিংহমহং ভজে” বলিয়া সরস্বতীর স্তব করিয়াছেন সেই সরস্বতী শ্রীভগবান্ নৃসিংহ-দেবের শ্রীমুখে অর্থাৎ সম্মুখে শ্রীনৃসিংহগুণকীৰ্ত্তন কারিণী রূপে অবস্থান করেন; কিন্তু প্রকৃতি-জনোপাস্য সরস্বতী তাঁহার বদনে অবস্থান করা দূরের কথা, সম্মুখে যাইতেও লজ্জাবোধ করেন।

 

পরবিদ্যারূপিণী কৃষ্ণপ্রিয়া সরস্বতী বিশুদ্ধ ভক্তি সিদ্ধান্ত বাদিনী শ্রীস্বরূপরূপবিরোধি সকল কুসিদ্ধান্ত নিরাসকারিণী শ্রীশ্রীভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী।অন্যাভিলাষ কৰ্ম্ম-জ্ঞানাদি শূন্য। কৃষ্ণেন্দ্রিয়-প্রীতি-তাৎপৰ্য্যময়ী বাণীই তাঁহার একমাত্র কীৰ্ত্তনীয় বিষয়। জীবের আত্মেন্দ্রিয় তর্পণ তাৎপর্যময়ী বিষ্ণুবৈষ্ণবের নিন্দাবাদোচ্চারিণী অসতী মায়াবাদী জিহ্বাকে তিনি শুদ্ধভক্তিসিদ্ধান্তবাণী রূপ সুতীক্ষ্ণ থড়্গ-দ্বারা ছেদন করিয়া থাকেন। সন্মুখরিত কৃষ্ণকথা শ্রবণ-কীৰ্ত্তন-মুখেই সেই পরবিদ্যাবধূর উপাসনা হইয়া থাকেন। অপ্রাকৃত কবিকুল-চূড়ামণি জয়দেব শৃণু তদা জয়দেব-সরস্বতীম্” বাক্যে সেই শুদ্ধা কৃষ্ণকীৰ্ত্তনময়ী বাণী শ্রবণেন্দ্রিয় দ্বারে সেবনের কথা উপদেশ করিয়াছেন। ‘জয়’ শব্দের অর্থ—সর্বোৎকর্ষ-বিশিষ্ট শ্রীকৃষ্ণ, ‘দিব,’ ধাতু-নিষ্পন্ন ‘দেব’ শব্দ দ্বারা সেই কৃষ্ণকে নিজ-ভক্তিদ্বারা প্রকাশ করা বুঝায় অর্থাৎ নিজ ভক্তি-প্রভাবে যিনি শ্রীকৃষ্ণকে প্রকাশিত করেন, তিনিই ‘জয়দেব’ বা শুদ্ধ কৃষ্ণকীর্ত্তনপরায়ণ—ভক্ত। আত্মেন্দ্রিয়তর্পণ-চিন্তারহিত হইয়া সেই ভক্তবাণী সুষ্ঠুরূপে শ্রবণ-কীৰ্ত্তন করাই যথার্থ সরস্বতীর পূজা। ভগবদ্ভক্তগণই যথার্থ সরস্বতী পূজক। কৃষ্ণেন্দ্রিয় তপর্ণপরায়ণী কীর্ত্তনাখ্যাভক্তি স্বরূপিণী পরবিদ্যাবধূই সেই সৰ্ব্বজীবারাধ্যা শ্বেতসরোজবাসিনী বীণাপাণি বাগদেবী।

 

তাই বলি, হে জগদবাসি , আজ যদি তোমরা সত্য সত্যই সরস্বতীপূজা করিতে চাও, তবে তোমরা পরবিদ্যা, পীঠের অনন্তবাসী হইয়া পরবিদ্যাবধূজীবন কৃষ্ণ সংকীৰ্ত্তনৈকপিতা। গৌরক্বষ্ণের ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতীয় আরাধনা কর। সদগুরু পাদাশ্রয়ে গৌরকৃষ্ণের শুদ্ধভক্তি, সিদ্ধান্তময়ী অপ্রাকৃতবাণী শ্রবণ ব্যতীত কখনও প্রকৃত বাণীর আরাধনা হইতে পারে না, আবিদ্যা অবিদ্যাই আরাধিত্ হইয়া জীবকুলকে কৃষ্ণভক্তি বিমুখ করিবে—দেবতান্তরে স্বাতন্ত্র্যবুদ্ধি আনিয়া দিবে। শুদ্ধাসরস্বতী প্রাকৃত জীবেন্দ্রিয় তোষণী নহেন, তিনি কৃষ্ণেন্দ্রিয়তোষণী— কৃষ্ণভক্ত সজ্জনতোষণী। তাঁহার পূজা-রহস্য একমাত্র কৃষ্ণভক্তই অবগত আছেন।

 

“সরস্বতী কৃষ্ণপ্রিয়৷ কৃষ্ণভক্তি তাঁর হিয়া সেবকের সেই সে বৈভব ।”

  • February 20-21, 2022 Puri, Odisha
  • 3rd of July in 2022 Balasore, Odisha
  • August 24-26, 2022 Kurukshetra, Haryana
  • October 7, 2022 Prayagraj, Uttar Pradesh
  • November 30 -1, 2022 Agartala, Tripura
  • December 3-4, 2022 Lalabazar, Assam
  • December 7, 2022 Guwahati, Assam
  • February 17-18, 2023 Baruipur, West Bengal
  • May 27-28, 2023 Patna, Bihar
  • June 26, 2023 Bhubaneswar, Odisha
  • November 26, 2023 Gaya, Bihar
  • February 8, 2024 Delhi
  • February 13-15, 2024 Balighai, Medinipur
  • March 19, 2024 Nabadwip, West Bengal
  • May 27 2024 Florida, USA
  • June 23-24, 2024 Baripada, Odisha
  • June 26-27, 2024 Paradeep, Odisha
  • June 29-30, 2024 Cuttack, Odisha
  • July 14, 2024 Chennai, Tamilnadu
  • August 31 2024 London
  • September 07 2024 London
  • September 08 2024 Berlin (Germany)
  • September 13 2024 Canada
  • September 14-15 2024 Rochester (USA)
  • September 21 2024 New Jersey (USA)
  • Upcoming Events