[ শ্রীউদ্ধারণ দত্ত ঠাকুর:::::: শ্রীমদ্ কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী লিখেছেন—
মহাভাগবত-শ্রেষ্ঠ দত্ত উদ্ধারণ।
সৰ্ব্বভাবে সেবে নিত্যানন্দের চরণ।।
—(চৈঃ চঃ আদিঃ ১১/৪১)
শ্রীগৌরগণোদ্দেশ দীপিকায় “ সুবাহুর্যো-ব্রজে গোপো দত্ত উদ্ধারণাখ্যকঃ।” পূর্ব্বে যিনি ব্রজে সুবাহু নামক গোপসখা ছিলেন, অধুনা তিনি শ্রীউদ্ধারণ দত্ত নামে খ্যাত।
শ্রীমদ্ বৃন্দাবন দাস ঠাকুর লিখেছেন—
কতদিনে থাকি’ নিত্যানন্দ খড়দহে।
সপ্তগ্রাম আইলেন সৰ্ব্বগণ-সহে।।
সেই সপ্তগ্রামে আছে সপ্ত-ঋষি-স্থান।
জগতে বিদিত সে “ত্রিবেণীঘাট’ নাম।।
সেই গঙ্গাঘাটে পূর্ব্বে সপ্ত ঋষিগণ।
তপ করি পাইলেন গোবিন্দ চরণ।।
তিন দেবী সেই স্থানে একত্র মিলন।
জাহ্নবী যমুনা সরস্বতীর সঙ্গম।।
প্রসিদ্ধ ত্রিবেণীঘাট’ সকল ভুবনে।
সৰ্ব্ব পাপক্ষয় হয় যার দরশনে।।
নিত্যানন্দ প্রভুবর পরম আনন্দে।
সেই ঘাটে স্নান করিলেন সৰ্ব্ববৃন্দে।।
উদ্ধারণ দত্ত ভাগ্যবন্তের মন্দিরে।
রহিলেন তথা প্রভু ত্রিবেণীর তীরে।।
কায়-মনোবাক্যে নিত্যানন্দের চরণ।
ভজিলেন অকৈতবে দত্ত উদ্ধারণ।।
নিত্যানন্দ-স্বরূপের সেবা অধিকার।
পাইলেন উদ্ধারণ কিবা ভাগ্য তাঁর।।
জন্ম জন্ম নিত্যানন্দ-স্বরূপ ঈশ্বর।
জন্ম জন্ম উদ্ধারণ তাঁহার কিঙ্কর।।
যতেক বণিক্-কুল উদ্ধারণ হৈতে।
পবিত্র হইল, দ্বিধা নাহিক ইহাতে।।
বণিক তারিতে নিত্যানন্দ-অবতার।
বণিকেরে দিলা প্রেমভক্তি-অধিকার।।
সপ্ত-গ্রামে সব বণিকের ঘরে ঘরে।
আপনে নিতাই চাঁদ কীৰ্ত্তনে বিহরে।।
বণিক্-সকল নিত্যানন্দের চরণ।
সৰ্ব্বভাবে ভজিলেন লইয়া শরণ।।
বণিক্-সবার কৃষ্ণভজন দেখিতে।
মনে চমৎকার পায় সকল জগতে৷৷
নিত্যানন্দ-প্রভুবর মহিমা অপার।
বণিক্ অধম মূৰ্খ যে কৈল নিস্তার।।
সপ্তগ্রামে প্রভুবর নিত্যানন্দ-রায়।
গণসহ সংকীর্ত্তন করেন লীলায়।।
সপ্ত-গ্রামে যত হৈল কীৰ্ত্তন-বিহার।
শত বৎসরেও তাহা নারি বর্ণিবার।।
পূর্ব্বে যেন সুখ হৈল নদীয়া নগরে।
সেই মত সুখ হৈল সপ্তগ্রাম-পুরে।।
(চৈঃ ভাঃ অন্ত্য ৫|৪৪৩-৪৬১)
শ্রীউদ্ধারণ দত্ত ঠাকুরের পিতার নাম শ্রীকর দত্ত, মাতার নাম শ্রীভদ্রাবতী। শ্রীউদ্ধারণ দত্ত ঠাকুর নৈহাটী গ্রামের রাজার দেওয়ান ছিলেন। আজও রাজ প্রাসাদের ভগ্নাবশেষ বর্ত্তমান আছে। ঠাকুর রাজ-কার্য্য উপলক্ষ্যে যে স্থানে বাস করতেন তাহা আজও উদ্ধারণপুর নামে অভিহিত।
—(চৈঃ চঃ আদিঃ ১১।৪১; অনুভাষ্য)
সপ্তগ্রামে শ্রীউদ্ধারণ দত্ত ঠাকুরের স্বহস্তে-সেবিত শ্রীমহাপ্রভুর ষড়ভুজ মূর্ত্তি আছে। মূর্ত্তির দক্ষিণে নিত্যানন্দ, বামে শ্রীগদাধর বিরাজমান। অন্য সিংহাসনে শ্রীরাধাগোবিন্দ ও নিম্নে শ্রীউদ্ধারণ দত্ত ঠাকুরের আলেখ্য আছে।
শ্রীনিত্যানন্দ শক্তি শ্রীজাহ্নবা মাতা সপ্তগ্রামে উদ্ধারণ দত্ত ঠাকুরের গৃহে এসেছিলেন।
“ঈশ্বরী গেলেন শীঘ্র উদ্ধারণ ঘরে।।” (ভঃরঃ ১১।৭৭৫)
ঈশ্বরী জাহবা দেবী যখন এসেছিলেন তখন শ্রীউদ্ধারণ দত্ত ঠাকুর প্রকট ছিলেন না। শ্রীউদ্ধারণ দত্ত ঠাকুরের পুত্রের নাম শ্রীনিবাস দত্ত ঠাকুর। পৌষী কৃষ্ণ-ত্রয়োদশীতে শ্রীউদ্ধারণ দত্ত ঠাকুর অপ্রকট হন।
জয় শ্রীউদ্ধারণ দত্ত ঠাকুর কী জয় !]
[[ শ্রীমহেশ পন্ডিত:::::: পূজ্যপাদ শ্রীমদ্ কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী লিখেছেন—
মহেশ পণ্ডিত ব্রজের উদার গোপাল।
ঢক্কা বাদ্যে নৃত্য করে প্রেমে মাতোয়াল।
—(চৈঃ চঃ আদি ১১ (৩২)
ব্রজের দ্বাদশ গোপালের অন্যতম, উদার গোপাল ছিলেন মহেশ পন্ডিত। তিনি শ্রীকৃষ্ণ প্রেমে মত্ত মাতালের ন্যায় নৃত্য করতেন। শ্রীগৌর গণোদ্দেশ দীপিকায়—“মহেশ পন্ডিতঃ শ্রীমন্মহাবাহু ব্রজে সখা।।” মতান্তরে মহেশ পণ্ডিত মহাবাহু নামে সখা ছিলেন। ইনি শ্রীনিত্যানন্দ সহচর ছিলেন। পাণিহাটিতে চিড়া-দধি মহোৎসবে ইনি উপস্থিত ছিলেন। ইহার শ্রীপাট বর্ত্তমান চাকদহে আছে।
“কেহ কেহ বলেন মহেশ পন্ডিত যশোড়ার শ্রীজগদীশ পন্ডিতের কনিষ্ঠ ভ্রাতা। তবে এ বিষয়ে কোন প্রামাণিক উক্তি না থাকায় সন্দেহ আছে।” —(চৈঃ চঃ আদি ১১।৩২ অনুভাষ্য)
ভক্তিরত্নাকরের অষ্টম তরঙ্গে দেখা যায়, শ্রীনরোত্তম ঠাকুর যখন খড়দহে আগমন করেন, তখন তিনি শ্রীমহেশ পন্ডিতের শ্রীচরণ দর্শন করেছিলেন। “মহেশ পন্ডিত অতি পরম মহান্ত।।”—–(চৈঃ ভাঃ অন্তঃ৫।৭৪৪)
শ্রীমদ্ বৃন্দাবন দাস ঠাকুর মহেশ পন্ডিতকে পরম মহান্ত নিত্যানন্দের পরম প্রিয়জন বলে বলেছেন। পৌষ কৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথিতে শ্রীমহেশ পন্ডিত অপ্রকট হন।]]